নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবচেয়ে হতদরিদ্র ৫০ লক্ষ পরিবারের কাছে পৌঁছানো যায় না

১৯ শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৩২

গত বছর একটি অর্থনৈতিক জরিপ বলেছিল, বিশ্বে অতিধনী বৃদ্ধির হারের দিকে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে। ধনী বৃদ্ধির হারেও বাংলাদেশ তৃতীয় স্থান দখল করে নিয়েছিল। অথচ এ দেশেই হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এতো বিপুল সংখ্যক হতদরিত্র মানুষ নিয়েও বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ এখন। হত দরিদ্র কারা? দৈনিক যাদের আয় ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম (পিপিপি ডলার ২০১৬ সালে ধরা হতো ৩২ টাকা করে) আয় তাদেরকে বলা হয় হত দরিদ্র। হত দরিদ্র মানুষের শীর্ষ দেশটি ভারত। তার বিশাল লোক সংখ্যা হলেও ওখানে হত দরিদ্র লোকের সংখ্যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। এ ছাড়া আফ্রিকার নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়ার অবস্থাই শুধু বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। বাংলাদেশের পরের দেশগুলোও আফ্রিকার তানজানিয়া, কেনিয়া, মাদাগাস্কার, মোজাম্বিক। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক হিসাবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশকে বলা হয় হত দরিদ্র যারা দৈনিক ২ ডলারের কম আয় করে। এ হিসাবেও দেশের হত দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটির মতো।

এটা বিস্ময়কর মনে হতে পারে যে, যে দেশটি অতিধনী বৃদ্ধিতে পৃথিবীর সেরা আবার সে দেশটিতেই হত দরিদ্রও অন্যতম সেরা। এটা দিয়ে একটি বিষয়ই পরিমাপ করা যায় তা হল বাংলাদেশে ধনী দরিদ্রর মধ্যে বৈষম্য তীব্রতরই হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের হত দরিদ্র ৫০ লক্ষ পরিবারকে ইদ উপহার দিচ্ছেন ২৫শ টাকা করে। প্রতি পরিবারে ৫জন ধরলে কিন্তু সকল হত দরিদ্র মানুষই প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার সুবিধা পাওয়ার কথা। ৪ জন করে ধরলে ২ কোটি মানুষ এই সহায়তা পাবেন। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করছি দেশের সবচেয়ে হত দরিদ্র ৫০ লক্ষ পরিবারই এই উপহার পাবেন। মোট ১২৫০ কোটি টাকা কিন্তু একটি বড় সংখ্যা, সেটার দিকে অনেকের লোভ চলেই যায়, যারা হত দরিদ্র নন। কিন্তু আমাদের ভাবনা আর প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাই সব নয়। করোনাভাইরাসের এই মহামারী কালে হত দরিদ্র মানুষের ইদ আনন্দটা অনেকখানিই বৃদ্ধি পাবে এই টাকায়। সবচেয়ে হত দরিদ্রদের হাতে এই টাকা পৌঁছানোটা সহজ নয়। পেট ভরা কৃমি থাকলে, অপুষ্ট সন্তানকে যতই খাওয়ান তা পুষ্টির যোগান দিতে পারে না। ওই কৃমিরাই পুষ্টি সাবাড় করে দেয়। আমরা সেই কৃমিদের দেখছি প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কিছুটাকে গিলে খেতে। নগদ প্রনোদনাতেই দুর্নীতির সুযোগও বৃদ্ধি পায়। এটা অর্থনীতির বিশেষজ্ঞদের পুরাতন দাবী। এরপরেও হত দরিদ্র মানুষদের মোবাইল ফোনে নগদ টাকা দেয়ার প্রচেষ্টা দেখলাম। আমরা টাকার গন্ধে জনপ্রতিনিধিদের রাঘব বোয়াল হয়ে যেতে দেখলাম। ২৫শ টাকার নগদ সাহায্য তালিকায় একই মোবাইল নম্বর ২০০ বার পাওয়া গিয়েছে। হবিগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যান সাহেব মনে করেছিলেন তার ঘণিষ্ঠজনের ওই এক নাম্বারেই ঢুকে যাবে ২শ জনের ৫ লক্ষ টাকা। তিনি চারটি মোবাইল নাম্বার সেট করে দিয়েছেন ৩০৬টি নামের সাথে। মানে চেয়ারম্যানের ওই চারটি নাম্বারে ঢুকে যাবে হত দরিদ্রদের ৭ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। আরেক নিউজে দেখলাম এক নাম্বারে ৯৯ জনের ও আরেক নাম্বারে ৪০ জনের নাম। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম বহু ধনী ও মধ্যবিত্তর নামই রয়েছে হত দরিদ্রদের তালিকায়। মানে টাকার গন্ধে ধনীরাও হত দরিদ্র সেজে বসে আছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে এটা ধরে বন্ধ করা সহজ। তবে ধনীদের নাম, দরিদ্রদের তালিকায় থাকলে তাতে ২৫শ করে টাকা পাঠানো বন্ধ করা সহজ নয়।

