নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ বদলাতে হবে। অনবরত কথা বলা ছাড়া এ বদ্ধ সমাজ বদলাবে না। প্রগতিশীল সকল মানুষ যদি একসাথ কথা বলতো তবে দ্রুতই সমাজ বদলে যেতো। আমি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনবরত বলতে চ

মুজিব রহমান

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

মুজিব রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কতোটা নারী জাগরণ ঘটেছে?

২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:১৪

আমাদের নারী জাগরণের অগ্রদূত বলা হয় বেগম রোকেয়াকে। শত বছর আগের তার কর্মকাণ্ড ওই সময়ের নারীরা খুব কমই জানতে পেরেছিল। আজকাল নারীরা আর বেগম রোকেয়ার খোঁজ রাখেন না। আমি অনেক নারীর কাছেই জানতে চাই প্রিয় লেখক কে? তসলিমার বই নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত অধিকাংশই তসলিমার নামই বলতেন। তসলিমার নির্বাচিত কলাম নারীরা নিজেদের বাইবেল মনে করে কিনেছে। তসলিমার কলামগুলো খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তা ছিল জীবন ঘণিষ্ঠ কথায় ভরপুর। এখন তসলিমা আর দেশে নেই, বাংলার জীবন ঘণিষ্ঠতারও সুযোগ নেই। তাঁর অকপট আত্মজীবনীগুলোও একেরপর এক নিষিদ্ধ হওয়ায় পড়ার সুযোগ নেই। ফলে তসলিমা যে সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন, তা আর থাকেনি।

বাংলার নারীদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস কম নয়। ভারতবর্ষের প্রথম মহিলা শাসক আমরা দেখি সম্রাজ্ঞী সুলতানা রাজিয়াকে। সুলতান ইলতুতমিশ তার কন্যাকে দিল্লীর শাসক হিসেবে মনোনীত করে গিয়েছিলেন প্রায় ৮শত বছর আগে। তিনি একজন ভাল প্রসাশক, দক্ষ সেনাপতি ও তুখোড় সৈন্য ছিলেন। সম্রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। শাসনকার্য দৃঃঢ় ভাবে পালন করার জন্য তিনি নারীত্বের আবরণ পরিত্যাগ করে, পুরুষের পোশাক গ্রহণ করেণ। নারী হওয়ার কারণে ও প্রকাশ্যে পর্দাপ্রথার বিরোধী হয়ে শাসনকাজ পরিচালনা করার জন্যে উলেমা ও প্রভাবশালী শ্রেণির বিরাগভাজন হয়েছিলেন। সুলতানা রাজিয়ার দুইশ বছর পরে ফ্রান্সে এসেছিলেন জোয়ান অব আর্ক। জোয়ান ফ্রান্সকে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দেন। জোনের মাধ্যমে ফ্রান্স ইংল্যান্ডের মধ্যকার শতবর্ষ ব্যাপী যুদ্ধ অবসান ঘটে। একইরকম বিশ্বাসঘাতকতার সুযোগে ইংরেজরা তাকে আটক করতে সমর্থ হয়। পাদ্রির অধীনে বিচারে তার কার্যকলাপকে প্রচলিত ধর্মমতের বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাকে 'ডাইনি' সাব্যস্ত করা হয়। আইনে এর শাস্তির বিধান অনুযায়ী তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়।

