নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কট্টর হিন্দুর চোখে মুসলিম, কট্টর মুসলিমের চোখে হিন্দু!

০৬ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

ভারতের কিছু উগ্র-মৌলবাদী হিন্দুর চোখে একটা তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ দেখা যায়। বিভিন্ন ফেসবুক পেজ যেখানে দুইবাংলার মানুষের ও দুই ধর্মের মানুষের বিচরণ রয়েছে সেখানেও এটা দেখা যায়। হিন্দুদের বসতিতে বা হিন্দুপ্রধান ব্যবসায়িক এলাকাতে গেলেও এটা বুঝা যায়। পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা আনুপাতিক হারে বাংলাদেশের মুসলিমদের চেয়ে অধিক প্রগতিশীল ও অগ্রসর চিন্তা করে। আশঙ্কার জায়গা হল, অনগ্রসর ধর্মান্ধ মতাদর্শের হিন্দুও কম নন। অথচ বাংলার মুসলিমরা মূলত নিম্নবর্ণের হিন্দুদের থেকেই ধর্মান্তরিত হয়েছে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের প্রত্যাশিত উন্নয়ন ঘটেনি। আবার মৌলবাদী মুসলিমদের মধ্যে তীব্র হিন্দু বিদ্বেষটাও দেখা যায়।

মৌলবাদী হিন্দুদের এমন মতাদর্শ গঠনে ভারতের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কর্মকাণ্ড এবং ভারতীয় সিনেমা-নাটক অনেকাংশে দায়ী। তারা জঙ্গী মুসলিমদের ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং নিজেদের ভারতীয় না ভাবার মতাদর্শই প্রচার করে। অনেক ক্ষেত্রে একই সাথে দেখানো হয় ভাল মুসলিমও রয়েছে যারা দেশকে ভালবাসে। কিন্তু মৌলবাদ যেহেতু দুটোই গ্রহণ করে না, তারা শুধু নিজেদের সুবিধারটা গ্রহণ করে তাই প্রদর্শিত মুসলিমদের খারাপ দিকটাই তারা মনে রাখে। বাস্তব জগতেও কতিপয় উগ্রপন্থী মুসলিমের হিংষাত্মক কর্মকাণ্ড তাদের মনে এই ধারণা শক্তভাবে গেথে দেয় যে, সকল মুসলিমই উগ্রপন্থী ও জিহাদী!

অন্য ধর্মের ধর্মপ্রবর্তকদের কিছু নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ও ধর্মগ্রন্থে থাকা ভুল তথ্যই মৌলবাদীদের চোখে ভাসে। সেগুলোই তারা অনুশীলন করে। নিজের ধর্মের ক্ষেত্রে এমন বিষয়গুলো তারা এড়িয়ে যায়, দেখেও না দেখার ভান করে। প্রগতিশীল মানুষ টোটাল ধর্মটাকেই বুঝতে পারে। ধর্মের প্রবর্তন, ধর্মপ্রচারকদের মানসিকতা ও প্রজ্ঞা, রাজনীতি ও ব্যবসাটা তারা সঠিকভাবে দেখতে পায়, বুঝতে পারে। বাংলাদেশে প্রতিটি থানায় গড়ে মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষের মতো। কিন্তু প্রগতিশীল মানুষ থাকে মাত্র সাড়ে তিন হাজার (অনুমান- প্রতি হাজারে দৃশ্যমান ১০ জন ধরে)। এখানেও আনুপাতিক হারে মুসলিমের চেয়ে হিন্দুর সংখ্যা কিছুটা বেশি হবে বলেই মনে করি। হাজারে দশজন যদি বাস্তবিকই হয় তবে সেটাও আশার জায়গা হবে।

