![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
পুরাতন ঢাকার হিন্দু মন্দিরগুলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়শই পাপী-তাপী হিন্দুদের আচরণ দেখে অবাক হই। কেউ শিব মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপতে থাকে। ক্ষমা চায়, নিষ্কৃতি চায় কোন বিপদ থেকে। একদিন দেখলাম একজন মন্দিরের দরজায় পৌঁছানোর আগেই সটান শুয়ে পড়লো। শনি মন্দির, কালি মন্দির সবখানেই একই রকম দৃশ্য দেখি। ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে প্রগাঢ় বিশ্বাসের ফলই এটা। কেউ কালীর জন্য, কেউ দুর্গার জন্য, কেউ শিবের জন্য, কেউ শনির জন্য, কেউ কৃষ্ণের জন্য, কেউ অনুকূল ঠাকুরের জন্য তীব্র ব্যাকুলতা প্রকাশ করে। অবাক হই এ কারণে যে, নিজ নিজ বিশ্বাসের প্রতি মানুষ তীব্রতা দেখায় কিন' অন্যের বিশ্বাসের প্রতি এ মানুষই তাচ্ছিল্য দেখায়। মুসলিমদের মধ্যেও শিয়া, ছুন্নিতো বড় ব্যবধান। সাধারণ পীরদের মৃরিদদের মধ্যেও বিদ্বেষটা প্রকট হয়ে যায়। কেউ আটরশি, কেউ দেওয়ানবাগী, কেউ চরমুনাই, কেউ নুরুল্লাপুর, কেউ উজানির জন্য ব্যাকুলতা প্রকাশ করে। বৌদ্ধদের মধ্যেও মহাজান, হীনযানসহ বহু মত-পথ। খৃস্টানদের মধ্যেও, ইহুদীদের মধ্যেও আভ্যন্তরীণ সমস্যা প্রকট। তবে বৃহৎ পার্থক্যটা আলাদা ধর্মের মধ্যেই। খৃস্টানরা, মুসলিমরা, হিন্দুরা, বৌদ্ধরা, ইহুদীরা প্রত্যেকেই মনে করে তাদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ। শুধুমাত্র দরিদ্র ও মানহীন শিক্ষার দেশগুলোতেই এই বিভেদটা প্রকট। ভারতবর্ষে গত একশ বছরে ধর্মীয় হানাহানী, বিদ্বেষ নিয়ে কি না ঘটেছে? শুধু আপনি মনে করছেন আপনার ধর্মই শ্রেষ্ঠ?
আপনি মুসলিম হলে ভাবছেন, আপনাকেই বলেছি, হিন্দু হলেও ভাবছেন আপনাকেই বলেছি, খৃস্টান হলেও ভাবছেন আপনাকেই বলেছি। আসলে যে কেউই। এই মনোভাবটাই নিশ্চিত করে দেয় আপনি মৌলবাদী। এককথায় মৌলবাদ হল- ধর্মশাস্ত্রের প্রতি অবৈজ্ঞানিক অন্ধবিশ্বাস। মৌলবাদ শব্দের উৎপত্তি ‘মূল’ শব্দটি থেকে। মূল এর অনেক অর্থ রয়েছে। সাধারণার্থে বৃক্ষের মাটির নিচের গোড়া-শিকড় বুঝায়। এর আরো অর্থ রয়েছে যেমন উৎপত্তির স্থান, উৎস, ভিত্তি, আদি কারণ, আদ্য, প্রথম। আরেকটু বড় ভাবে বললে, কোন কিছুর জন্ম বা উৎপত্তির প্রথম বা আদি অবস্থা বলা যায়। মৌলবাদীরা সে আদি অবস্থাতেই থেকে যায়, তারা পরিবর্তনকে মানতে চায় না। সাম্প্রদায়িকতার উৎপত্তিও ওখানেই। এটাও একটা উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব। সাম্প্রদায়িকরা নিজ ধর্মকে শ্রেষ্ঠজ্ঞান করে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধচারণ ও বিদ্বেষ পোষণ করে ক্ষতিসাধন করতে সদা প্রস্তুত থাকে। আপনি নিজেকে শ্রেষ্ঠ ধর্মের লোক মনে করে ভারত থেকে আপনার দৃষ্টিতে সবচেয়ে খারাপ মুসলিমদের বিতারণ কতে চাচ্ছেন? আবার দেখুন বাংলাদেশেও দীর্ঘকাল, এখানকার সংখ্যাগুরুরা নিজেদের ধর্মকেই শ্রেষ্ঠজ্ঞান করে হিন্দুদের উপর আক্রোশ উগড়ে দিয়ে, তাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে খারাপ হিন্দুদের বিতাড়ন করতে ভূমিকা রেখেছে। এই মনোভাবটাই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। এখন মোদী সরকারের হাতেও সেই একই ট্রাম্পকার্ড! গত একশ বছরে মানুষ কতটা এগিয়েছে?
