নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চারটি অণুগল্প

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৮:৫৭


পশুরাজের স্ত্রীর ইজ্জত লুট

বনে মহা আতঙ্ক। পশুরাজ সিংহ মহাক্রদ্ধ হয়েছেন। তিনি খবর পেয়েছেন, তার প্রাণপ্রিয় স্ত্রী যখন সুখনিদ্রা যাচ্ছিলেন তখন কোন এক লম্পট প্রাণি তার ইজ্জত লুণ্ঠন করে পালিয়েছে। পশুরাজ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গর্জন করে বন কাঁপাচ্ছেন। ধর্ষকের খোঁজে সারাবন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে সবাই পালাচ্ছে দিকবিদিক, ঊর্ধ্বশ্বাসে। পালাও পালাও বলে ছুটছিল এক পিপীলিকাও। গাছে বসা এক উদাসীন ময়না জিজ্ঞাসা করল, বন এতো অস্থির কেন? পিপীলিকা ঘটনা বলে আবারো আত্মগোপন করতে ছুটল।
ময়না পাখি বলল, ভয়ানক কথা, পশুরাজ সিংহের স্ত্রীর ইজ্জত লুণ্ঠন অভাবনীয় বটে কিন' তুমি তুচ্ছ পিপীলিকা, তুমি পালাচ্ছ কেন?
পালাব না! এজন্যে সিংহরাজতো আমাকেও সন্দেহ করছেন! তিনি বলেছেন সন্দেহের বাইরে কেউ নেই। চলছে সাঁড়াসি ও চিরুনি অভিযান। বলতে বলতে আবারো ছুটতে শুরু করলো পিপীলিকা।
পিপীলিকাতো জানে বন অগণতান্ত্রিক। এখানে পশুরাজই একচ্ছত্র স্বৈরশাসক, স্বেচ্ছাচারী। বাঁচার জন্য সবাইকেই পালানোর উপর থাকতে হয়। কারো প্রতিবাদ করার জো নেই।


পশুরাজের দুঃস্বপ্ন

পশুরাজ দুঃস্বপ্ন দেখে সভা ডেকেছেন। স্বপ্নে কে যেন তার পেটে শিং বা ঠোট ঢুকিয়েছে। চীফ এডমিরাল কুমির বলল, স্যার সম্ভবত এটা লম্বাঠোটের বা শিংওয়ালা কোন মাছের ষড়যন্ত্র। আপনি হুকুম দিন, আমি বেছে বেছে ওদের পেটে পুরে ফেলি। পশুরাজ বললেন, চালিয়ে যাও যাতে একটাও লম্বাঠোট বা শিংওয়ালা মাছ না থাকে।
এয়ার ভাইস মর্শাল ঈগল বলল, স্যার আমার মনে হয় এটা লম্বা ঠোটের কোন পাখির ষড়যন্ত্র। আর কথা বলা মননশীল, সৃজনশীল, শিল্পী পাখি টিয়া, ময়না, কোকিল, বাবুইর ব্যাপারের সতর্ক থাকা দরকার। ওরা নিজেদের স্বাধীনচেতা ভাবে! আপনি হুকুম দিলে আমি ওদের ঠাণ্ডা করে দিতে পারি। পশুরাজ ঘাড় বাঁকিয়ে বললেন, তদাস্ত। এদের যেন আমার চোখের ত্রিসীমানায়ও না দেখি।
এবার ফিল্ড মার্শাল গণ্ডার নিজের শিংটা সতর্কভাবে আড়াল করে বলল, মহামান্য পশুরাজ আসলে লম্বালম্বা শিং রয়েছে হরিণের। আপনি নিজেও প্রগতিশীল হরিণদের খেতে পছন্দ করেন। আমি প্রত্যেহ দুটি করে আপনার সামনে হাজির করবো। কিন্তু বাকিদের হত্যা করে পৃথিবী থেকে লম্বা শিং চিরতরে বিদায় করে দিতে পারি। অজগর নিজের জিহ্বা লকলক করে সমর্থন জানালো। চিতাবাঘ বলল, হুজুরের জয় হউক। হরিণই আমাদের প্রধান সমস্যা। শুধু অনুমতি দেন সব সাফা করে দিবো। কুমির বলল, হরিণের কিছু ভাগ যেন জলেও যায়। সাথেসাথেই ঈগল বললো আকাশের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
পশুরাজ বলল, আমার মনে হয় হরিণই তার শিং আমার পেটে ঢুকিয়েছে। সুতরাং হরিণদেরও হত্যা করার অধিকার দেয়া হল।


নোয়াখালির বন্ধুরা প্রশ্ন করবেন না?

আমার বাবার বলা গল্প। বাবা ছোট ছোট গল্প বলতেন। তাঁর কাছ থেকে শোনা যে গল্পটি আমাকে আজো অনুপ্রাণিত করে-
এক দ্বীপে ছিটকে পড়ল দুটি পরিবার। তারা উদ্ধার পাবে ১ বছর পরে। একটি পরিবারের কাছে ১১ মাসের খাবার ছিল। পরিবারটি হতবিহ্বল হয়ে পড়ল। তারা বাকী মাসটি কিভাবে কাটাবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে হতাশাগ্রস' হয়ে পড়ল। তারা সিদ্ধান্ত নিল, প্রথম মাসটি তারা না খেয়ে কাটাবে। একটি মাস কাটাতে পারলেই বছর কেটে যাবে।
অপর পরিবারটির ছিল মাত্র ১ মাসের খাবার। তারা ভাবল, অনেক সময়। এই একমাসের মধ্যেই কোন না কোন ব্যবস'া হয়ে যাবে। তারা খাবার খুঁজতে খুঁজতে এক মাস পরে ওই পরিবারের কাছে গিয়ে দেখলো সবাই মরে পড়ে আছে। যাদের কাছে রয়েছে ১১ মাসের খাবার।
যা শিখেছি- হতাশ হওয়ার কিছু নে ই, অপেক্ষা করো, ধৈর্য্য ধরো, চেষ্টা করো হয়ে যাবে।


ধর্মবদল!

