নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়েমেনে হুথিদের উত্থান ও সৌদি আরবের আগ্রাসন !

২৮ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম একটি আরব দেশ ইয়েমেন নতুন করে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে! যদিও ইয়েমেন সংকট নতুন কিছু নয়, দেশটির অভ্যন্তরিণ অস্থিরতা কয়েক বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু সৌদি আরব ন্যাক্কারজনকভাবে এ গরিব দেশটিতে হামলার মাধ্যমে চলমান সংকটকে যেমন উস্কে দিয়েছে তেমনি ইয়েমেনকে গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইয়েমেন চলমান সংকটের জন্য যেমন দেশটির জাতিগত বৈচিত্র, নেতৃত্বের ব্যর্থতা যেমন দায়ি তেমনি দেশটির প্রতিবেশী রাস্ট্র সৌদি আরবের দাদা গিরিও অন্যতম দায়ি। কারণ দেশটির প্রতিষ্ঠকাল থেকেই দেশটির শাসক গোষ্ঠী সৌদি রাজাকে 'কর্তায় ইচ্ছায় কর্ম' মেনে আসছে আর সৌদি আরবও তার নিজ স্বার্থে মাঝে মাঝে ইয়েমেনে সরকার বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর উপর স্থল ও বিমান হামলা করে আসছে। সৌদি আরব দেশটির অভ্যন্তরিণ ব্যাপারে শুধু হস্তক্ষেপ করে ক্ষান্ত নয়, সৌদি আরব ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে ১৯৩০ এর দশকে দেশটির নাজরান, আসির ও জিজান নামে তিনটি প্রদেশ দখল করে নিয়েছে ও সেখান থেকে তেল উত্তোলন করে সৌদি আরব তা বিশ্ব বাজারে বিক্রিও করে আসছে ! ইয়েমেনের তৎকালীন আমীরের সাথে সৌদি বাদশাহ চুক্তি করেছিল যে প্রদেশটি তিনটি ষাট বছর পর সৌদি আরব ইয়েমেনকে ফেরত দিবে কিন্তু ষাট বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সৌদি আরব প্রদেশ তিনটিকে সৌদি ভূ-খণ্ডের অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসাবে ঘোষণা করে।

ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ কোটি। এর মধ্যে (৫০-৫৫)% সুন্নী যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী ও বাদবাকি ওহাবি/সালাফিসহ অন্যান্য সেক্টের অনুসারী । সৌদির ওহাবি ইসলামি ভার্সন দেশটির সুন্নীদের একটি অংশকে উগ্রপন্থী হতে সহায়তা করেছে -এই কারণে সৌদি মদতপুষ্ট আল কায়েদা ও আইএস বর্তমানে ইয়েমেনের একটি রাজনৈতিক শক্তি অন্যদিকে ( ৪০-৪৫)% জাইদি শিয়া ও ৫% বার ইমামি শিয়া এবং বাদবাকি অন্যান্য জাতি ধর্মের। দেশটি ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত উত্তর ও দক্ষিণ অংশ নামে বিভক্ত ছিল। দেশটির উত্তর অংশে সংখ্যালঘু হুথি সম্প্রদায়ের বসবাস-এরাই মূলত জাইদি শিয়া । ১৯৯০ সালে উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন ইউনাইটেড ইয়েমেন গঠন করার পরেও উত্তর ইয়েমেনে অর্থাৎ জাইদি শিয়াদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ও স্বৈরশাসক আলি আব্দুল্লাহ সালেহ একজন শিয়া হওয়ার পরেও তার নিজ সম্প্রদায়ের উন্নয়নের কোনো চেষ্টা করেণনি। মূলত দেশটির ক্ষমতার কাঠামো ও সৌদি প্রভাবই এজন্য দায়ী। দীর্ঘদিন অবহেলিত, বঞ্চিত, বৈষম্য ও অন্যায় আচরণের শিকার হওয়ার পর অবশেষে উত্তর ইয়েমেনের শিয়া আলেম বদর উদ্দিন আল হুথি নিজেদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সালেহ সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দেন। এই বদর উদ্দন আল হুথির নাম অনুসারে ইয়েমেনের জাইদি সম্প্রদায়কে হুথি সম্প্রদায় বলা হয়। ২০০৪ সালে শিয়া আলেম ও সাবেক পার্লামেন্টারিয়ান বদর উদ্দিন আল হুথির ডাকে উত্তর ইয়েমেনে গণআন্দোলন শুরু হলে প্রেসিডেন্ট সালেহ শিয়া হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তাকে সহায়তা করে সৌদি আরব।হুথিতের উত্থানে সৌদি আরব শংকিত হয়ে পড়ে কারণ উত্তর ইয়েমেনের লাগোয়া সৌদি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের বসবাস। সৌদিতে শিয়াদের উত্থান যাতে হতে না পারে ও ইয়েমেন যাতে সৌদির হাতছাড়া না হয় এজন্য হুথি আন্দোলনের শুরু থেকেই সৌদি আরব হুথিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। সৌদি ছাড়াও অন্যান্য রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক আরব নেতারা ইয়েমেনে হুথিতের উত্থানে শংকিত ! শংকিত হুথিতের কারণে নয় বরং তারা শংকিত ইরানের উত্থানে। তাদের আশংকা হুথিতের মাধ্যমে ইরান পুরো ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তার করবে। উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন, ইসরায়েল ও সৌদির নীতির বিরোধী ইরান হুথিদের উত্থানের সমর্থক ।

