নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

করোনাভাইরাস মানুষের গড় আয়ু ও আয় কতটা কমিয়ে দিবে?

০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ৯:৩১


খৃস্টপূর্ব ২ হাজার থেকে ১ হাজার পর্যন্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছিল খুবই সামান্য। এর কারণই ছিল মানুষের গড় আয়ু খুব কম থাকা। মানে শিশু মৃত্যুর হার অত্যধিক বেশি থাকা। বিভিন্ন দুর্বিপাকে গণহারে মৃত্যুও গড় আয়ু কমিয়ে দিত। প্লেগ, ফ্লু, কলেরার মতো মহামারী, ঘুর্ণিঝড়-সাইক্লোনেও বহু মানুষ মারা যেতো। এখন যে করোনা ভাইরাসের অতিমারী চলছে তাতে মৃত্যু ৪ লক্ষের কম। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি না হতো তবে এতো দিনে আক্রান্ত হয়ে যেতো ১০০ কোটি এবং মারা পড়তো ৬% হিসাবে ৬ কোটি মানুষ। প্রতি বছরে পৃথিবীতে মারা যায় প্রায় ৬ কোটি মানুষ। অর্থাৎ সংখ্যাটি ডাবল হয়ে যেতো। গড় মৃত্যু উঠে যেত হাজারে ১৬ এর উপরে। তাতে গড় আয়ুটা ধপাস করেই নেমে যেতো। আজকের অবস্থায় গড় আয়ু কতটা কমে যাবে?

আজ উন্নত দেশগুলোর মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। ২০১৩ সালের হিসেবে জাপানের গড় আয়ু ৮৪ বছর; অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিংগাপুর, ইতালির গড় আয়ু ৮৩ বছর। অত না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের গড় আয়ুও অনেক বেড়েছে। ২০১৩ সালে শ্রীলংকার ৭৫, বাংলাদেশের ৭০, নেপালের ৬৮, ভারতের ৬৬ ও পাকিস্তানের ৬৫ বছর। ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান গড় আয়ু ৭২ বছর। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশের (তখন পূর্ব পাকিস্তান) গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর, ১৯৬৫ সালে ৪৯ বছর। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে ৫ লক্ষ মানুষের অকাল প্রায়াণ ঘটলে গড় আয়ে কমে হয় ৪৮ বছর। ১৯৭৫ সালের গড় আয়ু হয় ৪৯ বছর। তেমন বাড়েনি কারণ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষর কারণে। ১৯৮০ সালে চার বছর বেড়ে হয় ৫৩ বছর। ১৯৯০ সালে হয় ৫৮ বছর। ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক জামানায় উল্লফন ঘটে গড় আয়ুর। বেড়ে হয় ৬৫ বছর। ২০১০ সালে হয় ৭০ বছর। গত ১০ বছরে গড় আয়ু বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়েছে আবার।

কেন বেড়েছিল গড় আয়ু? এক সময় প্রতিটি পরিবারেই বহু শিশু মারা যেতে ৫ বছরের মধ্যেই, নবজাতকের মৃত্যুহারও ছিল অনেক। একজন যদি ৮০ বছর বাঁচতো আরেক শিশু জন্মের পড়েই মারা গেলে তাদের গড় আয়ু হয়ে যায় ৪০। বাংলাদেশের তুলনা দেখুন ২০০১ সালে নবজাতকের মত্যু ছিল ৫.৬% আর ২০১৭ সালে এসে হয়েছে ২.৪%। ৫ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ২০০১ সালে মৃত্যহার ছিল ৮.২%, ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছে ৩.১%। মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে অনেক। ১৯৮৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ০.৬৫% আর ২০১৭ সালে এসে এই হার হয়েছে ০.১৭%। মৃত্যুহার কমে গেলে গড় আয়ু বেড়ে যায়।

মৃত্যুহার কেন কমলো? অবশ্যই চিকিৎসার মান উন্নয়নের জন্য। এই অবদান সম্পূর্ণই বিজ্ঞানের। মানুষের শিক্ষার হার বেড়েছে। যেমন ৭ বছরের শিশু ২০০৫ স্কুলে যেতো ৫২.১% আর ২০১৭ সালে এই হার ৭২.৩%। চিকিৎসা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে জড়িয়ে আছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও। ২০০৫ সালে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল ১৯.২% মানুষের আর ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা হয় ৩৯.০% মানুষের। এছাড়া ছোঁয়াচে রোগের পাদুর্ভাবও বিজ্ঞান কমাতে পেরেছিল। এখন আর কলেরা, প্লেগ এর মতো ভয়ঙ্কর রোগে মানুষ মারা যায় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও এসেছে বিজ্ঞানের ছোঁয়া। বিভিন্ন ভাবেই মানুষের মৃত্যুহার কমে যাওয়াতেই মূলত গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছিল। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস এসেছে আবার অতিমারী হিসেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ২৬.৭৫ লক্ষ লোক মারা যেতো। এ বছর করোনাতে ওখানে ইতোমধ্যেই ১.১০ লক্ষ লোক বেশি মারা গেছে। আর মারা না গেলেও তাদের মৃত্যু ৪% বেড়ে গেছে। এতে আমেরিকার গড় আয়ু সামান্য কমে যাবে।

অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসার সংকটে আফ্রিকার অনেক দেশেই এখনো গড় আয়ু যথেষ্ট কম। যেমন গড় আয়ু সবচেয়ে কম সিয়েরা লিওনের। তাদের গড় আয়ু মাত্র ৪৬ বছর। ১৯৬০ সালে আমাদের এমন গড় আয়ু ছিল। চাঁদ, অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গোর গড় আয়ু ৫১ বছর, মোজাম্বিক, আইভরি কোস্ট, সোমালিয়ার গড় আয়ু ৫৩ বছর।

কয়েক হাজার বছর আগেও মানুষের সর্বোচ্চ আয়ুষ্কাল এখনকার মতোই ছিল। বাংলাদেশে আমরা যাদের চিনি তাদের মধ্যে লালন বেঁচেছিলেন ১১৮ বছর। ঐ সময়েও খুব কম মানুষই শতায়ু হতেন। ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও অনেক নবীর বয়সের কথাই ধর্মগ্রন্থানুযায়ী অনেক। যেমন আদম (আ.)- ১০০০, নূহ (আ.)-৯৫০, শুয়াইব (আ.)-৮৮২, সালেহ (আ.)- ৫৮৬, যাকারিয়া (আ.)- ২০৭, ইব্রাহিম (আ.) ১৯৫ বছর বেঁচেছিলেন বলা হয়। ঐতিহাসিক স্বীকৃতি না থাকায় তা নিয়ে কথা বলছি না। নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বেঁচেছিলেন মাত্র ৬৩ বছর, যিশু খৃস্ট বেঁচেছিলেন ৩৫ (৫ বছর কমবেশি হতে পারে) বছর যা ঐতিহাসিকভাব স্বীকৃত। তবে ওই সময়েও মানুষ শতায়ু হতেন। মিশরের ফারাও রাজারাও অনেকদিন বাঁচতেন। আলোচিত তুমেন খামেন বেঁচেছিলেন মাত্র ১৮ বছর। আবার রাজা দিয়ের (২৯৭৫ - ২৯২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শাসনই করেন ৪৮ বছর। বর্তমানে আমরা দেখি মানুষ বার্ধক্য জনিত কারণে সাধারণত ৮০-১০০ বছরের মধ্যেই মারা যায়। যেমন সাবেক স্বৈরশাসক হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ গত বছর মারা গেলেন ৮৯ বছর বয়সে। তিনি লাম্পট্য আর প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেছেন। বিপরীতে রাজনীতিবিদ কমরেড জসীম মন্ডলও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান ৯৭ বছর বয়সে। তিনি দারিদ্র, সংগ্রাম ও জেল-জুলমের মধ্যেই বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের মধ্যে বেঁচে ছিলেন ৮০ বছর। জ্যোতি বসু বাঁচেন ৯৬ বছর। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগে ভোগে, চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় কম বাঁচেন। অর্থাৎ মানুষের সর্বোচ্চ বেঁচে থাকার বয়স না বাড়লেও শুধু অকাল মৃত্যুকে ঠেকিয়ে দিয়েই বাড়ানো গেছে গড় আয়ু। এ অবদান কেবলই বিজ্ঞানের। করোনা ভাইরাসকে বিজ্ঞান অবশ্যই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। ধীরে ধীরে মৃত্যু হার কমে আসছে। এ ধারায় কমতে থাকলে এবং কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার হয়ে গেলে বছর শেষে মৃত্যু অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বছর শেষে যদি মোট মৃত্যু ৬-৭ লক্ষে সীমাবদ্ধ রাখা যায় তবে গড় মৃত্যু হাজারে ১.১% বেড়ে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর গড় মৃত্যু হাজারে ৮.৩ থেকে বেড়ে ৮.৪ হবে। বর্তমানে পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। ৬-৭ লক্ষ মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেলে তাদের গড় আয়ু কমে যাবে গড়ে ২৫-৩০ বছর। অর্থাৎ যে লোক ৭১ বছরে মারা যেতো এখন মারা যাচ্ছে গড়ে ৪৫ বছরে। পৃথিবীর ৭০০ কোটি লোকের মধ্যে এই মৃত্যু খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। গড় আয়ু ৭১ থেকে ৩/৪ মাস কমে যেতে পারে।

