নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভয় করে যদি যাই হাজত ঘরে

মসিউর রহমান জীবন

্নিজের সম্পরকে বলা ঠিক না, তাই বলবনা

মসিউর রহমান জীবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার শিক্ষা গ্রহণ-১

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৫৯

আমার এক বড় ভাই আছেন যিনি টি আই বি তে চাকরি করেন ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে। অসম্ভব ভাল একজন মানুষ। আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। মাঝে মাঝে দিক নির্দেশনা ও দিয়ে থাকেন। গত ২৯ জুন ছিল তার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী। আমাকে বলা হল আমি যেন সেই অনুষ্ঠানে থাকি। এর আগে তিনি আমাকে কখনো কোন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করেন নি । এবার করলেন। অবশ্য এর পেছনে ২ টি কারণ আছে।(আমার ধারণা মতে)

১) যেহেতু এর আগে কাখন দাওয়াত করেন নি এবং

২) অনুষ্ঠানে অনেক অভিজাত কিংবা শিক্ষিত শ্রেণীর লোকজন আসবে। আমি যেন তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই এবং জীবনে বড় হওয়ার চেষ্টা করি।

২৯ জুন রাত ৮ টায় গেলাম কারোওান বাজারের সেভেন হিল রেস্টুরেন্টে। যথা সময়ে প্রোগ্রাম শুরু হল। সবাই এলেন। সেখানে এক সচিবসহ আরো কিছু উর্ধতন কর্মকর্তা ছিলেন। কেক কাটা, হৈ হুল্লোড়, লাফালাফি, নাচানাচি, খাওয়া দাওয়া ই্ত্যাদি আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হল। আমিও বেশ পুলকিত হলাম এবং শিক্ষা গ্রহণ করে বাসায় ফিরে এলাম !!

ঘটনা এখানে শেষ হয়ে গেলে হয়তো এই লেখার কথা কখনো আমার মাথায়ই আসতোনা। ঘটনা যে লুকিয়ে আছে আমার শিক্ষা গ্রহনের মধ্যে। মূল ঘটনায় যাওয়ার আগে আমি কিছু তথ্য যোগ করতে চাই।

BNB news 03/10/2012 তারিখে একটি খবর প্রকাশিত হয় যা হচ্ছে- “জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) প্রচারিত এক তথ্যে জানিয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর ১৩০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়। অথচ বিশ্বের বহুসংখ্যক মানুষের এখনো নিয়মিত তিন বেলা খাবার জোটে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ কোটি কোটি মানুষ অভুক্ত অবস্থায় বহু রাত কাটায়। খাদ্য অপচয়ের বদ অভ্যাস এবং সরবরাহ চেইনে অদক্ষতার কারণে এ বিপুল পরিমাণ খাদ্য মানুষের কোনো কাজে আসছে না।ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ভোক্তাপ্রতি খাদ্য নষ্টের পরিমাণ বছরে ৯৫ কেজি থেকে ১১৫ কেজির মতো। এশিয়ার বেশির ভাগ দেশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকায় এর পরিমাণ ৬ থেকে ১১ কেজি। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তারা ফল ও সবজি নষ্ট করছে সবচেয়ে বেশি। কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (ফাও) এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় জানা গেছে, বাংলাদেশে খাদ্যশস্যে ফসল কাটা-পরবর্তী সময়ে অপচয় হয় অনেক বেশি খাদ্য। খাদ্যশস্যভেদে এই অপচয়ের পরিমাণ প্রায় ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।”

খাদ্য অপচয় সম্পর্কে আমি আরো অসংখ্য প্রতিবেদন দেখাছি। এর সবই দেখেছি সেদিন অনুষ্ঠান থেকে ফিরে আসার পর। যত প্রতিবেদন দেখেছি তার খুব কম সংখ্যক প্রতিবেদনে খাওয়ার সময় খাদ্য অপচয়ের কথা উল্লেখ আছে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি খাওয়ার সময় কোন অংশেই খাদ্য অপচয় কম হয় না।

সেদিনের অনুষ্ঠানে খাদ্য অপচয় আমার মনে যে দাগ কেটেছে, আমার জন্মের পর খুব কম ঘটনাই আমার মনে এরকম দাগ কাটতে পেরেছে। সেদিন আমি খাদ্য অপচয়ের যে মহা উৎসব দেখেছি তা যে শুধু ওই অনুষ্ঠানে হয়েছে তা নয়। আমার দৃড় বিশ্বাস সব রেস্টুরেন্টে সব প্রোগ্রামে কম বেশি খাদ্য অপচয়ের উৎসব লেগেই থাকে।

