নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আমার ছায়া। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি, হাতের মধ্যে আকাশ; তবু ছুঁতে পারিনা।

মোহাম্মদ বাসার

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।

মোহাম্মদ বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এভাবে হয়না

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০৩



বাসুদেব আমাদের বাড়ির পাশে থাকে,
প্রতিদিন পানিতে ভেজানো গ্যাঁজানো সুপারি নিয়ে
বাসুদেব গ্রামের অন্যদিক দিয়ে অর্ধভঙ্গ মাটির যে পথ তা দিয়ে গ্রামের হাটে যেত।
আমি তখন অনেক ছোট, আমাদের পানের বরজ ঘেঁষে যে সরু রাস্তা ছিল
তা দিয়ে দুই একটা ছাগী বাসুদেবদের বাড়ি বরাবর অন্যের হাত ধরে পথ খুঁজে নিত প্রায়শই;
আমার কৌতূহল হতো, বুড়ো দাদীকে ডেকে জিগ্যেস করতাম
‘দাদী বলনা ছাগীগুলো বাসুদেবের বাড়ি অব্দি যেয়ে হঠাৎ করে তার বাড়িতে ঢুকে যায় কেন?’
দাদী কিছুই বলতেন না, শুধু মুচকি হাসতেন।
যৌবন পেরুনো কিছুটা নুইয়ে পরা বাসুদেব ঠিক উল্টো পথে হেঁটে হেঁটে
দু'একটা কাগজের ফাইল নিয়ে শহুরে মোক্তারের কাছে যেত;
কিছু বইচা আর টাটকিনি মাছ নিয়ে বাসুদেব যখন ঘরে ফিরত তখন তাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাতো।

আমি বাসুদেবের সাথে কথা বলিনি কখনো,
প্রতিদিন আমাদের বাড়ির সাথে লাগানো সরু পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া বাসুদেবকে দেখে ভাবতাম
কতইনা ভালোবাসে দেশকে, নতুবা রামকান্তের মতো অবলীলায়তো চলে যেতে পারতো ওপাড় বাংলায়!
কালের বিবেচনায় ক্ষুদ্রায়তনের সংসারে হিসেবী বাসুদেব অন্ন-বসত্রের অভাব রাখেননি কখনোই;
তিন কন্যা আর এক পুত্রকে তেলে-ঘিয়ে আর প্রকৃত শিক্ষায়ই মানুষ করতে চেয়েছিলেন বাসুদেব।

সেই বাসুদেব গেরুয়া পাঞ্জাবী, কাশমীরি শাল আর মোটা-কালো চশমায় আজ সাজালেন নিজেকে;
গ্রামের ইশকুলে প্রধান অতিথি তিনি, 'শিক্ষায় মাতৃভাষার গুরুত্ব' নিয়ে কথা বলবেন;
বাসুদেব মেঠো আঁকাবাঁকা পথে হেঁটে যাচ্ছেন ইস্কুলের দিকে,
আহাহা বাতাসে ভাঁজকরা চুলগুলো কি এলোমেলো হয়ে গেল?
পকেটে চিরুণী হাতড়াতেই বাসুদেবের হাতের আঙুল বেয়ে উঠে আসলো কয়েকটা ভাঁজ করা রঙিন কাগজ;
তার একটা প্লেনের টিকিট, হাতে নিলেন বাসুদেব; দেখলেন কোলকাতা থেকে পাঠানো পিসতুতো ভায়ের দলিল খানাও;
দার্জিলিং এ বাড়ি, পাহাড়ের গা ঘেঁষে উপড়ে মেঘ ছুঁইছুঁই-নাতিদের জন্য মোক্ষম আবাস।
বাসুদেবের মেয়ের কথা মনে পড়ে, দেশকে ভালোবাসেন বলিয়াই নিজ পুত্রদ্বয়ের সাথে গড়িয়াছেন সাময়িক বিচ্ছেদ;
নিন্দুকের কথা মনে পড়ায় বাসুদেব হাসে- 'আরে মেয়ে আমার বড় সুকন্যা! সংসদে বসিয়াছে!'
ক্রোধগুলো জেগে ওঠে মনে- নদীগুলো শুকিয়ে যায়, শুকায় যমুনা, শুকায় প্রমত্ত পদ্মা!

এটা-সেটা মনে করে করে বাসুদেব কখনযে ইশকুলে এসে পড়েছেন মনেই করতে পারেননা;
ইংরাজি পড়া নাতিনদের কথা মনে পড়তেই বাসুদেব সম্বিৎ ফিরে পান
অতঃপর একটু মুচকি হেসে মাইক্রোফোন নিয়ে প্রকম্পিত চিৎকারে বলেন
এভাবে হয় না, ওভাবে হবে না, মাতৃভাষার গাঁথুনি ছাড়া দেশকে গড়া বা ভালোবাসা যাবে না।
হলরুম প্রকম্পিত হয়, অসংখ্য তালিতে মুখরিত হলরুমে অসংখ্য বাসুদেবকে দেখা যায়;
সকলেই সমস্বরে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন ‘এভাবে আসলেই হয়না’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.