নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেদনার্ত প্যারিস নগরীর চিত্র

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০২

১৩ নভেম্বরের, ফ্রান্স জার্মানীর প্রীতি ফুটবল ম্যাচ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠলো প্যারিস এ্যাটাক।একটু অবিশ্বাসবোধ নিয়ে ফরাসি ভাষায় বোঝার চেষ্টা করছিলাম কি ঘটেছে।ফ্রান্স জার্মানির কাছে ২-০ গোলে ম্যাচ জিতেছে কিন্তু ম্যাচ পরবর্তী খেলার বিশ্লেষন, পুরস্কার বিতরণী,দর্শকদের বিজয় উল্লাসের কোন মুহুর্ত আর টেলিভিশনের প্রচার না দেখে মনে হলো সত্যি প্যারিসের বুকে কোন অশুভ তান্ডব চলছে।কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রায় প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেলের পর্দায় ভেসে আসতে লাগলো ঘটে যাওয়া নির্মমতার বাস্তব চিত্র এবং আইন শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা।যা দেখে মনে হচ্ছিলো রোমাঞ্চোকর নগরী যেন রনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।মনের মধ্যে কিছুটা আশংকাবোধ কাজ করছিলো কারণ প্যারিসের গুরত্বপূর্ণ জনবহুল স্থান ও এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় একের পর এক মৃত্যুর সংখ্যা গননা করে টিভি চ্যানেলগুলো সংবাদ পরিবেশন করে চলছে।

