![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
মন্ত্রী বউ
মুজিব রহমান
সকাল থেকেই বিছানায় শোয়ে আছে লুৎফর। গত পঞ্চাশ বছরে কোন একটি দিনকি সে এভাবে দোকানে না গিয়ে কাটিয়েছে? কাটায়নি বলেই মনে হয়। বাবার রুটির দোকানে রুটি বেলতে বেলতে একসময় মালিক হল। ঘাট আঘাট হল। অনেক বছর পরে, আবারো বাজারটি জমজমাট হয়ে উঠলো। এতো উত্থান-পতনে লুৎফর কোনদিন দোকান কামাই করেনি। আজ শরীরটা, আসলে মনটা স্বাভাবিক নয় বলে সে দোকানে যায়নি। আজ তাঁর দিনটা অন্যরকম। পঞ্চাশ বছর আগের একটি সুখ আজ তাকে উথলে দিয়েছে। সত্তর বছরের জীবনটাতো লাঞ্ছনা আর গঞ্জনায় ভরা জীবনই। এখন ছেলে মেয়েদের কাছে, পুত্রবধূদের কাছে সে অপ্রয়োজনীয়ই। লুৎফরওতো বাঁচতে চায় না। কিন্তু এটাতো তাঁর হাতে নেই। স্ত্রী গত হয়েছে কয়েক বছর। স্ত্রীর হাজারো অর্থহীন স্মৃতি অথবা স্মতিহীন আর একজনের সামান্য কিন্তু হৃদয় বিদীর্ণ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছে। পৃথিবীটাকে তার কাছে যন্ত্রণাময়ই মনে হয়। একজন অর্থহীন মানুষের বেঁচে থাকাটাও অর্থহীন। তারপরও স্বাভাবিক ভাবেই চলছিল। পঞ্চাশ বছর আগের হৃদয় বিদীর্ণ স্মৃতির সেলিনা জাহান চৌধুরীর হঠাৎ আগমনই আজ তাকে অতি মাত্রায় বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।
আগের শুক্রবার মাহবুব এসেছিল। বলেছিল, আগামী শুক্রবার মন্ত্রী সেলিনা জাহান চৌধুরীর সংবর্ধনা। সরকারের একমাত্র পূর্ণ মহিলা মন্ত্রী তিনি। নারী উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় কদিন আগে একটি সংগঠন থেকে তিনি পুরষ্কার পেয়েছেন। এই জন্যই এই সংবর্ধনার আয়োজন। আসলে মন্ত্রী কর্তৃক মাহবুবের বিশেষ উন্নয়ন ঘটায় এবং ভবিষ্যতে আরো সুবিধার আশায় এই সংবর্ধনা। মাহবুব মন্ত্রীর সাথে পড়তো। মাহবুবের সাথে লুৎফরের কোন সম্পর্কও ছিল না। তার রুটির দোকানে দু একবার চা-নাস্তা খেতে আসলেও, কোন বিষয়ে কোন কথা কখনো হয়নি। খাওয়ার পরে নিরবে বিল দিয়েই চলে যেত। লুৎফর এতে স্বস্তিও পেত। গত দশ বছরে মাহবুবের সাথে রাস্তা ঘাটে দুই এক ঝলক দেখা হলেও কথা হয়নি। মাহবুবের আসার কথাও না। মন্ত্রীর কল্যাণে মাহবুবও অনেক ফুলেফেপে কলাগাছ হয়েছে। তখন দুপুর দোকানেও কেউ ছিল না। মাহবুব মুখ কানের কাছে এনে বলল, ‘সে তো আপনের প্রথম স্ত্রী’। শুনেই কেঁপে উঠেছিল লুৎফর। পঞ্চাশ বছর আগের কথা। বিষয়টা জালাল, মাহবুব, সেলিনা আর একজন হুজুর ছাড়া আর কেউ জানতোও না। সেলিনার স্বামী মন্ত্রী আনোয়ার জাহান চৌধুরী এমপির আকস্মিক মৃত্যুর পরে যখন নমিনেশন পেল, তখন সেই হুজুর বিয়ের কথা ফাঁস করে দিতে চেয়েছিল। কদিন পরেই রূপসা নদীতে পাওয়া গেল হুজুরের লাশ। আর ক‘দিন পরেই সেলিনার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোক তার কাছে এসেছিল। এসব জানিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল, সেলিনা তার স্ত্রী কিনা। সে অস্বীকার করেছিল। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কও অস্বীকার করেছিল। বলেছিল, এসব গুজব। জালালও লঞ্চ ডুবিতেই মরেছে বিয়ের কদিন পরেই। এই বিষয় নিয়ে আর কারো সাথে আলাপও হয়নি। এই বিষয়ে আর ভাবতেও সাহস পায়নি লুৎফর। মাহবুব বলল, সংবর্ধনায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে। এর অর্ধেকতো আপনার দেয়া উচিৎ। মাহবুব কানের কাছে আবার মুখ এনে বলে, শত হলেও আপনার প্রথম স্ত্রী। আপনাদের তো ডিভোর্সও হয় নাই। সে হিসাবে এখনো তাকে স্ত্রী হিসাবে দাবী করতে পারেন। আমি সহযোগিতা দেইনি বলে, সে মন্ত্রী। দিলে, আপনার ঘরে লাকড়ি ঠেলতো। হয়তো আপনার বউর মতো মরে এতো দিনে ভূত হয়ে যেত। দেন আপনার যা ইচ্ছা। লুৎফর বলতে চেয়েছিল, সহযোগিতা দেওনি বলেই আজ সব সুবিধা নিচ্ছ। মন্ত্রীর কারণে কোটিপতি হয়েছো, স্কুলের চেয়রম্যান হয়েছো। বলা হয় না। এ বিষয়ে সে মুখ খুলবে না। কিছুক্ষণ আগে আসগর মিয়া পাওনা ৫ হাজার টাকা দিয়ে গেছে। সে ৫ লক্ষ টাকার পরিবর্তে ৫ হাজার টাকা তুলে দেয়। সে ৫ হাজার টাকা দেয়ার মতো ক্ষমতার লোকও নয়। টাকাটা দিয়ে তৃপ্তি বোধ করে। সেলিনাকে উপহার দিল ভেবে পুলকিত হয়।
পঞ্চাশ বছর আগের কথা। লুৎফরের বয়স বিশ। চেহারা সিনেমার নায়কদের মতো। নায়ক দিলিপ কুমারের সাথে অনেক মিল ছিল দেখতে। সেলিনা তখন মাত্র এইটে পড়ে। সেও নায়িকাদের মতোই ছিল। সেলিনাই প্রেমে পড়ে গেল লুৎফরের। তা না হলে লুৎফরের কখনোই সাহস হতো না। সেলিনাদের বাড়ি খুলনা। নায়িকার মতো চেহারা বলেই নজরে পড়েছিল এক ধনাঢ্য পরিবারের বখাটে ছেলের। ছেলেটির বাবা উল্টো প্রচ- চাপ দেয় সেলিনার বাবাকে, অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য। মেয়ে ভাল ছাত্রী বিবেচনা করে সেলিনার বাবা তাকে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দেয় বিক্রমপুর। নানা বাড়িতে। লুৎফরের ছিল সিনেমা দেখার নেশা। নিজেকে সবসময় ফিটফাট রাখতো। সেলিনা কি তার শারীরীক সৌন্দয্যে না কথার মারপ্যাচে প্রেমে পড়লো তা আর মনে নেই। কোন অবসরে চিন্তা করতে গেলেই ভেসে আসে একটি স্মৃতিই। সে তখন সেলিনাকে দেখেছে। শুনেছে খুব ভাল ছাত্রী। সে গান গাইতে পারে, আবৃত্তি করতে পারে। একটি সিনেমার গল্পের মধ্যেই ঢুকে গিয়েছিল লুৎফর। সেলিনার রূপ আর গুণের সংবাদে বিক্রমপুর অস্থির হয়ে পড়েছিল। সব তরুণরাই বোম্বের নায়িকা নার্গিসের পরিবর্তে প্রেমে পড়ে সেলিনার। যারা একটু প্রভাবশালী সেই তরুণরা বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। এমন একটি অবস্থার মধ্যে এক বর্ষার দুপুরে ঘরে বসে লুৎফর সেলিনার কথাই ভাবছিল। আর তখনি ঘরে ঢুকে সেলিনা। ওর পরনে একটি নীল শাড়ি ছিল, ওকে লাগছিল নীলপরীর মতো। লুৎফরের চোখে এই দৃশ্যটিই ভাসে। এক