নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কট্টরপন্থী মনোভাব এবং দেশের চলমান প্রেক্ষাপট।

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৩

দেশের চলমান অবস্থা দেখে মাঝে মাঝে মনটা খুবই খারাপ হয়ে যায়। সবাই যার যার স্বার্থের জন্য ধর্ম ও স্পর্শকাতর চেতনাকে ব্যাবহার করছে আর এই ফাঁকে দূর্নীতি পরায়নদেরকে আড়াল হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। কেউ ভাবছেনা বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দিনকাল কেমন কাটছে ,সামাজিক নিরাপত্তা আজ হুমকির দোরগোড়ায় পৌঁছেছে, বিদেশী বিনিয়োগে আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে, কষ্টার্জিত রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো বিনষ্ট করা হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক সৌহাদ্রপূর্ণ সম্পর্কে ফাঁটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। এর পেছন থেকে দেশদ্রোহীরা সবাইকে বোকা বানিয়ে হাস্যরস্য করছে।



আমরা কি একবার এভাবে ভাবতে পারিনা , এই দেশ আমাদের , ষোল কোটি মানুষ আমরা এক পরিবারের সদস্য , আমাদের সমস্যাগুলো আমরাই মেটাবো দেশের প্রচলিত আইন ,প্রশাসন ও সংসদের মাধ্যমে। আমাদের প্রতিবাদ থাকবে, দাবী থাকবে, আন্দোলন সংগ্রাম সবই থাকবে কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা হবে শিষ্টাচারপূর্ণ , কুরুচিপূর্ণ নয়। যদি শ্লোগানের ভাষা এই হয়, একটা করে …………….ধর, ধরে ধরে জবাই কর। এই ধরনের শ্লোগান সম্বলিত আন্দোলন আর যাই হোক কখনো মুক্তির আন্দোলন হতে পারেনা বরং রাষ্ট্র ধংসের আন্দোলন হিসেবে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। আন্দোলনের নামে একটা গোষ্ঠী যেভাবে ফেসবুক, টুইটার,ব্লগ ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যাচার চালাচ্ছে তা দেশের জন্য ভয়াবহ আশংকাজনক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কেউ মিথ্যা তথ্য লিখে লেখার উপরে জনপ্রিয় গনমাধ্যমের লঘু সেঁটে দিয়ে প্রচার করছে,কখনো ফটোসপ ভিডিও এডিটিং করে প্রপাকান্ডা ছড়ানো হচ্ছে ,মেয়েদের ছবি দিয়ে ভুয়া আইডি খুলে সদস্য বাড়িয়ে মিথ্যা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যারাই এগুলো করছে তাদেরকে আমি কখনো সংগ্রামী বলবোনা , প্রতারক বলবো কারন ভীরু কাপুষরাই সব সময় মিথ্যা ও প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে থাকে এবং নিজেদের প্রয়োজনেই ধর্মীয় দর্শন ,সমাজতন্ত্র ,গনতন্ত্র মনিষীদের বানী ব্যাবহার করে থাকে আবার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এগুলোর বিরোধীতা করে থাকে। কেউ যদি মনে করে আমিই সঠিক ও সত্য অবস্থানে আছি তাহলে আপনার সত্য দিয়ে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেন,মিথ্যা ও ভন্ডামির আশ্রয় কেন ? আপনার যদি মনে হয় কেউ বিপদগামী হচ্ছে তাহলে তাকে আপনার সত্য দর্শন দিয়ে বুঝিয়ে আপনার পথে আনুন,না বুঝলে কাপুরুষের মত অবুঝের গলায় ছুড়ি চালানোর চেষ্টা কেন ?



