নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যান্ত্রিক বিশ্বে কতটুকু সুখে আছি!

২২ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:৫১


এই করোনাকালে কতটুকু সুখে আছি, না কষ্টে আছি তার হিসাব মিলাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে কারো হয়তো অফিসে যেতে হচ্ছে না, ঘরে নিরাপদেই আছেন আবার নিকটজন কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্তও হয়নি। পছন্দমতো সিনেমা দেখছেন, বই পড়ছেন, অনলাইনে আড্ডা দিচ্ছেন, অফুরন্ত অবসর আবার বেতনও ঠিকই পাচ্ছেন। তাহলে তার সুখে না থাকার কারণ কি থাকতে পারে? ধরুন দুজন সম-পদের যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার কথা। তাদের অফিস করতে হয় না। প্রথম জনের স্ত্রীর সাথে দারুণ বুঝাপড়া, সন্তানরা খুবই মেধাবী এবং অনুগত। ঘরে নেট আছে, বই আছে, অনলাইন আড্ডা আছে, গৃহকর্মীও আছে। তার কী আনন্দ আকাশে বাতাশে! বিপরীতে দ্বিতীয় কর্মকর্তার সাথে স্ত্রীর সুসম্পর্ক নেই, সন্তানরাও বেয়াড়া, গৃহকর্মী স্বামীসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে আইসোলেশনে, তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক নেই। করোনাকালটা তার জন্য দুঃখের সাগর হয়ে উঠেছে। ডাক্তারগণ সাধারণত রোগী পেলে সুখবোধ করেন। এখন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে তারা সুখবোধ করছেন বলে মনে হয় না। তবে গবেষকগণ ঠিকই সুখবোধ করছেন। তারা সফল হবেন এবং সুখের সাগরে ভাসবেন সেই উত্তেজনায় রয়েছেন সকলেই। আর অধিকাংশ সাধারণ মানুষ?
আগে কিছু সুখের কথা বলি। ভারতে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের ও অস্পর্শদের মানুষের মর্যাদা দেয়া হতো না। ধর্মান্তরিত না হলে মুসলিমরা গড়পড়তা এখনো আজকের হরিজন-অস্পর্শদের মতোই থাকতো। মুসলিমরা কি ৫শ বছর আগের তুলনায় ভাল আছে? সুখে আছে? তাহলে বাকি হিন্দুরা কেন এখন আর মুসলিম হচ্ছেন না? পাল শাসনামলে ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল অনেক বেশি। বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন হল- দুঃখের কারণ নির্ধারণ ও তা নিরসনের উপায়। সেখানে বাসনা হল সর্ব দুঃখের মূল। সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য- এটাই নির্বাণ লাভ। সকল প্রকার দুঃখ থেকে মুক্তিলাভই নির্বাণ। তার মানে সেখানেই ছিল সুখের সন্ধান। কিন্তু পাল রাজাদের পরাজয়ের সাথে সাথেই বৌদ্ধরা সুখের সন্ধান ছেড়ে হতে থাকলো হিন্দু। আবার সেনদের হটিয়ে যখন সুলতানী শাসন শুরু হল তখন সেই বৌদ্ধরা এবং নিম্ন জাতের হিন্দুরা দলে দলে মুসলমান হয়ে গেলেন। হিন্দু ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ জোড়া শব্দ হল ‘ওম শান্তি’। এর অর্থ হে ঈশ্বর আমার আত্মজ্ঞান লাভের সকল বাধা-বিঘ্ন দূর করুন। বেদান্তমতে এ হচ্ছে মহাশান্তির মন্ত্র। প্রতিদিন এই গায়ত্রী মন্ত্র জপলে শত চেষ্টা করেও দুঃখ আপনার জীবনে প্রবেশ করতে পারবে না। অনন্ত সুখের সেই সুযোগ ছেড়ে তাহলে হিন্দুরা কেন, ইসলাম মানে শান্তির ধর্মে আসলো? আর বারবারই কেন রাজা বদলের সাথে সাথে প্রজারা ধর্মও বদলালো? আবার ইংরেজরা হাজারো চেষ্টা করেও ভারতবর্ষের মানুষকে খৃস্টান বানাতে পারলো না। অবশ্য খৃস্টানরা শুরুতে এসেছিল বাণিজ্য করতে, ধর্ম প্রচারে নয়। শেষ শত বছর তাদের বিরুদ্ধে ভারতের মানুষ সংগ্রামই করেছে। ফলে তারা আর নতুন সুখ-শান্তি বিক্রি করতে পারেনি। আজকের বাংলাদেশে নিম্নজাতের হিন্দুরা মুসলমান না হওয়ার যাতনায় ভোগে না, তারা নিপীড়নে ও বঞ্ছনায় হয়তো বেদনাহত হয়। আবার মুসলিমরাও কিন্তু ধর্মান্তরিত হয়ে হতাশয় ভোগে না। কয়েকশত বছর আগে ঘটে যাওয়া বিষয় তারা আমলে নিতে চায় না। যার যার ধর্ম নিয়ে তারা সুখে আছে। অনেকে বলে, হিন্দুদের মুসলিম বানাতে একটি গুলিও খরচ করতে হয়নি। তাহলে আজ কেন নিম্নজাতের হিন্দুরা দেশ ছাড়ে তবুও মুসলমান হয় না? মুসলিমরা কি ভাবে? আহা! ওরা যদি হিন্দু হতো তবে সুখে থাকতো! কিংবা হিন্দুরা কি ভাবে? আহা! যদি ওরা সধর্ম ত্যাগ না করতো তবে ওরা সুখে থাকতো? মানুষ এমনটা ভাবার সময় পায় না। অত অতীতে যেতে পারে না, ভবিষ্যতেও না। মানুষ বর্তমান নিয়ে সুখে থাকতে চায়।

