নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গভীর শ্রদ্ধাঃ শুদ্ধচর্চাকারী শাহজাহান বাচ্চু ভাই

১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:২৩

প্রগতিশীলতার আন্দোলনের আরেকটি কালো দিন ২০১৮ সালের ১১ জুন। এদিন সন্ধ্যায় প্রকাশক, প্রগতিশীল লেখক, সাংবাদিক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহজাহান বাচ্চু ভাইকে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী হত্যা করে। তিনি তাঁর গ্রাম বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জের কাকালদিতে এক ওষুধের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এমন সময় দুটি মটর সাইকেলে করে চারজন উগ্রপন'ী নেমে তার বুকে গুলি করে। আতঙ্ক তৈরির জন্য দুটি ককটেল ফাটিয়ে মটরসাইকেলে করেই পালিয়ে যায় কাপুরুষের মতো। খুনিরা ছিল শ্মশ্রুমণ্ডিত। পরদিন ঘটনাস'লের নিকটে দুটি রাম দাও পাওয়া যায়। উগ্রপন'ীরা ২০০৪ সালে প্রথমে অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যার জন্য চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করে এবং রাজশাহীতে অধ্যাপক ইউনুসকে হত্যা করে। এর প্রায় ৯ বছর পরে ২০১৩ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পরে পল্লবীতে বাসার কাছে থাবা বাবা খ্যাত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মৌলবাদীদের জিঘাংসার শিকার হন একের পর এক প্রগতিশীল ব্লগার, লেখক, প্রকাশক। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এক বিভীষিকাময় অবস'ার সৃষ্টি হয়। বিপুল সংখ্যক মেধাবী তরুণ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। ২০১৩ সালে উগ্রপন'ী জেএমবি প্রগতিশীল মানুষকে হত্যার জন্য একটি হিটলিস্ট করেছিল। সেই লিস্টে ছিল শাহাজাহন বাচ্চুর নাম। গত ২৪ জুন গাজীপুর থেকে তাঁকে হত্যার জন্য এক জেএমবি জঙ্গিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ওই জঙ্গির বাড়ি পঞ্চগড়। শাহজাহান বাচ্চু পঞ্চগড়ে বসতবাড়ি করে কিছুকাল বসবাস করেছেন। ওখানে তিনি শুদ্ধচর্চা কেন্দ্র এবং হুমায়ুন আজাদ পাঠাগার গড়ে তুলেছিলেন। বাচ্চু ভাইকে হত্যায় অংশ নেয়া চার জনের মধ্যে তিন জনই পুলিশের ক্রস ফায়ারে খুন হয়েছে। এছাড়া জড়িত আরো দুজনও ক্রস ফায়ারে খুন হয়েছে। সরাসরি খুনে অংশ নেয়া একজনকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

শাহজাহান বাচ্চুর জন্ম ১৯৫৮ সালে কাকালদি গ্রামে। তাঁর পিতা মমতাজ উদ্দিন মধ্যপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি মুন্সিগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে অধ্যয়নকালে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। এরপর বিক্রমপুরের হাজারো তরুণের মতো জাপান প্রবাসী হন। জাপানে অবস'ান কালেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন শুধু মাত্র কবিতার বই প্রকাশের জন্য বিশাকা প্রকাশনী। কন্যা বিপাশা, নিজে শাহজাহান বাচ্চু ও স্ত্রী কানন এর নামের অদ্যাক্ষর নিয়ে বিশাকা প্রকাশনী। এই প্রকাশনী থেকে তিনি ৬ শতাধীক কবিতার বই প্রকাশ করেন। অন্তত এক শত জন কবির প্রথম কাব্যগ্রন' তিনি প্রকাশ করেন। নিজের প্রথম ছড়ার বই ‘রঙ ঢঙ তামাশা’ও বিশাকা প্রকাশনী থেকেই প্রকাশ করেন। বইটিতে সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন। ২০১৩ সালে উগ্রপন'ীদের হাতে খুনের উৎসব শুরু হলে তিনি ব্যবসা গুটিয়ে নেন। এ সময় তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক হন। অনবরত খুনের হুমকীতে থাকার কারণে তিনি রাজনীতিতেও নিষ্ক্রীয় হয়ে পড়েন। তিনি ফেসবুক ও ব্লগে লেখালেখিই করতেন। তিনি তাঁর ফেসবুক আইটিতে প্রোফাইল পিকচার হিসাবে দোয়েল পাখি ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন আড্ডায়, সভায়, সমাবেশে বলতেন, একটি দোয়েল শিস দিয়ে যায়, বিন্দু থেকে বৃত্তকে কাঁপায়। তিনি কারণে অকারণে ছুতা নাতায় এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। ফলে এলাকায় তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয় ও বন্ধু বৎসল ছিলেন। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রাম গড়ে তুলে তিনি বিন্দু থেকে বৃত্তকে কাঁপাতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, সারাদেশের প্রত্যেকটি গ্রাম থেকে কেউ না কেউ মুক্তচিন্তার শিস দিয়ে যাবে এবং সেই বিন্দুই কাঁপিয়ে দিবে সারা দেশকে।

