নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগবাড়িতে সুস্বাগতম !!! যখন যা ঘটে, যা ভাবি তা নিয়ে লিখি। লেখার বিষয়বস্তু একান্তই আমার। তাই ব্লগ কপি করে নিজের নামে চালিয়ে দেওয়ার আগে একবার ভাবুন এই লেখা আপনার নিজের মস্তিস্কপ্রসূত নয়।

মিজানুর রহমান মিলন

জয় হোক মানবতার ও মুক্তিকামী মানষের যারা নব্য উপনিবেশবাদের বলির পাঠা হতে চায় না ।

মিজানুর রহমান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গীদের অর্থ ও অস্ত্র উৎসের নেপথ্যে

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:১২

গত ১৪ মে, ২০১৫ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং আরব রাজা ও তাদের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইরানের সাথে পাঁচ+১ বিশ্ব শক্তি পরমানু চুক্তির প্রায় দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত হওয়ায় আরব রাজারা চুক্তি নিয়ে যে উদ্বেগ জানিয়েছে তা প্রশমনের । আরব রাজারা আমেরিকার বহু বছরের কেনা খাস গোলাম ! ওবামা তো তাদের বলেছেনই আমেরিকা কখনই তাদের আরব মিত্রদের ত্যাগ করবে না, কিন্তু আরব রাজারা তাতে সন্তুষ্ট নয় তাহলে প্রশ্ন হলঃ আরব রাজাদের উদ্বেগ কিভাবে নিরসন করবেন ওবামা ? মুখে বললেই কি হবে ? প্রমান চাই আরবদের। মার্কিন ফরেইন পলিসি ম্যাগাজিন লিখেছে, আমেরিকা যে তার আরব মিত্রদের পাশে আছে এর প্রমান হিসাবে উন্নত ধরণের মারণাস্ত্র আরবদের কাছে বিক্রি করতে হবে ! ঐ বৈঠকের তাৎপর্য এটাই ।


ক্যাম্প ডেভিডে আরব রাজা ও তাঁদের প্রতিনিধিদের সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামার বৈঠক ।

ওবামা প্রশাসনের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে যুক্তরাস্ট্র যে পরিমান অস্ত্র বিক্রি করে তার চার ভাগের তিনভাগেই কিনেছে সৌদি আরব ! ২০০৮ সালে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দার ফলে মার্কিন অস্ত্র কোম্পানিগুলোর প্রায় মুমূর্ষু অবস্থা । সে সময় হাতে আলোক বর্তিকা নিয়ে এগিয়ে আসে সৌদি আরবসহ উপসাগরীয় সব রাজা বাদশাহরা। একের পর এক অস্ত্র চুক্তি করতে থাকে মার্কিন বিভিন্ন কোম্পানির সাথে ! ২০১০ সালে সৌদি আরবের কাছে কয়েক হাজার বিলিয়ন মূল্যের এফ-১৫ যুদ্ধ বিমান, অ্যাপাচে হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান এবং অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রির পেন্টাগনের ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয় বোয়িং, লকহিড মার্টিন, রেথিয়ন, জেনারেল ইলেকট্রিক, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের সিকোরস্কাই হেলিকপ্টার ইউনিট এবং আইটিটি অ্যারোস্পেস। সৌদিদের কাছে ৮৪টি বোয়িং এফ-১৫এস বিমান বিক্রির ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ রাজ্যে ৫০ হাজার চাকুরি সৃষ্টি হয়েছে বলে রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু শ্যাপিরো গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছিলেন।