আদিকালে জীবন সংগ্রামেই দুর্বলরা ঝরে যেত, টিকে থাকতো সবলরা। এভাবেই বিবর্তনের ধারায় আস্তে আস্তে সমাজে সবল ও উন্নত মেধার মানুষরাই টিকে থাকতো এবং উন্নততর প্রজন্ম তৈরি হতো। এখন শিশু মৃত্যু কমেছে অনেক। বর্তমানে নবজাতক শিশু মৃত্যুর হার ২ শতাংশেরও কম। দুই দশকেই বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৬৩ শতাংশ। দুইশ বছর আগে একটি শিশুর স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সম্ভাবনা ছিল অনেক কম। এতো উন্নতি ও সমৃদ্ধির পরেও পরিবারগুলোতে সন্তান সংখ্যা ২শ বছর আগের তুলনায় অনেক কম। এখন সুখী পরিবার বলতেই দুটি সন্তানকে বুঝায়। তিনটির কথা শুনলেই মানুষ বাঁকা চোখে তাকায়। ভাবে লোকটি হয়তো অসচেতন বা দুটি কন্যার পরে আরো সন্তান নিয়েছেন। আগে দশটির মধ্যে যে ৫টি অধিকতর সবল তারাই টিকে থাকতো। এখন সুখের জন্য সে সুযোগ থাকছে না। সন্তান যত দুর্বলই হোক, অসুস’ হোক, কম বিকশিত হোক তাকেই বাঁচিয়ে রাখতে হয় সুখের জন্য।

সুখের পাখি ধরতে গিয়ে মানুষ এখন উত্তেজনাহীন। আদিম শিকারী জীবন ছিল উত্তেজনায় পূর্ণ। সকলে মিলে যখন একটি ষাঁড়কে শিকার করে ফেলতো; সেখানে সাফল্যে উত্তেজনায় সকলেই রাতভর নাচগানে মেতে উঠতো। তারপরে সুখের সন্ধানে মানুষ বেছে নেয় কৃষি জীবন। দশ হাজার বছরের কৃষি জীবনকেও কাটিয়ে মানুষ এখন রয়েছে শিল্প যুগে। অসংখ্য মানুষ নিরাপদ চাকরি করছে, অসুস’ হওয়ার আগেই রয়েছে চিকিৎসা। কিন্তু সেই উত্তেজনাতো আর নেই। ফলে উত্তেজনার সুখও সম্ভবত মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। কৃষি সস্তি দিয়েছিল বলেই মানুষ শিকারী জীবন ছেড়ে কৃষিতে থিতু হয়েছিল। আজকের দিনে সেই কৃষক কতটা সুখে আছে? করোনার ছোবলে সাধারণ মানুষের থমকে যাওয়া আয় নিয়ে তারাইবা কতোটা সুখে আছে?