ভারতে আমরা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে এলিট শ্রেণির হিন্দু নারীদের অংশগ্রহণ করতে দেখি। তবে অসহযোগ আন্দোলনের সময়েই নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা গিয়েছিল। বিক্রমপুরের কৃতীকন্যা সরোজিনী নাইডু কংগ্রেসের সভাপতির আসন গ্রহণ করেছিলেন। কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়, বিজয়লক্ষ্মীসহ অনেক নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। মুসলিম নারীদের মধ্যে মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর মা আবিদা বানু বেগমও নারীদের নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সরোজিনী নাইডু ১৯৩০ সালে ২ হাজার নারীকে নিয়ে মিছিল করে দর্শনা লবন উৎপাদন কেন্দ্রে আক্রমণ করতে গিয়ে গ্রেফতার হন।মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে সংগ্রাম করেছেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ও কল্পনা দত্ত। প্রীতিলতা ইংরেজ ক্লাবে হামলা চালিয়ে ধরা পড়ে গেলে সায়ানাইড খেয়ে আত্মহুতি দেন আর কল্পনা দত্ত সংগ্রাম চালিয়ে যান। রবীন্দ্রনাথ কল্পনা দত্তকে অগ্নিকন্যা উপাধী দিয়েছিলেন।বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল বিপুল ও ভূমিকা ছিল ব্যাপক। ভারতের আরো বিভিন্ন আন্দোলনেও নারীদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধেও আমাদের নারীরা আন্দোলন করেছেন। মতিয়া চৌধুরীও অগ্নিকন্যা খেতাব পান। গণজাগরণ মঞ্চে ভূমিকা রেখে লাকি আক্তারও অগ্নিকন্যার খেতাব পেয়েছিলেন। মতিয়া চৌধুরীর সমসাময়িক আরেকজন নারী নেত্রীকে দেখেছি- সাজেদা চৌধুরী। আরো অনেক নেত্রীই উঠে এসেছেন তবে অধিকাংশই পারিবারিক সূত্রে। পারিবারিক সূত্রে উঠে আসা নারী নেত্রীদের মধ্যে একটা পার্থক্য থাকেই। ভারতেও বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী, সুষমা স্বরাজ ও স্মৃতি ইরানীকে দেখেছি যারা নারীদের অগ্রগতির চেয়ে হিন্দুত্ববাদী চেতনাকে নিয়েই বেশি কাজ করেছেন।

নারী নেতৃত্বের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও নারী নেতৃত্বের সেই উত্থানটা যেনো থেমে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পারিবারিক কারণে রাজনীতিতে আসা নারীদের বাইরে খুব কমই নেতৃত্বের বিকাশ দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক রাজনীতি বন্ধ থাকায় অথবা সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি না থাকায় নারী নেতৃত্ব বিকশিত হয়নি।একই কারণে রাজনীতিতে পুরুষ নেতৃত্বরও ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। বহু বছর পরে একটি মাত্র নির্বাচন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে আমরা কজনকে দেখছিলাম নেতা হয়ে উঠতে যার মধ্যে নুরুল হক নুর বেশ পরিচিতিও পেয়েছেন। এই ধারা বন্ধ হয়ে গেলে শূন্যতা থেকেই যাবে। সবচেয়ে ক্ষতি হবে নারী নেতৃত্ব বিকাশের। স্থানীয়ভাবে সাধারণত প্রভাবশালী নেতাদের স্ত্রী-কন্যারাই বড় পদগুলো দখল করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই এর অন্যথা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুধু গণজাগরণ মঞ্চে নেতৃত্ব দেয়ার কারণেই উত্থান ঘটেছিল লাকি আক্তারের।এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে দিপালী সাহার মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।ওই সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচিত হন হেলেন জেরিন খান, মোশারেফা মিশু, শিরিন সুলতানাসহ আরো অনেকে।