ভারত ভাগ নিয়ে যে কথাটা আমরা বলি, ধর্মীয় ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলেও তা ছিল হাস্যকর; বিপুল সংখ্যক মুসলিম ভারতে থেকে গেল আবার বাংলাদেশেও থাকলো অনেক হিন্দু। তাহলে পুরোটা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ কিভাবে হল? হয়নি মোটেও। আজ ভারতের বাঙালিদের মধ্যেও কয়েক কোটি মুসলমান রয়েছেন। ভারতের বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ থেকেও ভারত ভাগের আগে বহু মুসলিম বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এখনো ঢাকায় বহু বিহারী রয়েছেন যাদের বিহার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছিল ধর্মীয় কারণে। আমি জয়পুরহাট, নাটোরসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী জেলায় বহু মুসলিমকে দেখেছি ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। আমাদের সাথে একটি মেয়েও পড়তো যার পরিবার ভারত থেকে এসেছিল। আবার আমাদের ইউনিয়নের মোহর খান কলকাতার বিশাল ব্যবসা ফেলেই দাঙ্গার সময় চলে এসেছিলেন। মতি ডাক্তার ওই সময় মেডিক্যালে পড়তেন। শেষ না করেই দেশে ফিরেন। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি সংখ্যক হিন্দু দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে গেছেন। এই যে, শিকড় ছাড়তে হয় তা এমনিতেই নয়। যখন অন্য ধর্মমতের উপর আক্রোশটা তীব্রভাবে প্রকাশিত হয় তখন সংখ্যালঘুরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে দেশ ছাড়েন। শুধু আতঙ্কগ্রস্থই নন, বহু জন সম্পদ হারান, চোখের সামনে দেখেন কন্যা/বোন/স্ত্রীকে ধর্ষিতা হতে। তখন প্রিয় জন্মভূমিকে ছাড়তেই হয়।
এই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে আমরা আসলে কতটা এগিয়েছি? মাঝে মাঝে মনে হয়- না ওই ভয়ঙ্কর বিদ্বেষটা আর ফিরবে না। আমরা এগিয়েছি। আমার আকাশে কালো মেঘ জড়ো হয়। একদেশে ধর্মীয় উস্কানী দেখে অস্ত্রে শান দেয় অন্য দেশের ধর্মান্ধরা। সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধরা নিশ্চিত ৪৩০০টি ধর্মের মধ্যে তার ধর্মমতই শ্রেষ্ঠ! কেউ কখনোই অনুসন্ধান করে না, অন্যের মতটি কেন শ্রেষ্ঠ নয়? একবারও ভাবি না আমরা প্রায় সবাইতো জন্মসূত্রেই নিজ ধর্মে ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক। হাসপাতালে কারো সন্তান অন্য ধর্মের সন্তানের সাথে বদলে গেলে কি হবে?
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪২
মুজিব রহমান বলেছেন: বিজ্ঞানমনষ্কতার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখতে হবে। নিজের ধর্ম নিয়ে গভীরভাবে পড়লেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। আর যদি অন্তত শীর্ষ ৫টি ধর্মও কেউ অধ্যয়ন করে তবেও তা আরো স্পষ্ট হয়। ধন্যবাদ।
২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪০
সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: প্রত্যেকেই যদি নিজের ধর্মের মত অন্য ধর্মকে সম্মান দেয় তাহলে কোন সমস্যাই হয় না। ধর্মকে বিতর্কিত করে উগ্রতা আর কুসংস্কার।
০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৫
মুজিব রহমান বলেছেন: উগ্রতা আসলে সমস্যার মধ্যে আরো হাজারো সমস্যা ঢুকিয়ে দেয়। এখন বড় বড় অমানবিক আচরণগুলো ঘটছে ধর্মবিদ্বেষের কারণেই। আরবে শিয়া ছুন্নির সমস্যায় হাজার হাজার ইয়েমেনি শিশু মারা যাচ্ছে। মায়ানমারে ও ভারতে শিকার মুসলিমরা, বাংলাদেশে ও পাকিস্তানে শিকার হয় হিন্দুরা।
৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: শ্রেষ্ঠ ধর্ম হলো- মানবতা। মানুষে রকল্যান করা।
৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:২৪
সুপারডুপার বলেছেন: ধর্ম একটি খারাপ কাজকে আরেকটি খারাপ কাজ করে বন্ধ করতেই শেখায়। অমানবিকতা দিয়েই অমানবিকতা বন্ধ করতে শেখায়।
ভালো লিখেছেন। পোস্টে +++
৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:৪৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: দারুণ লিখেছেন
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
কোন ধর্মই সঠিক নয়। সময়ের সাথে ধর্মের প্ররয়োজনীয়তা শেষ হয়ে গেছে, সময়ের কারণে, ইহা এখন মানুষকে ভুল পথে নিচ্ছে।