লক্ষণের স্ত্রী লক্ষী আর রহিমের স্ত্রী রহিমাকে একই সময়ে পাশাপাশি ওটিতে সন্তান প্রসবের জন্য অপারেশন করা হয়েছিল। বেডে নেয়ার সময় তাদের পুত্র সন্তান নার্সের ভুলে বদলে যায়। কয়েক বছর পরে এক সাম্প্রদায়িক নিপীড়নে লক্ষণ-লক্ষ্মী তাদের ভুল সন্তানসহ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যায়। তাদের সন্তান লবও পিতা-মাতার মতো তীব্র ধর্মান্ধ। সে বিজেপির কর্মী হিসাবে ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়লো। ট্রেনে বসে গোমাংস খাচ্ছে এমন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে লবের নেতৃত্বে হামলা হল। সেখানে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া রহিম আর রহিমা খুন হয়ে যায়। এদিকে রহিম-রহিমার ভুল পুত্র রব্বানীও পিতা-মাতার মতো ধর্মান্ধ। সে একটি জঙ্গি সংগঠনে নাম লিখিয়েছে। লক্ষণ আর লক্ষ্মী বহু দিন পরে পৈতৃক বাড়ি দেখতে বাংলাদেশে আসে। তারা ফেসবুকে ইসলাম বিরোধী পোস্ট দিয়েছে- এমন অভিযোগ ছড়িয়ে পড়লে রাব্বানীর নেতৃত্বে হামলায় মারা যায় লক্ষণ আর লক্ষ্মী। লব আর রাব্বানীর মনে পিতা-মাতা হারানোর শোক থাকলেও প্রতিশোধ নিতে পারার সুখও রয়েছে।
বি।দ্র।: ছবিগুলো নেট থেকে নেয়া

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:১২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অসাধারণ লেখা । ভালো লাগলো পড়ে

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২২

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল লেগেছে আপনার, শুনে ভাল লাগলো আমারও।

২| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:১৭

বিজন রয় বলেছেন: গল্পগুলো ছোট হলেও অনেক কিছুর ইঙ্গিত রয়েছে।
ইন্টারেস্টিং!

এগুলো কি আপনার লেখা?

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২১

মুজিব রহমান বলেছেন: শেষ তিনটি একান্তই আমার। প্রথমটিতো ইশপের গল্পের রুপান্তর ঘটিয়েছি।

৩| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:২৫

বিজন রয় বলেছেন: তাহলে বলতে পারি আপনার ভিতরে জ্ঞান আছে।
এভাবে আমাদের গল্প শুনিয়ে যাবেন নিয়মিত।

শুভকামনা।

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:২৩

মুজিব রহমান বলেছেন: গল্প লেখক হিসেবে খ্যাতিমান হলে অবশ্যই নাম জানতেন। অথচ ব্লগার হিসেবে ১০ বছর পার করার পরও আমাকে আপনিও চিনেন না। ফলে জ্ঞানি বলে দাবি করার সুযোগ নেই।

৪| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৪

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: আপনার লেখায় গভীরতা এবং চিন্তার খোরাক রয়েছে। চালিয়ে যান ভ্রাতা।

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:২৪

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম।

৫| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এক নম্বর গল্পের সূত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার একটা
ঘটনার কথা মনে পড়লো।

কোন এক গ্রামে পাক বাহিনী হানা দিলো
হানাদার বাহিনী কছু যুবতী মেয়েদের ধরে
নিয়ে যাচ্ছে শুনে এক ৭০ বছরের বুড়িকে
পালাতে দেখে একজন জিজ্ঞাসা করলো
ও বুড়ি তুমি পালাচ্ছো কেন। বুড়ি বললো
শুনেছি বুড়া মিলিটারিও আছে ওদের দলে।
সুতরাং পিপিলিকার পালানো মোটেই হাসির
কথা নয়!!

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:২৭

মুজিব রহমান বলেছেন: বিষয়টা আতঙ্কের! আতঙ্ক যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন সবার মধ্যেই তা প্রসারিত হয়। তবে ১নং গল্পটা সম্ভবত ইশপ বা অন্য কারো কাছ থেকে ধার করে লেখা।

৬| ১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ৪ টাই সুন্দর। তবে ৪ নং টা খুব বেশি ভালো লাগলো।

১৪ ই জুন, ২০২০ রাত ১০:২৮

মুজিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ। গল্পটি একেবারেই আমার চিন্তার ফল। ভাল লাগলো যে এটি আপনার অধিক ভাল লে।গেছে। ১ নং গল্পটি ইশপের কাছ থেকে হাওলাদ করে লেখা।

৭| ১৫ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৩২

পদ্মপুকুর বলেছেন: ভালো। সবাইকে যে বড় বড় লিখতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

৮| ১৫ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৫৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সবকয়টি ভাল লেগেছে।
ভাল থাকবেন আরো এমন গল্প শুনাবেন প্রত্যাশা রইল।

৯| ১৫ ই জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।

১০| ২৩ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৩২

নীল আকাশ বলেছেন: প্রতিটাই সুন্দর হয়েছে। তবে ৪ নাম্বার দারুন লেগেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.