![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। ফিচার এডিটর- বাংলাপোস্ট, যুক্তরাজ্য।
আর কয়েকদিন পরে চিপা সেলিমের ১৭তম বিবাহ বার্ষিকী। চিপা তার বউকে কি উপহার দেবে তা ভেবে ভেবে সে প্রায় গলদঘর্ম। চিপার মাথায় সাধারণত টাকা ইনকামের ব্যাপার ছাড়া খরচের ব্যাপারগুলো তেমন একটা আসেনা।
চিপার মনে আছে আজ থেকে অনেকটা বছর আগে চিপা যখন বিবাহ করেছিল তখন কিভাবে খরচ কমানো যায় সে জন্য চিপা তার বাড়ির পাশে টঙ দোকান পাতিয়ে ব্যাবসা করা এক জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছিলেন। জ্যোতিষী চিপা সেলিমকে আরাকানের তামরুক মুল্লুক নগরীর জিগাতুল আলমাইশ পর্বত থেকে নিয়ে আসা নীল কন্ঠ পাথর দিয়েছিল আর খেতে দিয়েছিল বিষকাটালী পাতার তৈরী এক কাল কুচকুচে বটিকা প্রাসাদের ভিতর লুকিয়ে। চিপা সেলিম সেই বটিকা খেয়ে নীল কন্ঠ পাঁথরের আঙ্গুরীয় হাতে করে যখন বাসায় ফিরলেন তখন বেলা দ্বিপ্রহর। বাসায় কিভাবে ফিরলেন কেন ফিরলেন তা চিপা সেলিম আজও মনে করতে পারেন না। শুধু তার মনে আছে তার মা তার মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করেছিল 'বাবা এই তিন দিন কই আছিলি? আরেকটু হইলেইত তোর বিবাহটা মাটি হইয়া গেছিল। চল তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া বিয়ার অনুষ্ঠানে চল।' চিপা সেলিমের মা সবাইকে সবিস্তারে চিপা সেলিমের কি দশা হয়েছিল এবং সে এই তিন দিনে কি অবস্থায় কোথায় ছিল সেই কাহিনী বলে গেল। সকলেই এসে বলতে লাগল 'সোনার টুকরা পোলা ফিররা আইছে এইডাই বেশী। বিয়ার বাজার সওদার কথা বাদ দেন।' চিপা যখন বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে তার বউ বিলকিস আক্তারকে নিয়ে বাসায় ফিরলো তখন গভীর রাত। আলমারি খুলে বিয়ের বাজারের ৩ লাখ টাকা অক্ষত আছে দেখে হাতে পরা নীল কন্ঠ আঙ্গুরীয়তে চুম্বন করে মনে মনে আহ্বালাদিত হয় ফিসফিস করে বলে উঠলেন ' জয় ব্যাঙ চাঁদ গুরু, জয় ব্যাঙ চাঁদ গুরু।' চিপা সেলিমের বউ বিলকিস আক্তার ঘোমটার ফাঁক দিয়ে চিপাকে বিড়বিড় করতে দেখে ভাবতে লাগলেন 'লোকটার মাথা কি এখনো ঠিক হয় নাই!'
চিপা সেলিমের মাথায় আজ আবার নতুন করে ব্যাঙ চাঁদ গুরুর স্মৃতি খাবি খেতে লাগল। সকাল হতে না হতেই চিপা প্রাত ভ্রমনের কথা বলে ব্যাঙ চাঁদ গুরুর আস্তানায় হাজির হলেন। ব্যাঙ চাঁদ গুরু ৫০০ টাকার তিনটে চকচকে নোট পকেটে রেখে চিপার মাথায় হস্ত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল 'ব্যাটা এইবার আর তোরে কোন বটিকা সেবন করতে দেবনা, তোর বউরে নিয়া আয়, ওকে এমন বটিকা খাওয়াব ৩ দিন পরে যখন হুশ ফেরবে ততদিনে তোর বিবাহ বার্ষিকী শেষ হয়ে যাবে। চিপা গুরুর অসীম পান্ডিত্যে আবারও আরেকবার মুগ্ধ হয়ে গুরুকে প্রনাম করে তার বউ বিলকিসকে এসে বলল 'চল তোমাকে ব্যাঙ চাঁদ গুরুর কাছে নিয়ে যাই। গুরুর দেয়া নীল কন্ঠ পাথর পরলে চাকুরীতে তোমার প্রমোশন কেউ আটকাতে পারবেনা।' ৬ বছর যাবত প্রমোশন না হওয়া বিলকিস আক্তার ব্যাঙ চাঁদ গুরুর আস্তানায় যেয়ে হাতে নীল কন্ঠ আঙ্গুরীয় পরিধান করলেন ও গুরুর দেয়া বিষকাটালী বটিকা মিশ্রিত প্রসাদ ভক্ষণ করলেন। চিপা সেলিম রাতের আঁধারে সন্তর্পণে আলমারিতে রাখা বউয়ের জেদের কারণে বিবাহ বার্ষিকী পালনের জন্য যে ৫০ হাজার টাকার ৫ টি চকচকে বান্ডিল ব্যাংক থেকে তুলেছিলেন তাতে চুমা খেয়ে মনে মনে ভাবতে লাগলেন 'যাক অতিরিক্ত ৫০০০০ টাকায় আগামী কোরবানীটা নেহায়েত খারাপ হবেনা।' চিপা সেলিম তার অসীম বুদ্ধিমত্তায় নিজেই আরেকবার মুগ্ধ হলেন এবং হাহা অট্টহাসিতে ঘর প্রকম্পিত করে কখন যে ঘুমিয়ে গেলেন তা নিজেই টের পেলেন না।
©somewhere in net ltd.