সমাজে ৯৯ ভাগ মানুষের ভাবাদর্শকেই গ্রহণ করা হয়। প্রগতিশীল ১ শতাংশ মানুষ নিজ ধর্মের কাছেই হয়ে উঠেন সন্দেহজনক। তারা ওই সমাজে বাস করে ওই সমাজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে কথা বলতে পারেনা জীবনের ভয়ে, একঘরে হওয়ার ভয়ে, সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আশার জায়গাও আছে- সাধারণ মানুষ উগ্রপন্থীদেরও সন্দেহের চোখে দেখে। তাদের সংখ্যাও সমাজে খুব বেশি নয়। হিন্দু ও মুসলিম দু ধর্মেরই কিছু মানুষ আছে যারা অধিক ধর্মান্ধ ও গোঁড়া মৌলবাদী। গোঁড়াপন্থীরা সমাজ বুঝতে পারে না, ভিন্নমতকে সহ্য করতে পারে না ফলে অশান্তি সৃষ্টি করে।বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা, জ্বালিয়ে দেয়া, প্রতিমা ভাঙ্গচুর করা অহরহই ঘটে কিন্তু মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে না মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে। এমনকি ফেসবুকেও মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতলাগা পোস্টগুলো অনেক ক্ষেত্রেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠরাই দিয়ে থাকেন যাতে সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন করা যায়। ভারতে উল্টোটাই ঘটে।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে নিজনিজ ধর্মকে বিজ্ঞানের আলোয় যাচাই করতে পারলেই বুঝা যেতো তা কতটা কেমন? কতটা নিখুঁত, কতটা বিজ্ঞানভিত্তিক, কতটা সঠিক? দক্ষিণ এশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সে চর্চাটা করতে পারে না। তাদের সামনে এমন সুযোগও আসে না আবার তাদের এটা অনুশীলন করার বা বুঝতে পারার সামর্থ্যও নেই। অধিকাংশই নিজ ধর্মও বুঝে আমল বা পালন করেন না।

বাংলার হিন্দু মুসলিমরা একই জাতিগোষ্ঠীর লোক। চেহারা-বর্ণও একই রকম। তারা আদি লৌকিক ধর্ম ছেড়ে নিজ নিজ ধর্ম গ্রহণ করেছে। হিন্দুরা কয়েক হাজার বছর আগে ভারতে আসা আর্যদের ধর্ম গ্রহণ করেছে। এটা ইউরোপের প্যাগান ধর্মের মতোই। আর সেই হিন্দুদের মধ্যে যারা নিম্নজাতের ছিল প্রধানত তারাই ধর্মপরিবর্তন করে মুসলিম হয়েছে। মুসলিম হয়ে তারা জাতপাতের ঘৃণ্য জাল ছিন্ন করতে পেরেছে। নইলে ভারত অন্তত ভাগ হতো না এবং নিম্নবর্ণের হিন্দুরা উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের হাতে আগের মতোই নিপীড়িত হতেই থাকতো। আজ অন্তত বাংলাদেশে নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া মুসলিমরা অন্তত আর্থিক ও সামাজিকভাবে ভাল আছে। যদিও তারা জ্ঞান বিজ্ঞানে বহু পিছনেই পড়ে রয়েছে যেটা আবার দলিত/অস্পর্শ বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের চেয়ে ভাল।

ধর্মান্ধ হিন্দুরা মনে করে- মুসলিম মাত্রই জিহাদী, উগ্র-ধর্মান্ধ জঙ্গী মৌলবাদী, হিন্দু নিপীড়ক, অশিক্ষিত বর্বর, আরব থেকে এসেছে ও বহিরাগত, সবাই মাদ্রাসায় পড়া, উটের মূত্র পান করে, তাদের ঘর ও আঙিনা অপরিষ্কার, ঠিকমতো স্নান করে না এবং দুর্নীতিপ্রবন। এসব ভাবনার পুরোটাই মিথ্যায় ঠাসা। উগ্র মুসলিমদের মধ্যে ঠিক উল্টো ধারণাই রয়েছে। বলাবাহুল্য সে ধারণাও ভুল। এতোসব ভুল ধারণা নিয়ে সমাজ এগিয়ে নেয়া যায় না। এজন্য প্রয়োজন ছিল বিতর্কের সুযোগ। সে সুযোগও দক্ষিণ এশিয়াতে নেই। বিজ্ঞানের এতো উন্নয়ন হলো, বিশ্বায়নের এতো বিকাশ হলো, সুমন-সাবিনা, সৃজিত-মিথিলার বিয়ে হলো কিন্তু এখনো দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ধর্মীয় বিদ্বেষটা দূর হল না।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: হিন্দু্ মুসলমান যে কতবার দাঙ্গা করেছে তার হিসাব নাই। দেশ ভাগ হয়ে গেল তবু হিন্দু মুসলিমের হানাহানি শেষ হলো না। তারা নিজেদের মানুষ ভাবে না। মানুষ ভাবলে খুন খারাবি হতো না।