নতুন কোনো চাহিদা না থাকায় বোয়িংয়ের এফ-১৮ বিমানের প্রডাকশন লাইন বন্ধ হওয়ার পথে ছিল। আলোক বর্তিকা নিয়ে এগিয়ে আসল কুয়েত ! কুয়েত ৩ বিলিয়ন ডলারের ৪০ টি এফ-১৮ বিমান কেনার চুক্তি করায় এযাত্রা বেঁচে গেল কোম্পানিটি ! এরমধ্যেই নতুন অন্য কোনো খদ্দের খুঁজে পাবে কোম্পানিটি। ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের নতুন করে অস্ত্র চুক্তি করেছে কাতার ! পিছিয়ে নেই আরব আমিরাতসহ অন্যান্য আরব রাস্ট্ররাও ! বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি যেন তাদের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার ! শুধু যুক্তরাস্ট্রের কাছ থেকেই যে আরবরা অস্ত্র কিনে এমনটি নয়, আরবরা যুক্তরাস্ট্রের বাইরে ইউরোপের ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানিসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে কম বেশি অস্ত্র কিনে থাকে ! কথা হল অস্ত্র শুধু কিনলেই হয় না, সেসব দেখাশোনা, ব্যবহার ও কারিগরি বিভিন্ন ত্রুটির কারণে দরকার হয় হাজার হাজার টেকনিশিয়ান । আরবদের তো নিজস্ব কোনো টেকনিশিয়ানও নেই , নেই প্রতিরক্ষা শিল্প! ইউরোপ, আমেরিকার হাজার হাজার টেকনিয়ানদেরও উচ্চ মূল্যে কর্মসংস্থান হয়ে যায় আরবদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনায়!

ক্যাম্প ডেভিডে আরব রাজাদের সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে বৈঠক করলেন ঐ বৈঠকের ফলাফল হিসাবে অর্থাৎ আরবদের উদ্বেগ (!) নিরসনের জন্য নতুন করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ! আরব রাজা বাদশাহগণ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঐ সব অস্ত্রগুলো কি করবেন ? রুটির সাথে খাবেন নাকি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করবেন ? ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ করার সাধ্য ও সাহস কোনটিই আরবদের নেই বরং উল্টোটাই-আরব রাজা বাদশাহরা ইসরায়েলের এজেন্ট হয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে ইসলামি জঙ্গীবাদ ! সিরিয়া ও ইরাকে লড়াইরত জঙ্গীরা ইসরায়েলের হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা নিচ্ছে এরকমও তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে ! এজন্য কোনো ইসলামি জঙ্গী গ্রুপকে দেখবেন না যে তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের নুন্যতম হামলা বা আত্মঘাতি হামলার হুমকি ধামকি দিয়েছে যেমনটি দিয়ে থাকে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে ! কখনই দেয়নি ! তেমনি ইসরায়েলের কোনো মিডিয়া এবং সরকার বা সরকারের কোনো কর্মকর্তা আইএস বা আল কায়েদা এজাতীয় জঙ্গী গ্রুপকে কখনও তাদের নিরাপত্তা বা দেশের জন্য হুমকি হিসাবে বর্ণনা করেছে এরকম কোনো তথ্য প্রমান বা নিউজ পাওয়া যায়না!

আরব রাজা বাদশাহদের দেওয়া অস্ত্র বটেই এর বাইরে ইউরোপ, আমেরিকার কালো বাজার থেকে বা এইসব দেশ থেকে গোপনেও অস্ত্র পেয়ে থাকে এরা, আবার কখনও কখনও আমেরিকা নিজেই বিমান থেকে এদের তাবু বা ঘাটিগুলোতে প্রচুর অস্ত্র ফেলে যায় ! পরে তা প্রকাশ হওয়ার পর আমেরিকা দাবি করে যে ভূল করে ওদের ঘাটিতে অস্ত্র পড়েছে ! এছাড়াও গণিমতের মাল হিসাবেও দখলকৃত ভূখন্ড থেকে এরা অস্ত্র পেয়ে থাকে।

এই তো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ও রিপাবলিকান দলের সিনেটর রন পল দুই দিন আগেই বলেছেন,“তার দলের যুদ্ধবাজ সিনেটররা মধ্যপ্রাচ্যে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল সৃষ্টির জন্য দায়ী।” রন পল আরো বলেছেন, “আইএসআইল সন্ত্রাসীরা আজ এত শক্তিশালী হয়েছে শুধুমাত্র যুদ্ধবাজদের নির্বিচার অস্ত্র সরবরাহের কারণে। ”

আল কায়েদা, আইএস এবং এজাতীয় জঙ্গী গ্রুপের অস্ত্রের উৎস সম্পর্কে জানা গেল কিন্তু অর্থ ?


