নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপলব্ধির প্রতীতিতে বোধে বিনয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৫

পশ্চিমবঙ্গের কোন একটি পত্রিকায় বিনয় মজুমদার সম্পর্কে একটি ফিচার পড়েই তার কাব্যগ্রন' কিনতে বাংলাবাজার হয়ে যাই আজিজ সুপার মার্কেটে। পেয়ে যাই পশ্চিমবঙ্গ হতে প্রকাশিত বিনয় মজুমদারের শ্রেষ্ঠ কবিতার বই। আমার মনে হয়েছিল শব্দের জাদুকর। এক ভিন্ন কবিতার স্বাদ যা কখনো মিলিয়ে যায় না। মনে হয়েছিল ওনি কাগজের উপর কলম ধরলেই তৈরি হতো বিশুদ্ধ কবিতা। ‘ফিরে এসো, চাকা’-ই অসাধারণ। অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’র স্বাদ আবার ভিন্ন, একটা ভিন্ন জগৎ। তার প্রত্যেকটি কবিতাই একএকটা সংগীত, একেকটা শিল্পকর্ম। তবে যখন যেনেছিলাম, গায়ত্রী চক্রবর্তী মানে চক্র থেকে যে চাকা, যাকে ফিরে আসার আহ্বান- সেই প্রেসিডেন্সি কলেজের নামকরা সুন্দরীর তিনি ব্যর্থ প্রেমিক নন, তখন কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। আমি নির্দিধায় বলবো, ষাটের দশকে লেখা শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হল, ‘ফিরে এসো, চাকা’। প্রথম কবিতার প্রথম চারটি লাইন-
একটি উজ্জ্বল মাছ একবার উড়ে
দৃশ্যত সুনীল কিন' প্রকৃত প্রস্তাবে স্বচ্ছ জলে
পুনরায় ডুবে গেলো- এই স্মিত দৃশ্য দেখে নিয়ে
বেদনার গাঢ় রসে আপক্ব রক্তিম হ‘লো ফল।
এ সময়ের বহু কবিকেই দেখেছি বিনয় মজুমদারের নিজস্ব কিছু শব্দ ধার নিতে। যেমন- আপক্ব, প্রকৃতপ্রস্তাবে, স্মিত দৃশ্য ইত্যাদি। এমনকি তার কবিতার লাইন বা শব্দ থেকে অনেক কবি তাদের কাব্যগ্রন্থের নামও দিয়েছেন। বিনয়কে নিয়ে একটি ভাল কাজ করেছিলেন অরবিন্দ চক্রবর্তী: মাদুলির বিনয় সংখ্যা।
‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থের সাথে তুলনীয় কাব্যগ্রন্থ আল মাহমুদের ‘সোনালী কাবিন’; তথা সোনালী কাবিনের সনেটগুলোই।
ফিরে এসো, চাকা কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় কবিতার শেষ দুটো লাইন-
তবুও কেন যে আজো, হায় হাসি, হায় দেবদারু।
মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত সারস উড়ে যায়!
চতুর্থ কবিতার দুটো লাইন-
ঈপ্সিত গৃহের দ্বারে পৌঁছানোর আগেই যে ডিম ভেঙ্গে যায়-
এই সিক্ত বেদনায় দূরে চ‘লে গেলে তুমি, পলাতকা হাত,
প্রত্যেকটি কবিতায় পাওয়া যায় এরকম পরিতৃপ্ত কবিতার স্বাদ। কবিতাগুলো ৮ থেকে ২০ লাইনের বেশি নয় কোনটিই। বারবার পড়তে বাধ্য হই ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থটি। এই ভাললাগা, এই প্রেম অম্লান থাকবে বলেই বোধ করি।
বিনয় মজুমদারের ‘ফিরে এসো, চাকা’ কাব্যগ্রন্থের ৭৭টি কবিতা পড়ার পড়ে আরো একটি কবিতার আশায় পাতা উল্টাই আহা আরো যদি থাকতো ৭৭টি। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে ভাবি, এ এক অলৌকিক ঝর্ণাধারা। তাঁর ভাষাজ্ঞান, শব্দসম্ভার আর তার নিপুণ সংযুক্তি মুগ্ধতায় ভরে দেয়। কবিতাগুলোর কোন নাম নেই, কোথাও পড়েছি প্রথম পংক্তি বা তার অংশ নামে আবার কোথাও রচনার তারিখ নামে। ৭০তম কবিতাটির নাম হতে পারতো, ‘ফিরে এসো, চাকা’। কবিতাটির শেষ ১১ লাইন-
অনেক ভেবেছি আমি, অনেক ছোবল নিয়ে প্রাণে
জেনেছি বিদীর্ণ হওয়া কাকে বলে, কাকে বলে নীল-
আকাশের, হৃদয়ের; কাকে বলে নির্বিকার পাখি।
অথবা ফড়িং তার স্বচ্ছ ডানা মেলে উড়ে যায়।
উড়ে যায় শ্বাস ফেলে যুবকের প্রাণের উপরে।
