![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দে্শের লক্ষ লক্ষ বাচ্চা প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আমার বড় মেয়েও এবার পরীক্ষা দিচ্ছে। মা-মেয়ে সারা বছর কী যে কষ্ট করছে দেখে আমার মায়াই লাগে। স্কুলের পর আবার তিন জন টিচারের কাছে পড়া। মেয়ে সেকরিফাইস করেছে তার শৈশব আর মা লেগে আছে তার সাথে দিন রাত নিজের সকল চাওয়া পাওয়া বিসর্জন দিয়ে। সারা দেশের পরক্ষিার্থী বাচ্চাদের জন্য রইল আমার শুভকামনা আর তাদের মায়েদের জন্য রইল সহানুভূতি।
আর সবার জন্য জয় গোস্বামীর একটা কবিতা:
(দয়া করে কবিতার শেষ লাইনটি পর্যন্ত পড়বেন। না হলে বুঝবেন না)
টিউটোরিয়াল – জয় গোস্বামী
তোমাকে পেতেই হবে শতকরা অন্তত নব্বই (বা নব্বইয়ের বেশি)
তোমাকে হতেই হবে একদম প্রথম
তার বদলে মাত্র পঁচাশি!
পাঁচটা নম্বর কম কেন? কেন কম?
এই জন্য আমি রোজ মুখে রক্ত তুলে খেটে আসি?
এই জন্যে তোমার মা কাক ভোরে উঠে সব কাজকর্ম সেরে
ছোটবেলা থেকে যেতো তোমাকে ইস্কুলে পৌঁছে দিতে?
এই জন্য কাঠফাটা রোদ্দুরে কি প্যাচপ্যাচে বর্ষায়
সারাদিন বসে থাকতো বাড়ির রোয়াকে কিংবা পার্কের বেঞ্চিতে?
তারপর ছুটি হতে, ভিড় বাঁচাতে মিনিবাস ছেড়ে
অটো-অলাদের ঐ খারাপ মেজাজ সহ্য করে
বাড়ি এসে, না হাঁপিয়ে, আবার তোমার পড়া নিয়ে
বসে পড়তো, যতক্ষণ না আমি বাড়ি ফিরে
তোমার হোমটাস্ক দেখছি, তারপরে আঁচলে মুখ মুছে
ঢুলতো গিয়ে ভ্যাপসা রান্নাঘরে?
এই জন্যে? এই জন্যে হাড়ভাঙা ওভারটাইম করে
তোমার জন্য আন্টি রাখতাম?
মোটা মাইনে, ভদ্রতার চা-জলখাবার
হপ্তায় তিনদিন, তাতে কত খরচা হয় রে রাস্কেল?
বুদ্ধি আছে সে হিসেব করবার?
শুধু ছোটকালে নয়, এখনো যে টিউটোরিয়ালে
পাঠিয়েছি, জানিস না, কিরকম খরচাপাতি তার?
ওখানে একবার ঢুকলে সবাই প্রথম হয়। প্রথম, প্রথম!
কারো অধিকার নেই দ্বিতীয় হওয়ার।
রোজ যে যাস, দেখিস না কত সব বড় বড়
বাড়ি ও পাড়ায়
কত সব গাড়ি আসে, কত বড় আড়ি করে
বাবা মা-রা ছেলেমেয়েদের নিতে যায়?
আর ঐ গাড়ির পাশে, পাশে না পিছনে-
ঐ অন্ধকারটায়
রোজ দাঁড়াতে দেখিস না নিজের বাবাকে?
হাতে অফিসের ব্যাগ, গোপন টিফিন বাক্স, ঘেমো জামা, ভাঙা মুখ –
দেখতে পাসনা? মন কোথায় থাকে?
ঐ মেয়েগুলোর দিকে? যারা তোর সঙ্গে পড়তে আসে?
ওরা তোকে পাত্তা দেবে? ভুলেও ভাবিস না!
ওরা কত বড়লোক!
তোকে পাত্তা পেতে হলে থাকতে হবে বিদেশে, ফরেনে
এন আর আই হতে হবে! এন আর আই, এন আর আই!
তবেই ম্যাজিক দেখবি
কবিসাহিত্যিক থেকে মন্ত্রী অব্দি একডাকে চেনে
আমাদেরও নিয়ে যাবি, তোর মাকে, আমাকে
মাঝে মাঝে রাখবি নিজের কাছে এনে
তার জন্য প্রথম হওয়া দরকার প্রথমে
তাহলেই ছবি ছাপবে খবর কাগজ
আরো দরজা খুলে যাবে, আরো পাঁচ আরো পাঁচ
আরো আরো পাঁচ
পাঁচ পাঁচ করেই বাড়বে, অন্য দিকে মন দিস না,
বাঁচবি তো বাঁচার মত বাঁচ!