মধ্যপ্রাচ্যের আরব ও নন আরব রাস্ট্র তুরস্ক ও ইসরায়েল আঞ্চলিক পরাশক্তি হিসাবে ইরানের উত্থানে শংকিত । শংকিত এই কারণে যে , তাদের মার্কিন প্রভু ও ইউরোপিয়ানরা ইরানের উপর শত অবরোধ আরোপ করেও যেখানে ইরানের উত্থা্ন ঠেকাতে পারছে না , পরমানু চুক্তির কারণে ইরানের উপর থেকে অবরোধে উঠে গেলে সেই ইরানকে বধ করা দূরে থাক ইরান অল্প দিনের মধ্যেই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি পাল্টে দিতে পারে যা ঠেকানোর সাধ্য মধ্যপ্রাচ্যের কোনো রাস্ট্রের নেই ! মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সকল সংকটের মূল কারণটা এখানেই, ইরানের সাথে পশ্চিমা বিশ্বশক্তির পরমানু আলোচনা যত এগিয়ে চলছে সৌদি ও ইসরায়েল তত উন্মত্ত হয়ে পড়েছে । আরব নেতারা এখন প্রকাশ্যেই ইরানের উত্থানে নিজেদের ভীতির কথা রাখঢাক না রেখেই প্রকাশ করছেন। যেমন হামাসের নেতৃস্থানীয় একজন নেতা কিছুদিন আগে বলেছেন, আমরা সৌদি আরবে সফর করেছিলাম। সৌদি রাজ-সরকার আমাদের প্রস্তাব দিয়েছিলো যে, হামাসের উচিত ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা। আমরা বলেছিলাম আমরা অবশ্যই তা করবো যদি আপনারা আমাদেরকে দখলদার ইসরাইলের মোকাবেলায় ইরানের মতই অস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তা করেন! এরপর সৌদি রাজকীয় কর্মকর্তাদের মুখ বন্ধ হয়ে যায়! শুধু ইরান ইস্যুতে নয় মধ্যপ্রাচ্যের সকল ইস্যুতেই ইসরায়েল ও সৌদির স্বার্থ যেমন অভিন্ন তেমন একই সূত্রে গাথা। সিরিয়ায় ও ইরাকে ইরানের প্রভাব রোধ করতে সিরিয়াতে জঙ্গী বাহিনী পাঠানো ও আইএস নামক এক ভয়ংকর দানবের সৃষ্টি কারো অজানা নয়। তেমনি বাহরাইনের নিরস্ত্র জনগণের উপর সৌদির সামরিক বাহিনীর নারকীয় হামলাও একই সূত্রে গাথা।মধ্যপ্রাচ্যের সকল অঘটন ঘটন পটিয়সির মূল নায়ক হল সৌদি ও ইসরায়েল। আজকে ইসলামের নামে জতসব জঙ্গীদল দেখতে পাওয়া যায় এদের সকলের মা বাপ ও দাদা হল সৌদি, ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাস্ট্র এবং সকল জঙ্গীগোষ্ঠীই সৌদির ওহাবি/সালাফি ভার্সনে কঠোরভাবে বিশ্বাসী।


