নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯

মফিজ মাস্টারের দুঃস্বপ্ন
মুজিব রহমান
মফিজ মাস্টারের নুনু একটি কাঁচের বোতলে আটকে গেছে। তিনি শত চেষ্টা করেও খুলতে পারছেন না। চেষ্টা করতে করতে তিনি ঘেমে নেয়ে উঠছেন। হাঁসফাঁস করতে করতেই তার স্বপ্ন ভাঙ্গে। এই স্বপ্ন তিনি প্রতিনিয়তই দেখে আসছেন। এর থেকে নিস্তারের জন্য ওজানী পীরসাহেবের তাবিজ কোমরে বেঁধেছেন, বহুবার তওবা করেছেন, দাঁড়ি রেখেছেন, নামাজ পড়ছেন কিন্তু এই দুঃস্বপ্ন থেকে তিনি নিস্তার পাচ্ছেন না। রাতে একবার স্বপ্নটি দেখে জেগে উঠার পর আর ঘুম হয়নি। আজ শুক্রবার তার বাড়ি যাওয়ার কথা কিন্তু ঘুমানোর জন্য স্কুল কম্পাউন্ডে একাএকা ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে নাস্তা খেয়ে আবারো ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মেট্রিক থার্ড ডিভিশনে পাশ করার পর কিছুতেই ইন্টার পাশ করতে পারছিলেন না। বাবা বলতেন, আমার এতো টাকা পয়সা আমার বাবা ছিল মেট্রিক পাস আর আমার পোলা হইয়া ইন্টার পাশ করতে পারবি না। তখনই সন্ধান পান বুনোগাতি কলেজের। সবাই বলতো- যার নাই কোন গতি, সে যায় বুনোগাতি। ওখানে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করলে শিক্ষকরাই সলভার হিসাবে নকল তৈরি করে তা পরীক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেয়। পড়াশোনার কোন বালাই নাই। মফিজ মাস্টার গিয়ে পৌঁছলেন বুনোগাতি। সেখানে দূরদুরান্তের ছাত্ররা ফরম ফিলাপ করে আসে আর যায় পরীক্ষার সময়। ওখানে বিভিন্ন বাড়িতে মেছ করে থাকা যায় পরীক্ষার কয়দিন। সারাদিন কোন কাজ নাই। হলে গেলে নকল চলে আসে। সুতরাং রুমমেটদের সাথে আজেবাজে কাজ করেই সময় কাটে। সেখানেই তার নুনু আটকে গিয়েছিল বোতলে। এই ঘটনাটা দুঃস্বপ্ন হিসাবে ফিরে আসে শিক্ষকতার পেশায় আসার পরেই। ছাত্র জীবনে তিনি আরো বহু অপকর্ম করে কাটিয়েছেন। তিনি দুঃস্বপ্ন দেখছেন শুধু এটাই।
খাটে শুয়ে শুয়ে এসব ভাবার সময়, স্কুলের আয়া মর্জিনা দরজা খোলে মাথা ঢুকায়। বলে, লুইচ্চা স্যার আছেন নি।
মফিজ মাস্টার হাহাকার করে উঠে, এই হারামজাদি কসকি। মাইনষে হুববো?