করোনা ভাইরাস গড় আয়ুতে খুব প্রভাব ফেলতে না পারলেও অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। চীনে করোনাভাইরাস শুরু হলেও তারাই আগে খুলে দিয়েছে বাণিজ্যিক কর্যক্রম। এখন তাদের ক্ষমতার ৯০% কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্কুল কলেজ খুলে দিয়েছে, রেস্তোরা ও গণপরিবহন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এতো বড় একটা ঘটনার পরপরই ১০% সংকোচন খুবই নগণ্য বিষয়। বাংলাদেশেও ৩১ মে থেকে আংশিকভাবে উন্মুক্ত করেছে। মার্কেট, ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার খুলেছে। গাড়িতে ৫০% আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে মানুষ কিন্তু এখনো সেভাবে বাজারে ঢুকেনি। হিসেব করেই কেনা কাটা করছে না। অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চায়। কেউ পারছে, কেউ পারছে না। বিশ্বজুড়েই মানুষ অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। এতে অনেক মানুষের সঞ্চয় বাড়বে এবং ভবিষ্যতে আরো কেনাকাটা করার সামর্থ্য অর্জন করবেন।বর্তমানে আমদানী ও রফতানি কমে যাওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এতে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যাবে, ইনকাম কমে যাওয়ায় তার বিপরীতে ইনকাম-ট্যাক্সও কমে যাবে। এটা সামাল দেয়ার জন্য সরকার উচ্চাবিলাশী প্রকল্পগুলো সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করতে পারে। এতেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। যদি প্রকল্পগুলো চালু রাখতে চায় তবে টাকা ছাপাতে হবে। তার পরিণতিতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে হু হু করে। বাংলাদেশে অবশ্য গত মে মাসে মূল্যস্ফিতি আগের মাসের চেয়ে বাড়েনি। মানুষ খুবই আরাম প্রিয়। আরামদায়ক অভ্যাসে সহজেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে জমানো টাকা তারা ঠিকই খরচ করবে এবং অর্থনীতির চাকায় গতি আসবে।

কিছু ব্যবসা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন সেলুন। যারা বাড়িতে দাঁড়ি কাটতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকে হয়তো আর এজন্য সেলুনে যাবে না। তবে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে যাবে। ইন্টারনেট ভিত্তিক সবকিছুই ভাল ব্যবসা করবে। ফলে মোবাইল-কম্পিউটার থেকে শুরু করে ফেসবুক-ইন্সট্রাগ্রাম বা ইউটিউব-গুগল এর লাভ বহু বেড়ে যাবে। গার্মেন্টস খাত ঘুরে দাঁড়াবেই। পৃথিবী জুড়েই মানুষ নতুন নতুন পোশাক পরিধান করতে পছন্দ করে। হালফ্যাশনের জামা গায়ে দেয়। এ খাতও ঘুরে দাঁড়াবেই। ফার্ণিচার ব্যবসা হয়তে এখন ৫% এ এসে ঠেকেছে। তারা ঘুরে দাঁড়াবে। মানুষ সংসার পাতবে, পুরাতন ফার্ণিচার বদলাবে আবার প্রয়োজনেও কিনবে। তারাও ফিরে পাবে আগের ব্যবসা। আইন ব্যবসায় একটা পরিবর্তন আসতে পারে। যদি অভিযোগ সাবমিট অনলাইন ভিত্তিক করা যায়, সিরিয়াল আনা বা ডেট পড়া, রায় দেয়া ইত্যাদি যদি অনলাইনেই করা যায় তবে একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে পারে ভবিষ্যতে। তবে যদি কয়েক মাসের মধ্যেই সাধারণ ভাবে আবারো কোর্ট চলে তবে সে আশা পূরণ হবে না। কারণ সিনিয়র আইনজীবী অনেকেই এটা চাইবেন না। এখন অপরাধ কমেছে বলে আইনজীবীদের আয় কমে যাবে। তবে তারাও জানে কিভাবে মামলা বাড়াতে হয়, কিভাবে দীর্ঘদিন মামলা চালাতে হয়।

পৃথিবীর দেশে দেশে বাজেট পেশের মৌসুম এটা। অর্থনীতি কোন পথে যাবে তার অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই বাজেট পাশের কারণেই। অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞই বলছেন, তাদের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে অন্তত দশ বছর লেগে যাবে। ইউরোপের প্রধান দেশগুলো যথা- ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অর্থনীতিবীদগণ হিসেব কষে দেখছেন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখলে সেখানে চাকরির নিরাপত্তা বাড়বে এবং মধ্যবিত্ত ভাল থাকবে ধনিক শ্রেণির সাথে। সাথে কিছু গরিব ভাল থাকবে। কর্মসংস্থান থাকলে বেকারত্ব কমে আসবে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়েই বেকারত্ব মারাত্মক অবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমনের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশের মতো বেকারত্ব ছিল। এপ্রিলেই বেকার দাঁড়িয়েছে ১৪% তে ধারণা করা হচ্ছে এ মাসেই এটা দাঁড়াতে পারে ২০%। সরকারগুলো জানে বেকারত্ব বাড়লেই বেড়ে যাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনও। তখন আর জাতীয়তাবাদ, ধর্ম বা বর্ণ বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোটে বিজয়ী হওয়া যাবে না।