চাকরি ক্ষেত্রে অনেক নারী ভূমিকা রাখতে পারলেও ব্যাপকহারে ব্যবসা ও রাজনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। সুলতানা কামালসহ কয়েকজন এনজিও নেত্রী আলোচিত হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এনজিওর ভূমিকা হ্রাস পাওয়াতে তাদের ভূমিকাও কমে এসেছে। ব্যবাসয়ীদের মধ্যে গীতিআরা সাফিয়া, রুবানা হক এবং আরো কয়েকজন উদ্যোক্তা ভূমিকা রাখছেন যাদের অধিকাংশই পারিবারিকভাবেই এ জগতে এসেছেন। সাহিত্য জগতে কবিতায় এখন তেমন কেউ প্রভাব বিস্তার না করলেও কয়েকজন লেখক ঔপন্যাসিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন- তসলিমা নাসরিন, রাবেয়া খাতুন, সেলিনা হোসেন, নাসরিন জাহান, সালমা বাণী তাদের অন্যতম। চিত্র নায়িকারা কেউ তেমন প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও কয়েকজন টিভি নায়িকা ভূমিকা রাখছেন- যেমন শমি কায়সার।

সর্বক্ষেত্রেই নারীদের জাগরণ দরকার। একটি দেশ কতটা সভ্য তা বিবেচনা করা হয়, ওই দেশে নারীরা কতটা সক্রিয় তা দিয়ে। আমাদের সিংহভাগ নারী এখনো সংসার কর্মেই নিয়োজিত। তারা সমাজ ও রাষ্ট্রে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন না।নারীরা এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবেই এগিয়ে এসেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত ৫৮:৪২। ২০১৬ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ১৬ লাখ ৫২ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত ছিল: ৫১:৪৯। আর ২০২০ সালে এসেই ২০ লক্ষ ২৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি ১২ হাজার অর্থাৎ অনুপাত উল্টে গেছে। নারীর শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে সমাজে ও রাষ্ট্রে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগও বাড়বে। উদ্যোক্তা হওয়ার বিষয়ে সমাজ উৎসাহ দেয় না এমনকি রাজনীতির ক্ষেত্রেও নারীদের ভূমিকা রাখা নিরুৎসাহিত করা হয়। পারিবারিক কারণ ছাড়া বেশি নারী এখানে জড়াতে চায় না। তারা একটি সরকারি/আধাসরকারি চাকরি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। কিন্তু চাকরির সুযোগতো সীমিত। তাই বিপুল সংখ্যক নারীকেই থাকতে হয় গৃহিনী হিসেবেই।

সত্যিকারের নারী জাগরণ ছাড়া এ থেকে দ্রুত উত্তরণ সম্ভব হবে না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:২৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর ।

২| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৫৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পুরুষ যারা নারী জাগরণ এর কথা প্রথম নিজের ঘর হতে তাদের আরম্ভ করতে হবে। আর নারী নেত্রীরা এর আড়ালে পতিতাবৃত্তি করে টাকা কামায়।

২৫ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৪০

মুজিব রহমান বলেছেন: নারী নেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মন্তব্য খুবই দুঃখজনক।

হাসনাৎ আব্দুল হাই আমাদের শ্লোগানকন্যা/অগ্নিকন্যা লাকি আক্তারকে নিয়েও এমন গল্প ফেদেছিলেন। তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। তবে এমন বাজে ধারণা সমাজে প্রচলিত। আমাদের এলাকাতে একজন শিক্ষিকা সমাজকর্মী নারীর সম্পর্কে দুএকজন এমন বাজে মন্তব্য করতো। আমি তাকে ভালভাবে জানতাম। তিনি খুবই মার্জিত ও রুচিশীল নারী। বাজে মন্তব্যে তিনি সামাজিক সংগঠন ছেড়ে দেন।

নারীতো আমার মা, আমার কন্যা, আমার স্ত্রী, আমার বোন- তাদের জন্য আমাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

৩| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: সত্যি কথা বলি- আজও আমাদের দেশে নারী জাগরন ঘটেনি।
নিজের চোখে দেখেছি, একটা মাস্টার্স পাস করা মেয়ে একা ইন্টারভিউ দিতে যেতে সাহস পায় না। তাহলে বুঝুন দেশে কতটা নারী জাগরন ঘটেছে?

