নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে বোঝার আগেই মনের মধ্যে একটা চেতনা তাড়া করে ফিরতো। এই ঘুণে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে বদলাতে হবে, একটা বিপ্লব দরকার। কিন্তু কিভাবে?বিপ্লবের হাতিয়ার কি? অনেক ভেবেছি। একদিন মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে উঠলো একটি শব্দ, বিপ্লবের হাতিয়ার \'কলম\'।

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল)

পৃথিবীতে ঘুরতে আসা কিছু দিনের পর্যটক

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-৪)

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

আরো কিছুক্ষণ JARDIN DEL TURO DEL PUTGET তে অবস্থান করার ইচ্ছে থাকলেও বৈশাখী মেলার কথা চিন্তা করে দ্রুত ত্যাগ করতে হলো এই পাহাড়ী বাগান ।সহজে প্লাসা ম্যাগবা চত্বরে ফিরে যাওয়ার জন্য এবার আশেপাশের একটি মেট্র ষ্ট্রেশন খুজে নিলাম।মেলার চত্বরে পৌঁছে আমাদের সঙ্গীদের সবার সঙ্গে দেখা হলো।বৈশাখী র‍্যালী ইতোমধ্যে শেষ হয়ে মঞ্চে চলছে স্থানীয় প্রবাসী তরুন শিল্পীদের সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা।প্রবাসী বাঙালী এক অষ্টাদশী তরুণীর সাথে এক জন কাতালান তরুণীর বাংলাদেশী নাচের পোশাক ও সঙ্গীতের সুরে দ্বৈত নৃত্যের পরিবেশনা দেখে বেশ অবাক হলাম।হঠাৎ বৈশাখের রঙয়ে রঙিন হয়ে শাড়ী পড়া এক ঝাক প্রবাসী বাঙ্গালী রমনীর মঞ্চে আগমন ঘটলো বৈশাখী ঝড়ের মতোই,বাদ্য যন্ত্রের তালে সবাই সমস্বরে গাইলেই বৈশাখের গান এবং প্রচলিত জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান।মনে হলো বার্সেলোনা প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রতিভার এক দারুন সমারহ ঘটেছে আজকের এই বৈশাখী মঞ্চে।







নানা ভাবে সাজানো অনুষ্ঠান মালার একটা পর্ব মনটা প্রফুল্লতায় ভরিয়ে দিলো।মঞ্চে প্রায় বিশজন সদস্যের একটি গানের দল,তিন চারজন বাঙ্গালী শিল্পী ব্যতিত সবাই শ্বেদ চামড়ার বিদেশী।এক বাঙ্গালী তরুনী এবং পাভেল নামের এক তরুন শিল্পীর নেতৃত্বে সবাই সমস্বরে গাইছে কবি গুরু রবি ঠাকুরের গান «যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে »।পরিবেশনায় শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গী বলে দিচ্ছে সবাই গানের কথাগুলো সাথে পরিচিত এবং পুলকিত।পরে তারা অন্য দেশের অন্য ভাষায় আরো কয়েকটি মনোমুগ্ধকর গান দলীয়ভাবে পরিবেশন করলো। নানা ভাষাভাষীর শিল্পীদের সমন্বয়ে গঠিত এই গানের দলটির নাম ‘কোরাল আসিয়া’, এরা মূলত এশিয়ার পঁচিশটি দেশের পঁচিশটি ভাষায় সঙ্গীত চর্চা এবং পরিবেশন করে থাকে।

মেলার স্টলগুলো দেশীয় পিঠাপুলি ও নানা প্রকারের খাবারের সমারহে সাজানো হয়েছে।মঞ্চের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগের পাশাপাশী বৈচিত্রময় বাঙ্গালী পোষাক পরিহিত প্রবাসী নারী পুরুষ,শিশু কিশোরের দল ভীর জমিয়েছে খাবার স্টলগুলোতে বাঙলার রসনার স্বাদের আশায়।প্রবাসী বাঙালীদের সাথে কিছু স্থানীয় সাদা বর্ণের মানুষেরাও বৈশাখী পোষাক শাড়ী ও পাঞ্জাবী পড়ে এই উৎসব আনন্দের অংশ হয়েছে।বার্সেলোনার প্রবাসী বাঙালীদের মনে প্রতি বছরের এই বৈশাখী আয়োজন আনন্দের দিনটা এক বিশেষ অবস্থান করে নিয়েছে, তাই এই দিনে সবাই শতভাগ বাঙালী সাজ পোষাকে নিজেকে রাঙ্গিয়ে নিতে সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন।মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা মিললো তারই বহিঃপ্রকাশ। আর এই আনন্দ উৎসবের তাৎক্ষণিক চিত্র সরাসরি সম্প্রচার চলছে অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল পলাশ টিভি’র মাধ্যমে।