এই মুহূর্তে করোনা -র কারণে গোটা বিশ্বের সাথে সাথে বিপাকে পরে গেছে ভারতীয় অর্থনীতিও। আর তাই এবার সেই ভারতীয় অর্থনীতিকে টেনে তুলতে আরও বড় আর্থিক প্যাকেজের প্রয়োজন বলে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন 'মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই সরাসরি মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে পারলে লাভ হবে। কে দরিদ্র, সেটা সরকার বেঁচে তাদের হাতে টাকা দেবে তা হলে হবেনা। ব্যবসায়ীদের ঋণ কিছুটা মওকুফ করতে হবে। রাজস্ব না বাড়লে সরকার টাকা পাবে কোথা থেকে? টাকা ছাপালে মূদ্রাস্ফীতি অনিবার্য। পাকিস্তানে এর মধ্যেই মূদ্রাস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮% পার হয়েছে। ভারত সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিতে খারাপ সময়িই কাটাচ্ছিল। এরমধ্যে করোনায় তারা আরো কাবু হয়েছে। তাদের প্রবৃদ্ধির হার এখন ৪.২ থেকে আরো কমে ৩.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই ত্রৈমাসিকে অবস্থা আরো খারাপ হবে। ভারতে এখন বেকারত্বের হার ২৩.৫। লকডাউন উঠে যাওয়াতে এদের অনেকেই কাজে খুঁজে পাবে সেই আশাবাদ আছে।

এমন একটি অতিমারী (মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ) চলার সময় এর শেষটা বুঝতে পারা সহজ নয়। তবুও বিজ্ঞান কাজ করছে বলে আশাবাদী মানুষও অনেক। ইউরোপসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি মহামন্দার মুখেও পড়তে পারে। এখন যেমন মানুষ কেনাকাটা থেকে বিরত রয়েছে এমনটা যদি আরো বছর খানেক চলে তবে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মানুষ বেকার হবে। এজন্য মানুষকে খরচ করতে উৎসাহ দিতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আবার করোনা আসার আগেই গত বছর আগস্ট থেকেই আইএমএফ বলেছিল, বিশ্বের ১০ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ মন্দায় কিংবা মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ২০০৯ সালের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দার হাতছানি দিচ্ছে। এ দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুর। সাধারণত টানা দুই প্রান্তিকে কোনো দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ওই সময়ের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.২ শতাংশ। যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন। সংস্থা জানায়, ২০২০ সালেও প্রবৃদ্ধি থাকবে ৩.৫ শতাংশ। ব্যাংক অব আমেরিকা আগামী ১২ মাসের মধ্যে একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করেছে। তাদের ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি এসেছে লক্ষ্যমাত্রার নিচে ২.১ শতাংশ। যেখানে প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.১ শতাংশ। এর সাথে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্যযুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে শিল্পোৎপাদন কমেছে, করপোরেট আস্থা কমেছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কয়েক বছরে সর্বনিম্ন। দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীনের প্রবৃদ্ধিও প্রায় এক দশকে সর্বনিম্নে নেমেছে। তার মানে করোনাভাইরাস না আসলেও বিশ্ব অর্থনীতি একটা সমস্যার মধ্যেই পড়তো। সেটাকে তরান্বিত করেছে বলা যায়।

যদি এ বছরের মধ্যেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। এ বছরে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ২%। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন আগামী বছরই প্রবৃদ্ধি হবে ৯% অর্থাৎ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নিজে সুস্থ থাকুন, পৃথিবী ঠিক থাকবে।খৃস্টপূর্ব ২ হাজার থেকে ১ হাজার পর্যন্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছিল খুবই সামান্য। এর কারণই ছিল মানুষের গড় আয়ু খুব কম থাকা। মানে শিশু মৃত্যুর হার অত্যধিক বেশি থাকা। বিভিন্ন দুর্বিপাকে গণহারে মৃত্যুও গড় আয়ু কমিয়ে দিত। প্লেগ, ফ্লু, কলেরার মতো মহামারী, ঘুর্ণিঝড়-সাইক্লোনেও বহু মানুষ মারা যেতো। এখন যে করোনা ভাইরাসের অতিমারী চলছে তাতে মৃত্যু ৪ লক্ষের কম। যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি না হতো তবে এতো দিনে আক্রান্ত হয়ে যেতো ১০০ কোটি এবং মারা পড়তো ৬% হিসাবে ৬ কোটি মানুষ। প্রতি বছরে পৃথিবীতে মারা যায় প্রায় ৬ কোটি মানুষ। অর্থাৎ সংখ্যাটি ডাবল হয়ে যেতো। গড় মৃত্যু উঠে যেত হাজারে ১৬ এর উপরে। তাতে গড় আয়ুটা ধপাস করেই নেমে যেতো। আজকের অবস্থায় গড় আয়ু কতটা কমে যাবে?