মর্জিনা বলে, আপনি হুইয়া রইছেন আমার লিগা। এইহানে আর মানুষ আইবো কোনহান থিকা।
মফিজ মাস্টার বলে, মর্জিনা বিবি তুমি ঠিকই কইছো। ঘরে তোমার চাইতে হাজার গুণ সুন্দরী বউ, অথচ তোমার লাইগ্যাই মনটা আনচান করে। কি করমু।
মর্জিনা বলে, আফনের ইস্ত্রী নাকি আফনেরে জুতা পিডায়। আড়ালে আবডালে সব মাস্টাররা কয়। হাছানি।
মফিজ মাস্টার রেগে যায়। হারামজাদি তুই এতো প্যাচাল পারতাস ক্যান? তরে পিরিত করি কিল্লিগা বুঝস না।
মফিজ মাস্টার নিঃস্বাস ছাড়ে। বহুবার সে তওবা করেছে, এসব করবে না। কিন্তু মেয়েদের দেখলেই তার হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। কি থিকা যে কি হয়ে যায়। স্ত্রীকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে, প্রায়ই যে একেক ছাত্রীকে সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাতো। কানাকানি থেকে স্ত্রীর কানেও বিষয়টি যায়। তো একদিন বাপের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে, পাশের বাড়িতে ওৎপেতে থাকে। এক ছাত্রীকে নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে দরজা লাগাতেই স্ত্রী এসে হাজির। দরজা খুলতেই হাতে থাকা জুতো সঠিক ভাবে গাল ছুঁয়ে যায় কয়েকবার। এরপর স্ত্রী জুতো পিট্টিতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সাহস সঞ্চয় করে একসময় মফিজ মাস্টারও মারামারিতে অভ্যস্থ হয়ে যায়। এসব দৃশ্য দেখতে আসেপাশের বাড়ির লোকেরা ভীর জমাতো। রাস্তাঘাটে মানুষ হাসাহাসি করতো। এসময় স্কুলের একটি ঘটনায় খুবই চাপে পড়ে যান। সব মিলিয়ে পুরাতন স্কুল ছেড়ে চলে আসেন এই আরো পাড়াগাঁয়ের স্কুলে।
জুম্মা নামাজ পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় মফিজ মাস্টার। বাড়ি এসেই শুনে তার দুই মেয়ে একসাথে দুই বখাটের সাথে ভেগেছে। মফিজ মাস্টার বাইরে রাগ দেখালেও ভিতরে স্বস্তিবোধ করে। সব মেয়েরাই নাকি বাপের পক্ষে থাকে আর তার মেয়ে দুটি ছিল বাপের সম্পূর্ণ বিপক্ষে। এবার লড়াই হবে একের সাথে এক। মফিজ মাস্টারের বাবা তাকে ডেকে বলে, গাধার বাচ্চা গাধা, তুই আমার পোলা হইয়া আকাইম্মাই থাকলি। তর বউ-ই এ কাম করাইছে। পোলা দুইডা না হয় ভাদাইম্মা কিন্তু বংশতো ভাল না। মফিজ বলে, আব্বা কিন্তু ওগো বাপেরাতো বিদেশ থাকে। টাকা পয়সা ভালই আছে।
মফিজ মাস্টারের বাবা রেগে যায়, গাধার বাচ্চা গাধা, ওরা ফকিন্নি থেইক্কা টেকার মালিক হইছে আর আমার বাপ ছিল মেট্রিক পাশ। আমার সম্পত্তি কি কম আছে? তুই একলা, খাওয়ার মানুষ নাই। ওই ফকিন্নির পুতেগো লিগা এই সম্পত্তি বানাই নাই। তুই থানায় যা, তর দুই মাইয়াই নাবালিকা। ফুসলাইয়া নিয়া যাওয়ার মামলা করবি। আসামী করবি, ওগো বাপ, মা শুইদ্ধা।
মফিজ মাস্টার কখনো থানা পুলিশে যায় নাই। তার এক মামা শ্বশুরের ছেলে পুলিশ। কিন্তু তার স্ত্রী এই বিয়ের পক্ষে। তাই আমতা আমতা করে থানায় গিয়ে নাবালিকা ফুসলিয়ে অপহরণের মামলা করে। বাড়িতে আসলেই, স্ত্রী ঝাপিয়ে পড়ে জুতা হাতে। মার খাওয়ার সময় তার লুঙ্গি খুলে যায়। স্থানীয় এক দুষ্টু ছেলেরা সেই দৃশ্য মোবাইল বন্দি করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়।