সবাই অধীর আগ্রহে রয়েছে অনুষ্ঠানের মূল পর্বের অপেক্ষায়।তাই মেলার আয়োজক নেতৃবিন্দু তাদের বক্তৃতা পর্ব দীর্ঘায়িত না করে দ্রুত মঞ্চ ছেড়ে দিলেন সঙ্গীতের মহাযজ্ঞ সৃষ্টির আশায়।পরিশীলন উপস্থাপনায় পরন্ত বিকেলের আলোয় বার্সেলোনার কয়েকজন পেশাদার প্রবাসী শিল্পীর একক সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্যদিয়ে শুরু হলো অনুষ্ঠানের মূল পর্ব।এর পরেই কাব্য কামরুলের গ্রাম বাঙলার ঐতিহ্যবাহী লুপ্তপ্রায় পুঁথি পাঠের সুর উপস্থিত সবাইকে কিছুক্ষণের জন্য নিয়ে গেলো সেই ফেলে আসা সুদূর বাংলার মাটির কাছে।নানা রংয়ের জোরাতালির এক বাহারী আলখেল্লা পোষাকের সাজে মঞ্চে আসলেন পবন দাস বাউল।গাইলেন,নাচলেন,সবাইকে সঙ্গীতের ঘোরের মধ্যে রেখে বিদায় নিলেন।নব্বই দশকের তরুনদের অনেকেই প্রতিক্ষায় রয়েছেন তপন চৌধুরী’র বিখ্যাত গানগুলো শোনার।তার গাওয়া ‘পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে এসেছে দারুন মাস’গানটি আমার অত্যন্ত প্রিয়।যখন স্কুলে পড়তাম নব্বই একানব্বই সাল হবে, তখন রাজবাড়ী সরকারী কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কোন একটি ছাত্র সংগঠনের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিলেন তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এবং ঐ সময়ের তরুণ তরুণীদের কাছে জনপ্রিয়তায় তুঙ্গে থাকা সোলস ব্যান্ডের এই ভোকালিষ্ট।সেই সময় তার গানে মাতাল করেছিলেন রাজবাড়ীর তরুণদেরকে। প্রায় পঁচিশ বছর পর আবার সুযোগ হলো প্রবাসের মঞ্চে এই প্রিয় শিল্পীর স্বকন্ঠে গান শোনার।বয়সে মধ্যাহ্নের সীমানা অতিক্রম করা এই শিল্পী তারুণ্যদীপ্ত ভঙ্গীতেই গাইলেন তার জনপ্রিয় গানগুলি,তার সাথে গাইলেন,নাচলেন বার্সেলোনার সুর সাধনার সুন্দরী রমনীদের দল ।সর্বশেষ মঞ্চে আসলেন নীল রংঙের বাউলিয়ানা পাঞ্জাবী পড়ে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন।তিনি শুধু গাইতে আসলেন না,সবাইকে গাওয়াতেও আসলেন।তার দুই একটি গান পরিবেশনের পর আবার অনুরোধ করে মঞ্চে ফিরিয়ে আনলেন পবন বাউলকে তার সঙ্গে বাজানোর জন্য।দুই বাউলের সঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় সন্ধ্যের প্লাসা ম্যাগবার বৈশাখী মঞ্চটি লাল নীল আলোর ঝলকানির সাথে এক ভিন্ন মাত্রার সুরের মায়াজাল সৃষ্টি করলো।এই সুরের মায়াজাল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারলেননা তপন চৌধুরীও।তিনিও যোগ দিলেন। তিন কিংবদন্তি শিল্পীর যৌথ পরিবেশনায় এবার সত্যি মঞ্চে সঙ্গীতের এক মহাযজ্ঞ শুরু হলো।মেলায় আগত প্রবাসী বাঙ্গালী ও কাতালানরা কিছুক্ষণের জন্য বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সঙ্গীতের সুরের সুখে বুঁদ হয়ে এক ভিন্ন জগতে বিচরণ করলেন।স্থানীয় প্রশাসনের ধরাবাধা নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে হঠাৎ মঞ্চের আলো নিভে গেলো। ভাঙল স্পেনের বার্সেলোনা প্রবাসী বাঙ্গালীদের সারা বছরের প্রতিক্ষার এই মিলন মেলা।সুখের এক ভিন্নতর আবেশ নিয়ে নীড়ে ফিরলো সবাই পরবর্তী বছরের এমন আরেকটি দিনের অপেক্ষায়।



