আজ উন্নত দেশগুলোর মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। ২০১৩ সালের হিসেবে জাপানের গড় আয়ু ৮৪ বছর; অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিংগাপুর, ইতালির গড় আয়ু ৮৩ বছর। অত না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের গড় আয়ুও অনেক বেড়েছে। ২০১৩ সালে শ্রীলংকার ৭৫, বাংলাদেশের ৭০, নেপালের ৬৮, ভারতের ৬৬ ও পাকিস্তানের ৬৫ বছর। ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমান গড় আয়ু ৭২ বছর। ১৯৬০ সালে বাংলাদেশের (তখন পূর্ব পাকিস্তান) গড় আয়ু ছিল ৪৬ বছর, ১৯৬৫ সালে ৪৯ বছর। ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড়ে ৫ লক্ষ মানুষের অকাল প্রায়াণ ঘটলে গড় আয়ে কমে হয় ৪৮ বছর। ১৯৭৫ সালের গড় আয়ু হয় ৪৯ বছর। তেমন বাড়েনি কারণ ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষর কারণে। ১৯৮০ সালে চার বছর বেড়ে হয় ৫৩ বছর। ১৯৯০ সালে হয় ৫৮ বছর। ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক জামানায় উল্লফন ঘটে গড় আয়ুর। বেড়ে হয় ৬৫ বছর। ২০১০ সালে হয় ৭০ বছর। গত ১০ বছরে গড় আয়ু বৃদ্ধির হার শ্লথ হয়েছে আবার।

কেন বেড়েছিল গড় আয়ু? এক সময় প্রতিটি পরিবারেই বহু শিশু মারা যেতে ৫ বছরের মধ্যেই, নবজাতকের মৃত্যুহারও ছিল অনেক। একজন যদি ৮০ বছর বাঁচতো আরেক শিশু জন্মের পড়েই মারা গেলে তাদের গড় আয়ু হয়ে যায় ৪০। বাংলাদেশের তুলনা দেখুন ২০০১ সালে নবজাতকের মত্যু ছিল ৫.৬% আর ২০১৭ সালে এসে হয়েছে ২.৪%। ৫ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে ২০০১ সালে মৃত্যহার ছিল ৮.২%, ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছে ৩.১%। মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে অনেক। ১৯৮৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ০.৬৫% আর ২০১৭ সালে এসে এই হার হয়েছে ০.১৭%। মৃত্যুহার কমে গেলে গড় আয়ু বেড়ে যায়।

মৃত্যুহার কেন কমলো? অবশ্যই চিকিৎসার মান উন্নয়নের জন্য। এই অবদান সম্পূর্ণই বিজ্ঞানের। মানুষের শিক্ষার হার বেড়েছে। যেমন ৭ বছরের শিশু ২০০৫ স্কুলে যেতো ৫২.১% আর ২০১৭ সালে এই হার ৭২.৩%। চিকিৎসা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধির সাথে জড়িয়ে আছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতাও। ২০০৫ সালে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল ১৯.২% মানুষের আর ২০১৭ সালে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা হয় ৩৯.০% মানুষের। এছাড়া ছোঁয়াচে রোগের পাদুর্ভাবও বিজ্ঞান কমাতে পেরেছিল। এখন আর কলেরা, প্লেগ এর মতো ভয়ঙ্কর রোগে মানুষ মারা যায় না। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও এসেছে বিজ্ঞানের ছোঁয়া। বিভিন্ন ভাবেই মানুষের মৃত্যুহার কমে যাওয়াতেই মূলত গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছিল। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস এসেছে আবার অতিমারী হিসেবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ২৬.৭৫ লক্ষ লোক মারা যেতো। এ বছর করোনাতে ওখানে ইতোমধ্যেই ১.১০ লক্ষ লোক বেশি মারা গেছে। আর মারা না গেলেও তাদের মৃত্যু ৪% বেড়ে গেছে। এতে আমেরিকার গড় আয়ু সামান্য কমে যাবে।

অর্থনৈতিক অব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসার সংকটে আফ্রিকার অনেক দেশেই এখনো গড় আয়ু যথেষ্ট কম। যেমন গড় আয়ু সবচেয়ে কম সিয়েরা লিওনের। তাদের গড় আয়ু মাত্র ৪৬ বছর। ১৯৬০ সালে আমাদের এমন গড় আয়ু ছিল। চাঁদ, অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গোর গড় আয়ু ৫১ বছর, মোজাম্বিক, আইভরি কোস্ট, সোমালিয়ার গড় আয়ু ৫৩ বছর।