হুথি আন্দোলনের বর্তমানে নেতৃত্বে আছেন বদর উদ্দিন আল হুথির ছেলে আব্দুল মালেক আল হুথি। উল্লেখ্য বদর উদ্দিন আল হুথির বড় ছেলে হুসেইন আল হুথি সরকারী বাহিনীর হাতেই নিহত হয় । ইয়েমেনে হুথিদের উত্থানের পাশাপাশি হুথিদের নিষ্ক্রিয় করতে সৌদি আরব দেশটিতে ওহাবি/সালাফি ইসলাম রপ্তানি করে যার নগদ ফল হল ইয়েমেনে আল কায়েদা ও বর্তমান আইএস এর উত্থান।ইয়েমেনের আল কায়েদা ও আইএস হথিদের উত্থানের শুধু বিরোধী নয় বরং শিয়া হুথিদের হত্যা করা তারা ফরজ মনে করে। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে শিয়া হুথিদের মসজিদে আল কায়েদা ও আইএস হামলা যেন নিত্য নৈমত্তিক ব্যপার ! ইয়েমেন সরকার অভিযোগ করে, হুথিরা দেশটিকে একটি ইসলামী রাস্ট্র বানাতে চায় কিন্তু হুথিরা তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে দেশটিকে ইসলামি রাস্ট্র বানানো তাদের আদৌ কোনো পরিকল্পনা নেইে এবং তা সম্ভবও নয় কারণ হুথিদের চেয়ে সুন্নীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ বরং তাদের লক্ষ্য সরকারী বাহিনীর আক্রমন প্রতিরোধের পাশাপাশি একটি গণতান্ত্রিক ইয়েমেন রাস্ট্র বিনির্মাণ করা এমনকি মহিলারাও যাতে সরকারের যে কোনো পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেণ। উল্লেখ্য যে হুথিতের উপর সুন্নীদের একটি বিরাট অংশের সমর্থন আছে।আর একারণেই হুথিরা রাজধানী সানাসহ দেশটির অধিকাংশ প্রদেশ দখল করতে সক্ষম হয়েছে।

যাইহোক, ২০০৪ সালে ইয়েমেনের সরকারী বাহিনী হুথিতের দমনে হামলা পরিচালনা করলে হুথি ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হুথি ও সরকারী বাহিনীর সংঘর্ষ শুধু ইয়েমেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং তা ক্রমান্বয়ে সৌদি অভ্যন্তর উত্তর ইয়েমেন সীমান্তবর্তী শিয়া অধ্যুষিত কয়েকটি প্রদেশেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধ বিরতি ভঙ্গ করে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকারী বাহিনী হুথিদের উপর আক্রমন চালায় । ইয়েমেনের সরকারী বাহিনীর সাথে সৌদির নিরাপত্তা বাহিনীও হুথিদের উপর আক্রমন করে।যুক্তরাস্ট্রও হুথিদের উপর কয়েকদফা বিমান হামলা চালায়। এপর্য়ায়ে হুথিরা বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। যাইহোক,দ্রুত পুরো উত্তর ইয়েমেন ও পরে ক্রমান্বয়ে সারা ইয়েমেনে হুথিদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যার আংশিক ফলাফল পাওয়া যায় ২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে আরবদের নতুন এক জাগরণে যা ইয়েমেনেও আঘাত করেছিল ও সেই আরব বসন্তের ঢেউয়ের আঘাতে পতন হয়েছিল স্বৈরাচারী সালেহ সরকারের। আরব বসন্তের আগে আগে প্রেসিডেন্ট সালেহ প্রস্তাব করেছিল সংবিধান সংশোধন করে আজীবন প্রেসিডেন্ট থাকার কিন্তু গণআন্দোলনের কারণে তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়িত হয়নি । সৌদির ও পারস্য উপসাগরীয় রাস্ট্রগুলির মধ্যস্থতায় ভাইস প্রেসিডেন্ট হাদি, অন্যতম ইসলামী পার্টি ইসলাহ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিনিময়ে প্রেসিডেন্ট সালেহ ও তাঁর ৫০০ সহযোগিকে দায়মুক্তি দিতে রাজি হন যা প্রত্যাখ্যান করে হুথি সম্প্রদায়। প্রেসিডেন্ট সালেহ তার ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মানসুর হাদি কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গমন করেণ। মানসুর হাদি ক্ষমতা গ্রহন করে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক তার শাসনকার্য পরিচালনা করেণনি, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন দূরে থাক দেশটিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও তিনি দিতে পারেননি। তার পুর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট সালেহর দুর্নীতি, দমন ও পীড়ন অব্যহত রাখেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারীতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন ! হুথিসহ সকল বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট হাদির এ নির্বাচন বর্জন করে ।ফলে ইয়েমেনের অস্থিরতা আবারও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। অন্যদিকে হুথি বনাম ইসলাহ পার্টি, আল কায়েদা ও আইএস এর সাথে সংঘর্ষ ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পরে পুরো ইয়েমেন জুড়ে !