এত বড় এক আয়োজনের ছোট খাটো অসঙ্গতি বাদে,প্রবাসের বুকে এমন সুন্দর,সুশৃংখল এবং পরিমার্জিত একটি মেলা উপহার দেওয়ার মূল খুঁজতে গিয়ে আমার দুই দিনের অবস্থান থেকে যেটা মনে হয়েছে, তাহলো এখানকার প্রবাসীদের মধ্যে দল মত নির্বিশেষে রয়েছে ঐক্যের মানুসিকতা এবং সৌহার্দ্যের সম্পর্ক।জ্যেষ্ঠ কমিউনিটি নেতৃবিন্দের রয়েছে নবাগত প্রবাসী ও তরুনদের প্রতি স্নেহ ও তদারকির দৃষ্টিভঙ্গী, আর কনিষ্ঠদের রয়েছে জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রতি নেতৃত্ব মানা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মানুসিকতা।তাই এই শহরে প্রায় চার হাজার প্রবাসী বাঙ্গালীর বসবাসে একটি পাড়া মহল্লার মতই সুখে দুঃখে একসাথে মিলেমিশে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।এই বাঙ্গালী মহল্লার মানুষেরা শুধু ব্যবসা বানিজ্য আর কর্মেই মসগুল থাকেন না,তারা শিল্প সংস্কৃতির চর্চাও করেন তারই স্বাক্ষর রাখলেন এই আয়োজনের মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানের শেষে শিল্পী, কলাকুশলী ও অতিথিদের নৈশ ভোজের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো জ্যেষ্ঠ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব আলাউদ্দিন হকের রেস্তোরায়। খাওয়া দাওয়ার পূর্বে জমে উঠলো শিল্পী,অতিথি ও কমিউনিটি নেতৃবিন্দের মধ্যে শিল্প সংস্কৃতি,জীবন দর্শন নিয়ে দারুন এক আড্ডা।এখানেও পরিবেশন করা হলো স্পেনের ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পায়লা’, সাথে যার যার পছন্দের পানীয় সামগ্রী।তবে এবার পায়লা খেতে গিয়ে আর দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হলোনা,পরিচিত খাবারের মতই আবারো নিলাম ঝিনুক,অক্টোপাস ,চিংড়ী আর চালের সংমিশ্রনে তৈরী খিচুরী সদৃশ পায়লার স্বাদ। খাওদা দাওয়ার মধ্যেই বাউল ফকির শাহাবুদ্দিন গাইতে শুরু করলেন ‘জেনেশুনে সাধুর লেবাজ গায়ে মাখিসনা’,এবং এই আড্ডাকে বাউলের বাসা বলে আখ্যা দিয়ে মন প্রান উজার করে গাইতে লাগলেন।কিছুক্ষণের জন্য মধ্যরাতের রেস্তোরা ঘরটি বাউলের আখড়া খানায় পরিণত হলো।পবন দাস বাউল অত্যন্ত দরদ দিয়ে গাইলেন ‘আমি তোমার মত ভক্ত পেলে হৃদ মন্দিরে রাখী,একবার আয় আয়…. ও..দেখিরে… ও..তোমায় নয়ন ভরে দেখি ’।ফকির শাহাবুদ্দিন পবন দাস বাউলকে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন প্রদর্শন-পূর্বক গাইলেন ‘আমি তোমায় সেবা করমু দয়াল আমার ঘরে আইলে,বড় লজ্জা পাইবো দয়াল তোমারে না পাইলে’। দুই বিখ্যাত বাউলের এমন একটি আড্ডায় উপস্থিত থাকতে পেরে সত্যি মনটা প্রশান্তিতে ভরে যাচ্ছিলো।এমন বিরল মুহূর্তগুলোকে তাই ভিডিওতে ধারণ করতে ভুল করলাম না।কিন্তু সময়ের সীমাবদ্ধতার কারনে ভালোলাগার রেশ কাটতেনা কাটতেই ভেঙ্গে গেলো মধ্যরাতের ক্ষণিকের এই বাউলের আখড়াখানা।



বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-১)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-২)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

বৈশাখের আমন্ত্রণে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনা ঘুরে এসে (পর্ব-৩)পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

https://www.facebook.com/muhammad.g.morshed

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:২৯

জে আর সিকদার বলেছেন: চমৎকার

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৪

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় ব্লগার জে আর সিকদার...............

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

কালীদাস বলেছেন: টাপাস ট্রাই করেছিলেন?

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭

মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল) বলেছেন: টাপাস এর স্বাদ নিতে পারিনি......জেনে রাখলাম, পরেরবার গেলে নেবো..........ধন্যবাদ......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.