'সৌদি অর্থে বিশ্বব্যাপী জঙ্গীবাদ' শিরোনামে ২০১৩ সালের শেষের দিকে বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন একটি বিশ্লেষণধর্মী আর্টিকেল প্রকাশ করেছিল। সেখানে লিখেছিল-"সারা বিশ্বে ইসলামিক চরমপন্থা ও জঙ্গীবাদের উত্থান ছড়িয়ে পড়ার পিছনে সবচেয়ে দায়ী সৌদি আরব। গত চার দশক ধরে ওহাবি ইমামদের প্রচারিত ইসলামের অসহিষ্ণু, উগ্র ও সহিংস ব্যাখ্যা রপ্তানিতে ব্যয় হচ্ছে এই রাজতন্ত্রের বিপুল সম্পদ।"

বুশ প্রশাসনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক আন্ডার সেক্রেটারী স্টুয়ার্ট লিভি বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদ বন্ধের জন্য যদি তার ক্ষমতা থাকত তাহলে তিনি সৌদির সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানো বন্ধ করে দিতেন। অন্যদিকে পাকিস্থানের সাবেক আইনমন্ত্রী ইকবাল হায়দার ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ডয়চে ভেলকে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, "তালেবান হোক আর লস্করই জাংভি হোক তাদের আদর্শ যে সৌদি ওহাবিবাদ, কোনো দ্বিধা ছাড়াই এ কথা বলা যায়।"

দি ইকনোমিস্ট জানিয়েছে, একজন আইএস সদস্য কম করে হলেও প্রতি মাসে ৪০০ ডলার বেতন পান যা বিশ্বের যে কোনো জঙ্গী গ্রুপের সদস্য তো বটেই এমনকি ইরাক ও সিরিয়াসহ কতিপয় আরবদেশের সেনা সদস্যরাও এত পরিমান বেতন পান না ! বিখ্যাত নিউ ইয়র্ক টাইমস এর সহযোগী পাকিস্থানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, তদন্তে জানা গেছে যুক্তরাস্ট্র স্বয়ং আইএস এর সদস্য সংগ্রহে অর্থ যুগিয়েছে ! আমি হুবুহু কোট করছি-“During the investigations, Yousaf al Salafi revealed that he was getting funding – routed through America – to run the organization in Pakistan and recruit young people to fight in Syria,” এক্সপ্রেস ট্রিবিউন আরো প্রকাশ করেছে যে, যুক্তরাস্ট্র প্রকাশ্যে আইএস এর নিন্দা করলেও এর অর্থ, অস্ত্র ও সদস্য সংগ্রহে কোনো বাধার সৃষ্টি করেনি !

এছাড়াও আইএস বর্তমানে ইরাক ও সিরিয়ার দখলকৃত অংশের তেল ক্ষেত্রগুলো থেকে বিপুল পরিমান পেট্রো ডলার উত্তোলন করে হাজার হাজার তেল ট্যাংকারে তেল ভরেই জাহাজে করে তাঁরা বিক্রি করছে এবং স্থানান্তরিত করছে ! জলপথে হোক বা ভূমি থেকেই হোক তাঁরা এই তেল ট্যাংকগুলো এক দেশের মধ্য দিয়ে আর এক দেশে স্থানান্তর করছে ও বিক্রি করছে এবং আমেরিকার নেতৃত্বে আইএস বিরোধী তথাকথিত ’আন্তর্জাতিক জোট’ সেই তেল তাদের কাছ থেকে কিনেও নিচ্ছে ! জঙ্গীরা যতই সভ্যতা, সংস্কৃতি ও বর্বর, নিষ্ঠুর হোক কিন্তু তাদের কাছ স্বল্পমূল্যে তেল কিনতে তাঁরা তাল গাছের মত এক পায়ে দাড়িয়ে আছে। বেশিরভাগ তেল তুরস্ক হয়ে ইসরায়েল, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছে অথচ কি অদ্ভুত ব্যাপার সেই আমেরিকাই দাবি করতেছে যে তারা আইএস বিরোধী যুদ্ধ করছে !