আমি রোগে মুগ্ধ; হয়ে দৃশ্য দেখি, দেখি জানালায়
আকাশের লালা ঝরে বাতাসের আশ্রয়ে-আশ্রয়ে।
আমি মুগ্ধ, উড়ে গেছো; ফিরে এসো, ফিরে এসো, চাকা,
রথ হয়ে, জয় হয়ে, চিরন্তন কাব্য হয়ে এসো।
আমরা বিশুদ্ধ দেশে গান হবো, প্রেম হবো, অবয়বহীন
সুর হ‘য়ে লিপ্ত হবো পৃথিবীর সকল আকাশে।
এই যে কবিতা, এর সবই কবিতা, এই কাব্যগ্রন্থেরর প্রতিটি দাড়ি, কমা, সেমিকোলন, প্রতিটি যতিচিহ্ন কবিতা। ফিরো এসো, চাকা‘র এখানেই মহত্ম। কিভাবে দুই বছরে এতোসব মহৎ কবিতা তিনি লিখলেন যার একটি কমাও ঝুলে পড়েনি। কবিতা কিভাবে জীবন্ত হয়, উপমা কিভাবে প্রাসঙ্গিক হয়, কবিতা কিভাবে হৃদয়ে ঝড় তোলে, উত্তাল হয় তার অনুপম নিদর্শন বলা যায়। বিনয় মজুমদারকে বলা যায়, কবিদের কবি। তার কবিতা পড়ে, নকল করে, আত্মস্মাৎ করেও অনেকে কবি হয়ে যায়। তাতে অবশ্য বটবৃক্ষ বিনয়ের ক্ষতিবৃদ্ধি কিছু হয় না। তবুও বিনয়ের কাছে ফিরে আসতে হয়, আর তাতেই ফিরে আসে সুঘ্রাণ।
বিনয়কে নিয়ে তৃতীয়বার
যা-ই লিপিবদ্ধ করি... তা-ই আক্ষরিক অর্থে সুনির্দিষ্ট কর্তব্যেও ভারপ্রাপ্ত দেবী অথবা দেবতা হয়ে তৎক্ষণাৎ জন্মলাভ করে... - এভাবে বিনয় মজুমদার নিজেই বলেছিলেন। যে গায়ত্রী চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করে আসলে প্রগাঢ় ভালবাসায় আচ্ছন্ন থেকে রচিত পংক্তিমালা তাঁর শুদ্ধতম উপলব্ধি। এ ঠিক কোমল অতিশয়, নিশ্চিত শিহরণ আর বিবেচনায় মহৎ। শ্রেষ্ঠ সহবাসের মতো তৃপ্তিদায়ক একবিতাগুলো থেকে পাচ্ছি বাংলা সাহিত্যের উৎকর্ষতা। ভালবাসার রস কী বিপুল অনুভূতির উদ্রেক করেছিল, যার ফলে রচিত হয়েছিল এই কাব্যগ্রন্থ- তার জন্য শুধু বিনয়কেই নয় বিনয়ের সাথে ধন্যবাদ জানাতে হয় গায়ত্রী চক্রবর্তীকেও। কিসের জন্য? শুধু নামকরা ইংরেজি সাহিত্যের সুন্দরী ছাত্রী ছিলেন বলে। প্রত্যক্ষভাবে তাকে কিছুই করতে হয়নি অথচ বাংলা সাহিত্যে পরোক্ষ এতো প্রভাব রাখতে পারেনি আর কোন নারী। বিনয়ের ‘ফিরে এসো চাকা’কে বিশুদ্ধ কাব্যগ্রন্থ মনে হয়। কেউ ভাবতে পারেন এ কেমন কবিতা- শিরোনামহীন! কবিতার শরীর যখন সৌন্দর্যের দেবী তখন তার নাম গায়ত্রী না ভেনাস তা নিয়ে কেন ভাববো? খুব মনে হলে, নিজেই পছন্দমতো নাম দিয়ে নিন অথবা কবির মতো প্রক্যেক কবিতার প্রথম পংক্তি বা তার প্রথম অংশই কবিতার নাম ধরে নিন।
অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমে
অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমে আকাশের বর্ণহীনতার
সংবাদের মতো আমি জেনেছি তোমাকে; বাতাসের
নীলাভতাহেতু দিনে আকাশকে নীল মনে হয়।
বালুময় বেলাভূমি চিত্রিত করার পরেকার
তরঙ্গের মতো লুপ্ত, অবলুপ্ত তুমি, মনোলীনা।
কবির হাতের লেখায় দেখা যায় কবিতাটির নাম ‘অভিজ্ঞতা থেকে ক্রমে’ আবার তার কাব্যগ্রনে' কবিতার নামে রয়েছে তারিখ- ২০ জুলাই ১৯৬১। কিন্তু কবিতার স্বার্থকতা তার শরীরে, উপলব্ধির প্রতীতিতে বোধে সেখানেই বিনয় অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৬

নীল মনি বলেছেন: ভীষণ সুন্দর করে গুছিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন তো।খুব ভালো লাগল জেনে :)

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ২:১৮

কোলড বলেছেন: What a brilliant review!

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি সুন্দর লিখেন। এর আগেও আপনার লেখা পড়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.