হত দরিদ্রদের টাকা সবচেয়ে দরিদ্র জেলাতেই সবচেয়ে বেশি যাওয়ার কথা। সবচেয়ে ধনী ৫টি জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, গাজীপুর ও ফরিদপুর। বিপরীতে সবচেয়ে দরিদ্র ৫টি জেলা হল কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ ও মাগুরা জেলা। বর্তমানে কিছু নাম এদিক ওদিক হতে পারে। বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির নামও ঢুকে যেতে পারে সবচেয়ে দরিদ্রদের তালিকায়। হত দরিদ্রদের তালিকা কারা করবেন? জড়িত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ। তবে পরিবার চিহ্নিত করবেন কারা? স্থানয়ি সরকার অর্থাৎ জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ। কাদের পাওয়ার কথা। তালিকায় থাকার কথা নিম্ন আয়ের রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণ শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক, হকারসহ নানার পেশার হত দরিদ্র মানুষ। টাঙ্গাইল জেলায় একটা মডেল দাঁড় করানো হয়েছিল তা অনুসরণ করেই তালিকা করা হয় শুনেছি। কত পরিবারকে নগদ টাকা দেয়া হবে তার জন্য জেলাওয়ারি কোটাও বেধে দেয়া হয়েছে। শীর্ষ ধনী ১০টি জেলার একটি হল ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তারা পাচ্ছে ৭৫ হাজার পরিবারের সহায়তা। এটা জেলাগুলোর গড় হিসাবের কাছাকাছি। কুড়িগ্রামে দরিদ্র মানুষ ৭০.৮ শতাংশ, দিনাজপুরে ৬৪.৩ শতাংশ ও বান্দরবানে ৬৩.২ শতাংশ উল্টো দিকে নারায়ণগঞ্জে দরিদ্র মানুষ ২.৬ শতাংশ, মুন্সিগঞ্জে ৩.১ শতাংশ, মাদারীপুরে ৩.৭ শতাংশ। গত বছরের সরকারি হিসাবে দেশে দারিদ্র্য হার ২০.৫ শতাংশ ও হত দারিদ্র্য হার ১০.৫ শতাংশ। মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নে ৯২৫ জন হত দরিদ্রকে টাকা দেয়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দেশের মোট ইউনিয়ন সংখ্যা ৪৫৭১ টি ধরলে এই গড়ে ৪২.২৮ লক্ষ চলে যায়। এর বাইরে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনও রয়েছে। তার মানে দাঁড়ায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ধনী জেলাটির একটি ইউনিয়নও পেয়েছে গড় হারের সমান। তাহলে সবচেয়ে দরিদ্র জেলাটিও হয়তো একই রকম পাবে। তার মানে সবচেয়ে দরিদ্র আড়াই কোটি মানুষের কাছে এই সহায়তা পৌঁছানো যাবে না গাণিতিক ভাবেও।

