নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃষক কন্যার হাসি!

১৫ ই মে, ২০২০ দুপুর ২:০৮

মাত্র ৩০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল তাও দিতে পারে না তাই লাইন কেটে দিয়েছে। কত জঘণ্য মানুষ তিন মাসে ৩০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিতে পারে না। বিশ বছর আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এক কৃষকের বাড়িতে গিয়ে, তার সম্পর্কে এমনটাই শুনেছিলাম। ওই কৃষকের কাছে আমাদের ব্যাংকেরও পাওনা ছিল। টাইমবার্ড ঠেকানোর জন্য ১০টি টাকা চাইলেও দিতে পারল না। কথা বলে ইচ্ছে করছিল, ওনাকেই কিছু টাকা দিয়ে আসি। ঘরে ২০ বছরের এক বিয়ের যোগ্য কন্যা। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নিজেই মাথা হেট করলাম। সুশ্রী হওয়ার কারণ নেই, কৃষকের কন্যা সাধারণত সুশ্রী হয় না। ছাত্র জীবনে উত্তরবঙ্গে গিয়ে মটরবাইকে বহু ঘুরে আসার পরে আমার বন্ধু আমাকে বলল, এই যে, ঘন্টার পর ঘন্টা মটরবাইকে ঘুরলাম, একটি সুশ্রী মেয়েও দেখলাম না। সবই পুষ্টিহীন, মনে হয় মেয়েগুলোর শরীরে যৌবনও নেই। মেয়েটির বাবা চিন্তায় অস্থির কিভাবে বিয়ে দিবেন? বিয়ে দেয়ার টাকা কোথায় পাবেন? তাই কৃষক কন্যার চোখে হাসি নয়, খেলা করে হতাশা