সপ্তাহ চোখে চোখে কথা হয়। লুৎফর কথা শিখেছিল সিনেমা দেখে দেখে। হয়তো কথার বাঁধনেই বেঁধে ফেলে সেলিনাকে। সেগুলো স্মৃতিতে ঠিক ধরা দেয় না। তবে আরেকটি স্মৃতি এখনো টাটকা। যেদিন প্রথম সেলিনাকে জড়িয়ে ধরেছিল, ঠোটে গুজে দিয়েছিল ঠোঁট। এই ধাক্কাতেই কেঁপে গিয়েছিল লুৎফর, কিছুক্ষণ পর সে টের পায় তার লুঙ্গি ভিজে গেছে। এই ৫০ বছর পরে আজোকি একটু লজ্জা পেল লুৎফর। ঠিক বলা যায় না। লুৎফরের সুখ স্মৃতি এরকম কটা দিনই। বিয়েটা আকস্মিকই ঘটে গেল। সেলিনা প্রস্তাব দিলে লুৎফরের বন্ধু জালালই ব্যবস্থা করে। এক দুপুরের বিয়ে হয়ে যায়। রাতে পালানোর কথা। টাকা দিবে এবং ব্যবস্থা করবে মাহবুব। মাহবুব জালালকে মুখে বলেছিল বটে তবে তার সামর্থ ছিল না। এটা আজ বুঝে লুৎফর। কিন্তু ভরসা করেছিল। মাহবুবের আক্্েরাশ ছিল। সে ছিল ফার্স্ট বয়, কিন্তু সেলিনা তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। এজন্যই সে চেয়েছিল সেলিনাকে ঝামেলায় ফেলতে। শেষ পর্যন্ত মাহবুবই উল্টো লুৎফরকে ঝামেলায় ফেলে দেয়। রাতে পালানোর ঘটনা ফাঁস করে দেয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ই সেলিনা তার মামাদের হাতে ধরা পড়ে। তারা লুৎফরকে মারধর করে। সেই মারধরেই সেলিনা কোরআন ধরে শপথ করে বলে, লুৎফরকে ছেড়ে দিলে সে আর তার সাথে সম্পর্ক রাখবে না। লুৎফরও আর জোর খাটানোর কথা ভাবে নি।
এতে অবশ্য তাদের প্রেমকাহিনী চাপা থাকেনি। তা ফুলেফেপে আরো অনেক বড় হয়ে উঠেছিল। লোকেরা বলতো, কলম আর বেলনের প্রেম। কলম মানে শিক্ষিতা মেয়ে কলম দিয়ে লিখে আর বেলন মানে অশিক্ষিত ছেলে রুটি বেলে যে বেলন দিয়ে। লুৎফর এ কথায় কষ্ট পেত। যখন প্রেম করতো তখন মেয়ের চেয়ে লুৎফরই বেশি শিক্ষিত ছিল। লুৎফর ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে। তাদের প্রেম যতটা প্রচার পেয়েছিল, বিয়েটা পায়নি। পায়নি লুৎফরের কারণেই। সে কখনোই কাউকে বলেনি।
সেলিনা এসএসসি পাশ করে ফিরে যায় খুলনায়। বিএম কলেজে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরে। একসময় রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়তেই হয়তো বিয়ে করে সেই বখাটে আনোয়ার জাহান চৌধুরীকেই। আনোয়ার জাহান চৌধুরীর বাবাও এমএলএ ছিল। সেলিনা কি রাজনৈতিক সিঁড়ি হিসাবে আনোয়ার জাহান চৌধূরীকে বিয়ে করেছিল? তা সে জানে না। ভাবে হয়তো ছিল। সেলিনা এমপি না হওয়া পর্যন্ত কোন খবরই পায়নি। যে হুজুর বিয়ে পড়িয়েছিল তার বাড়ি ছিল বরিশাল। তাকেও সেলিনার মামারা এলাকা ছাড়া করেছিল। সে কিভাবে খুলনা গিয়ে সেলিনার প্রতিপক্ষের সাথে হাত মিলিয়েছিল তাও লুৎফর জানে না। নাকী সেলিনাকে ব্লাক মেইল করে কিছু টাকা কামাতে চেয়েছিল। সে জানে না। শুধু জানে হুজুরের লাশ পাওয়া গিয়েছিল রূপসা নদীতে।