অথচ আমাদের দেশের প্রধা্নমন্ত্রী নারী।
দেশ যদি নারী জাগরন ঘটতো তাহলে তসলিমা নাসরীকে দূর দেশে থাকতে হতো না।

৪| ২৪ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তসলিমা নাসরিন উগ্র নারী জাগরণে মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে পারেন (বড় জোর)। উনি কখনও বেগম রোকেয়ার উত্তরসূরি হওয়ার যোগ্য না। সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীরা তাকে অনুকরণীয় মনে করে না। সিংহভাগ নারীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নাই। নিজের জনপ্রিয়তার জন্য/ ক্ষোভ ঝাড়ার জন্য তিনি মানুষের ( যাদের সাথে এক সময় ভালো ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল তার ) ব্যক্তিগত তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন (অনুমতি ছাড়া এরকম আচরণ অনৈতিক – বল পূর্বক কেউ ওনার সাথে কিছু করে নাই )। এদেশের কোনও কবি সাহিত্যিক তার সমর্থনে কিছু লেখেন না। কারণ তসলিমা সমাজের নিয়ম নিজেই মানেন না। আমাদের সমাজের মেয়েদের আচার আচরণের একটা সীমারেখা আছে। উনি নিজে সেটা ভেঙ্গেছেন। সকল সমাজেই নারী পুরুষ উভয়েরই চাল চলনের একটা সমাজ স্বীকৃত সীমারেখা থাকে। সমাজের সীমারেখা লঙ্ঘনকারী কখনও অনুকরণীয় হতে পারেন না। তাই এদেশের লেখক সমাজে উনি গুরুত্ব হারিয়েছেন। তসলিমার দ্বারা নারী জাগরনের কোনও শম্ভবনা কখনই জাগেনি। ওনার বহু বই এখনও অন্তরজালে সুলভ। নারী জাগরণ বলতে কিছু নারী নেত্রী তৈরি হওয়া বুঝায় না। সমাজের সর্বস্তরে যখন নারীরা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তখনই বলা যাবে প্রকৃত নারী জাগরণ ঘটেছে। পাশ্চাত্যে আংশিক নারী জাগরণ ঘটেছে কারণ সেখানে এখনও মেয়েরা সমাজ বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। সেখানে মেয়েদের বেতন ছেলেদের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে কম। আমেরিকার বা ইউরোপের রাজনৈতিক নেতৃত্বের বা নীতি নির্ধারকদের কত পারসেনট নারী? আমাদের দেশের বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্র রাজনীতি তা কোনও ভালো নেতৃত্ব তৈরি করার পরিবেশ হারিয়েছে। চলচ্চিত্র বা নাটকের নায়িকা কিভাবে নারী জাগরণে সম্পৃক্ত আমি বুঝলাম না। দেশে বিদেশে সিনেমা, শো বিজ নারীকে পণ্যে পরিণত করছে। বিদেশের নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তারাও এসবের বিরোধী (যেমন সুন্দরী প্রতিযোগিতা)। শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণের পরিমান বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে নারী জাগরণের অগ্রগতি নির্দেশ করছে। নারী নির্যাতন কমানো/ বন্ধ করা গেলে আমরা বলেতে পারতাম সত্যিকার নারী জাগরণ ঘটেছে। নারী উদ্যোক্তা আরও বাড়লে বলা যেত নারী জাগরণ ঘটেছে। সংরক্ষিত আসন ছাড়া সংসদে ৫০% সিট মেয়েরা পেলে বলা যেত মেয়েদের উন্নতি হয়েছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি, সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি নারী জাগরণের অন্তরায়। আমেরিকার সেনা বাহিনীতে নারীরা পুরুষের সাথে কাজ করছে (বাংলাদেশেও কাজ করছে এবং তাদের অবস্থা আমেরিকার চেয়ে অনেক