নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মৃত হরিণ ও তার সাবকেরা

১০ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১

মাহমুদা খানম মিতু বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে এখন আলোচিত একটি নাম। ইনি একজন চৌকস পুলিশ অফিসারের সহধর্মিনী, একজন পর্দানশীল মহিলা ও সর্বোপরি একজন মা। তিনি আলোচনায় উঠে আসার কারণ একজন মা হিসেবে নয়, একজন দক্ষতা সম্পন্ন গৃহিনী হিসেবেও নয়, তিনি আলোচনায় এসেছেন কারণ তিনি একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী এবং তিনি খুন হয়েছেন তার প্রিয়তম পুত্রের হাত ধরা অবস্থায় ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দিতে যেয়ে কিছু অজ্ঞাত পরিচয়ের দুর্বৃত্তের দ্বারা।

তার খুন হওয়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে, থাকতে পারে জঙ্গীদের সম্পৃক্ততা, থাকতে পারে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে যাদের চক্ষুশূলের কারণ হয়েছেন তাদের প্রতিহিংসা- এরকম আরও অনেক কিছু। প্রিয় বন্ধুরা আজ আমার আলোচনার বিষয় এসমস্ত নয়।

তার মৃত্যু অসংখ্য মানুষের মত আমাকেও ব্যাথিত করেছে। এ নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন সময়ে মিডিয়াকে দেওয়া বভিন্ন আপডেট আমাকে মুগ্ধ করেছে, আমি খুশী হয়েছি। আমার ধারণা আমার মত অভিব্যাক্তি সকলের। খুনিরা ধরা পড়ুক এ প্রত্যাশা সকলের। ইতিপূর্বে শুনেছি যে মোটরসাইকেলটি খুনিরা ব্যবহার করেছিল সেটাকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় জব্দ করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে মটরসাইকেলটি ফলো করা কালো রঙের গাড়িটির চালককে তার গাড়িসহ। খুনি ধরা পরুক কিংবা না পরুক ঘটনার যে ধারাবাহিক ফলোআপ তাতে আমাদের আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে। আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের সন্মানীত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় তার উদ্বেক প্রকাশ করেছেন তার স্বভাবসিদ্ধ আবালীয় বাণীর মাধ্যমে। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও উষ্মা প্রকাশ করেছেন। ঘটনার একটা সুরাহা হবে একথা ভেবে আমরা আনন্দিত।

প্রিয় পাঠক আসুন একটু পিছনে ফিরে যাই। অনেকটা বছর আগে ২১শের বইমেলা। রাত যখন কর্মচঞ্চল মানুষদের ঘরে ফেরার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল ঠিক ও রকম সময়েই ঘরে ফিরছিলেন বাংলাসাহিত্যের এক দিকপাল, বিদগ্ধ কবি হুমায়ূন আযাদ। পথিমধ্যে তিনি আক্রান্ত হন মৌলবাদীদের দ্বারা। পরবর্তীতে তিনি ঐ ইনজুরি কারণেই মারা যান জার্মানীতে চিৎসাধীন অবস্থায়। মৌলবাদীদের ভূত তার ছেলেকেও পিছু ছাড়েনি, তার ছেলেও প্রবাশী এখন প্রাণের ভয়ে। পুলিশের হম্বিতম্বি এটা সেটা নানান কিছু। আজও সে ঘটনার পরিপূর্ণ সুরাহা হয়নি। প্রশাসন ছিল যথেষ্ট নির্লিপ্ত।

অতিসম্প্রতি অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ড সময়ের আলোচিত ঘটনা। প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের সামনে হত্যা করা হয়েছে অভিজিৎকে। খুণী মাত্র গুটিকয়েক লোক। অভিযোগ আছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল কিছু পুলিশও। অভিজিৎতের বই যারা প্রকাশ করেছিল খুন করা হয়েছে তাদেরও। কিছুদিন আগে খুন করা হয়েছে সিলেটের অনন্তকে। আমি অভিজিৎ ও অনন্ত দু'জনের ফেসবুক থেকে শুরু করে যেযে মাধ্যমে তারা লেখেন সেখানে খোঁজ নিয়েছি। এমন কিছু তার লিখেননি যে জন্য তারা খুন হতে পারেন। আমি অভিজিতের একটা পোস্টে একজনকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে একটা বাজে কমেন্ট করতে দেখেছি, ব্যস ঐ পর্যন্তই। এছারাও খুন হয়ছে অনেক মুক্তমনা মানুষ ও অসংখ্য ব্লোগার। এ সমস্ত খুনের নেপথ্যে যারা ছিল, সেসমস্ত খুনে যারা সসরাসরি অংশগ্রহন করেছিল তারা কেউ আজ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি। মাঝে মাঝে পুলিশের দক্ষতা ও যোগ্যতা আমার কাছে এদেশের খেটে খাওয়া আমজনতার চেয়েও খারাপ মনে হয়েছে। এ পর্যন্ত যে দুজন জঙ্গী খুন করে পালিয়ে যাবার সময় ধরা পড়েছে তাও হিজরাদের হাতে। এখন ঐ সমস্ত হিজরারা জঙ্গীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। রাষ্ট্র যন্ত্র থেকে তাদের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়াতো দূরের কথা তাদের জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়নি। যদি পুলিশের চেয়ে সাধারণ মানুষ বেশী চৌকুষ ও সাহসী হয় তাহলে আমাদের এই পুলিশ জাতীয় হস্তির প্রতিপালন কতটুকু যৌক্তিক তা ভেবে দেখার সময় এসে গেছে।

আজ এই পুলিশ অফিসারের (বাবুল আক্তার) কান্নার ছবি দেখে আমার অভিজিতের বাবার কোথা মনে পড়ে, অনন্তের মায়ের কথে পড়ে, মনে পড়ে অসংখ্য খুন হওয়া মানুষের কথা যারা ধর্মীয় পশুত্বের শিকার হয়েছে, উন্মাদনার শিকার হয়েছে। মনে পড়ে সেইসব ছেঁচড়াদের কথা যারা ধর্ম রক্ষা হল বলে হাততালি দিয়েছে। তাদের কান্নার ধ্বনি এই রাষ্ট্রযন্ত্রের কানে পৌছায়নি। তারা সুবিচার পাননি। আজ এই মাহমুদা খানম মিতুর মৃত্যু আর আপামর মানুষের মাতম আমাকে মৃত হরিণ আর তার সাবকের করুণ আর্তির কথাই মনে করিয়ে দেয় যার বিয়োগান্তক করুণ অন্তর্ধান একটি সুদৃশ্যের হঠাৎ যবনিকাপাত ছাড়া আর কিছুই নয়।


১০ই জুন ২০১৬
যুক্তরাজ্য।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:১২

বিজন রয় বলেছেন: লেখাটি ভাল লেগেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ইতিমধ্যে হেরে গিয়েছে।

২| ১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:৪৯

আমি মিয়াবাড়ির ছেলে বলেছেন: গুপ্তহত্যা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে লিখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.