আজ ন্যায়,যুক্তি সঙ্গত ও নিজস্ব চিন্তা উপলুব্ধ মতামত প্রকাশ করলে, সেটা যদি কারো বিন্দু পরিমান বিপক্ষে চলে যায় তাহলে কেউ রাজাকার,সাগু অথবা নাস্তিক বা মুর্তাদ হয়ে যাচ্ছে। যারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল দাবী করেন তাদের আচরনে আজ প্রতিক্রিয়াশীলদের স্বভাব ফুটে উঠছে আর প্রতিক্রিয়াশীলরা আরো কট্টর আকার ধারন করছে। এই সব কট্টরপনা ও উস্কানিমুলক বাক্য দেশের মধ্যে হানাহানি খুনাখুনী বৃদ্ধি ছাড়া আর কোন ভালোফলাফল বয়ে আনবেনা। যে যে পক্ষেই থাকুননা কেন আপনাদের কট্টরতার হানাহানি থেকে যদি কারো প্রান নাশ হয় তাহলে হয়তো লাশের কফিন ছুয়ে আন্দোলনকে আরো বেগবান করার শপৎ নেবেন,দুই দিন জোরালো শ্লোগান দেবেন,শহীদের খেতাব দেবেন কিন্তু পারবেন সন্তান হারা পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখিন হলো সেই ক্ষতি পূরণ করতে ?,আপনার রাষ্ট্র কি দায়িত্ব নেবে ঐ শহীদ পরিবারের।



দেশের মানুষের যখন গনমানুষের অধিকার,দূর্ণীতি,বেকাত্ব, অর্থনৈতিক মুক্তি,সুশাসন ,সামাজিক নিরাপত্তা,সুষ্ঠ ও সঠিক বিচার ব্যবস্থা এবং ৭১ এর যুদ্ধাপরাধের নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার কার্যকর ইত্যাদি বিষয়ে ফুসে ওঠার কথা তখন দেশদ্রোহী একটা মহল নিজেদের অপকর্ম ও পাপকে ঢাকার জন্য অত্যন্ত নিখুত ও সুকৌশলে নাস্তিক ও আস্তিক নামক বায়বীয় দুই শব্দ ডুকিয়ে দিয়ে জাতিকে ধংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আপনারা যারা কট্টরতা অবলম্বন করে দেশকে নিয়ে ধংস লীলায় মেতে উঠেছেন,আপনাদের অনেকেই হয়তো চক্রান্তকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে টুপাইচ কামাই করে সংসার চালাচ্ছেন আবার অনেকেরই নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অর্থবিত্ত রযেছে তাদের হয়তো কোন সমস্যা হবেনা, কিন্তু যে গার্মেন্টস শ্রমিকে মুনাফাখোর মালিকের বীমা কোম্পানির টাকা আদায়ের জন্য আগুনে পুরে আত্নহুতি দিতে হয় , সেই সব শ্রমিকের মালিকেরা আপনাদের কট্টর আন্দোলন সংগ্রামের দোহার দিয়ে বলবে শিপ্টম্যান্ট বাতিল হয়েছে,বায়ার অর্ডার ক্যান্সেল করেছে ইত্যাদি অজুহাতে শ্রমিকের বেতন বন্ধ করে দেবে, শ্রমিক বাধ্য হয়ে সংসার চালাতে ডঃ ইউনুসের গ্রামীন ব্যাংকের জামানত বিহীন ক্ষুদ্র ঋণ অথবা রক্তচোষা আশা সমিতির ঋণের জালে জরিয়ে হাবুডুবু খাবে, তখন কি আপনাদের খুজে পাওয়া যাবে এই অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে ? আমাদের চেতনা ভোতা হয়ে যায়, যখন দেখি তাজরিন গার্মেন্টসের শত শত শ্রমিককে পুরিয়ে হত্যা করা হয় যা ৭১ এর গনহত্যাতুল্য। চেতনা আবার জাগ্রত হয় যখন দেখি দলীয় স্বার্থ বা নেতানেত্রীর স্বার্থে ঘাঁ লাগে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের চেতনাবোধ ও ধর্ম প্রতিদিনের প্রয়োজন মেটানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ এবং এদের কোন দল থাকেনা, এদেরকে প্রতিদিন যুদ্ধ করতে হয় দ্রারিদ্রতা নামক এক ভয়ংকর দানবের সাথে। আপনাদের কট্টর আন্দোলন যদি এই শ্রেনীর মানুষের পেটে টান মারে তাহলে যত নীতি বাক্যই ছুরুননা কেন সবই ভন্ডামীতে পরিনত হবে।