না বাপী না, না না বাপী, আমি মন দিই না কোনোদিকে
না বাপী না, না না আমি তাকাই না মেয়েদের দিকে
ওরা তো পাশেই বসে, কেমন সুগন্ধ আসে, কথা বলে, না না বাপী পড়ার কথাই
দেখি না, উত্তর দিই, নোট দিই নোট নিই
যেতে আসতে পথে ঘাটে
কত ছেলে মেয়ে গল্প করে
না বাপী না, আমি মেয়েদের সঙ্গে মিশতে যাই না কখোনো
যেতে আসতে দেখতে পাই কাদা মেখে কত ছেলে বল খেলছে মাঠে
কত সব দুষ্টু ছেলে পার্কে প্রজাপতি ধরছে
চাকা বা ডাঙ্গুলি খেলছে কত ছোটোলোক
না, আমি খেলতে যাই না কখোনো
খেলতে যাইনি। না আমার বন্ধু নেই
না বাপী না, একজন আছে, অপু, একক্লাসে পড়ে
ও বলে যে ওর বাবাও বলেছে প্রথম হতে
বলেছে, কাগজে ছবি, ওর বাবা, ওকে ….
হ্যাঁ বাপী হ্যা, না না বাপী, অপু বলেছে পড়াশোনা হয়নি একদম
বলেছে ও ব্যাক পাবে, ব্যাক পেলে ও বলেছে, বাড়িতে কোথায়
বাথরুম সাফ করার অ্যাসিড আছে ও জানে,
হ্যাঁ বাপী হ্যা, ও বলেছে,
উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯
হামিদ আহসান বলেছেন: আর এদেশে স্কুলে কোনো কিছুই পড়ায় না। বাচ্চাদের সব পড়া শিখতে হয় প্রাইভেট টিউটরের কাছে।
ধন্যবাদ সুন্দর একটি মন্তব্যরে জন্য ..............
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৮
নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: কবিতাটি পড়লাম , নীচে এসেই মনটা খারাপ হল।
বাবা মার স্বপ্ন পূরণ না করতে পারতে অনেক ছাত্র ছাত্রী এমন আত্মহননের সিদ্ধান্ত বেছে নেয়।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২২
হামিদ আহসান বলেছেন: হুমম, মন খারাপ করার মতোই একটা ব্যাপার । ।বারও ধন্যবাদ .................
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪০
ডি মুন বলেছেন:
আপনার মেয়েটার জন্যে অনেক অনেক শুভকামনা।
আর কবিতাটার কথা আর কি বলব !!!
চমৎকার একটি কবিতা শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ হামিদ ভাই।
ভালো থাকবেন।
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৯
হামিদ আহসান বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ডি মুন ভাই।
৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৯
দীপংকর চন্দ বলেছেন: উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..উঠে যাবে কাগজের প্রথম পাতায় …..
গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি জারিত।
আশাকরি একদিন বদলে যাবে দিন
ভালো থাকবেন হামিদ ভাই। সবসময়।
০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৬
হামিদ আহসান বলেছেন: //আশাকরি একদিন বদলে যাবে দিন//
শুভকামনা জানবেন ....................
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৭
নাসরিন চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ হামিদ ভাই আপনার মুল্যবান পোষ্টটির জন্য। আপনার মেয়ের জন্য দোয়া রইল। তবে বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি ও বাচ্চাদের ওপর যে অমানবিক ভাবে তাদের শৈশব কেড়ে নেয়া হয়---সত্যিই অমানবিক। বইয়ের বোঝা, কোচিং, প্রাইভেট টিউটর ওফ আর কি বলব!!!
জানেন অনেক শান্তিতে আছি এদিক দিয়ে---বাচ্চা তার পুরো শৈশবটাকে ভোগ করতে পারছে। কোন প্রেসার নাই। ৬ বছরের আগে কোন বাচ্চা স্কুলে যাওয়ার অনুমতিই পায়না। আর ক্লাসের পড়া ওরা স্কুলেই শেষ করে আসে। বাসায় এসে পড়ার চাপ নেই---প্রাইভেট টিচার--আমি দেখিনি খুব একটা তবে কিছু কিছু বাচ্চাদের সমস্যা থাকলে সেটার জন্য কেউ ব্যবস্থা হয়ত করে।