আলি আব্দুল্লাহ সালেহ ক্ষমতা ছাড়লেও ইয়েমেনের সরকারী বাহিনী ও প্রশাসনে তিনি অনেক বড় একটা স্থান দখল করে আছেন। আছে তাঁর কিছু সমর্থকও । ফলে ইয়েমেনের রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত তিনি একটা ফ্যাক্টর হয়ে আছেন। সম্ভবত এই কারণেই হোক ও সরকারের দমন পীড়ন নীতির কারণেই হোক সরকারী বাহিনীর একটি বড় অংশ বর্তমানে হুথিদের সমর্থন দিচ্ছে। ২০১৪ সালের আগস্টে জ্বালানি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে হুথিরা রাজধানী সানাতে ব্যপক বিক্ষোভ মিছিল করে। সেপ্টেম্বরে হুথিরা রাজধানী সানা দখল করে এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বাসিন্দাওয়া পদত্যাগ করেণ।প্রধানমন্ত্রী বাসিন্দাও এর পদত্যাগের ফলে হুথিরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে নতুন সরকার গঠন নিয়ে একটি চুক্তি করেণ কিন্তু সরকারী বাহিনীর একটি অংশ ও আল কায়েদা হুথিদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হুথিরা অভিযোগ করেণ প্রেসিডেন্ট হাদি আল কায়েদাকে অস্ত্রে সজ্জিত করে হুথিদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। যাইহোক ঘটনার দ্রুত পট পরিবর্তন হতে থাকে।এরফলে জানুয়ারীতে হুথিরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ আক্রমন করে এবং প্রেসিডেন্ট হাদি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।হুথিরা পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয় ও প্রেসিডেন্ট হাদিকে গৃহবন্দী করে কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদি কিছুদিন পর দক্ষিণাঞ্চলিয় বন্দর নগরী এডেন এ পালিয়ে যায় ও সেখানে যেয়ে নিজের পদত্যাগ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন এবং বন্দর নগরী এডেনকে দেশটির সাময়িক রাজধানী ঘোষণা করেণ। হুথিরা এবার এডেনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রেসিডেন্ট হাদি সৌদির নেতৃত্বে পারস্য উপসাগরীয় রাস্ট্রগুলির হস্তক্ষেপ কামনা করেণ। হুথিদের এডেন আগমনের খবর পেয়ে প্রেসিডেন্ট হাদি নৌ্কা যোগে পালিয়ে রিয়াদে পৌছান ! অন্যদিকে হুথিদের এডেন আগমনের খবরের সাথে সাথে আইএস হুথিদের দুটি মসজিদে বোমা হামলা করে ১৫২ জন হুথিকে হত্যা করে !


