নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কভিড-১৯ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সফলতা ব্যর্থতা

২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

করোনাভাইরাস শনাক্তে শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যস্ত শহরগুলোরই। তারা শহরগুলোর গতি শুরুতেই থামাতে চায়নি। আজ নিউইয়র্কে কভিড-১৯ রোগ মানে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে পৌনে চার লক্ষ, মারা গেছেন প্রায় ৩০ হাজার। নিউ জার্সিতে শনাক্ত হয়েছে ১.৫৭ লক্ষ, মারা গেছেন ১১ হাজার। ধনী দেশের বাইরেও আমরা শহরাঞ্চলেই আক্রান্ত বেশি দেখেছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত তিন শহর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামেই শনাক্ত হয়েছে দেশের সিংহভাগ রোগী। লন্ডন, প্যারিশ, রোম, মাদ্রিদ, বার্লিনেই কেন সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। এর একটিই কারণ এ শহরগুলোতে ব্যাপকহারে পুঁজির বিকাশ ঘটেছিল এবং গতি থামাতে কেউই চায়নি। মনে করেছিল গতি থামিয়ে দিলেই পিছিয়ে পড়বে। এই ব্যাপক গতির মধ্যে থেকেও কম আক্রান্ত হওয়ার কারণে প্রশংসা পাচ্ছে চীনের বেইজিং, দঃ কোরিয়ার সিউল, সিংগাপুর সিটি, হংকং, তাইওয়ানের তাইপে সিটি, নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটন।

১.৮০ কোটি মানুষের দেশ জিম্বাবুয়েতে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৫৬ জনের। মারা গেছে ৪ জন। জনসংখ্যার তুলনায় শনাক্ত কম হয়েছে। তবে জিম্বাবুয়েতে প্রথম শনাক্ত হয় ২০ মার্চ মানে অনেক পরে। ফলে জিম্বাবুয়ে সফল কি না এখনো বলার সময় আসেনি। সিরিয়াতে ২ কোটি মানুষ। শনাক্ত হয়েছে ১০৬ জন, মারা গেছেন ৪ জন। শনাক্তের ২০ জনই রিপোর্ট লেখার দিন ২৫ মে হয়েছেন। তাদেরও আক্রান্ত শুরু হয়েছে ২২ মার্চ। শুধু আজই ২৩% বৃদ্ধি ভাল ইংগিত নয়। কলম্বিয়ার জনসংখ্যা সাড়ে চার কোটি। শনাক্ত হয়েছে মাত্র ১২৪ জন। মৃত্যু নাই, ২ জন বাদে সবাই সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেছেন। প্রথম শনাক্তও হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি। অধিকাংশ আক্রান্তই মার্চ মাসের। মানে তারা অনেকটাই সফল। কলম্বিয়ার সফলতার কথা কেউ বলে না এর অন্ধকার অতীতের জন্যই হয়তো। হয়তো সঠিক তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে। মিয়ানমারে ২০৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে মাত্র ৬ জন। সাড়ে ছয় কোটি জনসংখ্যার দেশে এতো কম আক্রান্তকে গুরুত্বের চোখেই দেখা উচিৎ। মিয়ানমারে শনাক্ত হয়েছে অনেক পড়ে ২৩ মার্চ। মিয়ানমারের মতোই আড়াই কোটির পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে আক্রান্ত ২০৯ জন, মৃত্যু ১ জন আবার প্রথম শনাক্তও হয় একই সময়ে। আফ্রিকা জুড়েই আক্রান্তর হার কম একই কারণে যে, ওখানে শনাক্ত শুরু হয়েছে মার্চের শেষে। ইউরোপের প্রধান আক্রান্তর দেশগুলোতে শনাক্ত শুরু হয় ফেব্রুয়ারির শুরুতে। একই সময়ে শুরু হওয়া দেশ ভিয়েতনামকে এ কারণেই সুপার সফল দেশের তালিকায় রাখা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আমেরিকায় শনাক্ত ছিল মাত্র ৬৮ জন।