কৃষক শুধু ব্যাংকের কাছেই দায়বদ্ধ থাকে না। সে কয়েকটি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নেয়। মহাজনের কাছ থেকে লাখে মাসে ৩ হাজার টাকা সুদে ঋণ নেয়। সুদের হার ৩৬%। সুদের হার নিয়ে চিন্তা করলে চলে না, যখন টাকার প্রয়োজনটা অসীম হয়ে যায়। এনজিও কর্মীরা আসলে কৃষককে পালিয়ে থাকতে হয়। এনজিও কর্মীরা আসলে তবুও পালিয়ে বাঁচা যায় কিন্তু মহাজনতো ঘরে এসে ধরে নিয়ে যায়। অসম্মানতো নিত্যই ঘটে। কৃষক এতো ঋণগ্রস্থ কিভাবে হয়? ব্যাংকের কম সুদের ঋণ কেন ফেরত দেন না? কৃষকের কোন সঞ্চয় থাকে না। বছরে যেটুকু ফসল ফলায় তা দিয়ে সংসার খরচ চালিয়ে ফসল বোনার টাকা কোনরকম টায় টায় থাকে। যে বছর অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়, সে বছর সে খাবে কি? ফসল বোনার টাকা কোথায় পাবে? তাকে দেনা করতেই হয়। অনেক সময় পরপর দুবছর বা তিন বছরও অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। তার ঋণ বাড়তেই থাকে। ব্যাংক ঋণ পরিশোধে কৃষক অনাগ্রহ হওয়ার বড় কারণ হল ঘুষ দেয়া। প্রায়শই কৃষককে ঋণের জন্য ১০% পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ দিলে ব্যাংক কর্মকর্তা বিভিন্ন কায়দা করে ঋণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক সময় সৎ কর্মকর্তাও আসেন। তারা আবার অনিয়ম করেন না ফলে কৃষকের ঋণের পরিমাণও বাড়ানো যায় না। সৎ অসৎ সবাই ক্ষতিকর। কারণ এক একর ফসল ফলাতে যে টাকা লাগে, ঋণ হিসেবে দেয়া হয় তার চেয়ে অনেক কম। তাও কি সবসময় পাওয়া যায়। সুদের হার কম হলে, এখানেও ভীড় জমায় ছদ্ম কৃষক, যাদের জমি আছে কিন্তু বর্গা দেন। তাহলে বর্গাচাষীরা ঋণ পাবে কিভাবে? কৃষকের আরো বহু চাহিদার কথা বাদ দিবো কিভাবে? কন্যার বিয়ের জন্য যৌতুক লাগে, বিয়ের খরচ আছে, বড় ধরনের অসুখ হলে চিকিৎসা লাগে, সন্তানের পড়াশোনার খরচ লাগে, ফসল ক্ষতি হলেও জমির মালিককেও তো টাকা দিতে হবে।
সরকার কৃষকের জন্য কি করে? আমরা দেখেছি সরকার এক দশক আগে কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড করে দিয়েছে। তাতে এক বছর প্রান্তিক চাষিদের ৮০০ টাকা করে এবং মাঝারি কৃষকদের ১০০০ টাকা করে তেল কেনার টাকা দিয়েছে। এজন্য কৃষক অন্তত ৩ বার ব্যাংকে এসেছেন। অন্তত ৫দিন তার ব্যয় হয়েছে টাকাটা পেতে। সরকার সারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একবার সারের দাম খুব কমানো হলো। পরিণতিতে সারা দেশের সার ডিলারগণ কোটিপতি হয়ে গিয়েছে। তাদের লক্ষ্যই ছিল সারগুলো কোনভাবে ভারতে পাচার করে দেয়া। হয়েছিল তাই। শেষ পর্যন্ত সারের হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। উল্টো সারের আন্দোলন করতে গিয়ে কৃষক মারা পড়েছিল গুলি খেয়ে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে, এমন সাপোর্ট কৃষকদের কাজে লাগে না। কৃষকদের বড় উপকার হয় যদি সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে শস্য ক্রয় করে নেয়। চাতাল মালিকদের কাছ থেকে কিনলে মূল লাভটা তারাই নেয়। ফসল উঠার সাথে সাথেই কৃষক টাকার জন্য হাহাকার করে। ফলে কম টাকাতেই বাধ্য হয়ে ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। চাতাল মালিকদের কৌশলের কাছে কৃষক মার খায়। আবার কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতে গেলেও দেখা দেয় নতুন নতুন প্রতারক ছদ্ম কৃষক। যারা মূলত চাতাল মালিক কিন্তু কৃষক সেজে ধান বিক্রি করতে আসে। এবার শুনছি লটারিতে বিজয়ী কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। যে লটারিতে হারবে তার ধান তো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হবে।
কৃষকের আরেকটি সমস্যা কোন ফসল ফলাবে? বিক্রমপুরে এখন প্রচুর আলু হয়। আলুতে আর আগের মতো লাভ নেই। আলুর দামও স্থিতিশীল। কিন্তু আলু উৎপাদনের সবকিছুরই দাম বেড়ে গেছে। তার উপর হঠাৎ অতি বৃষ্টিতে আলু ক্ষেত তলিয়ে গিয়ে আলু পচে গেলে সর্বনাশ হয়ে যায়। কিন্তু ক্ষেতগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, কৃষকের পক্ষে হঠাৎ করে শস্য বদলানোও সম্ভব হয় না। যারা বদলাতে পারে তাতেও সংকটই তৈরি হয়। গত বছর পেয়াজ ৩০০ টাকা কেজি উঠল। তা দেখে হাজার হাজার কৃষক পেয়াজ চাষে উৎসাহিত হয়ে, পেয়াজ লাগালো। কিন্তু চায়না ও ইন্ডিয়ান পেয়াজে বাজার সায়লাব এবং দেশি পেয়াজের অতি উৎপাদন দাম একেবারেই কমিয়ে দিতে পারে। কৃষি বিভাগ শক্তিশালী না হলে, চাহিদা ঠিক মতো নিরুপন করতে না পারলে এ সংকট থেকেও কৃষক মুক্তি পাবে না।