আজকের তরুণরা পরিবারের কঠোর অনুশাসনে বড় হচ্ছে, প্রচুর পড়াশোনা করে চাকরি পাচ্ছে, বিয়ে করছে, নিয়ম মেনে চাকরি করছে, ঘুষ-দুর্নীতি করছে, গাড়িবাড়ি করছে, সন্তান মানুষ করছে, বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে যাচ্ছে বা বাড়িতে অবহেলায় থাকছে। বিপরীতে আগেকার তরুণের প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে হতো না। তারা বেড়ে উঠতো প্রকৃতির মধ্যে সংগ্রাম করে। এখনতো ভাবতে হবে আজকের তরুণের কাছে সুখ কি? ভাল থাকার বোধ না জীবন নিয়ে তৃপ্তি বা সন্তুষ্টি? তাহলে আজকের তরুণ মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা কেন বলছে? তাদের একঘেয়ে জীবন কি প্রকৃত প্রস্তাবেই সুখ এনে দিয়েছে? আমরা স্কুলে একটি গল্প পড়েছিলাম- ‘সুখী মানুষের জামা’ নামে। সুখী মানুষের জামা গায়ে দিলেই রাজার অসুখ ভাল হয়ে যাবে। খুঁজতে খুঁজতে একজন সুখী মানুষ পাওয়া গেল ঠিকই কিন্তু তার যে, জামাই নেই! এই যাত্রিকযুগে মানুষের সমৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে সুখও বেড়েছে না উল্টো কমে গেছে তার তুলনা করা দরকার। আমার ছাত্র জীবনের এক ধনাঢ্য পরিবারের সহপাঠী ছিল মাদকাসক্ত। ওই সময়েই সে হিরোইন নিতো। ওর সাথে একদিন কথা বললে সে দাবি করে, তার বাবা কম টাকা দেয় বলে কম নেশা করে। যদি আরো বেশি টাকা পেত তবে আরো বেশি করে নেশা করতো। নেশার চেয়ে নাকি আর সুখ হয় না। আমার গ্রামের এক মাদকাসক্তকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এক লক্ষ টাকা পেলে কি করবে?’ সে জানিয়েছিল, ‘মনের সুখ মিটিয়ে নেশা করব’। অথচ আমরা জানি, মাদক শুধু ব্যক্তির জীবন থেকেই নয়, তার পরিবার থেকেও সুখ কেড়ে নেয়।

আমার এক সহকর্মী দুবার করে গোসল করেন। অফিসে আসার আগে একবার, অফিস থেকে গিয়ে আরেকবার। আরেকজন সপ্তাহে দু তিনবারের বেশি গোসল করেন না। দুবার গোসল করা লোক বিষয়টি নিয়ে খুবই নিন্দা করেন। বলেন, ‘ছি! মানুষ কিভাবে গোসল না করে থাকে?’ গোসল না করে যদি অসুখ বোধ না হয় তবে সমস্যা যে কি, কে জানে? অনেক পশুপাখিও গোসল করে না। আদি কালেও মানুষ এতো গোসল করার সুযোগ পেতো না। অভ্যাস ও সামাজিক রীতি এখন মানুষকে একবার গোসল করাচ্ছে। শীতপ্রধান দেশে আবার মানুষ এতো গোসল করে না। যে যেভাবে সুখবোধ করে। আপনি দরিদ্র একজনকে একটি পুরাতন জামা দিলে সে সুখবোধ করবে। কিন্তু আপনাকে কেউ একটি পুরাতন জামা দিলে খুবই অপমান বোধ করবেন। মানে একই কারণে সুখবোধ হচ্ছে না। আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুই সুদর্শন। এক অতি সুদর্শন বন্ধুকে নিয়ে সবাই হিংসে করতো। সে প্রেমেও পড়লো কম সুদর্শনা কিন্তু স্মার্ট এক মেয়ের সাথে। বছর খানেক প্রেম করার পরে জানতে পারলো মেয়েটির একটি ৭ বছরের সন্তান রয়েছে। ছেলেটি কদিন খুব উদ্ভান্তের মতো কাটালো। অশান্তির মধ্যে কদিন কাটিয়ে শেষে বিয়েও করলো। তারপর আরো অশান্তির মধ্যে পড়লো। ওর সুদর্শন হওয়াটা শেষ পর্যন্ত সুখ দিতে পারেনি। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, দেশের বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, দারিদ্র্যতা কমেছে? মানুষ কি সন্তুষ্টু? সুখে আছে? একটি সুষ্ঠু-অবাধ ভোট দিতে পাবে সরকার? তারা সেই সাহসের সুখবোধ করবে কি?