সাইরেন বাজিয়ে বাজিয়ে একবহর গাড়ি যাওয়ার শব্দে লুৎফরের স্মৃতির জাল ছিন্ন হয়। একটু পরেই শ্লোগান শোনে সেলিনা জাহান এসেছে, বিক্রমপুর জেগেছে। আমাদের মেয়ে সেলিনা, গর্বে মোরা বাঁচিনা। শুভেচ্ছা স্বাগতম, সেলিনা জাহানের আগমন। লুৎফররের খুব ইচ্ছা করে সামনা সামনি দেখতে। টিভিতে পত্রিকায় দেখেছে। এখন সেলিনার জন্যই সে টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছে, পত্রিকাতো পরেই না। কি ধারালো চেহারা। সৌন্দর্যতা যেন উপচে পরে। আর লুৎফর বুড়ো হয়ে গেছে। তিনটা মেয়ের বিয়ে দিয়েছে, সেখানে অশান্তি। তিনটি ছেলে নিয়ে কম অশান্তি নয়। একটাও মানুষ হয়নি। নিজেদের মধ্যে লেগেই থাকে। অন্যদের সাথেও লেগে থাকে। অশান্তিতে মনটা ভরে উঠে। সেলিনার ছেলে মেয়ে কয়টা সে জানে না। মাহবুব অবশ্যই জানে। তার কাছে জানতে চাওয়াটা লজ্জার হবে। বিছানা ছেড়ে উঠে। কতদিন সাজগোজ করে না। সে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়। একটি চিরুনী ছাড়া প্রসাধনী কিছু খুজে পায় না। চিরুনীটি হাতে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, নায়ক দিলিপ কুমারের মতো সেই চেহারা আর নেই, সেই চুল ঝরে গিয়ে দখলে নিয়েছে টাক। সে এখন সত্তর বছরের বুড়ো হাবড়া। ঠোঁটে ঠোঁট চাঁপে। আর তখনই মনে হয়, লুৎফরের ঠোঁটে লেগে আছে সেলিনার ঠোটের উষ্ণতা। একদিনেরই স্মৃতি; এই একদিনের স্মৃতিটাই হিরকময়। কত স্মৃতি ভুলে গেছে; শুধু এই স্মৃতিকটা ভুলেনি। লুৎফর আর বিয়ে করতে চায়নি। সে তার বাবার একমাত্র পুত্র। সেবার জোর করে পাত্রী দেখাতে নিয়ে গেল। হঠাৎ পাত্রীর দিকে তাকিয়েই তার মনে হয়েছিল, এদেখি সেলিনা। কেন মনে হয়েছিল সেটাও এক বিস্ময়। তার স্ত্রীর সাথে সেলিনার কোন মিলই ছিল না, সেটা চেহারাতেও নয় ব্যক্তিত্বেও নয়। কিন্তু এই মনে হওয়াটা প্রায়ই হতো। স্ত্রীর ঠোটে চুমু খেতে গিয়ে সারা জীবনই ভেবে নিয়েছে সে সেলিনার ঠোটেই চুমু খাচ্ছে, জরিয়ে ধরেছে সেলিনাকেই; শারীরিক সম্পর্কটাও হচ্ছে সেলিনার সাথেই। অন্ধকারে স্ত্রীকে আদর করার ছলে আসলে আদর করতে চেয়েছে সেলিনাকেই। এতোগুলি বছর এভাবেই সেলিনাকে নিয়েই পার করেছে। তার কখনো মনে হয়নি স্ত্রীর প্রতি অবিচার করেছে। স্ত্রীর আলাদা সত্ত্বাকে অস্বীকার করে তাকে অপমান করেছে। স্ত্রীর সবক্ষেত্রে সেলিনাকে ঢুকিয়ে সে নিজের তৃপ্তিটাকেই ভোগ করেছে। আজ স্বশরীরে হাজির হয়েছে সেই সেলিনা, তার বুকের সেলিনা, মনের সেলিনা। সামনে গিয়ে দাঁড়ালে কি একটু চমকে উঠবে? জানতে চাইবে, আমি কেমন আছি। তবে সে নিশ্চিত হতে পারে না, সেলিনা তাকে মনে রেখেছে কি না। তাদের মধ্যে বিয়ে হয়েছে কিন্তু ডিভোর্স হয়নি। সেলিনার দ্বিতীয় বিয়েটা হয়তো আইনত বৈধ নয়, কিন্তু প্রথম বিয়ের সে দাবিদার নয়। সেতো কোর্টে দাঁড়াচ্ছে না স্ত্রীর দাবী নিয়ে। সেলিনা কি এখনো তার স্ত্রী? তার কি দাবী আছে সেলিনার উপর?