মালদ্বীপে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৩৭১ জন, মৃত্যু মাত্র ৪ জন। আমরা কি মালদ্বীপকে সফল বলবো? মাত্র ৪ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১৩৭১ মানে হল- আনুপাতিক হারে ১৭ কোটিতে ৫.৮৩ লক্ষ। কোন ভাবেই কোন দেশের মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের বেশি চিহ্নিত হবে না। অচিহ্নিত অনেকের শরীরেই এন্টিবডি তৈরি হবে ফলে তারা আক্রান্ত হবে না। ভাইরাসের সংস্পর্শের বাইরেও কিছু মানুষ থেকে যাবেন। ফলে মালদ্বীপে কোনভাবেই ১.৫ লক্ষ আক্রান্ত হবে না। মৃত্যুর ক্ষেত্রেও দেখুন লক্ষতে ১ জন, বাংলাদেশে ৩.৪ লক্ষে ১ জন মৃত্যুবরণ করেছে। আক্রান্ত তুলনা করলে অবশ্যই জনসংখ্যা বিবেচনায় আনতে হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জর্জিয়ার প্রশংসা করেছেন। তাদের ৪০ লক্ষ মানুষের মধ্যে আক্রান্ত ৭৩১ জন, মৃত্যু ১২ জন। এই অনুপাতেই বাংলাদেশে শনাক্ত রয়েছে। আবার কোন কোন দেশে প্রথম শনাক্ত হয়েছে অনেক পরে। তাদের সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসেনি। তবুও কেউ কেউ এগিয়ে রয়েছেন দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়েই। অভিনন্দন তাদেরই জানাতে হবে। নিউজিল্যান্ডে আক্রান্ত ১৫০৪জন, মৃত্যু ২১ জন। তাদের ১৬ এপ্রিলের মধ্যেই ১৪শত পার হয়েছিল। গত ৪০ দিনে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১০০ জন আর শেষ কদিন কোন রোগীই শনাক্ত হয়নি। এখানেই সফলতা। একারণেই নিউজিল্যান্ডের ৪০ বছরেরও কম বয়সী প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা কেট লরেল আরডার্নকে সফল বলা হচ্ছে। তার সঠিক সময়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়াতেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিউজিল্যান্ডে এত কম রয়েছে। দেশে তার জনপ্রিয়তাও বেড়েছে হু হু করে। এর আগেও মসজিদে ভয়াবহ হামলার পরবর্তী বিষয়টি তিনি সফলভাবে সামাল দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন। নেপালে শনাক্ত ৬৮২ আর মৃত্যু চার জন। তাদের ১০০তম শনাক্ত হয় ৭ মে অর্থাৎ প্রথম আক্রান্ত হওয়ার তিন মাস পরে। এখন শুধু ২৫ মেতেই আক্রান্ত হয়েছে ৭৯ জন। নেপালে দ্রুতই আক্রান্ত বাড়ছে। সফল বলার সময় আসেনি। কমিউনিস্ট শাসিত দেশ বা অঞ্চলগুলো প্রশংসা পাচ্ছে। তাদের জনসম্পৃক্ততা ও জনবান্ধব কর্মসূচির সাথে অভ্যস্ততার কারণেই তারা সফল হয়েছে।

ভিয়েতনামে আক্রান্ত ৩২৫ জন কোন মৃত্যু নেই। এরমধ্যে সুস্থ্ ২৬৭ জন। করোনা শনাক্তের আগে থেকেই তারা কঠোর পদক্ষেপ নেয়। জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও রোগ শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার "চরম পর্যায়ে পদক্ষেপ" নেয়া শুরু করে দেয়। পরীক্ষা ছাড়া কাউকেই বিমানবন্দর পার হতে দেয়নি। খুঁজে খুঁজে বের করেছে আক্রান্ত ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছে। তাদের সকলকেই ঢুকিয়েছিল কুয়ারেন্টিনে। তখন অনেকে একে বাড়াবাড়ি মনে করেছিল। তাতেই কাজ হয়েছে। ১০ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ক্ষমতায় রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। প্রধানমন্ত্রী গুয়েন তান দংকে অভিনন্দন।