বাংলাদেশ আজ পূঁজিপতি ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের স্বার্থ রক্ষাকারী রাষ্ট্র যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা আজ কল্পনাতীত ব্যাপার। দেশটাকে স্বজনপ্রীতি করে গুটিকয়েক গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় অধিকার ভাগ করে নিয়েছে। প্রতিটি মানুষ নিজস্ব উদ্যোগে নিজের পরিবারকে রক্ষা করার আপ্রান চেষ্টা করছে। দেশের জাতীয় আয়ের বিশাল একটা অংশ জুড়ে থাকে বিদেশে কর্মরত বাঙলীদের দেশে পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা এই অর্থ যেমন এক একটি পরিবারকে আর্থিক নিরাপত্তা দিচ্ছে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে। যারা নেপথ্যের চক্রান্তকারীদের উস্কানীতে মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে মনের ক্ষুধা মেটাচ্ছেন তারা যদি একবার দেখতেন প্রবাসিরা পরিবার পরিজনের মায়ামহ ত্যাগ করে কত কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে দেশের জন্য অবদান রেখে চলছে ,তাহলে হয়তো একটুর জন্য হলেও আপনাদের উগ্র চেতনাবোধে বসন্তের হাওয়া লাগতো।



দেশের চলমান বিশৃংখলার কারনে আজ সরকার নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনীর হাতে বিনা দোষে সন্দেহাতীত ভাবে অনের সাধারণ মানুষকে গ্রেপতারের স্বীকার হয়ে পুলিশী নির্যাতন ভোগ করতে হচ্ছে। এর ফলে অনেক ভুক্তভোগী পরিবারের দৈনন্দিন আয় বন্ধ হয়েগিয়েছে ,কিভাবে কাটছে এই হতভাগা পরিবারগুলোর দিনকাল। একবারও এদের বিপদের কথা ভেবে এদের পাশে দাড়াচ্ছেন আপনারা ?



যেসব মস্তিস্ক বিকৃত ও বিদেশী মদতপুষ্ট লেখক মতপ্রকাশের নামে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে দেশের দীর্ঘ দিনের সাম্প্রতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কে ফাঁটল ধরানো এবং সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে এবং যারা ধর্মীয় অনুভূতিকে পূজি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এদের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে সামাজিক ঐক্যবদ্ধ শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা অপরিহার্য্য হয়ে দাড়িয়েছে।



কোন উগ্রতার মধ্যেই দেশ প্রেম থাকতে পারেনা, থাকে মানষিক তৃপ্তি এবং আর্থিক ও ব্যক্তিগত স্বার্থ। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ প্রেমিক তারাই, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে একটি মজবুদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ভিত গড়ার স্বপ্নে নিরলশ কাজ করে চলছে এবং যারা দেশ ধংসকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিদিন কলম হাতে,শ্লোগানে প্রতিরোধ অব্যহত রেখে চলছে।



পরিশেষে বলতে চাই, ধর্মীয় বা যে কোন চেতনা রক্ষার আন্দোলনই আমরা করিনা কেন প্রতিটি আন্দোলনে কট্টরতা এবং উস্কানিমূলক শব্দ পরিহার করি, স্বাধীন সার্বভৌম দেশে আন্দোলনের নামে মানুষ হত্যা কোন সভ্য জাতীর কাম্য নয়, হিংসা নয় ভালোবাসার দিয়ে জয় করি সমস্ত মিথ্যা এবং অন্যায়কে। উন্নত বিশ্ব যখন ক্ষুধা এবং দারিদ্রতাকে জয়ের আন্দোলনে মগ্ন তখন আমরা কেন হিংসা বিদ্বেষে মত্ত হয়ে লক্ষ শহীদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে প্রতিদিন কালিমা লেপে দিচ্ছি ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.