কয়েক হাজার বছর আগেও মানুষের সর্বোচ্চ আয়ুষ্কাল এখনকার মতোই ছিল। বাংলাদেশে আমরা যাদের চিনি তাদের মধ্যে লালন বেঁচেছিলেন ১১৮ বছর। ঐ সময়েও খুব কম মানুষই শতায়ু হতেন। ঐতিহাসিক ভিত্তি না থাকলেও অনেক নবীর বয়সের কথাই ধর্মগ্রন্থানুযায়ী অনেক। যেমন আদম (আ.)- ১০০০, নূহ (আ.)-৯৫০, শুয়াইব (আ.)-৮৮২, সালেহ (আ.)- ৫৮৬, যাকারিয়া (আ.)- ২০৭, ইব্রাহিম (আ.) ১৯৫ বছর বেঁচেছিলেন বলা হয়। ঐতিহাসিক স্বীকৃতি না থাকায় তা নিয়ে কথা বলছি না। নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) বেঁচেছিলেন মাত্র ৬৩ বছর, যিশু খৃস্ট বেঁচেছিলেন ৩৫ (৫ বছর কমবেশি হতে পারে) বছর যা ঐতিহাসিকভাব স্বীকৃত। তবে ওই সময়েও মানুষ শতায়ু হতেন। মিশরের ফারাও রাজারাও অনেকদিন বাঁচতেন। আলোচিত তুমেন খামেন বেঁচেছিলেন মাত্র ১৮ বছর। আবার রাজা দিয়ের (২৯৭৫ - ২৯২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শাসনই করেন ৪৮ বছর। বর্তমানে আমরা দেখি মানুষ বার্ধক্য জনিত কারণে সাধারণত ৮০-১০০ বছরের মধ্যেই মারা যায়। যেমন সাবেক স্বৈরশাসক হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ গত বছর মারা গেলেন ৮৯ বছর বয়সে। তিনি লাম্পট্য আর প্রাচুর্যের মধ্যে থেকেছেন। বিপরীতে রাজনীতিবিদ কমরেড জসীম মন্ডলও বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান ৯৭ বছর বয়সে। তিনি দারিদ্র, সংগ্রাম ও জেল-জুলমের মধ্যেই বড় হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচুর্যের মধ্যে বেঁচে ছিলেন ৮০ বছর। জ্যোতি বসু বাঁচেন ৯৬ বছর। সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগে ভোগে, চিকিৎসার অভাবে অনেক সময় কম বাঁচেন। অর্থাৎ মানুষের সর্বোচ্চ বেঁচে থাকার বয়স না বাড়লেও শুধু অকাল মৃত্যুকে ঠেকিয়ে দিয়েই বাড়ানো গেছে গড় আয়ু। এ অবদান কেবলই বিজ্ঞানের। করোনা ভাইরাসকে বিজ্ঞান অবশ্যই মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। ধীরে ধীরে মৃত্যু হার কমে আসছে। এ ধারায় কমতে থাকলে এবং কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কার হয়ে গেলে বছর শেষে মৃত্যু অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। বছর শেষে যদি মোট মৃত্যু ৬-৭ লক্ষে সীমাবদ্ধ রাখা যায় তবে গড় মৃত্যু হাজারে ১.১% বেড়ে যাবে। অর্থাৎ পৃথিবীর গড় মৃত্যু হাজারে ৮.৩ থেকে বেড়ে ৮.৪ হবে। বর্তমানে পৃথিবীর মানুষের গড় আয়ু ৭১ বছর। ৬-৭ লক্ষ মানুষ করোনাভাইরাসে মারা গেলে তাদের গড় আয়ু কমে যাবে গড়ে ২৫-৩০ বছর। অর্থাৎ যে লোক ৭১ বছরে মারা যেতো এখন মারা যাচ্ছে গড়ে ৪৫ বছরে। পৃথিবীর ৭০০ কোটি লোকের মধ্যে এই মৃত্যু খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। গড় আয়ু ৭১ থেকে ৩/৪ মাস কমে যেতে পারে।