একটি মোবাইল ফোনে এক বারের বেশি টাকা যাবে না এটা করলেই চেয়ারম্যান সাহেব নিজের লোকের মোবাইল ২শ নামের সাথে দিলেও এক বারের বেশি টাকা পাবেন না। তবে চেয়ারম্যান সাহেব যদি ২শটি ধনী বন্ধুবান্ধবের বা নিজের কর্মীদের নাম্বার দিয়ে দেন তবে তা রোধ করা সহজ হবে না। এটার একটা ভাল পথ হল অনলাইনে নামগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া। ধনীরা লজ্জায় পড়ুক আর প্রকৃত দরিদ্র মানুষ প্রতিবাদ করার সুযোগ পাবে তাতে। অবশ্য ধনীদের ছলের অভাব হয় না। তারা বলবে, আরে এটাতো রহিমার মায়ের মোবাইল নাম্বার নাই বলে, আমারটা দিয়েছিলাম। টাকাতো উঠিয়ে ওনাকেই দিতাম। উল্টো টাকা উঠানোর খরচটা আমাকেই বহন করতে হতো। মনে হবে মহত্মের ডিব্বাকে আপনি চোর ভাবছেন। বাস্তবে ওনি ডাকাতই। ধরা পড়ে সাধু সাজছেন।

ধনী বা মধ্যবিত্তদের সংকট কোথায়? তারা খরচ কমাতে পারে না। কেউ একটি ভাল চাকরি পেলেই প্লট ও ফ্ল্যাট বায়না করে ফলে সেখানে মাসিক কিস্তি দিতেই হয়। অবৈধ আয়টা আর কমাতে পারে না। ফ্লাট একটা থেকে দুটি করতে হয়। স্ত্রী-কন্যাদের গয়নার দাবি, আত্মীয় স্বজনদের কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করাতে টাকার গরম দেখাতে হয়। ফলে ভবিষ্যত জীবনের নিরাপত্তার আশায় হোক, আর সম্পদের সীমাহীন লোভে হোক এসব অপচয় তারা কমাতে পারেন না। তাই তারা গরীবের টাকা মারার ধান্ধাও ছাড়তে পারেন না। রাষ্ট্রেরও একই সমস্যা। তারাও সীমাহীন অপচয় কমাতে পারেন না। এই অপচয়টা হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই। ঢাকা চট্টগ্রাম সড়কের অনেক কাজ হওয়ার পরে পরিকল্পনা বদলানোর একটি রিপোর্ট আমরা দেখেছি। আরেকটা অপচয় হয় সামাজিক ও ভৌত অবকাঠামোর অকার্যকরতার কারণে। ধরাযাক শীর্য পর্যায়ে যারা হতদরিদ্রদের কাছে প্রধামন্ত্রীর উপহার পৌঁছানোর জন্য কাজ করছেন তাদের কারো বাড়িই উত্তরবঙ্গে নয়। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী কয়েকজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুরে। তাহলে কি হবে? তারা চাইবে এমন পরিকল্পনা করতে যাতে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ বা মাদারীপুরের ভাগে কম না পড়ে। বাস্তবিক কুড়িগ্রামের খুব কম মানুষই নীতিনির্ধারণী হিসাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। ফলে দরিদ্র জেলাগুলো অগ্রাধিকার পায় না। যদি কুড়িগ্রামের ৭০.৮ ভাগ এবং মুন্সিগঞ্জের ৩.১ ভাগ মানুষের কথা চিন্তা করে নীতিমালা করতে পারতো তাহলেই কেবল সুযোগ তৈরি হতো সকল দরিদ্র মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা। কিন্তু এটা অলিক কল্পনা। এর জন্য বড় মাত্রার রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। জেলার ভোটারদের কথা না ভেবে সম উন্নয়নের ও বৈষম্যহীন করার ভাবনাটা আনতে হবে অঙ্গীকারে। সরকার ও মিডিয়ার দাবি অনুযায়ী উত্তরবঙ্গে মঙ্গা দূর হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠবে কুড়িগ্রামে কেন এখনো ৭০.৮ ভাগ মানুষ দরিদ্র আর নারায়ণগঞ্জে মাত্র ২.৬ ভাগ মানুষ দরিদ্র। আবার কুড়িগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ কেন দারিদ্রবিমোচনে সমান গুরুত্ব পাচ্ছে? এই প্রশ্ন কেন উত্থিত হয় না? এই প্রস্তাব করার জন্য মনে হয় সাহস দরকার? প্রশ্ন থাকবে গত দশ বছরে কেন কুড়িগ্রামে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এতো বেড়ে গেলো?