কিউবায় শনাক্ত ১৯৪১ জন আর মৃত্যু ৮২ জন। শুরুর আক্রান্তের ধারা কাটিয়ে উঠেছে। এখন দৈনিক আক্রান্ত হচ্ছে খুবই কম। ২৫ মে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৬ জন। বিশ্বজুড়ে এখনো তাদের আবিস্কার করা আলফা টু-বি ওষুধটিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ভরসা। আমেরিকার ৬০ বছরের নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলা করেই তারা সারা পৃথিবীতেই পাঠাচ্ছে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল। তাদের জনস্বাস্থ্যমুখী স্বাস্থ্যখাত নাগরিকদের ঘরে ঘরে গিয়ে ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে অভ্যস্থ। সকল নাগরিকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগই স্থাপন করা সহজ ছিল তাদের। শুরুতেই পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, এয়ারপোর্টে কঠোর নজরদারি, নাগরিকদের বাড়িতে থেকেই কাজের সুযোগ তৈরি করে সফল হয়। ১.১৩ কোটি জনসংখ্যার কমিউনিস্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট মিগেল ডিয়াজ কানেলকে অভিনন্দন।

কেরালা কোন রাষ্ট্র নয়, ভারতের একটি রাজ্য মাত্র। ভারতে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় কেরালায়। তারপর থেকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হয় রাজ্যটি। সমন্বিত উদ্যোগ তাদের সফল করে। ব্যাপক হারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসাদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অগ্রিম পেনশন, ফ্রি রেশন দেয়া, ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়াসহ তারা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মাত্র তৃতীয় রোগী শনাক্তের পরেই বিপর্যয়ের ঘোষণা দিয়ে জরুরী অবস্থা জারি করে তারা। শ্রমিক-মজুরদের জন্য নেয়া হয় বিশেষ পদক্ষেপ। কেরালার সফলতাকে আজ ‘কেরালা মডেল’ হিসেবে বিশ্বজুড়ে সুখ্যাতি পেয়েছে। মোদী ব্যর্থ হলেও যেখানে মহারাষ্ট্রে আক্রান্ত ৫০ হাজারের বেশি সেখানে কেরালায় আক্রান্ত ৭৯৫ জন আর মৃত্যু ৪ জন। সাড়ে তিন কোটি জনসংখ্যার কেরালার মুখ্যমন্ত্রী কমিউনিস্ট পিনারাই বিজয়নকে অভিনন্দন।

সিংগাপুরে ৩২ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মৃত্যু মাত্র ২৩ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। অধিকাংশেই প্রবাসী শ্রমিক। প্রবাসী শ্রমিকদের ডরমেটরীতে ফ্রি খাওয়ার ব্যবসা ও নিয়মিত চেকআপের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ২৫ হাজারের বেশি আক্রান্ত রয়েছেন ওই ডরমেটরীগুলোতে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে পরীক্ষা, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে রাখাতে কাজ হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে রোবট কুকুর ব্যবহার করেছে। বিশ্বের অন্যতম বহুল ব্যবহৃত বিমানবন্দর তাদের, বিশ্ববাণিজ্যে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়েও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে অত্যাবস্যকীয় পণ্য৷ জরুরি পরিষেবাও খোলা রয়েছে৷ আনুপাতিক হারে আক্রান্ত অনেক বেশি হলেও মৃত্যু আক্রান্তের তুলনায় কম হওয়ার ৫৬ লক্ষ জনসংখ্যার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি হেসিং লুংকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। কাতারেও ৪৫ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ২৬ জন। কিন্তু তাদের অবস্থা দ্রুতই খারাপ হচ্ছে। আক্রান্ত ও মৃত্যের অর্ধেকই গত ১৫ দিনে। সিংগাপুরে চিকিৎসাধিন মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, শনাক্তও কমছে দিন দিন।

কিছু দেশের ব্যর্থতা সীমাহীন। তারা এমন একটা ভয়ঙ্কর ভাইরাসকে শুরুতে পাত্তাই দিতে চায়নি। তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। চিকিৎসক ও গবেষকদের কথায় পাত্তা দেয়নি। আসলে পুঁজির বিকাশ থেমে গেলে ব্যর্থতার দায় নিতে হতে পারে সেই ভয়েই তারা ভীত হয়ে পড়েছিলেন। তথাকথিত উন্নয়ন যে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে না, অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠে তা উন্নত দেশের জনগণ এবার টের পেল।