এরপরপরই সৌদি ইয়েমেন সীমান্তে ভারী অস্ত্রসস্ত্রসহ বিপুল সেনা মোতায়েন করে। গত ২৫ মার্চ এ রাতে সৌদির নেতৃত্বে উপসাগরীয় রাস্ট্রগুলি ইয়েমেনের তথাকথিত ’বৈধ সরকারকে’ রক্ষায় ইয়েমেনের বিভিন্ন স্থাপনায় বিমান হামলা শুরু করে। এতে নিহত হয়েছে ইয়েমেনের অনেক শিশুসহ অনেক সাধারণ মানুষ। পাল্টা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে হুথিসহ ইয়েমেনের সেনাবাহিনীর একটি অংশ।ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদির ১০০ জঙ্গী বিমান, আরব আমিরাতের ৮৫ টি জঙ্গী বিমানসহ মিশর, এবং উপসাগরীয় আরব রাস্ট্রগুলি সমন্বিত জোট গঠন করেছে। এই জোটের সাথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে ইসরায়েল। বিমান হামলায়ও ইসরায়েল সহযোগিতা করতেছে সৌদি আরবকে। পাকিস্থান ও তুরস্ক সৌদিকে সমর্থন ও সহযোগিতা করার কথা ঘোষণা করেছে।অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাস্ট্র ও ব্রিটেন স্যাটেলাইট ইমেজ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সৌদিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। সবচেয়ে অবাক হতে হয় ইসরায়েল ফিলিস্তিনে দিনের পর দিন , মাসের পর মাস, বছরের পর বছর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদির নেতৃত্বে সকল রাজতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক আরব প্রধান শুধু নিরবই থাকে না নাকে তেল দিয়েও ঘুমায়। এদের কেউ কেউ যেমন সৌদি আরব ও মিসর ইসরায়েলকে আবার উস্কে দেয় ফিলিস্তিনিদের সন্ত্রাসী ঘোষণা করে যেন নির্মূল করা হয়। তেল বিক্রি করে বসে খাওয়া ও নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো আরবগণ দরিদ্র ইয়েমেনের দরিদ্র হুথিদের বিরুদ্ধে এক হয়, সামরিক জোট গঠন করে ! অথচ হুথিরা সৌদির জন্য মোটেই হুমকি নয় এবং ইরান তাদের মোটই উস্কে দিচ্ছে না-একথা স্বীকার করেছেন ইয়েমেনে নিযুক্ত যুক্তরাস্ট্রের সাবেক রাস্ট্রদুত । হুথিরা সৌদির সাথেও সুসম্পর্ক চায় তার উল্লেখযোগ্য প্রমান হল-সৌদির সাবেক বাদশাহ আব্দুল্লাহর শেষকৃত্যকালীন সময়ে কয়েকজন হুথি নেতা রিয়াদ সফর করেছিলেন ।

যাইহোক, ইয়েমেনে সৌদির হামলার কঠোর নিন্দা জানিয়েছে ইরান, রাশিয়া ও চীন। ইরান জানিয়েছে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সেনবাহিনীর হাতে ৫০০ কি.মি রেন্জের মিসাইল আছে যা দিয়ে তারা সৌদির অভ্যন্তরে অনায়াসেই হামলা চালাতে পারবে ।তবে হুথি নেতারা মোটেই বিচলিত নন বরং সৌদির সাথে তাদের লড়াই বহুদিনের পুরনো যা পুর্বেই উল্লেখ করেছি। হুথিদের উত্থান তাদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে, হুথিদের সংগ্রাম স্বৈরাচারী, দুনীর্তিতে অকণ্ঠ নিমজ্জিত ও স্বাধীন দেশে পরাধীন শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে । হুথিদের সংগ্রাম ফ্রি এন্ড ফেয়ার গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম, হুথিদের সংগ্রাম অধিকার বঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পক্ষে সংগ্রাম। কাইজেই হুথিদের নেতৃত্বে যে গণজাগরণ ইয়েমেনে সংঘটিত হয়েছে তা পাপেট সৌদি আরবের নেতৃত্বে হামলায় নির্মূল হওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই । হুথিতের এ বিপ্লবী চেতনা শুধু হথি জনগণের মধ্যে নয় বরং তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ইয়েমেনে । যাইহোক, সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর তিন জঙ্গী বিমান ইতোমধ্যেই ভূ-পাতিত করেছে হুথি ও সৌদির কিছু সেনাকেও বন্দী করেছে। হুথিরা চায় মার্কিন ও সৌদি প্রভাব মুক্ত একটি স্বাধীন রাস্ট্র । সৌদির এ হামলার মাধ্যমে ইয়েমেনের যুদ্ধ শুধু ইয়েমেনের মাটিতেই সীমিত থাকবে না বরং সৌদি ভূ-খন্ডে সম্প্রসারিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র ! মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন ইতোমধ্যেই বলেছেন, এ যুদ্ধ শুধু ইয়েমেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না আমরা আশা করছি দীর্ঘায়িত হওয়ার পাশাপাশি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে এ যুদ্ধ ! ইয়েমেনে হামলার মাধ্যমে মূলত মার্কিন ও ইসরায়েলী ষড়যন্ত্রই বাস্তবায়ন করছে সৌদি আরব। মার্কিন ও ইউরোপিয়ানদের অস্ত্র ব্যবসা আরো রমরমা হবে যার প্রধান ক্রেতাই হল সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সকল আরব রাস্ট্র ! ঠিক সাদ্দামের মত অবস্থা হয় কি না সৌদি রাজতন্ত্রের সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৩১