আমি যে এলাকায় বাস করি এটি প্যারিসের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ একটি জনবহুল পর্যটন স্থল ‘মনমাদ’।এখানে সব সময় আইন শৃংখলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা থাকলেও শার্লি এবদোর অফিসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে এখানে এক সেকশন সেনা সদস্যের ক্যাম্প স্থাপন করে বাড়তি নিরাপত্তা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রাখা হয়েছে।তাই এখানে এমন কোন ঘটনা ঘটে কিনা সেই দ্যোদুল্যমান ভীতি নিয়ে ঘুমোতে যাই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ফেজবুকে চোখ বুলোতেই দেখি ম্যাসেজ ইন-বক্সে জমা পড়ে আছে অনেকগুলো ম্যাসেজ ,পরিচিত বন্ধু স্বজনদের অনেকেই আমাদের পরিস্থিতির জানতে চেয়েছে।এখানে অবস্থানরত পারিবারিক বন্ধুদের অনেকেই ফোনে সতর্ক করে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিলো।এত বড় ঘটনা ঘটার পরে আরো অনেক কিছুই ঘটার আশংকা থাকে তাছাড়া জরুরী অবস্থা জারির কারনে বাইরে না বের হয়ে টিভি পর্দায় চোখ রেখেই সারা দিন কাটিয়ে দিলাম গৃহবন্দি হয়ে।ঘটনার একদিন পর রোববার প্যারিসে জনমনের আতংক কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় তাই সন্ত্রাসী হামলার স্বীকারের শোকার্ত স্বজন ও শান্তিকামী শত শত জনতা রিপাবলিক চত্তরসহ হতাহতের স্থানগুলোতে নিহতদের স্বরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ প্রদর্শন করতে বাইরে বের হয়েছে তাই বিকেল পাঁচটার দিকে আমার কন্যা মিশেলকে নিয়েই ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়লাম বেদনার্ত প্যারিসের বাস্তব রুপ পর্যবেক্ষণের জন্য।ঘর থেকে বেরিয়েই মনমাদে যেতেই দেখা মিললো পুলিশের বিশেষ ফোর্স জনদারমোরী(Gendarmerie)এর সতর্ক প্রহরা।যেন প্রতি মুহুর্তেই প্রহরীর স্বয়ংক্রীয় অস্ত্র সন্ত্রাসীর বক্ষ ভেদ করার জন্য সদা প্রস্তুত।পর্যটকদের আনাগোনা ও পথশিল্পীদের সংগীত মুর্ছনায় মুখরিত প্রাণোচ্ছল এলাকাটি যেন আইন শৃংখলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরায় এক যুদ্ধক্ষেত্রের রুপ নিয়েছে।
(Anvers) অভ্যর থেকে ত্রিশ নম্বর বাসে চড়ে রওনা দিলাম আইফেল টাওয়ারের উদ্দেশ্যে।রোববারে সাপ্তাহিক ছুটির কারনে এখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে ভীর কম থাকে।কিন্তু এদিন অস্বাভাবিক যাত্রী শূন্যতা মনে হলো। বাসের মধ্যে চার পাঁচ জনের যে সহযাত্রী পেলাম তাদের মধ্যে লক্ষ্য করলাম গভীর নীরবতা।প্যারিসের পাবলিক ট্রান্সপোর্টে উঠলে যাত্রীদের মধ্যে যে ব্যাপারগুলো সহজেই চোখে পড়ে তাহলো কেউ হেডফোন দিয়ে গান শুনছে কেউ বই পড়ছে কেউ কাউকে বিরক্তিকর কোনকিছু না করে সুসভ্য মানুষের মত নিরবে বসে আছে যা নীরব প্রাণচাঞ্চল্য আবহের সৃষ্টি করে।কিন্তু এদিন মনে হলো বাসের মধ্যে এক দারুন বিষাদের পরিবেশ তৈরী হয়ে আছে।সপ্তাহের প্রতি শনি রোববার ছুটির দিনগুলোতে এখানকার বার রেস্তোরাগুলোর তেরাজ আড্ডায় সরগরম থাকে।কিন্ত এই দিনে প্রাত্যাহিক দিনের চিরচেনা প্যারিসকে একেবারের অচেনা মনে হচ্ছিলো ।অধিকাংশ রেস্তোরাগুলোই বন্ধ ,চলার পথে দু চারটির যা চোখে পড়লো তাও সরকারী নির্দেশে তেরাজ বন্ধ্ রাখা হয়েছে ,ভেতরের মৃদমন্দা আলোয় দেখতে পেলাম কিছু মানুষের আড্ডা।জনমানবহীন রাস্তার এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিলো ,গভীর বন বা বিরান ভূমির পথ দিয়ে চলতে চলতে হঠাৎ চোখে পড়া কুপি জ্বালানো পুরনো পানশালা যেমন। আইফেল টাওয়ারে পৌঁছানোর পর দেখলাম টাওয়ারের সামনে পানির ফোয়ারাগুলো আগের মতোই ক্ষীপ্র গতিবেগে জলের ধারা প্রবাহিত করছে কিন্তু এই সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সৌন্দর্য পিপাসুদের ভীর নেই।নিরাপত্তাজনিত কারণে আইফেল টাওয়ারের বিরামহীন ছুটে চলা লিপ্টগুলোকে অনির্দিষ্ট দিনের জন্য অবসর দেওয়া হয়েছে।সেন নদীর বুকে ভেসে বেড়ানো প্রমোদতরীগুলো ভ্রমনার্থীদের অভাবে নিজ নিজ ঘাটে নোঙ্গর করে আছে।
ফিরতি বাসে বাসায় ফেরার পথে চোখে পড়লো প্যারিসের জনপ্রিয় এ্যাভিনিউ ও অভিজাত এলাকাগুলোতে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ার উদযাপনের বাহারী আলোকসজ্জার বৈচিত্রময় প্রতিকৃতিগুলো রাস্তার পাশদিয়ে অবস্থান নিয়ে উৎসব আনন্দ দেবার জন্য ক্রমাগত জ্বলছে নিভছে কিন্তু বিষাদের এমন দিনে উৎসব আনন্দের আলোকসজ্জার সৌন্দর্য ম্রিয়মাণ হয়েগিয়েছে।তারন্যের আড্ডা স্থল অপেরাকে মনে হলো এক নির্ঝুম নিস্তব্ধতার চাদরে ঢাকা পড়েছে।
এই রোমান্টিক নগরীতে কর্মচাঞ্চল্যতা ফিরে এলেও জনমনে রয়েছে সংশয়।হয়তো খুব দ্রুতই ভয় ও সংশয়ের প্রভাব কাটিয়ে আবার প্যারিস জেগে উঠবে তার স্বরূপে।সন্ত্রাস ও অপশক্তির নির্মুলের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বৈচিত্রময় মানুষের বসবাসের এই নগরী আরো বেশী মানবতার চর্চায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে , এটাই প্রত্যাশা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৩৪

এস কাজী বলেছেন: রোম্যান্টিক সিটিতে শান্তি ফিরে আসুক। শান্তি ফিরে আসুক পুরো পৃথিবী ময়।

সাবধানে থাকবেন। ভাল থাকবেন।

ধন্যবাদ ।

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪১

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই এস কাজী......।

২| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৫৭

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: শান্তি ফিরে আসুক পুরা দুনিয়ায়।

৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০

হাসান মাহবুব বলেছেন: শোক কাটিয়ে শক্তিশালী হোক প্যারিস।

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি প্যারিস থাকেন??

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:৫০

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: হ্যাঁ ভাই ...।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.