তিনি লেখক শিবিরের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন। সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকা দিয়েই নেন সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। এরপর নিজেই দীর্ঘদিন সম্পাদনা করেন মাসিক আমাদের বিক্রমপুর পত্রিকাটি। তিনি ১৯৮৪ সালে বিক্রমপুর প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন। ছিলেন অন্যতম সহসভাপতি। প্রগতিশীল প্রতিটি আন্দোলনে তিনি নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। গণজাগরণ মঞ্চে যেমন সক্রিয় থেকেছেন তেমনি তেলগ্যাস রক্ষা আন্দোলনেও জড়িয়ে ছিলেন। সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলনেও সাড়া দিয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলার নেতৃত্ব নিয়ে সদলবলে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাচ্চু ভাই শ্রীনগরে শেষবার আসলেন ২০১৮ সালের রমজানের আগে আমাদের একটি পাঠচক্রে। সাথে ছিলেন সৈয়দ জামাল ও রোজি আক্তার। রমজানে একদিন সকাল ১০টার দিকে আমার অফিসে আসলেন। ফাঁকে ফাঁকে অনেক কথা হয়। দুপুরে লাঞ্চ করেন। থাকলেন বিকেল পর্যন্ত। দুদিনই তাকে মৌলবাদীদের হুমকির কথা স্বরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। তাঁর ফোনে প্রায়শই হুমকি আসতো। এক হুমকির কথা জানালেন। বিক্রমপুরে নিজবাড়ি কাকালদিতে তিনি ঘরে রাতে শুয়েছিলেন। এরই মধ্যে ফোন আসলো- কিরে তুইতো কাকালদিতে ঘরে শুয়ে আছিস। আমরা ঘরের পেছনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুকে হত্যা করবো। তিনি লোকজন খবর দিলেন। হয়তো কেউ ছিল না অথবা লোকজন আসাতে পালিয়ে গিয়েছিল। তবে এটা বুঝা গিয়েছিল, খুনিরা তার খবরাখবর সবসময়ই রাখতো। তিনিও আড্ডা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছিলেন। কালেভদ্রে ইছাপুরা বাজারে এক ঘণিষ্ঠজনের মিস্টির দোকানে আসতেন নয়তো ওই ওষুদের ফার্মেসীতে। ঢাকাতেই বেশি থাকতেন এবং গৃহবন্দি। ফলে তিনিও মনে করেছিলেন, জঙ্গিরা তাকে ধরতে পারবে না। তাই ওই পাঠচক্র শেষে কবি সান্দ্র মোহন্তকে বললেন, সান্দ্র আমি সতর্ক আছি। তুমি সাবধানে থেকো। জঙ্গলরাজ্যে বাস করলে শাপদকূল থেকে সাবধানে থাকত্‌েই হবে। সবাইতো সাবধানে থাকে। কিন' যাকে নিয়ে এতো কথা তিনিও সাবধানেই থাকতেন। বিক্রমপুরের প্রখ্যাত লেখক, ভাষাবিদ ড. হুমায়ুন আজাদও বলতেন, আমাকে কিছু করার সাহস মৌলবাদীরা পাবে না। তোমরা সাবধানে থেকো। তারা প্রাণ দিয়েই বুঝিয়ে দিলেন, এদেশে সাবধানে থাকার কিছু নেই। সাবধানে থাকার কোন জায়গাও নেই। তাই বাঁচতে হলে অন্ধকারের অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লড়াই করেই বাঁচতে হবে।

শাহজাহান বাচ্চু সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের আজন্ম কর্মী মনে করতেন নিজেকে। সেই সংগ্রামে তিনি আজ মৃত্যুঞ্জয়। যারা তাকে হত্যা করে মুক্তচিন্তার বিনাশ করতে চেয়েছিল তারাও দেখবে শাহজাহান বাচ্চু মৃত্যুঞ্জয়, মুক্তচিন্তার বিনাশ কখনোই হবার নয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে হবেনা,প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

২| ১১ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: একজন গ্রেটম্যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.