![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিঠু ও নিশিতা একই কলেজে পড়ে। কলেজে কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পরই তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের শুরু। তাদের বাসা অবশ্য একই পাড়ায় পাশাপাশি বিল্ডিং। তখন যদিও প্রেম সম্পর্কে এতটা বুঝত না, তবুও তাদের মধ্যে ভালই বুঝাবুঝি ছিল। দুজন দুজনকে খুবই পছন্দ করত। প্রাইভেট পড়া থেকে শুরু করে কলেজে যাওয়া - আসা একই সাথে করত।
আজ কলেজে অনুষ্টান। তাই, সবাই একটু আলাদা সাঁজ গোছ করেই আসছে। নিশিতা শাড়ি পড়ে আসছে। ওকে পরীর মত লাগছে। মিঠু এক পলকে তাকিয়ে আছে। চোখ পেড়াতে পারছে না।
নিশিতা জিজ্ঞাসা করছে, কি হয়েছে তোমার?
মিঠু তার রুপে মুগ্ধ হয়ে গাইতে শুরু করল।
" কে গো রমনী তুমি
এসেছ আমার দিয়ার মাঝে
তোমার রুপের ঝলকে
আমার নয়ন ভরে
কোথায় রাখি বল সখী।"
এরই মধ্যে তাদের বন্ধুরা চলে আসল। নিপুন আর রিয়া বলে উঠল, তদের দুজনকেই আজ বেশ মানিয়েছে। এবং রাতুল বলল, " যেন সদ্য ফুটন্ত গোলাপ।" মিঠু, রাতুলকে বলল, গোলাপে কিন্তু কাঁটা থাকে, কাছে আসিছ না গায়ে বাঁধবে সহ্য করতে পারবেনা।
রাতুল বলল, বন্দু না হয় একটু...!
বাকী বন্দুরা সবাই বলে উঠল, চল আজ তরা দুজন আমাদেরকে চটপটি খাওয়াবে।
" লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা হচ্ছে " তাই না?
তার জন্য জরিমানা দিতে হবে বুঝলে?
তখন নিশিতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, আরে দুষ্টুর দল, " আজ তদের একদিন তো আমার একদিন।" এর মাঝে দিয়া বলল, তাক তাক তকে খাওয়াতে হবে না।
এদিকে, অনুষ্টান শুরুর প্রায় সময় হয়ে গেছে।
নিশিতা বলল, চল চল তদের আবদার বলে কথা। না খাওয়ালে হবে নাকি। " যদি আবার নজর লাগে। "
তারা সবাই কেন্টিনে গেল।টেবিলে বসে অর্ডার করল।তাদের বন্ধু হঠাৎ আসল
এবং বলল, " খুঁজে ফিরি আমি তদের
কলেজ পাঠাগার ও বটতলায়
পাইনি কোথাও,
অবশেষে মনে হল
ফিরে যাই কেফে।"
সবাই বলল, আসেন কবি সাহেব আপনার জন্য বসার স্থান প্রস্তুত আছে। অবশ্য, সবাই তাকে কবি বলেই সম্মোধন করে।মিঠু বলল, তুই কোথায় ছিলে এতক্ষণ,তর জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।সে বলল," কোথাও ছিলাম নাকো আমি
ভাবনায় খুঁজো,
পাবে আমাকে "
মিঠু বলল, তাক আর না। তর কবি কবি ভাব বাদ দিয়ে খাওয়া শেষ কর। তর কবিতা কে শুনে।" লবণ ছাড়া তরকারী যেমন,পাঠক ছাড়া কবিতাও তেমন।"
তর কবিতা শুনে একটি কবিতার লাইন মনে পড়ল," খোকন হাসে ফোকলা দাঁতে
চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে
আরও হাসে বোয়াল মাছ।"
সবার খাওয়া শেষ। সবাই চলে গেল অনুষ্টানে। অনুষ্টানের আলোচনা শেষে এবার শুরু হবে বিনোদন পর্ব।
সবাই মিঠুকে নির্বাচন করল ভালবাসা সম্পর্কে কিছু বলতে। মিঠু মঞ্চে উঠল।
শুরু করল তার মনের ভাবপূর্ণ কথা_" ভালবাসা মানে দুজনের মনের মিলন, ভালবাসা মানে কষ্টকে হার মানিয়ে সফলতা অর্জন। ভালবাসা মানে স্নিগ্ধতায় ভরপুর দুটি মন। ভালবাসা মানে সদ্য স্ফুটিত ফুল। ভালবাসা মানে মনের পবিত্রতা। ভালবাসা মানে উদারতা। তাই আমি ভালবাসার পূর্ণতা দিতে চাই। আমি ভালবাসি তোমাকে, তোমার ভালবাসা পাওয়ার জন্য আমি সদা অপেক্ষা করি। কখন তুমি আমাকে তোমার ভালবাসার আলিঙ্গন করবে। তোমার কাজল কালো চোখ আমাকে গভীর আনন্দ দেয়। তোমার কেশের গন্ধ আমাকে মুগ্ধ করে। তোমার গোলাপি ঠোঁটের স্পর্শ পেতে আমার হৃদয় ব্যাকুল। আমার সমস্ত ভাবনায় জড়িয়ে আছ তুমি। তোমাকে ছাড়া একটু মুহূর্তও ভাবতে পারি না। এ কেমন তোমার ভালবাসা? "
সবাই হাত তালির মাধ্যমে মিঠুকে উৎসাহিত করল। এদিকে, নিশিতাকে গান গাইতে হবে। নিশিতা তার নিজের লিখা গান গাইতে মঞ্চে উঠল।নিশিতা সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গাইতে শুরু করল_
" আমি ভালবাসি ভালবাসি
যতনে তোমায়
ওগো তুমি আছ
আমার হৃদয় জুড়ে
যেওনা দূরে ছেড়ে
দিব নিজেকে বিলিয়ে
জড়িয়ে রাখিব তোমায়
তুমি ছাড়া এ প্রাণ বাঁচে না
কি করে যে বলি তোমায়
ভালবাসি ভালবাসি
আমি ভালবাসি তোমায়।"
নিশিতা অসাধারণ গান গাইল। উপস্থিত সবাই নিশিতার গানে মুগ্ধ হয়ে বিমোহিত হল। এবার কলেজের অধ্যক্ষ সাহেব অনুষ্টানের সমাপ্ত টানলেন।
মিঠু এবং নিশিতার বন্ধুরা সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য কলেজ থেকে রওনা দিল। যাওয়ার পথে নিপুন, নিশিতাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করল, নিশিতা তুমি কবে আমাদেরকে দাওয়াত খাওয়াবে?
