![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ
১
শিল্পপতি
দেশের সবচেয়ে ধনী, শেখ শাবিদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মালিক বিখ্যাত শিল্পপতি শেখ মোহাম্মদ আমানুল্লাহর প্রতিবেশি শামসুদ্দিনের মনে আছে ছোট-ওয়ানের প্রথম দিনের ক্লাসের কথা। জহির স্যার আমানুল্লার কাছে জানতে চেয়েছিল, এই তোর নাম কি? আমানুল্লা বলেছিল, আবু বুইল্লা। স্যার বলে, এই ব্যাটা আবু বুইল্লা কোন নাম অইল। শামসুদ্দিন পাশ থেকে দাঁড়িয়ে বলেছিল, স্যার ওর নাম আবুইল্লা। স্যার ওর পদবী জানতে চায়। আমানুল্লা চুপ করে থাকে। শামসুদ্দিনই আবার বলে, স্যার অরা ডাকাইত বংশ। জহির স্যার বলে, তুই চুপ থাক। ডাকাইত আবার বংশ হয় নাকি? অর নাম বদলায় দিলাম। আজ থিকা অর নাম মোঃ আমানুল্লাহ। আমানুল্লাহ ক্লাস টু পর্যন্ত পড়েছিল। এরপর আমানুল্লাহকে দেখেছে যখন তার বয়স ২২ বছর। আমানুল্লাহ একদিন গাড়িতে করে এসেই তাঁর মায়ের হাতে দশ হাজার টাকা দিয়ে আবার গাড়ি নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিল। ওই গ্রামে প্রথম কারো গাড়ি আসলো। আমানুল্লাহ যাওয়ার পরে, খোঁজ নিতে এসেছিল উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন। আমানুল্লার নামে মামলা হয়েছিল মালিকের টাকা আত্মসাতের। মালিক আনোয়ার হোসেনের বন্ধু। কিন্তু আরও দশ বছর আমানুল্লাহর খোঁজ পায় না গ্রামের মানুষ। আনোয়ার হোসেনের বন্ধু তাকে জানিয়েছিল, আমানুল্লাহ তার দোকানে কর্মচারী ছিল। সে বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট বানিয়ে বলেছিল, জমি বিক্রি করে বিদেশ যাবে। কিন্তু আমানুল্লাদের বিক্রি করার মতো কোন জমি ছিল না। ম্যানেজার ও বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মচারী বাইরে থাকায়, একদিন মালিক দেড় লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য, আমানুল্লাহকে পাঠিয়েছিল। সে টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে গাজিপুরের চেরাগআলীতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পাসপোর্ট ও টাকা জমা দিয়ে টানা একমাস সে গাড়ি চালানো শেখে। কুয়েত যাওয়ার আগের দিন সেই গাড়ি নিয়ে বাড়ি এসেছিল। আনোয়ার হোসেন সেই গাড়ির নাম্বারের সূত্র ধরেই খোঁজ পেয়েছিল। আমানুল্লাহ এক বছরের মধ্যেই মালিকের দেড় লক্ষ টাকা ওই হিসাবে জমা দিয়ে, মালিককে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে, দোয়া নিয়েছিল। আমানুল্লার আলিশান বাড়ির দিকে তাকিয়ে গ্রামের মানুষ হিসাব মেলায়। তাঁর বিদেশি বউ, টাকার খবর আর শেখ শাবিদ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের খোঁজ খবর নিতে থাকে। কুয়েত থেকে আনিসুল ইসলাম ফিরে আসলেই মানুষ আসল খবর জানতে পারে। শেখ শাবিদ বিন আহসান ছিল কুয়েতের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও কুয়েত সরকারের ঘণিষ্ঠজন। সেই বাড়িতেই ড্রাইভার পদে চাকরি করতো আমানুল্লাহ আর গৃহকর্মী ছিল তার ফিলিপাইনের সাকিনা বিবি। তাদের মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্কও গড়ে উঠেছিল। হঠাৎ করেই ইরাকের বাদশাহ সাদ্দাম হোসেন কুয়েত আক্রমন করে দখল করে নেয়। শেখ শাবিদ বিন আহসান আমানুল্লাহ আর