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডুনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, করোনাভাইরাসে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যু তার জন্য সম্মানের। গবেষকগণ বলেছেন, ট্রাম্প যদি স্বাস্থ্য বিভাগের অনুরোধ শুনে আর মাত্র ৭ দিন আগে লকডাউন শুরু করতো তাহলেই অন্তত ৬০% আক্রান্ত ও মৃত্যু কম হতো। বিশ্বব্যাপী বর্ণ বিদ্বেষ, ধর্ম বিদ্বেষ ছড়িয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছেন। সব দায় অন্যের উপর চাপাতে তিনি সিদ্ধহস্ত। জলবায়ু, বিশ্বস্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অর্থ প্রদান বন্ধ করে দিচ্ছেন। এ সময়ে তাঁর ব্যর্থতাই সবচেয়ে বেশি।ওখানে আক্রান্ত ১৭ লক্ষ, মৃত্যু ১ লক্ষ। দৈনিক আক্রান্ত এখনো ২০ হাজারের বেশি।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো বলেছেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তার কিছুই করার নেই। ব্রাজিলের মহাকাশ সংস্থার তথ্য থেকে দেখা গেছে যে, অ্যামাজনে বন উজাড়ের হার মাত্র এক বছরের মাথায় ৮৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাজন বনকে পৃথিবীর ফুসফুস বলতে তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি এই গ্রহকে বাঁচানোর উপায় হিসাবে মানুষকে একদিন পর পর মলত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছেন। অনবরত মিথ্যাচার ও ভুল কথা বলে তিনিও ট্রাম্পের মতোই বিতর্কিত হয়েছেন।ওখানে আক্রান্ত ৩.৮ লক্ষ, মৃত্যু ২৪ হাজার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা করোনা থেকে বাঁচার জন্য গোমূত্র সেবন ও গোবরে স্নানকেই একমাত্র প্রতিশেধক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। গোধরায় মিথ্যা অজুহাত দিয়ে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যার অভিযোগ করেছেন অরুন্ধতী রায়সহ গবেষকগণ। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন। ভারতজুড়ে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটিয়ে সংখ্যালঘুদের জীবন বিপন্ন করে দিয়েছেন। কেরালা বাদে অধিকাংশ আঞ্চলিক সরকারও ব্যর্থ হয়েছে। ভারতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১.৫০ লক্ষ, মৃত্যু ৪.২ হাজার। এখন দৈনিক ৭ হাজার করে আক্রান্ত হচ্ছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট যেনো বুলেট আর পারমানবিক বোমা দিয়েই করোনাভাইরাস রোধ করতে চেয়েছিলেন। মানুষের অধিকারের টুটি চেপে ধরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কবর দিয়ে রেখেছেন। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ বাধানোর জন্য রয়েছেন সক্রিয়। তিনিই রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী বোরিস নেমৎসভের হত্যাকারী। পুতিনের বিরুদ্ধে কথা বলার পরিণাম হল একের পর এক গুম হয়ে যাওয়া। কর্তৃত্ববাদী শাসনের চূড়ান্ত নজির হলেন তিনি। সেখানে দৈনিক ১০ হাজার করে আক্রান্ত হচ্ছে। তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তারপরও রাশিয়ায় এখন পর্যন্ত ৩.৫৩ লক্ষ শনাক্ত হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩.৬ হাজার।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে ফিরে এসেছেন। এ কারণে তিনি সহানুভূতিও পাচ্ছেন। তার সরকারের টেস্টিং কিট না থাকার অভিযোগ উঠে। অতিরিক্ত চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে আগের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটি তাল মেলাতে পারছিল না। সংকট যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের যে এককেন্দ্রিক কাঠামো রয়েছে তা মেনে চলার জন্য দীর্ঘায়িত হয়েছে। পরীক্ষা সীমিত করার কারণে ভাইরাসটি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যদি পরীক্ষা করার সক্ষমতা না থাকে তাহলে মহামারি কোন পর্যায়ে আছে তা বোঝার উপায় থাকে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যকে বিচ্ছিন্ন করতে ভূমিকা রেখেছেন আবার বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুদ্ধবাদের সমর্থন যুগিয়েছেন। এ পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত ২.৬১ লক্ষ, মৃত্যু ৩৭ হাজার।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যাঞ্চেজ, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ এই চার প্রভাবশালী দেশের সরকারপ্রধানদের বিরুদ্ধে একইসাথে অভিযোগ আনা যায়। এরা পুঁজিবাজারকে সচল রাখতে গিয়ে সময়মতো করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে নামেনি। তারা ধনিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে নিজ দেশের এবং একই সাথে বিশ্বের দরিদ্র মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যান। পৃথিবীতে শান্তি ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এরা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই চার দেশে সম্মিলিত আক্রান্ত প্রায় ৯ লক্ষ এবং মৃত্যু প্রায় ১ লক্ষ।

সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান এর ব্যর্থতা সীমাহীন। সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যা করিয়ে আবার তার পরিবারকে অর্থ দিয়ে কিনে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইয়েমেনের উপর হঠকারী যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়ে অসংখ্য নারী-শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে সমস্ত অপকর্মে সহযোগিতা করাই তার কাজ। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিতিশীলতার অন্যতম কারিগর তিনি। সৌদি সরকারের ইরাক ও সিরিয়া-নীতির ব্যর্থতায় ওখানেও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেয়ে তা যথা সময়ে হয়নি বলেই আক্রান্ত ৭৫ হাজার, মৃত্যু ৪শ।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান নিজ দেশে ভিন্নমতবালম্বিদের কঠোর শাসনে দাবিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। মুক্তমনের মানুষদের কারণে অকারণে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। মতপ্রকাশের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। গণপরিবহন ও ফ্লাইট সময় মতো বন্ধ না করে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণেই তুরস্কে ব্যাপকহারে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। রাজধানী আঙ্কারায় নির্বাচনে হেরে গিয়ে উল্টো কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন বাতিল করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন। তার ব্যক্তিগত ব্যর্থতার কারণেই আজ পর্যন্ত ওখানে আক্রান্ত ১.৫৮ লক্ষ, মৃত্যু ৪.৪ হাজার।

ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানির চেয়ে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই ক্ষমতাধর। তবে সরকার প্রধান হিসেবে ব্যর্থতার দায় তারও। খামেনে গত নির্বাচনের আগে ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল প্রায় অর্ধেক প্রার্থীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন। কে প্রার্থী হবে আর না হবে তা নির্ধারণ করে দিলে আর নির্বাচনের কি থাকে। এর আগে তারা ইরাকের সাথে যুদ্ধ বাধিয়েছিলেন। মধ্যপ্রাচ্য অশান্ত রাখার দায় তারও। সময়মতো ধর্মীয় মাজারগুলো বন্ধ না করা এবং কোয়ারেন্টিন করাতে ব্যর্থতার কারণেই ওখানে এতো ভাইরাস ছড়িয়েছে। ওখানে আক্রান্ত ১.৩৮ লক্ষ, মৃত্যু ৭.৫ হাজার।

চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং এর প্রাথমিক ব্যর্থতাতেই আজ করোনা আক্রান্ত পৃথিবীর করুণ দশা। শুরুতে তিনি গুরুত্ব দেননি। যারাই কথা বলতে চেয়েছেন তাদেরই গুম করে দিয়েছেন, বা গ্রেফতার করেছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে বলার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি যদি বিষয়টি উপলব্ধি করে সতর্ক হতেন এবং আক্রান্তদের বিদেশে যাওয়া ঠেকাতে পারতেন তাহলে বিশ্বব্যাপী এভাবে ছড়াতো না। প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় থাকার নির্দিষ্ট মেয়াদের বিধান তুলে দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে চীনা কংগ্রেস। ফলে বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর 'আজীবন ক্ষমতায়' থাকার পথে কোন বাধা নাই। তীব্র কর্তৃত্ববাদী শাসন দীর্ঘমেয়াদে চীনের অতীতের দুঃসহ স্মৃতিকেই ফের উসকে দিতে পারে এবং সংকটে ফেলতে পারে পৃথিবীকে। ওখানে আক্রান্ত ৮৩ হাজার আক্রান্ত আর মৃত্যু ৪.৬ হাজার হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্ত খুবই নগণ্য এবং মৃত্যুও নতুন করে হয়নি। উহান ব্যতিত অন্য শহরগুলোকে তিনি ব্যাপক আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর কারণে চীনে আরো ভয়াবহ অবস্থা হতে পারতো। সেখান থেকে রক্ষা করার মধ্যেও সফলতা রয়েছে।