একজন হিন্দু কালি সাধক, কালি সাধনায় প্রাপ্তির সম্ভাবনায় তৃপ্তি বোধ করেন আবার একই সময়ে কালি বিরোধীদের কর্মকাণ্ড দেখে অতৃপ্তি বোধ করেন। একজন গোড়া মুসলিম প্রার্থনায় একই রকম বোধ করেন। একজন সম্পদশালী বিশ্বাসী হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠা করে সুখবোধ করেন আবার একজন সম্পদশালী বিশ্বাসী মুসলিম মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে একই রকম সুখবোধ করেন। আবার অনেকে অন্যের প্রার্থনালয় ভেঙ্গেও সুখ বোধ করেন। কারো মেয়ে কোন মাদকাসক্ত বখাটের সাথে পালিয়ে গেছে! তার আত্মীয়-স্বজন শুধু তার কষ্টে শামিল হতেই দেখা করতে আসবেন তা নয়, কেউ কেউ তার কষ্টে সুখ বোধ করতেও আসবেন। তৃপ্তিবোধ কি সুখ আনে? সবসময় তৃপ্তির মাধ্যমে প্রাপ্ত সুখবোধটা কি একই রকম থাকবে? আমি একটি ভাল কবিতা বা গল্প লিখে সুখ বোধ করি। আমার কবিতা বা গল্প খারাপ হলেও লেখাটা ছেড়ে দিতে পারি না। তাহলে আমার সুখবোধের সুযোগ কমে যাবে। আবার একই সফলতায় একই রকম সুখ বা তৃপ্তি পাওয়া যাবে না। প্রথম বার পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ পেলে কবির যে সুখ প্লাবনের মতো আসে, আরো ভাল পত্রিকায় অনবরত ছাপা হতে থাকলে ক বছর পরে তিনি ওই পত্রিকাতে হয়তো কবিতাই দিতে চাইবেন না।

আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, ‘মানুষ যতটা সুখী হতে চায়, ‘সে ততটাই সুখী হতে পারে। সুখের কোন পরিসীমা নেই’। শেক্সপিয়র বলেছেন, ‘আমি সবসময়ই সুখী কারণ কখনোই কারো কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না, প্রত্যাশা করাটাই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’ তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তারাই সুখী যারা নিন্দা শুনে এবং নিজেদের সংশোধন করতে পারে’। এরিস্টটল বলেছেন, ‘জ্ঞানী লোক কখনো সুখের আশা করে না।’ তিনি অন্যত্র বলেছেন, মানুষ নিজের জন্য নয় বরং সুখী হওয়ার জন্য ধন, সম্মান বা স্বাস্থ্যের সন্ধান করে। ‘সুখ’ নামে বার্ট্রান্ড রাসেল একটি বই লিখেছে। সেখানে সুখ ও দুঃখ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। লিখেছেন, ‘সুখী হওয়ার কায়দাটা হচ্ছে- বাইরের দিকে তাকানো আর নিজের শক্তির স্বাদ গ্রহণ। মানসিক সুখের অধিকারী কেবল শিক্ষিত সম্প্রদায় হতে পারে। বইতে একটি গল্প আছে তাতে অশিক্ষিত একজন কূপ-খননকারী কিভাবে সুখবোধ করেন তা নিয়ে। কূপ-খননকারী দেখতে পেতো বড় বড় পাথরের বাধা তাকে দমাতে পারে না, বরং পাথরই শেষ পর্যন্ত তার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। তখন গর্বে আনন্দে তার মন গেয়ে উঠতো। জয়ী, আমি জয়ী, বাধার পাহাড় সব অপসারিত হল। কী আনন্দ! এই দেখ মাটির তলা থেকে কেমন জলধারা বেরিয়ে আসছে, ওতো আমারই সৃষ্টি; বন্দিনী বারিধারা মুক্তি পেল আমারই কৃপায়। আমি ধন্য! দার্শনিক নিৎশে মনে করেছিলেন, ‘সুখ মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্য, মানুষের অস্তিত্বের লক্ষ্য, যা মানুষকে নীচ করে তোলে’। সুখ নিয়ে এতো বিখ্যাত জনদের ভাবনা সাধারণ মানুষকে সুখী করতে পারে না।