করোনা ভাইরাস গড় আয়ুতে খুব প্রভাব ফেলতে না পারলেও অর্থনীতিতে কিছুটা প্রভাব ফেলবে। চীনে করোনাভাইরাস শুরু হলেও তারাই আগে খুলে দিয়েছে বাণিজ্যিক কর্যক্রম। এখন তাদের ক্ষমতার ৯০% কার্যক্রম চালাচ্ছে। স্কুল কলেজ খুলে দিয়েছে, রেস্তোরা ও গণপরিবহন উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এতো বড় একটা ঘটনার পরপরই ১০% সংকোচন খুবই নগণ্য বিষয়। বাংলাদেশেও ৩১ মে থেকে আংশিকভাবে উন্মুক্ত করেছে। মার্কেট, ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার খুলেছে। গাড়িতে ৫০% আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। তবে মানুষ কিন্তু এখনো সেভাবে বাজারে ঢুকেনি। হিসেব করেই কেনা কাটা করছে না। অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চায়। কেউ পারছে, কেউ পারছে না। বিশ্বজুড়েই মানুষ অপ্রয়োজনীয় আড্ডা, কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। এতে অনেক মানুষের সঞ্চয় বাড়বে এবং ভবিষ্যতে আরো কেনাকাটা করার সামর্থ্য অর্জন করবেন।বর্তমানে আমদানী ও রফতানি কমে যাওয়ায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এতে রাজস্ব ঘাটতি বেড়ে যাবে, ইনকাম কমে যাওয়ায় তার বিপরীতে ইনকাম-ট্যাক্সও কমে যাবে। এটা সামাল দেয়ার জন্য সরকার উচ্চাবিলাশী প্রকল্পগুলো সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করতে পারে। এতেই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। যদি প্রকল্পগুলো চালু রাখতে চায় তবে টাকা ছাপাতে হবে। তার পরিণতিতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাবে হু হু করে। বাংলাদেশে অবশ্য গত মে মাসে মূল্যস্ফিতি আগের মাসের চেয়ে বাড়েনি। মানুষ খুবই আরাম প্রিয়। আরামদায়ক অভ্যাসে সহজেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। ফলে জমানো টাকা তারা ঠিকই খরচ করবে এবং অর্থনীতির চাকায় গতি আসবে।

কিছু ব্যবসা পরিবর্তন হতে পারে। যেমন সেলুন। যারা বাড়িতে দাঁড়ি কাটতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের অনেকে হয়তো আর এজন্য সেলুনে যাবে না। তবে অনলাইনে কেনাকাটা বেড়ে যাবে। ইন্টারনেট ভিত্তিক সবকিছুই ভাল ব্যবসা করবে। ফলে মোবাইল-কম্পিউটার থেকে শুরু করে ফেসবুক-ইন্সট্রাগ্রাম বা ইউটিউব-গুগল এর লাভ বহু বেড়ে যাবে। গার্মেন্টস খাত ঘুরে দাঁড়াবেই। পৃথিবী জুড়েই মানুষ নতুন নতুন পোশাক পরিধান করতে পছন্দ করে। হালফ্যাশনের জামা গায়ে দেয়। এ খাতও ঘুরে দাঁড়াবেই। ফার্ণিচার ব্যবসা হয়তে এখন ৫% এ এসে ঠেকেছে। তারা ঘুরে দাঁড়াবে। মানুষ সংসার পাতবে, পুরাতন ফার্ণিচার বদলাবে আবার প্রয়োজনেও কিনবে। তারাও ফিরে পাবে আগের ব্যবসা। আইন ব্যবসায় একটা পরিবর্তন আসতে পারে। যদি অভিযোগ সাবমিট অনলাইন ভিত্তিক করা যায়, সিরিয়াল আনা বা ডেট পড়া, রায় দেয়া ইত্যাদি যদি অনলাইনেই করা যায় তবে একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে পারে ভবিষ্যতে। তবে যদি কয়েক মাসের মধ্যেই সাধারণ ভাবে আবারো কোর্ট চলে তবে সে আশা পূরণ হবে না। কারণ সিনিয়র আইনজীবী অনেকেই এটা চাইবেন না। এখন অপরাধ কমেছে বলে আইনজীবীদের আয় কমে যাবে। তবে তারাও জানে কিভাবে মামলা বাড়াতে হয়, কিভাবে দীর্ঘদিন মামলা চালাতে হয়।

পৃথিবীর দেশে দেশে বাজেট পেশের মৌসুম এটা। অর্থনীতি কোন পথে যাবে তার অনেকটাই নির্ধারিত হবে এই বাজেট পাশের কারণেই। অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞই বলছেন, তাদের অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াতে অন্তত দশ বছর লেগে যাবে। ইউরোপের প্রধান দেশগুলো যথা- ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। অর্থনীতিবীদগণ হিসেব কষে দেখছেন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখলে সেখানে চাকরির নিরাপত্তা বাড়বে এবং মধ্যবিত্ত ভাল থাকবে ধনিক শ্রেণির সাথে। সাথে কিছু গরিব ভাল থাকবে। কর্মসংস্থান থাকলে বেকারত্ব কমে আসবে। বর্তমানে পৃথিবীজুড়েই বেকারত্ব মারাত্মক অবস্থা নিয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমনের পূর্বে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশের মতো বেকারত্ব ছিল। এপ্রিলেই বেকার দাঁড়িয়েছে ১৪% তে ধারণা করা হচ্ছে এ মাসেই এটা দাঁড়াতে পারে ২০%। সরকারগুলো জানে বেকারত্ব বাড়লেই বেড়ে যাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনও। তখন আর জাতীয়তাবাদ, ধর্ম বা বর্ণ বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোটে বিজয়ী হওয়া যাবে না।