নিশিতা বলল, " আবেগের তরে তরা করিস না তাড়াহুড়া, একটু সময় দে না রে আমারে ভাবিবার তরে "
কিছুদূর যাওয়ার পর মিঠু ও নিশিতা সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেল। কারণ, তাদের দুজনের বাসা একই দিকে।
মিঠু ও নিশিতা দুজন, দুজনার হাত ধরে হাটতে শুরু করল। মিঠু একটি গানের এক অংশ গাইল, " এ পথ যদি শেষ না হত, তবে কেমন হত বল?" নিশিতা মিঠুকে বলল, এভাবে তুমি আমার হাতটি চিরকাল ধরে রাখ। আমার ভালবাসার রঙে তোমাকে রাঙাতে চাই, দিবে তো? মিঠু বলল, " নেই নেই আমি আর আমার মাঝে, আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি, তোমারি মাঝে।"
হাটতে হাটতে দুজন বাসার কাছাকাছি চলে আসল। নিশিতা বলল, একটু পরেই তোমার কাছ থেকে চলে যেতে হবে। কত কষ্টের, তাই না? কষ্ট তো বটেই, মন চাইছে না তোমার হাতটা ছাড়তে। মনে হচ্ছে তোমাকে আমার বুকের মধ্যে বেঁধে রাখি। নিশিতা বলল, ছাড় আমাকে। কাল দেখা হবে। বাসায় যাও। এরই মাঝে দুজনই বাসায় ঢুকল।
নিশিতা ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে জানালা খুলল মিঠুকে এক নজর দেখার জন্য। কিন্তু, মিঠুর জানালা বন্ধ। তাই নিশিতা একটু অবাক হল। হঠাৎ আকাশের দিকে চোখ পড়ল। দেখতে পেল আলোয় ভর্তি চাঁদ। যেন আজ দেখতে পেল মুগ্ধকর জ্যোৎস্না রাত। সেইজন্য, নিশিতা অপেক্ষা করছে এবং ভাবতেছে কখন মিঠু জানালা খুলবে। বাঁধভাঙা মন আর সইতে পারছে না। এদিকে, মিঠুর ঘুম আসছে না। ভাবছে কিভাবে নিশিতাকে এক নজর দেখা যায়। তাই, কোন কিছু না ভেবেই জানালা খুলল। খুলতেই দেখতে পেল নিশিতাকে। বলল, নিশিতা তুমি?
নিশিতা বলল, হ্যা আমি,অপেক্ষা করছি তোমার জন্য। আকাশের দিকে তাকাও, দেখ কত সুন্দর চাঁদ।
এই জ্যোৎস্নাতে দুজন মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। আচ্ছা! মিঠু শোন, আস আমাদের বাগানে। দোলনায় বসে জ্যোৎস্না দেখব। দুজনই বাসা থেকে বের হয়ে বাগানে গেল।পাশাপাশি দুজন দোলনায় বসল।
মিঠু বলল, নিশিতা তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর, জ্যোৎস্নাও তোমার রুপের ঝলকের কাছে হার মানবে। তোমার কেশের সুঘ্রাণে যেন নিজেকে কোথায় হারিয়ে ফেলেছি। জানি না, খুঁজতে চাইনা কখনও। তোমার হাসি চাঁদের হাসিকেও ম্লান করবে।
" ফুলের সুবাস হারিয়ে যাবে, তোমার চোলের সুঘ্রাণে। তোমার কাজল কালো চোখে, দিঘীর জল পাবে না গো ঠাই। তোমার হাসির ঝলকের কাছে, জ্যোৎস্নাও বেসামাল।"
এভাবে, দুজন ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে এক পলকে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। এমন মনমাতানো জ্যোৎস্নার রাত যেন কোনভাবেই তারা ছাড় দিতে রাজি নয়। যেন দুজন " ভালবাসার পূর্ণতা পেল। "
©somewhere in net ltd.