এখন সুখের হিসাবও করোনাক্রান্ত! যে মানুষ নিত্যদিনের আয়ের উপর নির্ভর করে চলতেন, এই করোনাকালে যখন তার আয় সম্পূর্ণ বন্ধ তখন? যে মানুষটি নারায়ণগঞ্জে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাতরাচ্ছেন, আর তার পরিবারের লোকেরা রংপুরে উৎকণ্ঠিত রয়েছেন তাদের সুখ উবে গেছে। যে ক্ষুদ্র কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে কাচামাল কিনে উৎপাদনে যেতে পারে নি বা উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করতে পারেনি তাদের কি অবস্থা? গোডাউনে যাদের রাখা পণ্য বিক্রি না হওয়ায় ইতোমধ্যে ইঁদুরে কেটে দিয়েছে অথবা ডেমেজ হয়ে পড়েছে তারা কি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন? এই ইদুল ফিতরে পণ্য বিক্রি করে সারা বছরের মূল লাভটা যে ক্ষুদ্র-মাঝারি কাপড় ব্যবসায়ীরা করে রাখেন আর সারা বছর অল্প লাভে ব্যবসা চালু রাখেন তারা কিভাবে টিকবেন ভবিষ্যতে? তাদের কাছে সুখ নামক মানবিক অনুভূতির কি অবস্থা মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে? উদারপন্থী অর্থনীতিবীদগণ দাবি করেন, ‘অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুস্পষ্টভাবে সুখের সাথে সম্পর্কযুক্ত’। এই স্বাধীনতা আজ কি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে? এই সময়ের মানুষ ধরেই নিয়েছিল, আধুনিক বিজ্ঞান ও পুঁজিবাদ দিয়েই শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করে সকল সমস্যা দূর করে পৃথিবীকে সুখের সাম্রাজ্য বানাবে। কয়েক মাসের করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব সব হিসাব বদলে দিচ্ছে। আজ ক্ষমতা, মুনাফা, শোষণ এবং বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ত্ববাদী দুঃশাসনের মুখোশ খসে পড়েছে। হঠাৎ করেই সুখে ভরপুর পৃথিবীকে অধিকাংশ মানুষের কাছে নরক মনে হচ্ছে। যে উন্নয়ন মানুষের জীবন বাঁচাতে ভূমিকা রাখে না সে উন্নয়ন ফলপ্রসু হতে পারে না। পুঁজিবাদে উদারীকরণ ও ব্যক্তিমালিকানা উদ্বুদ্ধকরণ করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ হ্রাস করে গুটিকয়েক পুঁজিপতির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত করে দেয়া হয়েছে। তৈরি হয়েছে তীব্র বৈষম্য। সরকার ঘোষিত প্রণোদনায় বৃহত শিল্পপতিরাতো ঠিকই লোকসান কাটিয়ে উঠবেন, আর লে আউট করে শ্রমিকদের অনাহারের দিকে ঠেলে দিবেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না, সুখ চলে যায়’।যান্ত্রিক বিশ্ব আসলে মানুষের জন্য সুখ নিশ্চিত করতে পারে না, এজন্য দরকার মানবিক বিশ্ব। সাধারণ মানুষকে দ্রুতই বুঝতে হবে, পুঁজিবাদের কথিত শান্তি-সমৃদ্ধির কথিত সুখ খুবই ভঙ্গুর, খুবই কাল্পনিক। কর্পুরের মতো কোন ফাঁকে সুখ উবে গেছে বুঝতেও পারেনি সাধারণ মানুষ।

বি.দ্র.: হাতে আঁকা ছবি তিনটি এঁকেছেন তাবাসসুম নওসিন নাওয়ার

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:০১

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি পদার্থ বিদ্যায় মাষ্টার্স, রাজনীতি পছন্দ করেন না; শাহজাহান মিয়া ৫ ক্লাশ পাশ করে রাজনীতি করে দেশ চালাচ্ছে; এটা কি হচ্ছে?