কমিউনিস্টরা শ্রমিকরাজ কায়েম করার কথা বলেন। তাদের মতে, শ্রমিকরাজই পাড়বে শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষা করতে। এটাকে তারা বলে, শ্রমিকদের একনায়কতন্ত্র। সোভিয়েত ইউনিয়নে শ্রমিকরা কতটুকু বেশি সুবিধা পেয়েছে তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এক পক্ষ ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখায় আরেক পক্ষ একই কাতারে নামিয়ে আনে। বাস্তবিক শ্রমিকরা একটু ভাল ছিল বৈকি। একনায়কতন্ত্রের দেশগুলোতে অবশ্য শ্রমিকদের অবস্থা আরো খারাপই হয়। গণতান্ত্রিক দেশে ভোটের বাজার ঠিক রাখতে রাজনীতিবীদদের বেশি খুশি রাখতে হয় মধ্যবিত্তদেরই। কারণ সংখ্যায় তারাই বেশি। গণতান্ত্রিক দেশে সুবিধা বেশি পায় মধ্যবিত্তরা। কিন্তু খাতা কলমে আশার সম্ভাবনা থাকলেও স্বৈরশাসকগণও দরিদ্রদের অবহেলাই করে। স্বৈরশাসকগণ যা ইচ্ছা তাই করেন যাকে বলা যায় নৈরাজ্য। সেখানে আইন কানুন বলে কিছু থাকে না ফলে সুবিধা বুঝে কাজ করতে পারা মধ্যবিত্তরাই সুবিধা নিতে সক্ষম হয়। হত দরিদ্র মানুষ কখনো আন্দোলন করে সফল হয়েছে এমন নজির ইতিহাসেই নেই। ফকির মজনু শাহের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী ফকির সন্নাসী আন্দোলনও সফল হয়নি। ফরাসী বিপ্লব টিকে নি। রোমের দাস বিদ্রোহ বা জাপানের কৃষক বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থই হয়েছে। পুঁজিবাদ সুযোগ সবার জন্য সমান করে দেয়ার কথা বলে। এক মাইল পেছনে থেকে দৌড় শুরু করে পুষ্টিহীন শরীর নিয়ে এগিয়ে থাকা লোককে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। তাকে আরো পিছিয়ে পড়তেই হয়। এখন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক কিন্তু ধনীরা। তারা শ্রম বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে ট্রেড ইউনিয়ন থাকে, না থাকার মতোই। ট্রেড ইউনিয়ন, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও ধনীক শ্রেণির। পরিবহন শ্রমিকদের নেতা শাহজাহান খান মন্ত্রী ছিলেন দীর্ঘদিন এখনও প্রভাবশালী ধনীক শ্রেণির মানুষ ও এমপি। মশিউর রহমান রাঙা, শিমুল বিশ্বাসও একই শ্রেণিভূক্ত। তারা হত দরিদ্র মানুষের স্বার্থ না দেখে তাদের ব্যবহার করে। বাংলাদেশের মতো দেশে কর্মক্ষেত্রের চেয়ে শ্রমিক অনেক বেশি। ফলে শ্রমিকরা খুবই নিম্ন বেতনে কাজ করতে বাধ্য হয়। আর যারা কাজ পায় না তাদের অবস্থা হয় আরো খারাপ। রাজধানী ও শিল্পশহরগুলোর বাইরের দূরের জেলাগুলোর হত দরিদ্র মানুষের অবস্থা বাস্তবিক খুবই সঙ্গিন। তারা প্রতিবাদ বা আন্দোলন করতে পারে না। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম সবচেয়ে দূরের জেলা। বান্দরবান, দিনাজপুর, জামালপুরও দূরের। তাই এগুলোতে দরিদ্র মানুষও বেশি। কমিউনিস্টরা দাবি করে দেশে শ্রমিকের সংখ্যা এখন অনেক বেড়েছে। এটা সত্য কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা বেড়েছে কি? দেশে যারা প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের কাজ করে না তাদের অবস্থাটা কি? প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের সাথে হত দরিদ্র মানুষেরও শ্রেণি পার্থক্য রয়েছে। কুড়িগ্রামের হত দরিদ্র অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক আর নারায়ণগঞ্জের প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকের মধ্যে শ্রেণি বৈষম্য রয়েছে বিস্তর।

