নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হামিদের ব্লগ

হামিদ আহসান

ভবের এই খেলাঘরে খেলে সব পুতুল খেলা জানি না এমন খেলা ভাঙে কখন কে জানে ...

হামিদ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দি ওল্ড ম্যান এন্ড দি সী - আর্নেস্ট হেমিংওয়ে - ৮

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮

বাংলা রূপান্তর ©



বালকটি যেখানে ঘুমায় সে ঘরের দরজায় খিল মারা হয় না। বুড়ো দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো ধীর পায়ে। খালি পা থাকায় বুড়োর চলাচলে কোনো শব্দ হল না। চাঁদটা তখনও ছিল আকাশে। চাঁদের আলোয় বুড়ো খাটের উপর ঘুমন্ত বালকটিকে দেখতে পেলো। এগিয়ে গিয়ে বালকটির একটি পা উঁচু করে ধরে থাকলো বুড়ো যতক্ষণ না তার ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ভাঙলে বালকটি বুড়োর দিকে তাকালো। ইশারায় তাকে বের হতে বলে বাইরের দিকে চলে এলো বুড়ো।



বালক বিছানার পাশের চেয়ার থেকে তার ট্রাউজারটি নিল । তখনও তার চোখ থেকে ঘুম যায় নি। বিছানায় বসেই সে ট্রাউজারটি পরে নিলো। তারপর ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে সে বের হয়ে এলো। বুড়ো তার কাঁধে হাত রেখে বলল, 'আমি দুঃখিত'।



'পুরুষ মানুষকে তো কাজ করতেই হবে, তাই না? মন খারাপ করার কিছু নাই' - বলল বালকটি।



পথ তখনও অন্ধকার। বুড়োর কুটিরের দিকে হাঁটতে লাগলো তারা। এরইমধ্যে জেলেদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। অন্ধকার পথে খালি পায়ে মাস্তুল কাঁধে হেঁটে যাচ্ছে জেলেরা। বুড়োর কুটিরে পৌঁছে মালপত্রগুলো ভাগাভাগি করে তুলে নিলো দুজনে। তারপর রওনা হলো সৈকত চত্তরের দিকে।



'কফি খাবে?' জিজ্ঞেস করে বালকটি।



'আগে মালপত্রগুলো নৌকায় রাখি, তারপর কফি খাবো।'



এখানে খুব সকালে জেলেদের জন্য কফি বিক্রি হয়। কনডেন্স মিল্কের কৌটায় করে তারা কফি খায়।



'রাতে ঘুম কেমন হলো?' জানতে চায় বালক। কফিতে চুমুক দিয়ে এখন কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে সে। তারপরও তার চোখ থেকে যেন ঘুম যাচ্ছে না।



'শোন ম্যানোলিন' বালকটির নাম ধরে বলে বুড়ো, 'ঘুম ভালো হয়েছে। আমার মন বলছে আজ মাছ না নিয়ে ফিরছি না। '



'আমারও তাই মনে হয়। এখন আমি আমার আর তোমার সারডিন পোনাগুলো আর তোমার তাজা টোপগুলো নিয়ে আসছি। আমাদের নৌকার মালপত্র তো মহাজনই আনে। সে তার মালপত্র অন্য কাউকে ধরতে দেয় না' বলে বালক ম্যানোলিন।



'আমাদের কথা আলাদা । আমি তো তোকে সেই পাঁচ বছর বয়সেই মালপত্র আনতে দিতাম।'



'আমার মনে আছে। আমি এখন গেলাম । তুমি আরেকটা কফি খাও। এখানে তো আমরা বাকিতে খেতে পারি' - বলে বালকটি হাঁটতে শুরু করলো।



প্রবাল পাথরের উপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে বরফ ঘরের দিকে যাচ্ছে বালক ম্যানোলিন। বরফ ঘরে বরফ দিয়ে রাখা আছে সারডিন পোনা আর টোপগুলো।



বুড়ো ধীরে সুস্থে কফি শেষ করলো। সারা দিনে এই কফিটুকুই বুড়ো খায়। এটুকু তাকে খেতেই হবে। খাওয়া দাওয়ায় এখন আর মন নেই বুড়োর। খাওয়াটা বরং বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে তার জন্য। তাই নৌকায় দুপুরের খাবার নিয়ে যায় না। সকাল বেলার এই কফিটা তাই সে আরাম করে খায়। এটুকু তাকে খেতেই হবে। কারণ এর উপরই সারা দিন পার করবে সে। সঙ্গে শুধু এক বোতল পানি নিয়ে যাবে।



খবরের কাগজে মুড়িয়ে সারডিন পোনা আর টোপ দুটো নিয়ে ফিরে এলো বালকটি। তারপর খালি পায়ে নেমে পড়লো বালু আর কাঁকরময় পথে। পায়ের তলায় বালু আর কাঁকরের ঘর্ষণে ঘর্ষণে তারা চলে আসে বুড়োর নৌকার কাছে। উভয়ে মিলে নৌকার একটি দিক তুলে ধরে নৌকাটা পানিতে ঠেলে দিলো ।