২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪৯

মুজিব রহমান বলেছেন: রাজনৈতিক আলাপ আমার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এসব আলাপন স্ক্রীণসর্ট দিয়ে অনেকেই ঝামেলায় ফেলতে চায়। কয়েকবারই থানা, র‌্যাব হেড কোয়ার্টার ও পুলিশ হেড কোয়ার্টারসহ বিভিন্নস্থানে অভিযোগ করে আমাকে হয়রাণি করার চেষ্টা করেছে। ওরা সবাই ৫ থেকে ৮ ক্লাসের মধ্যেই। ওরাই এখন দখলে রাখতে চাচ্ছে মাঠ। তাই নিরাপত্তার জন্যই ট্যাগ লাগাতে হয়েছে। যেমন গেটে লেখা থাকে কুকুর হতে সাবধান। তাতে আগেই দুষ্কৃতিকারীরা গেটে ঢুকে না কুকুরও কামড়ানোর সুযোগ পায় না।

২| ২২ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: পৃথিবীতে সুখ নিয়ে এত ঝামেলা বলে সম্ভবত ধর্মে মৃত্যুর পরে জান্নাত নামের অন্য একটা জায়গার কথা বলে সেখানে অনন্ত সুখ।
ছবিগুলো সুন্দর।

২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫১

মুজিব রহমান বলেছেন: লেখার সময় ওটাও মাথায় এসেছিল। লেখা কি হয়নি? তবে ওই লোভ দেখিয়েইতো সুখের ব্যবসা করছে অনেকে। ৪৩০০ রকমের সুখের ৪৩০০ রকমের ব্যবসায়ী।

৩| ২২ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা ভালো লাগে। মন দিয়ে পড়ি।

২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৩

মুজিব রহমান বলেছেন: কি করবো, আমার সব আইডিই বাতিল করে দিয়েছে সামু। একটাই আছে এখন। এটা বাতিল করলে ভাবছি আর আসবো না। এই বাতিল করেও সামু রক্ষা পায় না আবার আমরাও থাকি না। মত প্রকাশ খুবই কঠিন বাংলাদেশে। কতো যে, মেপে লিখতে হয়। তবুও পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

৪| ২২ শে মে, ২০২০ দুপুর ১:৫০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেল লেখা। ভালোবাসা ও শুভ কামনা।

২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৫৪

মুজিব রহমান বলেছেন: আপনার জন্যও ভালবাসা নিরন্তর!

৫| ২৯ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: একটা কথা আছে ' পাগলের সুখ মনে মনে'। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও আসলে কিন্তু সুখ ব্যাপারটা আসলে একটা মানসিক অবস্থা। তবে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা সুখী হওয়াকে প্রভাবিত করে। আমার মনে হয় কিছু মানুষের মধ্যে জন্মগতভাবে সুখী থাকার প্রবনতা থাকে। এরা হাজার প্রতিকুলতাতেও সহজে দুখী হয় না। জীবনের সকল পরিস্থিতি এরা উপভোগ করে। আমার কাছে হুমায়ুন আহমেদ কে এরকম একজন মানুষ মনে হয়েছে।

তবে সন্ন্যাস ব্রত এবং চরম ভোগ এই দুইয়ের মধ্যে অবস্থান করাটাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। বিজ্ঞানে যেমন আপেক্ষিকতার সূত্র আছে তেমনি আমার কাছে মনে হয় সুখ বা দুঃখ হোল আপেক্ষিক। এটা স্থান, কাল, পাত্র, পরিবেশ, পরিস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:১১

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। জিনের কিছু বিষয় আছে। তাতে মানুষ অল্পতেই সুখী হয়ে উঠে। সে কোন পরিস্থিতিতেও তারা সুখ বোধ করে। অন্যকে আমলে নিতে চায় না। হুমায়ূন আহমেদ বিয়ের বহু আগেই দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী ও সন্তানদের কথা ভাবেনওনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.