ভালো)। কিন্তু ওখানে কলিগদের দ্বারা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির মাত্রা অত্যধিক। সেটাকে কি নারী জাগরণ বলা যাবে। ঘরে ও ঘরের বাইরে নারীদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে সেটাকে সার্থক জাগরণ বলা যাবে না। সুইডেনে বলা হয় নারীর জাগরণ ঘটেছে। কিন্তু সেখানে ধর্ষণের হার আমেরিকা বা বাংলাদেশের চেয়ে বেশী। ধর্ষণের রাঙ্কিংএ সুইডেন প্রথম সারিতে আছে। তাহলে জাগরণের পরেও নারীরা নিরাপদ নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে জাগরণ সার্থক নয়। নারী জাগরনের সহায়ক হিসাবে অনেক পুরুষরাও এগিয়ে আসছেন। নারী জাগরণ শুধু নারীদের বিষয় নয়। প্রত্যেক পরিবারে নারী আছে। তাই নারী জাগরণে পুরুষদেরও অনেক সময় স্বার্থ থাকে। অনেক নারী আছে যারা নারী জাগরণের অন্তরায়। এর জন্য সরকারি নীতিরও দরকার হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েক দশক ( উনবিংশ/ বিংশ শতাব্দি) আগে মেয়েদের ভোটাধিকার ছিল না। পরে আইন পরিবর্তন করে অধিকার নিশ্চিত করতে হয়। আমাদের দেশে নারী নির্যাতন আইন অনেক ক্ষেত্রে নারীর উপর নির্যাতন কমাতে সহায়ক হয়েছে ( যদিও এর অনেক অপপ্রয়োগ হয়)। এদেশের হিন্দু বিবাহিত মেয়েরা উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পায় না। ভারতে সম্ভবত পায়। এখানে রাষ্ট্র আইনের সহায়তায় ভারতের মত মেয়েদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারে। তবে আইন দিয়ে তো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা যায় না। এদেশের অধিকাংশ মেয়েরই নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা নেই। এখানে পরিবার ও সমাজ বাধা। তবে বাংলাদেশে নারী জাগরণের বড় কোনও বাধা মনে হয় এখন নেই (যেগুলির সম্মুখীন হয়েছেন বেগম রোকেয়া )। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের আগ্রহের অভাব। একটা উদাহরণ দেই। এক বছর ধরে ঢাকাতে মেয়েরা স্কুটি চালাচ্ছে। এটা ভারতে আরও মনে হয় আরও ৩০ বছর আগে শুরু হয়েছিল। মেয়েরা ঢাকাতে আমার ধারণা বড় কোনও বাধার সম্মুখীন হয় নাই। বরং পুলিশ বা রাস্তার মানুষ এটাকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। এত দেরীর জন্য মেয়েরা দায়ী আমার মনে হয়। তবে আমাদের দেশে গ্রামে ও নিম্নবিত্ত পরিবারে মেয়েদের পরিবর্তন আসতে আরও অনেক সময় লাগবে যদি না সমাজের মানুষ তাদের দৃষ্টিভঙ্গি না বদলায়। পুরুষ বিদ্বেষী মনোভাব নারী জাগরণের অন্তরায় বলে আমি মনে করি। কারণ বহু পুরুষ মেয়েদের সাথে আছে।

৫| ২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১১

পারভীন শীলা বলেছেন: সত্যিকারের নারী জাগরণ কখনোই হবে না ।নারীরা নিজেরাই নিজেদের ভালো বোঝে না । ইতিহাসে যে সকল নারীরা তাদের কৃতিত্বে অমর হয়ে আছেন তাদের সংখ্যা একেবারেই কম । নারীদের আগে নিজেদের বুঝতে হবে, নিজেদের নিয়ে ভাবতে হবে যে তারাও চাইলে অনেক ভালো কিছু করতে পারে । কিন্তু না ।তাদের অনেক প্রতিভা থাকা সত্বেও তারা এগিয়ে যেতে চায়না ।আমি বলব এটা তাদের বোকামি । আপনি খুব সুন্দর একটি বিষয় লিখেছেন । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.