'ভালো থাকবে আর সফল হয়ে ফিরবে' - বলল ম্যানোলিন।



'ভালো থাকিস তুইও' প্রত্যুত্তর দিলো বুড়ো। তারপর বৈঠাটা ঠিক করল। খানিকটা সামনে ঝুঁকে পরে বৈঠা বাইতে বাইতে ভোর রাতের অন্ধকারের মধ্যে বের হয়ে গেল পোতাশ্রয় থেকে। আরও অনেক নৌকা আশপাশ দিয়ে যাচ্ছে থেকে সমুদ্রের দিকে । বুড়ো অন্ধকারে তাদের দেখতে না পেলেও পানিতে বৈঠা ফেলার শব্দ শুনতে পাচ্ছিল ঠিকই। চাঁদটি পাহাড়ের নিচে হেলে পরেছে ইতোমধ্যে।



একমাত্র পানিতে বৈঠা পরার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। কোনো কোনো নৌকায় কেউ কেউ হয়তো দুয়েকটি কথা বলছিল,কিন্তু তা বৈঠার আওয়াজ ছাপিয়ে যেতে পারছিল না। পোতাশ্রয়ের মোহনায় এসে ছড়িয়ে পড়ল সবাই যার যার লক্ষ্য পথের দিকে। যে যেদিকে তার কাঙ্ক্ষিত মাছের সন্ধান পাবে বলে মনে করছে সে সেদিকেই যাচ্ছে।



বুড়ো আজ গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যাবে। মাটির গন্ধ পিছনে ফেলে সকাল বেলার সমুদ্রের সতেজ বাতাসের গন্ধ নিতে নিতে বুড়ো দাঁড় বাইতে লাগলো গভীর সমুদ্রের দিকে। দাঁড় বাইতে বাইতে বুড়ো চলে গেলো সমুদ্রের অনেকটা গভীরে। সমুদ্রের এদিকটায় এক ধরনের আগাছা জ্বল জ্বল করে জ্বলতে থাকে আলেয়ার মতো।



জেলেরা এই স্থানটিকে মৃত্যু কূপ বলে। কারণ, সমুদ্র এখানে হঠাৎ প্রায় সাত শ' বাঁও গভীর হয়ে গেছে । তাই এখানকার সমুদ্রের তলদেশের খাড়া দেয়ালে স্রোতের ধাক্কায় এখানে একটি ঘুর্ণির সৃষ্টি হয়। তবে সেই ঘুর্ণির কারণে এখানে সব ধরণের মাছ জড়ো হয়। চিংড়ি আর টোপের মাছ এখানে অনেক আসে। মাঝে মাঝে গভীর খাদে আসে সামুদ্রিক ছোট ছেট মাছের ঝাঁক। রাতের বেলা এগুলো ভেসে উঠলে চলন্ত বড় বড় মাছেরা এগুলো খেয়ে ফেলে।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৩

এম এ কাশেম বলেছেন: সুন্দর অনুবাধের জন্য ধন্যবাদ হামিদ ভাই

শুভ কামনা।

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৬

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ কাশেম ভাই..................

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৩

আরজু মুন জারিন বলেছেন: এই পর্ব টি ও চমৎকার হামিদ ভাই। অনেক অনেক ভাললাগা শুভেচ্ছা । ভাল থাকুন।।

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। ভাল থাকা হয় যেন......................

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১১

কোবিদ বলেছেন:
চমৎকার অনুবাদের জন্য আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ হামিদ ভাই।
আলোর খবর কি? প্রবেশাধিকার পাচ্ছিনা ................

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮

হামিদ আহসান বলেছেন: হা হা হা, আলোর খবর নিভু নিভু

ধন্যবাদ । ভাল থকবেন..................

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: গেথে গেলাম মুগ্ধতায় - সাবলীলতার, সহজ লেখনির।

+++

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩২

হামিদ আহসান বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। ভাল থাকবেন.....................

৫| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: চলুক........

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩

হামিদ আহসান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকা হউক অহর্ণিশ.........................

৬| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৩২

রাজিব বলেছেন: আপনার অনুবাদের সঙ্গে আছি।
"সমুদ্র এখানে হঠাৎ প্রায় সাত শ' বাঁও গভীর হয়ে গেছে "
সাত শ' বাঁও- এর মানে কি?

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬

হামিদ আহসান বলেছেন: বাঁও হলো পানির গভীরতা মাপার সনাতন পদ্ধতি। ছয় ফুটের মতো হয...........

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৮

হামিদ আহসান বলেছেন: বাঁও হলো গভীরতা পরিমাপের সনাতনী একক। ইংরেজীতে ছিল fathom । এক বাঁও বা ফ্যাদম সমান ছয় ফিটের মতো হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.