সাকিনা বিবির কাছে বাড়ির দায়িত্ব দিয়ে সপরিবারে সৌদি আরব পালিয়ে যায়। শেখ শাবিদের খুবই বিশ্বস্ত ছিল তারা দুজন। তিনি বলে গিয়েছিলেন, শিঘ্রই ঝামেলা মিটে যাবে। আমিও শিঘ্রই ফিরে আসবো ইনশাল্লাহ। আমানুল্লাহ আর সাকিনা শলাপরামর্শ করে। সাকিনা জানে কোথায় কোথায় কি কি সম্পত্তি লুকায়িত আছে। বিবিদের সোনাদানা, মালিকের টাকা পয়সা সব তার নখদর্পনে। সবচেয়ে বড় মাইক্রোবাসটিতে শুধু হিরা, স্বর্ণ ও দিনার বোঝাই করে দুজনেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। তিনি গ্রামে আসেন আরো ৭/৮ বছর পরে একজন একজন ভিন্ন মানুষ হিসাবে। গ্রামের মানুষ জানে, শেখ শাবিদ আমানুল্লাহ-সাকিনার পুত্রের নামও। তারা দেখে সারাদেশই এখন শাবিদময়। গ্রামের মানুষ হিসাব মিলাতে পারে না, সব খবরও রাখতে পারে না। অটো চালক শামসুদ্দিন থেকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পর্যন্ত সবারই তবুও হিসাব মেলানোর চেষ্টা থামে না।
২
কাঁঠালপাতা প্রকল্প
গটল্যান্ডের এই জেলাটি কাঁঠালপাতা প্রকল্পে শতসমস্যা থাকা সত্ত্বেও ভালই করছিল। জেলা প্রধান দক্ষতার সাথে অফিস চালালেও উপরের মহলে মালপানি ঠিকমতো না দেয়াতে তাকে সরিয়ে দুর্নীতিবাজ ডোনাল্ড ব্যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি জেলা অফিসে এসেই হুঙ্কার ছাড়লেন, সবাইকে তটস্ত করে ফেললেন। তিনি আগেই ৬টি উপজেলা সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন। শুধু পদ্মদিঘি প্রকল্প কর্মকর্তা দুর্নীতি ভাল বুঝেন আর অন্য ৫টি প্রকল্প কর্মকর্তারা সৎ থাকার চেষ্টা করেন। বিশেষ করে নদীকূল প্রকল্প কর্মকর্তার বিশেষ সুনাম শুনে তাকেই ফোন দিলেন অফিস সময়ের শুরুতে। ফোন বিজি। তার মাথায় রক্ত উঠে গেল। কর্মকর্তা যখন বুঝলেন বস ফোন দিয়েছেন। তিনি মাঠকর্মীর ফোন কেটে বসকে ফোন দিলেন?
স্যার, শুভ সকাল?
আপনার ফোন বিজি ছিল কেন? অফিসে এসেই ফোনালাপ শুরু করে দেন। না অফিসেই আসেন নি? কোন কাজইতো ঠিক মতো করেন না। কয়টায় অফিসে এসেছেন?
স্যার অফিস সময়ের আধা ঘন্টা আগে মনে সাড়ে নয়টায় এসছি।
আমি ঠিকই ধরেছি আপনি চূড়ান্ত ফাঁকিবাজ লোক। ঠিকমতো অফিস করেন না। ঘুড়ে বেড়ান, রাজনীতি করেন। আপনার বিরুদ্ধেতো অভিযোগের শেষ নাই। চাকুরি কিভাবে করবেন? প্রতিষ্ঠানতো শেষ করে দিছেন? আপনাকে এখানে রাখবো না। কোথায় যাবেন?
স্যার আমার তো অনেকদিন হয়ে গেছে। বদলীর সময় পার হয়ে গেছে। যেখানে বদলী হবে সেখানেই যাবো।
আরে, সে আশায়ইতো বসে আছেন। আরেক জায়গায় পাঠাবো সেখানেও একাজই করবেন। কাল বিকেলে অফিসে ছিলেন না কেন?
স্যার কাল উপজেলা পরিষদে মিটিং ছিল। ওখানে যেতে হয়েছে।
কলাপাতা খেতে গিয়েছেন? আমিতো জেলার মিটিংএই যাই না। আর যাবেন না।
গট করে লাইন কেটে দিলেন। ওদিকে উপজেলা প্রকল্প কর্মকতার মনে তোলপাড় শুরু হল। স্যার তাকে এভাবে অপমান করলেন। এতোগুলো মিথ্যা অভিযোগ দিলেন। কেন? তিনি সততার সহিত এতোদিন কাজ করলেন। সব বসরা তার প্রশংসা করেছে। তিনি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। অথচ আজ গালি খেতে হলো।
পরদিন তিনি সকাল নয়টাতেই অফিসে এসে বসলেন। কেউ নেই। নিজেই টুকটাক কাজ করছিলেন। এমন সময় বস ডোনাল্ড ব্যা ঢুকেই বললেন, এই আপনার আর লোকজন কোথায়?