শুধু যুক্তরাস্ট্র ও সৌদি নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সম্পদশালী দেশ কাতারও আল কায়েদা, তালেবান, আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গীদের উত্থানের পিছনে প্রচুর অর্থ ব্যায় করে থাকে। তালেবান নেতাদের সাথে আমেরিকার মধ্যস্থতা ও মাঝে মাঝে তালেবান নেতাদের আশ্রয়ও দেয় কাতার। ইসলামি জঙ্গীগ্রুপগুলোর উত্থানের পিছনে অন্যান্য আরব রাজা বাদশাহরা তো বটেই এবং আরবদেশগুলোর বিভিন্ন ধন কুবেররাও অর্থ অনুদান দিয়ে থাকে । এই নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় অ্যানালাইটিক্যাল অনেক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

এখন প্রশ্ন হল সৌদি আরবসহ অন্যান্য রাজা বাদশাহ ও ধনকুবেররা জঙ্গীদের পিছনে এত অর্থ ও অস্ত্র ব্যায় করেন কেন ?

এর উত্তর খুঁজতে হলে আমাদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিকে বুঝতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে সবসময় লাঠিয়াল হিসাবে ব্যবহার করে যুক্তরাস্ট্র ও পাশ্চাত্য শক্তি। এই ইসরায়েল আরবদের সাথে বিভিন্ন যুদ্ধে আরবদের যেমন জর্ডান, মিসর, লেবানন ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ ভূমি দখল করে নিয়েছিল। তারপর লেবানন ও সিরিয়া ছাড়া মিসর ও জর্ডান ইসরায়েলের সাথে শান্তিচুক্তি করে ও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়ে নিজেদের ভূমি ফিরে পায়। লাঠিয়াল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে যখন মাথা তোলার কেউ আর থাকল না তখনই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে উত্থান হতে থাকে ইরানের ! প্রমাদ গুণলো ইসরায়েল ! ইরানকে আরব ও বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হিসাবে প্রচার করতে থাকে পশ্চিমা মিডিয়া। নয়া ইরানের উত্থানে শুধু ইসরায়েল নয় শংকিত হয় আরবরাও ! আরব অঞ্চলে ইরানের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র হলো সিরিয়া। ইসরায়েলকে প্রতিহত করতে ফিলিস্তিনে হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে সশস্ত্ররুপে দাড় করায় ইরান আর এদের সাথে ইরানের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হল সিরিয়া। শুধু তাই নয় ইরানের সাথে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ যুদ্ধে ইরানের ইসরায়েল প্রবেশের একমাত্র পথ হল সিরিয়া ! কারণ সিরিয়ার সাথে চুক্তিগত কারণে ইরান সিরিয়ার ভূমি ব্যবহার করে অতি সহজেই ইসরায়েলের ভিতরে সেনা পাঠাতে পারবে যা সত্যি ইসরায়েলের জন্য আতংকের বিষয় ! সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর আরব ও ইসরায়েলী এত তোড়জোরের কারণ হল মূলত এটাই। এছাড়াও অর্থনৈতিক কারণ তো বটেই।অন্যদিকে ইরানও কোনোক্রমেই সিরিয়াকে হাতছাড়া করবে না তেমনি রাশিয়াও। আরবদেশগুলোর মধ্যে একমাত্র সিরিয়া ই হল রাশিয়ার বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ট মিত্র ! ফলে আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার অর্থ হচ্ছে, ইরান ও রাশিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল করে ফেলা আর এ থেকে সবচেয়ে লাভবান হবে মার্কিন, ইসরায়েল ও আরব মিত্ররা ! আসাদকে সরানোর স্বার্থ সবার আছে। সৌদি ও ইসরায়েলের ইরানকে বধ, তুরস্কের স্বার্থ হল আরব রাস্ট্রগুলোকে তার অধীনে নিয়ে এসে মধ্যপ্রাচ্যে মোড়লগিরি করা আর আমেরিকার স্বার্থ হল ইরান ও রাশিয়াকে একসঙ্গে বধ! আর এই কারণেই সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আরব বসন্তের সুযোগেই বিদ্রোহী ও জঙ্গী বাহিনী গঠন করে হাতে অস্ত্র ও অর্থ যোগান দিতে শুরু করল এরা সবাই! নিয়ে আসা হল আল কায়েদাকে, গঠন করা হল আইএসআইএল, ইউরোপ, আমেরিকা ও বিভিন্ন দেশ থেকে রিক্রুট করে নিয়ে আসা হল মুসলিম জেহাদিদের ! ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হল তুরস্ক ও জর্ডানের ভূমিতে কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই আইএসআইএল এতই শক্তিশালী হল যে তারা শুধু সিরিয়াতে নয় পার্শ্ববর্তী ইরানের আর এক মিত্র ইরাকেও প্রবেশ করল ( অবশ্য আইএসআইএল এ সাদ্দামের সামরিক বাহিনীর একটি অংশও যোগ দিয়েছে) ! লক্ষ্যণীয় ব্যাপার-আইএসআইএল নামে যে ভয়ংকর জঙ্গী গ্রুপের উৎপত্তি হয়েছে এরা কখনই ইসরায়েল বা মার্কিন আরব মিত্রের কোনো দেশ আক্রমন করেনি আর করার কথাও নয় ! এদের দৌড় ঐ পর্যন্তই ।

আরবদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইসরায়েল কিন্তু মার্কিন ও ইসরায়েলী ষড়যন্ত্রে আরবরা শত্রু হিসাবে বেছে নিয়েছে ইরানকে।অবস্থা এমনই যে আরবরা আমেরিকা ও ইসরায়েলকে এখন পর্যন্ত বারবার চাপ দিচ্ছে ইরান আক্রমন করতে ! এই নিয়ে ক্যাম্প ডেভিডে ওবামার সাথে আরব রাজাদের বৈঠকের কয়েকদিন আগে ইসরায়েলী প্রতিনিধির সাথে আরবরা গোপনে ইরান নিয়ে জর্ডানে বৈঠকও করেছে যা পরবর্তীতে যে কারণেই হোক ফাঁস হয়ে যায় ! তারপরেও আমেরিকা ও ইসরায়েল যখন ইরানকে আক্রমনই করতেছে না তাই ইরানকে প্রতিহত করতে অবশেষে পাকিস্থান থেকে পরমানু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে এসেছে সৌদি আরব ! ওয়াশিংটনেও সৌদি সাবেক সৌদি গোয়েন্দা প্রধান প্রিন্স টার্কি বিন ফয়সাল প্রকাশ্যে গর্ব করে বলেছেন, “whatever the Iranians have, we will have too”. এতদিন মনে করা হচ্ছিল পাকিস্থান পরমানু অস্ত্র বানাচ্ছে ভারতকে পাল্লা দেওয়ার জন্য তাই নাকি সৌদি আরব পাকিস্থানের পরমানু খাতে গত ৩০/৩৫ বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন পেট্রো ডলার বিনিয়োগ করেছে ! ভারতের সাথে পাল্লা দিতে সৌদির স্বার্থ কি ? আমার ধারণা আমেরিকা ও ইসরায়েল চাচ্ছে ইরানের সাথে সৌদি আরবসহ অন্যান্য রাজতান্ত্রিক আরব রাস্ট্রগুলোর ৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের মত আর একটি নতুন ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা করতে ! তাঁদের এ পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে ইতিমধ্যেই সৌদি আরবসহ অন্যান্য রাজতান্ত্রিক আরবরা-এর অন্যতম প্রমান সৌদি আরবের নেতৃত্বে তথাকথিত হুথিদের দমনে ইয়েমেন আক্রমন এবং চলছেই সেই আগ্রাসন । আর ইরান বিরোধী জনসমর্থন আদায় করতে সৌদি আরব সুন্নী প্রধান দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই অর্থের বিনিময়ে শিয়া বিরোধী সম্মেলনের আয়োজন শুরু করে দিয়েছে ঠিক যেরকমটি হয়েছি ৮০’র দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়! মার্কিন ও ইসরায়েলের পাতানো ফাঁদে শুধু পা দেয়নি ইরান যার ফলে যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। আর যদিও কোনো কারণে যুদ্ধ শুরু হয়েও যায় তাহলে ইরানকে ঠেকাতে অলস ও অনুর্বর মস্তিস্কের সৌদি আরবের পাকিস্থানের কাছ থেকে কিনে নেওয়া পরমানু অস্ত্রের প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোনো উপায় আছে কি ? খুব ভয়াবহ অবস্থা !

