নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পুরবী বসুর সাথে কিছু সময়

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:৫৬

এদেশের সাহিত্যে আধুনিক ছোটগল্পে কি গদ্যরচনার উৎকর্ষবিষয়ক যে কোনে বিবেচনার ক্ষেত্রেই অনিবার্যভাবে যাদের নাম উঠে আসবে তাদের মধ্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও পুরবী বসু দম্পত্তি অন্যতম। পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর এই দম্পতির সাথে সন্ধ্যা ৬টায় সাক্ষাৎ করি তাদের ঢাকাস্থ বাসভবনের উনিশ তলায়। আমার সাথে ছিল কবি সান্দ্র মোহন্ত। তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা মুগ্ধ হলাম। আমাদের আগেই সেখানে ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার প্রতিনিধি। তিনি এসেছেন তাদের পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখার আবেদন নিয়ে। আমরা প্রথমে তাদের দুজনকে আমাদের প্রকাশনা ঢেউ উপহার দিলাম। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত পত্রিকাটি হাতে নিয়েই বললেন এটি ঢেউ না টেউ। আমি সন্ত্রস্ত হলাম কোথাও হয়তো ঢেউ টেউ হয়েছে। দেখলাম আসলেই তাই। ওনি বললেন, আমার চোখ এমন যেখানে ভুল সেখানেই তা চলে যায়। আমি প্রমাদগুণি কারণ বেশ কয়েকটি ভুল রয়েছে। সব ওনার চোখে পড়লে আমাদের সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা পাবেন। আমার আগ্রহ পুরবী বসুকে নিয়েই বেশি। তার পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের মালপাড়ায়। তাকে বললাম, মুন্সীগঞ্জ যান কি না? বললেন, না যাই না। মুন্সীগঞ্জের প্রাণ ছিল এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খালটি। সেটিই নাই। আমি বলি, খালটি সম্ভবত নোংড়া ছিল এবং এর কারণে শহরটির যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছিল বলেই বন্ধ করা হয়েছে। তিনি একমত হলেন না। বললেন, এটা কোন ভাবেই নোংড়া খাল ছিল না। বর্ষাকালে ঘোলাপানি প্রবাহিত হত কিন্তু কিছুদিন পরেই এর পানি টলটল করতো। শীতকালে খালটি শুকিয়ে যেত। এটি সংস্কার করে শহরটিকে আরো সুন্দর করা যেত। আমরা দ্বিমত পোষণের পথ পাই না। তার মুন্সীগঞ্জের বন্ধুদের কথা জানতে চাই। তিনি স্কুল ও কলেজে পড়েছেন। সেভাবে এখানকার বন্ধুদের কথা মনে করতে পারলেন না। তার স্মৃতিতে রয়েছে মুন্সীগঞ্জের প্রকৃতি, নদী, খাল। নৌকায় করে হলদিয়াতে বড় বোনের বাসায় যেতেন। তার বড় বোনের ছেলে অলক মিত্র আমাদের ঘণিষ্ঠজন। সৈয়দ হক দম্পত্তি এসেছিলেন শুনে তিনি আগ্রহী হলেন। যখন বললাম মিসেস সৈয়দ হক তখন তিনিও আপত্তি করলেন মিসেস হক বলায়। আমি ভুল স্বীকার করে বলি, এটা আমাদের বাজে অভ্যাস; তা না হলে গত কালই আনোয়ারা সৈয়দ হক আমাদের এসব বিষয়ে সতর্ক করেছেন। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত বললেন, তাহলে ওনি নিজের নামের সাথে সৈয়দ হক জড়ালেন কেন? পুরবী বসু বললেন, মেয়েরা নামের সাথে স্বামীর বংশের নাম সংযুক্ত করে। এই রেওয়াজটা মুসলমানদের মধ্যে কম কিন্তু অন্যরা প্রচুর করে। আমি বলি, আপনি কিন্তু দত্ত নন, বসু। জ্যোতিপ্রকাশ এটা শুনে খুশি হন। পুরবী বসু জানান, সৈয়দ হক খুবই আড্ডাবাজ মানুষ। তার সাথে দেশে বিদেশে অনেক স্থানেই বিশেষ করে বিদেশে আড্ডা দিয়েছি। তার গল্প বলা খুবই আকর্ষণীয়। আমি বলি, সৈয়দ হকের বয়স ৭৭ হয়েছে, এবার একটু ম্রিয়মান মনে হল। আনোয়ারা সৈয়দ হককেই বেশি উৎফুল্ল মনে হল। বাংলাদেশের ছোট গল্প নিয়ে দুটি ঢাউস বই দেখান। বলা হচ্ছে দেশের শ্রেষ্ঠ ৫০টি গল্প এতে রয়েছে। একটি কলকাতা থেকে এবং একটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত। এতে জ্যোতিপ্রকাশ এবং পুরবী বসু দুজনেরই ছোট গল্প স্থান পেয়েছে। স্থান পেয়েছে সৈয়দ হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্পও। আমি বলি, হুমায়ূন আহমেদ বাদ কেন? পুরবী বসু বলেন, তাকে বাদ দেয়াটা ঠিক হয়নি। জ্যোতিপ্রকাশ বলেন, আসলে একেকজন একেকভাবে চিন্তা করে। আমি বলি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল নেই তারা বাংলাদেশের নন অথচ একজন জাতীয় কবি এবং অন্যজন জাতীয় সংগীতের লেখক। ব্যাপারটা কষ্টকর মনে হচ্ছে। জ্যোতিপ্রকাশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলি আপনি কি বলেন? তিনি বললেন, আসলে বাংলা পশ্চিম বাংলা এবং বাংলাদেশ এই তিন ভাবেই বাংলাকে চিন্তা করা হয়। বাংলা শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পই হওয়া ঠিক। তবে বাংলাদেশে পশ্চিম বঙ্গের চেয়ে অনেক ভাল ভাল ছোট গল্প লেখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আবার অনেক ভাল ভাল উপন্যাস লেখা হয়েছে।