আয়নায় আবারো মুখ রাখে। পেছনের চুল, পাশের চুল টেনে মাঝের টাক ঢাকার চেষ্টা করে। তার একটি প্যান্ট আছে। কত বছর পরে না। গুটি কয়েক লুঙ্গি পাঞ্জাবির ভিরে খুঁজে তা পায় না। সার্টটি খুঁজে পেয়ে দেখে সেটা পরে যাওয়ার যোগ্য নয়। এক সময়ের নায়ক লুৎফর কি লুঙ্গি পাঞ্জাবি পরেই সেলিনার সামনে দাঁড়াবে। অনেকক্ষণ ভেবে ভেবে সে ভাল একটি লুঙ্গি পরে এবং একটি পাঞ্জাবি গায়ে দেয়। মনটা খারাপ হয়। যে চেহারার ঝলক, পোষাকের ঝলক আর কথার ঝলকে বেঁধেছিল সেলিনাকে। আজ তার একটিও অবশিষ্ট নেই। ঠিক সেই সময়ই সে সাইরেনের শব্দ শুনে। সে বুঝে নেয় মন্ত্রী তার বক্তব্য শেষ করে চলে গেল। লুৎফর হাফ ছেড়ে বাঁচে। দেখা না হয়ে ভালই হয়েছে। এই দেখা হওয়াটা তাকে ঝুঁকির মধ্যেই ফেলে দিতে পারতো। সেলিনা হয়তো সেই অতীত ঘটনাটা মুছে দিতে পারলেই খুশি হতো।
পরদিন মাহবুব ঠিক দুপুর সময় দোকানে এসে হাজির হয়। দোকান ফাঁকা। সে লুৎফরের কানের কাছে মুখ এনে বলে, আপনার স্ত্রীকে কেমন দেখলেন?
লুৎফর বলে, সে আমার স্ত্রী নয়, আমি দেখতেও যাইনি।
আপনি দেখতে যাননি এটা হয়তো সত্য কিন্তু সে আপনার স্ত্রী নয় এটা সত্য নয়। আমাকে জালাল সবই বলেছিল।
জালাল আপনাকে ভুল বলেছিল। জালালই এই মিথ্যা রটনা রটিয়েছিল।
মাহবুব তার হাতে থাকা একটি কাগজের ব্যাগ থেকে পাজামা-পাঞ্জাবী বের করে বলে, মন্ত্রী সৌদী ওমরা করতে গিয়ে আপনার জন্য নিয়ে এসেছে। আপনার ঈদ উপহার হিসাবে। এখনও বলবেন সে আপনার কেউ না। নিন, আপনাকে দেয়ার জন্য আমার মাধ্যমে পাঠিয়েছে।
লুৎফর প্যাকেটটি হাতে নেয়। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে প্যাকেটের দিকে। প্যাকেটের দিকে চোখ রেখেই বলে, এখনও বলি সে আমার কেউ নয়। তার সাথে কখনো কোন সম্পর্ক ছিল না।
মাহবুব আর কোন কথা না বাড়িয়ে উঠে যায়। লুৎফরের চোখ থেকে একফোটা আনন্দাশ্রু ঝরে পড়ে পাঞ্জাবীর উপর।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৩
মুজিব রহমান বলেছেন: Thank you.
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:০৭
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সুন্দর। +++++++