লিখতে গেলে অনেক প্রসঙ্গ চলে আসে তাই আবার ফিরে যাই ক্যাম্প ডেভিডে । ক্যাম্প ডেভিডে আরব রাজাদের সাথে বৈঠকের ফল হিসাবে তাদের ইরানি উদ্বেগ (!) নিরসন করতে এখন তাদের কাছে আবারও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করবে আমেরিকা । মূলত ঐ সব অস্ত্রের একটা বিরাট অংশ ব্যায় হবে ইরানের তথাকথিত প্রভাব রোধ করতে বিভিন্ন জঙ্গী গ্রুপকে সাহায্য প্রদানে ! ব্যায় হবে ইরাকে, সিরিয়ায়, ইয়েমেন, লিবিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে ! সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপসনালয় বিভিন্ন স্থাপনায় ঘটতে থাকবে একের পর এক বোমা বিষ্ফোরণ ! দখল ও পাল্টা দখল চলবে নিরন্তর ! মরবে নিরীহ মানুষ !এটাই তো চায় মার্কিন ও ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীরা কারণ তাঁদের প্রাণ ভোমরা যে এই অস্ত্র ব্যবসায় !তাই মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ সহজেই শেষ হবে বলে কল্পনা করলে তা হবে আকাশ-কুসুম কল্পনা । মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তিবর্গের অস্ত্র বিক্রির জন্য এ যুদ্ধ বড়ই প্রয়োজন। তাই কখনও তারা সাপ হয়ে দংশন করবে আবার কখনও ওঝা হয়ে ঝাড়বে ! আর এই যুদ্ধ জিইয়ে রাখার জন্য যে আরব রাজা বাদশাহইরা যথেষ্ট । তাদের দ্বারাই কাঁঠাল পেড়ে সেই কাঁঠাল তাদের মাথায় ভেঙ্গে খাচ্ছে আমেরিকা, ইসরায়েল ও পশ্চিমারা । এর বিনিময়ে প্রাণ হারাচ্ছে লাখ লাখ আরব, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদিসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষজন, দেশে দেশে সহায় সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, থেমে যাচ্ছে সভ্যতার চাকা, পঙ্গুত্ব বরণ করছে, প্রাণ হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ ! আরব রাজা বাদশাহদের চেয়ে বিশ্ব মানবতার বড় শত্রু আর কে আছে ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.