আলোচনার এক পর্যায়ে পুরবী বসু বললেন, সাম্প্রতিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে তোমার অনেক পড়াশোনা আছে বলেই মনে হচ্ছে। আমি বলি, বিশ্ব সাহিত্য নিয়েও আমার অনেক আগ্রহ। আমি পড়ি এবং আমার মনে হয় সাহিত্য ক্ষেত্রেও বাংলা অনেক পিছিয়ে আছে। তিনি বলেন, আমি তা মনে করি না। তুমি ক্লাসিক বাংলা সাহিত্য পড়েছ কি না? আমি বলি, আমি বিভূতি, মানিক, শরৎ, তারাশংকর ভালভাবেই পড়েছি। তবে বিদেশি অনেক বই পড়ে যেভাবে আলোড়িত হয়েছি তা বাংলা কোন বই পড়ে হইনি। যেমন উইলবার স্মিথ এর রিভার গড পড়তে গিয়ে মনে হয়েছিল, আমার বইটি পড়তে ৭দিন লাগবে। এই সাত দিন আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। মারা গেলে অতৃপ্তি থেকে যাবে। এছাড়া আলবেয়্যার কামুর দ্য আউট সাইডার কিংবা ড. জেকিল এবং মিস্টার হাইড পড়তে গিয়েও অভিভূত হয়েছি। এ ধরনের আকর্ষণ কোন বাংলা বই পড়ে পাই নি। এরপরও পুরবী বসু একমত হলেন না।

ঢেউ নিয়ে ভূয়ষী প্রশংসা করলেন দুজনেই। বললেন, এ ধরনের উদ্যোগ দেখেন নি। শিক্ষার্থীদের ছড়া পড়ে জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বললেন, অসাধারণ! কোথাও তালও কাটেনি। তিনি ‘শ্রেষ্ঠ বন্ধু’, ‘কাজলবিল’ কবিতা দুটি বেশি ভাল হয়েছে বলে জানান। পুরবী বসু জানালেন, তারা নিউইয়র্কে সাহিত্য প্রসারে কাজ করছেন। পাঠচক্রের আয়োজন করেন। সেখানে স্বরচিত লেখা পঠিত হয়। লেখা নিয়ে আলোচনা হয় এবং শেষে ভাল লেখা প্রকাশের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তবে আমরা না থাকলে এই কার্যক্রম চলে না।

ততক্ষণে ৮টা বেজে গিয়েছে। নূহ-উল আলম লেনিন ভাই তখনও ধানমন্ডীতে। তার আসার কথা। হান্নান ভাই জানালেন আসতে এক ঘণ্টা লাগবে। কিন্তু লেখক দম্পত্তি একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এখনই বের হবেন। লেনিন ভাই দাওয়াত নিলেন দুদিন পরে। আমরাও বেরিয়ে পরি মুগ্ধতা নিয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.