স্যার এখনো সবাই আসেনি। সাড়ে নয়টার মধ্যেই সবাই চলে আসবে।
কেন সাড়ে নয়টা? সবাইকে নয়টার মধ্যে থাকতে বলেছি। কথায় কান দেন না। আপনার অফিসের সামনে দেখলাম, লাদা। ঘটনা কি? কি করেন? কি ফালান? বসে বসে বেতন নেন? কোন কাজইতো পারেন না, অপদাথর্, অকর্মা লোক।
স্যার কাল বয়ষ্ক ছাগলদের স্বল্পমূল্যে কাঁঠালপাতা দিয়েছি। তাদের কয়েকজন লেদে দিয়েছে। যে ছাগীটা পরিষ্কার করে তার বাচ্চাটা অসুস্থ। আমি আসার পথে খবর নিয়েছি। এখনি এসে পড়বে।
আমাকে উদ্ধার করেছেন। উপজেলা প্রকল্প প্রধানের যোগ্য লোক আপনি যে নন, তা বুঝতে বাকি নেই। স্বল্পমূল্যে কাঁঠালপাতা বিক্রি বন্ধ করবেন। কিন' কাগজে কলমে দেখাবেন বিক্রি বেশি হয়েছে। বাকী টাকা প্রতি মাসে জেলা অফিসে পাঠিয়ে দিবেন। এখন থেকে বিধবা, প্রতিবন্ধী, শিশু সব ভাতা ও স্বল্পমূল্যে দেয়া বন্ধ। আমি রাজধানী ছেড়ে গ্রামে আসায় বেতন কমেছে অনেক। এগুলো উঠিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। মনে থাকবে?
স্যার, এরাতো অভিযোগ করবে। আমি সামাল দিবো কিভাবে? এছাড়া উপজেলায় আমাকে জবাব দিতে হয়।
আপনার সাহসতো কম নয়। আমার সাথে বেয়াদবী। মুখেমুখে কথা বলা ছাড়াতো কিছুই পারেন না। উজবুক কোথাকার।
রেগেমেগে বস বেরিয়ে গেলেন।
এরপর উপজেলা কর্মকর্তা বদলী হলেন। প্রকল্প লাটে উঠলো। দুর্ভিক্ষ দেখা দিলো। বহু ছাগল অনাহারে মারা গেল। আর কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কঙ্কালসার ছাগলদের জমিজমা কিনে সম্পদের পাহাড় গড়লেন।
১৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩০
মুজিব রহমান বলেছেন: আমার বন্ধু রাশেদ তো পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধে সময় কিশোর রাশেদের কর্মকাণ্ড। আমার কাছে গল্পটিকে প্রাণহীন ও আরোপিত মনে হয়েছিল। জাফর ইকবালের গল্পে এমনিতেই প্রাণ খুঁজে পািই কম। কোথায় মিলেছে ধরতে পারছি না।
২| ১৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: চমৎকার প্রকাশ। মুগ্ধ I
৩| ১৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
৪| ১৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:১৯
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চরম বাস্তবতা ফুটে উঠেছে আপনার
দুটো গল্পতেই। বলুনতো এবার কোন
প্রকল্পে হাত দেওয়া যায়। হ্যা ঠিব বলেছেন
ছাগলের লা্াদা দিয়ে স্বপ্ন প্রাপ্ত করোনার মহৌষধ!!
গাড়ী বাড়ি করতে আর পিছনে তাকাতে হবেনা।
১৯ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪
মুজিব রহমান বলেছেন: হা হা! মহৌষধকারীদের দুর্দিন চলছেরে ভাই।
৫| ২০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:৪২
কল্পদ্রুম বলেছেন: সেরকম মিল নেই।কেবল ওখানেও ক্লাসে শিক্ষক রাশেদের নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন।ওই জন্য।উপন্যাসের ব্যাপারে অকপট মতামত জেনে ভালো লাগলো।আমার মতে কিশোর সাহিত্য কিশোরদের মনোজগতের জন্যই বেশি উপযোগী।
২০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:০২
মুজিব রহমান বলেছেন: হ্যাঁ ঠিক বেলেছেন। লাড্ডু (?) হয়ে গিয়েছিল রাশেদ হাসান মনে পাড়েছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬
কল্পদ্রুম বলেছেন: প্রথম গল্পের শুরুটা পড়ে 'আমার বন্ধু রাশেদ' উপন্যাসের ক্লাসের চিত্র মনে পড়লো।