বিক্রমপুরের একজন কৃষক একদিন এসে বলল, ছেলেটাকে কষ্ট করে পড়াচ্ছিলাম। এখনতো বুঝতে পারছি চাকরি ও পাবে না। কারণ আমার কাছে ঘুষের টাকাও নেই, সরকারি দলও করি না। আমি উৎসাহ দিলেও তার সরকারি চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারি না। সেই কৃষকের সন্তানটির সাথে আমার দেখা হয়েছিল বাসে। তিনি উকিল হয়েছেন দেখে খুশি হয়েছি। কৃষকদের সন্তানদের পক্ষে উচ্চ শিক্ষা নেয়া কঠিনই। অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতেই পড়াশোনা করার পরিবেশই নেই। এক ঘরেই বহুজন থাকে, সেই ঘরেই টিভি, খাওয়া দাওয়া আবার গোলায় ফসল। ফলে সাধারণত কৃষকের সন্তানরা আবারো কৃষকই হয়ে উঠেন। যেনো এক ফাঁদ, শত চেষ্টা করেও বের হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যায় না।
ভারতের কৃষকদের অবস্থা আরো খারাপ। গত বছর মানে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মহারাষ্ট্রে আত্মহত্যা করেছেন ৩০০ জনেরও বেশি কৃষক। ভারতে কৃষক আত্মহত্যা নতুন কিছু নয়৷ ঋণের জালে জর্জরিত কৃষক আত্মহত্যা করছেন অনেক দিন ধরেই৷ গত ২০ বছরে আত্মহত্যা করেছে ৩ লক্ষেরও বেশি কৃষক। এ নিয়ে বিশাল সমাবেশ হয়েছে, গণ মিছিল হয়েছে, লং মার্চ হয়েছে। আকর্ষণীয় সিনেমা হয়েছে, উপন্যাস-কবিতা লেখা হয়েছে, রাজনীতিতে পালাবদল হয়েছে৷ কৃষকের সমস্যার কোন সমাধান হয়নি। ভারতের কৃষকের কন্যার মুখেও হাসি ফুটেনি। গত কয়েক বছরে রাজ্যে খরা হয়েছে ভয়ঙ্কর৷ হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে৷ অথচ ফসল ফলানোর জন্য কৃষকেরা যে ঋণ নিয়েছিলেন, সব সময় তা মাফ হয়নি৷ ফলে দেনায় বিধ্বস্ত কৃষক আত্মহত্যা করেছেন৷ এ বছরের বিষয়টি ঠিক উল্টো৷ পুজোর পর ফসল ঘরে তোলার কিছুদিন আগে অকাল বর্ষণ হয় মহারাষ্ট্রে৷ আর তাতেই ফের নষ্ট হয় ফসল৷ মাথায় হাত পড়ে কৃষকদের৷
বাংলাদেশ ও ভারতে কৃষকদের সঙ্গে বাজারেরও সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়নি। তারা ফসল ফলান। স্থানীয় পাইকারগণ কম দামে শস্য কিনেন। তারা সেই শস্য বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকারগণ আবারও বিক্রি করেন ঢাকা থেকে আসা বড় ক্রেতাদের কাছে। তারা নিয়ে আসেন জেলা শহর বা রাজধানীর আড়তে। সেখান থেকে আরেক পক্ষ কিনে পৌঁছে দেন খুচরা দোকানীদের কাছে। সেখান থেকে আমরা কিনি। বাজারে খাদ্য দ্রব্য চড়া দামে বিক্রি হলেও এতো ধাপে মধ্যসত্ত্বভোগী থাকায় কৃষক তার সুবিধা পান না৷ সমস্ত মুনাফাই চলে যায় মহাজনের ঘরে৷যে দামে এখন কৃষককে ফসল বিক্রি করতে হয়, তাতে এক বছর চাষের ক্ষতি হলেই তাঁরা বিপুল ক্ষতির শিকার হন৷ ফলে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন৷ রয়েছে দাদনের ফাঁদ। চা্পাই নবাবগঞ্জের আম চাষিদের দাদন দেয় আড়ৎদারগণ। ফলে তাদের কাছে আম বিক্রি করতেই হয়। যারা দাদন নেন না তারা ঝুড়িতে করে সড়কে আম নিয়ে আসেন। আড়ৎদারগণ সংঘবদ্ধ থাকেন। তারা এমন জোট করে এমন ভাব দেখান যে, ক্রেতা নেই, পাইকার নেই। তবুও আম পছন্দ করে আড়তের লোকেরা মালিকের নাম লিখে দেন। কৃষক আম দিয়ে আসে আড়তে। সেই টাকা উঠাতে ঘাম ঝরে যায় কৃষকের। জেলেদের বা মাছ চাষিদেরও একইভাবে দাদন দিয়ে আড়ৎদারগণ তাদের আড়তে মাছ তুলতে বাধ্য করে। তামাক চাষীরা ঋণের চক্র থেকে বের হতে পারেন না। তারা বন্দি হয়ে যান বিড়ি/সিগারেট কোম্পানীগুলোর ফাঁদে। সরকার যদি সরাসরি এই বেচাকেনার জায়গায় ঢুকতে পারে এবং কৃষকদের মুনাফা বাড়াতে পারে, তাহলেই কৃষকদের এই যাতাকল থেকে মুক্তি দেয়া সম্ভব হবে৷ তাহলেই ফুটবে কৃষক কন্যার মুখে হাসি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: মুন্সিগঞ্জের লোকজন এখন ধনী। খুব সামান্য কিছু গরীব । তাই তারা আলুর চাষ করে না। লাভও কম। পরিশ্রম বেশি।

১৫ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০

মুজিব রহমান বলেছেন: মুন্সিগঞ্জের এখনো প্রধান ফসল আলু। ঢাকা মাওয়া সড়কের পূর্বদিকে বিপুল পরিমাণ আলু উৎপন্ন হয়। শুধু আড়িয়াল বিলটি নিচু বলে এখানে আলু চাষ করা সম্ভব হয় না।

২| ১৫ ই মে, ২০২০ রাত ৮:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: কৃষকদের সবজি সরকারীভাবে কিনলে কষৃক লাভবান হতো। মুন্সীগন্জ আলু , চট্টগ্রামের উত্তর জেলা সিম জন্যর বিখ্যাত ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.