এই মুহূর্তে করোনা -র কারণে গোটা বিশ্বের সাথে সাথে বিপাকে পরে গেছে ভারতীয় অর্থনীতিও। আর তাই এবার সেই ভারতীয় অর্থনীতিকে টেনে তুলতে আরও বড় আর্থিক প্যাকেজের প্রয়োজন বলে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী অভিজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন 'মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তাই সরাসরি মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিতে পারলে লাভ হবে। কে দরিদ্র, সেটা সরকার বেঁচে তাদের হাতে টাকা দেবে তা হলে হবেনা। ব্যবসায়ীদের ঋণ কিছুটা মওকুফ করতে হবে। রাজস্ব না বাড়লে সরকার টাকা পাবে কোথা থেকে? টাকা ছাপালে মূদ্রাস্ফীতি অনিবার্য। পাকিস্তানে এর মধ্যেই মূদ্রাস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮% পার হয়েছে। ভারত সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতিতে খারাপ সময়িই কাটাচ্ছিল। এরমধ্যে করোনায় তারা আরো কাবু হয়েছে। তাদের প্রবৃদ্ধির হার এখন ৪.২ থেকে আরো কমে ৩.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই ত্রৈমাসিকে অবস্থা আরো খারাপ হবে। ভারতে এখন বেকারত্বের হার ২৩.৫। লকডাউন উঠে যাওয়াতে এদের অনেকেই কাজে খুঁজে পাবে সেই আশাবাদ আছে।

এমন একটি অতিমারী (মহামারীর চেয়েও ভয়াবহ) চলার সময় এর শেষটা বুঝতে পারা সহজ নয়। তবুও বিজ্ঞান কাজ করছে বলে আশাবাদী মানুষও অনেক। ইউরোপসহ সারা বিশ্বের অর্থনীতি মহামন্দার মুখেও পড়তে পারে। এখন যেমন মানুষ কেনাকাটা থেকে বিরত রয়েছে এমনটা যদি আরো বছর খানেক চলে তবে অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি হবে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মানুষ বেকার হবে। এজন্য মানুষকে খরচ করতে উৎসাহ দিতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন পূর্বাভাস দিয়ে বলেছে, ২০২১ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আবার করোনা আসার আগেই গত বছর আগস্ট থেকেই আইএমএফ বলেছিল, বিশ্বের ১০ বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ মন্দায় কিংবা মন্দার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা ২০০৯ সালের পর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরেকটি মন্দার হাতছানি দিচ্ছে। এ দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুর। সাধারণত টানা দুই প্রান্তিকে কোনো দেশের অর্থনীতি সংকুচিত হলে তাকে মন্দা বিবেচনা করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ওই সময়ের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩.২ শতাংশ। যা ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন। সংস্থা জানায়, ২০২০ সালেও প্রবৃদ্ধি থাকবে ৩.৫ শতাংশ। ব্যাংক অব আমেরিকা আগামী ১২ মাসের মধ্যে একটি বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা করেছে। তাদের ২০১৯ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি এসেছে লক্ষ্যমাত্রার নিচে ২.১ শতাংশ। যেখানে প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.১ শতাংশ। এর সাথে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্যযুদ্ধ। বিশ্বজুড়ে শিল্পোৎপাদন কমেছে, করপোরেট আস্থা কমেছে, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কয়েক বছরে সর্বনিম্ন। দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীনের প্রবৃদ্ধিও প্রায় এক দশকে সর্বনিম্নে নেমেছে। তার মানে করোনাভাইরাস না আসলেও বিশ্ব অর্থনীতি একটা সমস্যার মধ্যেই পড়তো। সেটাকে তরান্বিত করেছে বলা যায়।

যদি এ বছরের মধ্যেই করোনা নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি আবারো ঘুরে দাঁড়াবে। এ বছরে এখন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ২%। বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন আগামী বছরই প্রবৃদ্ধি হবে ৯% অর্থাৎ অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। নিজে সুস্থ থাকুন, পৃথিবী ঠিক থাকবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: যতদিন বেঁচে আছি বাঁচার মত বেঁচে থাকাটাই গুরুত্বপূর্ণ নয় কি? বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে আমার পকেট অর্থনীতির কোন পরিবর্তন আসবে সেটা বলতে পারি।
নীচের দিকে লেখা দুইবার আসছে।

২| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ১০:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে মাথা ভন ভন করছে!!!!

৩| ০৫ ই জুন, ২০২০ রাত ১:০৩

নতুন বলেছেন: লেখাটা দুইবার এসেছে। করোনায় মানুষের গড় আয়ু কমবেনা।

আগামী বছরই এই করোনায় এতো মানুষ মারা যাবেনা। সচেতনাই করোনা কমে যাবে। আর চিকিতসা করাও সম্ভব হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.