দেশে বর্তমানে বয়স্কভাতা পায় ৪৪ লক্ষ মানুষ, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার, বিধবা ভাতা ১৭ লক্ষ অর্থাৎ সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনির আওতায় রয়েছে ৭৬ লক্ষ ৪৫ হাজার মানুষ। এরাও পায় ইউনিয়ন ভিত্তিক। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার ফতুল্লা ইউনিয়নের ভাতা ভোগীর সংখ্যা, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ভাতাভোগীর সংখ্যার চেয়ে বেশি বা কাছাকাছি। পত্রিকায় আন্ধারীঝাড়ের নিউজ পাওয়া যায় যে, বয়সের ভারে নূয়ে পড়া শতবর্শী বৃদ্ধাও বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না, ঘুষের টাকা দিতে না পাড়ায় কার্ড পাচ্ছেন না অসহায় বৃদ্ধ। ফতুল্লার একজন বয়স্ক বৃদ্ধের তুলনায় আন্ধারীঝাড়ের একজন বয়স্ক বৃদ্ধ অনেক বেশি সমস্যায় থাকেন। আন্ধারীঝাড়ে আরো বহু সংখ্যক মানুষ থেকে যায় যারা ভাতা পাওয়ার যোগ্য আর ফতুল্লায় মেম্বারগণ আইন মোতাবেক ভাতাভোগী খুঁজেই পান না। ফতুল্লায় অনেক ভাতাভোগী এটাকে সরকারের সম্মানিভাবে আর আন্ধারীঝাড়ের ভাতাভোগী জীবন বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন ভাবেন। তবে টাকার বিনিময়ে কার্ড দেয়ার অভিযোগ বা ভোট না দেয়ার কারণে কার্ড না দেয়ার অভিযোগ সারা দেশেই রয়েছে। কোটার ফাঁদে এখানেও সবচেয়ে দরিদ্র মানুষই ভাতা পায়, এটাতে গাণিতিকভাবেই ফাঁক থেকে যায়। ফতুল্লায় হয়তো দুইতৃতীয়াংশকে কার্ড না দিলেও চলতো কিন্তু আন্ধারীঝাড়ে আরো কয়েকগুণ কার্ড দরকার।

ইদে এমন উপহার দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই করোনাভাইরাসের আক্রমণের কালে অসহায় নিরন্ন মানুষ আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে, খুশির জোয়ার বইবে তাদের মনে। তারা ভাববে প্রধানমন্ত্রীও তাদের কথা ভেবে উপহার দিয়েছে। আমার ভাবনাটা কেবল সবচেয়ে হত দরিদ্র মানুষের কাছে কিভাবে এই উপহার পৌঁছানো যেতো সেটাই। এসব নিয়ে আরো বহুদিক দিয়ে ভাবা দরকার, বহু দিক বিবেচনা করা দরকার।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে মে, ২০২০ সকাল ৯:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


এই ৫০ লাখ পরিবার কিভাবে তাদের নাগরিক অধিকার পেতে পারে?