আজ বিশ্ব নেতাদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ আশা করে এখনো তারা ভুল থেকে বের হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন এবং পৃথিবীকে এই মহামারীর কবল থেকে রক্ষা করবেন। নতুবা ব্যর্থতার ঐতিহাসিক দায় নিতে হবে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: জানুয়ারি মাসের শুরুতে, যখন দেশটিতে একজনেরও রোগ শনাক্ত হয়নি, তখনই ভিয়েতনাম সরকার "চরম পর্যায়ে পদক্ষেপ" নেয়া শুরু করে দেয়। পরীক্ষা ছাড়া কাউকেই বিমানবন্দর পার হতে দেয়নি। খুঁজে খুঁজে বের করেছে আক্রান্ত ব্যক্তি কার কার সংস্পর্শে এসেছে। তাদের সকলকেই ঢুকিয়েছিল কুয়ারেন্টিনে। তখন অনেকে একে বাড়াবাড়ি মনে করেছিল। তাতেই কাজ হয়েছে।
.............................................................................................................
আমরাও তাই চেয়েছিলাম, দুর্ভাগ্য আমার তা রক্ষা করতে পারিনি ।

২| ২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ৩০ তারিখে আমাদের লকডাউন খুলে দিবে। সকল অফিস খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও গনপরিবহন বন্ধ থাকবে। সিদ্ধান্ত টা কি ঠিক হলো?

২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ভয়ঙ্কর দিন আসছে।

৩| ২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ঢিলেঢালা লকডাউনের কারনে নিয়ন্ত্রনে আসা সংক্রমন বেড়ে গেছে,
এটা আবারও ট্রাকে আনার জন্য কমপক্ষে ১৪ দিন কঠোর লকডাউন
বৃদ্ধি করা উচিৎ ছিল ।

৪| ২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে আটক করে ঝুলায়ে দেয়ার দরকার।

২৭ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২৫

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। ট্রাম্পকে রশির আরেক পাশে রেখে দুজনকে দুধারে ঝুলাতে পারলেই সঠিক শাস্তি হতো।

৫| ২৭ শে মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪

শূন্য সারমর্ম বলেছেন: সফল ও অসফল নেতা নেত্রীদের মুখোমুখি বৈঠকে বসায় দেয়া দরকার। কার্যকরী সিদ্ধান্ত পাওয়া যেতে পারে।

২৭ শে মে, ২০২০ রাত ৯:২৪

মুজিব রহমান বলেছেন: অসফলরাইতো শক্তিশালী। মিটিং শেষেই হুমকিতেই সফলরা ব্যর্থ হয়ে যাবে।

৬| ২৯ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: যে সরকারগুলো কঠোর হতে পেরেছে তারা সফল হয়েছে। যারা বেশী গণতান্ত্রিক হতে চেয়েছে তারা ব্যবস্থা নিতে দেরী করেছে বা অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারেনি ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আবার কিছু দেশের সরকার ও প্রশাসন এত অদক্ষ যে তাদের অবস্থা হয়েছে ল্যাজেগোবরে।

২৯ শে মে, ২০২০ রাত ৮:০৮

মুজিব রহমান বলেছেন: শুধু গণতান্ত্রিক হলে মনে হয় এতো ক্ষতি হতো না। তারা পুঁজির বিকাশটাকে থামাতে চায়নি, পিছিয়ে পড়তে চায় নি বলেই এ অবস্থা হয়েছে। ভিয়েৎনাম কঠোর হয়েছে শুধু কমিউনিস্ট দেশ বলেই না, তারা ক্ষতিটা মেনে নেয়ার মানসিকতাটাও দেখাতে পেরেছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও অসুবিধা হয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.