অনুষ্ঠানের মেন্যুতে ছিল টক, ঝাল, মিস্টিসহ প্রায় ২৫ প্রকার খাবার। বুঁফে রেস্টুরেন্ট। যত পার তত খাও! সবাই যে পরিমাণ খাবার পাতে নিল তার এক তৃতীয়াংশ খাবার ও যদি খেতে পারতো আমার এত দুঃখ লাগতোনা।সবাই যে অপচয় করেছে তা নয়, তবে তাদের সংখ্যা এত কম যে তাদের হিসেবের মধ্যে আনাই যায় না।

এই অপচয়ের উৎসবের মধ্যে বারবার আমার চোখে একটি ছবি ভেসে উঠছিল। আমার মনে পড়ে গেলো কেভিন কার্টারের কথা। আপনাদের অনেকেই হয়ত তাকে চিনে থাকতে পারেন। যারা চিনেন না তাদের জন্য বলে রাখছি, তিনি ছিলেন দক্ষিন আফ্রিকার একজন ফটো সাংবাদিক। ১৯৯৪ সালে পুলিৎযার পুরষ্কার বিজয়ি এই ফটো সাংবাদিক পুরষ্কার পাওয়ার কয়েকদিন পরে আত্মহত্যা করেন। যে ফটোর জন্য তিনি এই পুরষ্কারে ভূষিত হন সেই ফটোই তার মৃত্যুর কারণ হল। মূলত কি ছিল সেই ফটোগ্রাফে? ফটোটি ছিল সুদানের একটি দূর্ভিক্ষ পিড়ীত এলাকার যার পাশেই ছিল জাতিসংঘের ফুড ক্যাম্প। সেখানে দেখা যায় একটি ক্ষূধার্ত শিশু মৃত্যুর প্রহর গুনছে আর পাশে একটি শকুন শিশুটির মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। মারা গেলেই তার লাশ খুবলে খাবে।



এমন ভয়েবহ ছবি কার্টার সহ্য করতে পারেন নি। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ডায়েরিতে লিখেছিলেন-“I promise I will never waste my food no matter how bad it can taste and how full I may be. I pray that He will protect this little boy, guide and deliver him away from his misery. I pray that we will be more sensitive towards the world around us and not b

blinded by our own selfish nature and interests.



I hope this picture will always serve as a reminder to us that how fortunate we are and that we must never ever take things for granted.



Please don't break.. keep on forwarding to our friends On this good day. Let's make a prayer for the suffering in anywhere anyplace around the globe and send this friendly reminder to others "Think & look at this... when you complain about your food and the food we wasted daily........”

যাদের ছবিটি দেখার আগ্রহ আছে তারা এই লিঙ্কে ভিজিট করতে পারেন- Click This Link

সুদান,সোমালিয়া না হয় দূর্ভিক্ষ পীড়িত দেশ। কিন্তু আমাদের দেশের কথা চিন্তা করুন। এটাতো আর দূর্ভিক্ষ পীড়িত কোন দেশ নয়। তবে কেন এই দেশে এখনো মানুষদের ডাস্টবিন থেকে খাবার খুঁজে খেতে হয় আবার এই দেশেই খাদ্য অপচয়ের উৎসব হয়?

খাদ্য অপচয়ের অভ্যাস যে আমার একেবারেই নেই তা নয়। আমি শিক্ষা নিলাম সেই অনুষ্ঠান থেকে। তবে শিক্ষাটা একটু ব্যতিক্রম। যে অভিজাত বা শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষজন খাদ্য অপচয়ের উৎসবে মেতে থাকে সেই সমাযে যেন আমার জায়গা কখনো না হয়।

আমাদের(মুসলমানদের) ধর্ম ইসলামে অপচয় সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন মজীদে মহান আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। হাদীছ শরীফে আছে, বিনা প্রয়োজনে গাছের একটি পাতাও ছিঁড়ো না। আরও বলা হয়েছে, অযু করতে গিয়ে নদীর পানিও বিনা প্রয়োজনে ব্যবহার করা জায়িয নেই। শুধু ইসলাম কেনো, আমার বিশ্বাস, অন্য কোন ধর্মও অপচয়কে উৎসাহিত করেনি।

আসুন, খাবার অপচয়ের আগে একবার তাদের কথা চিন্তা করি যারা এখনো পেটপুরে একবেলা খেতে পারেনা। তাদের খাবার দিয়ে সাহায্য করার মত সামার্থ্য হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু অপচয় রোধ করার সামার্থ্য নিশ্চয়ই আছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.