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৬

মুজিব রহমান বলেছেন: বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের বাউলগানের আসর ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ঘরে থাকা তার নিজের ও শিষ্যদের বাদ্যযন্ত্র, গীতিগ্রস্থসহ প্রায় ৪০ বছরের সংগৃহিত বাউল গানের মূল্যবান উপকরণও ভষ্মীভূত হয়েছে। সহজ সরল ও নির্বিরোধ জীবনের অধিকারী বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘর পুড়িয়ে দেবার পর কি আমরা তার অধিকারের কথা বলতে পারছি। আসলে আমার অধিকারটা কেমন যেনো অধিকারহীনতার মতোই। সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের অধিকাংশই বাস করে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু দারিদ্র্যতার উপর ভিত্তি করে যদি ত্রাণ/উপহার/ভাতা দেয়া হতো তাহলে উত্তরবঙ্গকে দিতে হতো অনেক বেশি করে। সেটা করা দরকার।

২| ১৯ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:১৫

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সরকারের অর্জনগুলি কর্মি/কৃমিরা নষ্ট করে ফেলছে।

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৮

মুজিব রহমান বলেছেন: এই কৃমিনাশক ওষুধ নেই তার অদূরে সম্ভাবনাও নেই জোরালো ও কার্যকর পরিবর্তনের।

৩| ১৯ শে মে, ২০২০ দুপুর ২:২২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সব রাজনৈতিক দলই দলীয় পরিচয় দেখে ত্রাণ দেয়

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১১

মুজিব রহমান বলেছেন: বেসরকারী ত্রাণগুলো দেখুন। তারা অনেকেই ছবি তুলে প্রচার করছে। তারাও নিজেদের প্রচারের জন্যই করছে। সরকারি টাকার মালিক জনগণ এটাতো জনগণ নিজেই ভুলে বসে আছে।

৪| ১৯ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: ত্রান দিয়ে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠির অভাব দূর করা যাবে না।
আমাদেরদেশ হলো তলা ছাড়া বাক্স। যতই দেন বাক্স ভরবে না।

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১০

মুজিব রহমান বলেছেন: এটা অর্থনীতিবীদদের ভুল ও কষ্টকর বক্তব্য। এটা তখনই সম্ভব যখন সাম্যতা বজায় থাকে, প্রতারণা দূরে থাকে, মানুষের অধিকার সংরক্ষিত থাকে। মাৎস্যন্যায় অবস্থায় আপনি ছোট মাছদের বোয়ালের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন না। যে পুকুরে রাক্ষুসে মাছ থাকে সেখানে সাধারণ মাছের বিকাশ ঘটে না।

৫| ১৯ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

নতুন বলেছেন: জরিমানা করতে হবে। আর যারা জড়িত তাদের কাছে জবাবদিহিতা চাইতে হবে।

যদি কোন বেক্তির মোবাইল নাম্বার থাকে যে দরিদ্র না তাকে ২৫০০ টাকা জরিমানা করতে হবে। যারা ৫০% যে খবর দেবে তাকে দিতে হবে।

লিস্ট অনলাইনে থাকবে, যখন এলাকার কেউ খুজে পাবে তখন তার নামে প্রমান সহ জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ যাবে ঐ সাইট থেকে।

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১৩

মুজিব রহমান বলেছেন: উপহারের তালিকা প্রকাশে অসুবিধা থাকার কথা নয়।

৬| ১৯ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:২০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
সবার আগে জনসংখ্যা কমাতে হবে।
১৮ কোটি মানুষ বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশী।

১৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১৪

মুজিব রহমান বলেছেন: সাজ্জাদ ভাই অনেক দিন পরে আপনার দেখা পেলাম। এখন জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সহনীয়। উন্নত দেশগুলো তরুণ কর্মীর অভাবে ভোগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.