সকাল হতেই মফিজ মাস্টার পিতার সামনে গিযে তসবি নিয়ে দাঁড়ায়। বলে, আব্বা ঝামেলায়তো পড়লাম কিন্তু হাততো খালি। হাজার দশেক টাকা দেন, বেতন পেলে দিয়ে দিবো।
মফিজ মাস্টারের বাবার জমি বিক্রি করা ১০ লক্ষ টাকা ব্যাংকে রয়েছে। বাড়িতে বিল্ডিং করবেন। মফিজ মাস্টার চেকে প্রথমে অংকে ১০০০০ লিখে আব্বাকে দেন। তিনি ছেলের চরিত্র জানেন তাই দশ হাজার লেখা দেখে স্বাক্ষর করেন। মফিজ মাস্টার আরো দুটি শূন্য বসিয়ে কথায় দশ লক্ষ টাকা মাত্র লিখে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে চলে যান তার স্কুলে। মফিজ মাস্টারের স্ত্রী থানায় গিয়ে সমঝোতার জন্য আবেদন করলে আর মামাতো ভাইকে দিয়ে বলালে পুলিশ আর মাথা ঘামায় না।
মাস খানেক পড়ে মফিজ মাস্টারের বাবা ব্যাংকে গেলে দেখে টাকা নাই। বাড়িতে হইচই পড়ে যায়। মফিজ মাস্টারের দু কন্যা ঝর্ণা আর বন্যার কানে গেলে তারা দুই বোন মিলে যায় পিতার স্কুলে। ঠিক তখন মফিজ মাস্টার দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে উঠেছে। তিনি খুব ব্যথিত হয়ে খাটে বসে ছিলেন। মেয়েরা ঘরে ঢুকেই পিতার পায়ে ধরে কান্নাকাটি করে মাফ চায়, এ ধরনের ভুল আর করবে না। তুমি মাংস কিনে আনো আমরা দুই বোন আজ তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো। মফিজ মাস্টার বাজার করতে গেলে দুই বোন লেগে যায় টাকা খুঁজতে। ওরা জানে তার বাবা কোথায় কিভাবে টাকা রাখে। তোষক পুরাটা উঠায় দেখে যা ভেবেছিল ঠিক তাই। তার বাবা অনেক খাটাখাটনি করে পুরু খাট জুড়ে সমান মাপের খাতাপত্র রেখে তার মাঝখানে টাকার বাণ্ডিল সাজিয়ে রেখেছে। ওরা টাকা সরিয়ে একই মাপে বই রেখে মাংসের অপেক্ষা না করে বাড়ি ফিরে। দাদুর কাছে গিয়ে টাকা ফেরত দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য ক্ষমা চায়। দাদা পরদিন দুই নাতিনকে তাদের বরসহ দাওয়াত দেয়।
মফিজ মাস্টার তার ঘরে ফিরে দেখে দুই মেয়ের টিকিটিও নেই। তার সন্দেহ হয়। সে তোষক উঠিয়ে বুঝে ফেলে সর্বনাশ হয়ে গেছে। মফিজ মাস্টার ভাবনায় পরে যান। পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান তিনি, বাবার এতো জমি-জমা সবইতো তার। কেন এখানে পড়ে আছেন। সারা জীবন কষ্ট করেছেন, মানুষ, স্ত্রী, কন্যারা কেউ সম্মান দেয়নি। তাকে বদলাতে হবে। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, চাকরিটি ছেড়ে দিবেন, পিতা-মাতার সেবা করবেন আর নিজের গ্রামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি বাড়ি ফিরে আসেন এবং নিজেকে বদলে ফেলেন, মাবাবার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন, কোন নারীর দিকে কুদৃষ্টিতে না-তাকাতে চেষ্টা করতে থাকেন। আর লেগে থাকেন স্বপ্নের স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে। এরপর মফিজ মাস্টার আর কোনদিন সেই দুঃস্বপ্ন দেখেননি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: মাস্টারের আসল নাম কোনটা মুজিব না মফিজ??

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

মুজিব রহমান বলেছেন: এটা পুরোটাই গল্প, আমার জীবনের কোন ছাপ নেই, আমি শিক্ষকও নই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.