০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধর্মান্ধতা তাদের পাগল করে দেয়, উসকে দেয় খুনোখুনি করতে।

২| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আধুনিক বিশ্বে ধর্মের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই ।
এখন মানুষ অনেক সভ্য।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৩

মীর আবুল আল হাসিব বলেছেন: এপিজে আবুল কালাম এর একটা বইতে পড়েছিলাম- প্রাচীনকালে দাাঙ্গা, সাাঙ্ঘাত হতো খাদ্য আর বাসস্থান এর জন্য। মধ্যযুগে মারামারী হতো ধর্ম আর মতাদর্শের জন্য আর আধুনিক যুগ মানে বর্তমান যুগে হানাহানি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি ও বিশ্ব রাজত্বের জন্য।
আমার মনে হয় ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৯

মুজিব রহমান বলেছেন: আসলেই আমরা অন্ধকার যুগই অতিক্রম করছি। হয়তো আলোর দেখা পাবো যদি বহু মানুষ প্রগতির জন্য কাজ করে।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হানাহানি ছাড়া ধর্ম কী কাজে লাগে?

৫| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: পড়লাম এবং লেখক কে ধন্যবাদ,সুন্দর বিশ্লেষণ এর জন্য।আমাদের সর্বনাশ করে গেছে জিয়া নয়তো দেশটা আর একটু ভালো হতো।

৬| ০৬ ই জুন, ২০২০ রাত ১১:৪১

অদ্বিত বলেছেন: আহমদ ছফা তাঁর "বাঙালি মুসলমানদের মন" বইতে বলেছেন, " জাতি উন্নত বিজ্ঞান, দর্শন এবং সংস্কৃতির স্রষ্টা হতে পারে না, অথবা সেগুলোকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে গ্রহণ করতে পারে না, তাকে দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র সৃষ্টিও সম্ভব নয়। যে নিজের বিষয় নিজে চিন্তা করতে জানে না, নিজের ভালোমন্দ নিরূপণ করতে অক্ষম, অপরের পরামর্শ এবং শোনা কথায় যার সমস্ত কাজ-কারবার চলে, তাকে খোলা থেকে আগুনে কিংবা আগুন থেকে খোলায়, এইভাবে পর্যায়ক্রমে লাফ দিতেই হয়। সুবিধার কথা হলো নিজের পঙ্গুত্বের জন্য সব সময়েই দায়ী করবার মতো কাউকে না কাউকে পেয়ে যায়। কিন্তু নিজের আসল দুর্বলতার উৎসটির দিকে একবারও দৃষ্টিপাত করে না। বাঙালী মুসলমানের মন যে এখনো আদিম অবস্থায়, তা বাঙালী হওয়ার জন্যও নয় এবং মুসলমান হওয়ার জন্যও নয়।"
আপনার কি মনে হয় আহমদ ছফা কট্টর হিন্দু ?

০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৩৩

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। আহমদ ছফা মুসলমানদের অবস্থাটাই পুরো প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। প্রবন্ধটি পড়া আছে। তার প্রায় সবই পড়েছি। উপন্যাস, প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার। দেখুন আজ কতজন মুসলামন নোবেল পাচ্ছে? পাচ্ছেই না, বিজ্ঞানে, সাহিত্যে, অর্থনীতিতে কোথাও তারা নেই। কেন নেই? পশ্চাতে আছে বলেই।

৭| ০৭ ই জুন, ২০২০ রাত ১২:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমার কাছে সবাই মানুষ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.