ক্ষতিগ্রস্থ বলেছেন: ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২.৫ কোটি। এর মধ্যে (৫০-৫৫)% সুন্নী... অন্যদিকে ( ৪০-৪৫)% জাইদি শিয়া ও ৫% বার ইমামি শিয়া

সিআইএ ফ্যাক্ট বুক বলছে estimated 65% are Sunni and 35% are Shia... CIA Factbook - Yemen Demography

০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: ইয়েমেনে জাতিগত পরিসংখ্যান আমি উইকিপিডিয়াতে থেকে নিয়েছি। আমি কয়েকটা সোর্স দেখেছি একেক সোর্সে একেক রকম পেয়েছি। যাইহোক, তবে যাইদি শিয়ারা সংখ্যালঘু হলেও তেমন সংখ্যালঘু নয় মানে তাদের সংখ্যা সম্ভবত ৫০% এর চেয়ে একটু কম হবে ।

২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২১

মুদ্রা সংগ্রাহক বলেছেন: সৌদি রাজতন্ত্রের অবস্থা সাদ্দামের মত হবে না কারণ তারা মার্কিন মদত-পুষ্ট। যত ঝড় যাবে হুতিদের আর ইয়েমেনের সাধারণ জনগণের উপর দিয়ে

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ৩:০৬

মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: ইরানের সাথে ছয় বিশ্ব শক্তির পরমানু চুক্তি হলে ও সৌদির বোকামি ও মুর্খামি একটানা চলতে থাকলে সৌদি রাজতন্ত্রের পতন ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করি।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৮:৫৫

রেদওয়ান হোসাইন মন্জু বলেছেন: ইসরাইল যেমন মুসলিমদের প্রকাশ্য শত্রু ইরানও ঠিক তেমনি, সৌদির উচিত এদের আরো কঠোর ভাবে দমন করা ।
বর্তমান সিরিয়ায় ইরানের গণহত্যা ইরানের নিকৃষ্টতার উদারহরণ মাত্র এরা সুযোগ পেলেই তাদের নরকীয়তা প্রর্দশন করে

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:১৬

টারজান০০০০৭ বলেছেন:
রেডিও তেহরান, চ্যানেল -----?

হুথিরা ইরানের দাবার ঘুটি ! তাহারা সৌদির সাথে ঝামেলা মিটাইয়া ফেলার চেষ্টা না করিয়া যুদ্ধে নামিয়াছে ! ইরান সৌদির বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার চালাইতেছে, হুথিদের অস্ত্র, অর্থ দিতেছে ! তিক্ত হইলেও সত্য, শিয়ারা ইহুদিদের চাইতেও বিপদজনক ! মক্কা-মদিনা, সম্মানিত সাহাবা রা. , উম্মুল মুমেনিন রা. দের অবমাননার সাহস পাশ্চাত্য বা ইহুদিদের হইবে না ! তবে সাহাবা রা. ও উম্মুল মুমেনীনদের রা. প্রতি শিয়াদের যে বিদ্বেষ, তাহারা মক্কা-মদিনার দখল পাইলে কি করিয়া বসে কে জানে ! তাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ইরানের মদদে শিয়াদের উত্থান বিপদজনক। সৌদির ব্যবস্থা নেওয়া ভিন্ন উপায় নাই ! " শত্রুর বন্ধু শত্রু" এই নীতিতে হুথিরাও সৌদির শত্রু হইয়াছে ! ঘরের পাশে এমন শত্রু কেহ বরদাস্ত করিতে পারে না ! হুথিদের নিজেদের স্বার্থেই ইরানকে ত্যাগ করিয়া সৌদির সাথে শান্তি আলোচনায় বসা উচিত ! সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘব করিতে এই অযথা যুদ্ধ বন্ধ হওয়া দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.