![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত ১৯ মে গ্রামের বাড়ি গেলাম। অনেক দিন পর গেলাম। সেই ২০০৫ সালে ঢাকায় আসলাম। সেই থেকে প্রতিবারই চিন্তা করি নিয়ম করে প্রতি মাসে অন্তত একবার বাড়ি যাব। কিন্তু চিন্তা চিন্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে যায়। বাস্তবতার মুখ আর দেখতে পায় না। ইট-কাঠের শহরে থেকে মনটা ও যেন সে রকমই হয়ে গেল।
এবার ও যে শুধু মাটির টানে বাড়ি গেলাম তা কিন্তু নয়। আমার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। বেশ কয়েকদিন ছুটি। ঢাকায় ও কোন কাজ নেই। বাড়িতে মহাসেনের আঘাতে রান্নাঘরের বেহাল দশা। আব্বু একা ঘর মেরামত করার সাহস পাচ্ছিল না। আবার এক বন্ধু আসলো বিদেশ থেকে। ভাবলাম এই সুযোগে বাড়ি থেকে ঘুরে আসা যাক।
নিজের বাড়ি এখন নিজের কাছেই অচেনা লাগে। আশেপাশের বাডিতে থাকা ছোট চাচাত জ্যঠাতো ভাই বোনরা আমাকে চিনতে পারেনা, আমিও পারি না। এই এক অন্যরকম বিড়ম্বনা। অনেক সময়তো ছোট বাচ্চারা দেখলে কান্না জুড়ে দেয়, মনে হয় যেন আমি তাদের যমদূত। মাঝে মাঝে আবার নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু বলেও মনে হয় যখন দেখি আশেপাশের ১০-১২ বছরের বাচ্চারা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। অথচ তারা আমারই পাড়ার চাচাত জ্যাঠাত ভাই। যোগাযোগের অভাবে কেউই কাউকে চিনতে পারেছিলাম না। কেউ কেউ আবার বেশ আগ্রহ ও কৌতূহল নিয়ে দেখতে আসে না জানি কে এলো, তাদের কৌতূহল দেখে মনে হয় আমি বিশ্ব জয় করে এলাম, আসলে যে আমি ঘোড়ার দিম জয় করে এলাম তা তাদের কে বোঝাবে। আপনারা আবার ভাবেন না আমি তাদের সরলতা বা কৌতূহল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করছি, তাদের এই সরলতা কিংবা কতূহলকে আমি এক প্রকার উপভোগই করি।
এবারতো বিড়ম্বনা একটু বেশীই হল। বাড়ি যাওয়ার পরদিন আব্বা সকাল সকাল ঘুম থেকে ডেকে বললেন দোকানপাড়ে গিয়ে গইন্যাকে(গণি) ডেকে নিয়ে আসতে। রান্নাঘর ঠিক করতে হবে। গইন্যা আমাদের এলাকার নব্য কাঠমিস্ত্রী। আমি তাকে চিনিনা। আব্বার মেজাজ সবসময় সপ্তম আসমানে থাকে। তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করার সাহস পেলাম না যে গইন্যা কে। অগত্যা দোকানপাড় গেলাম। সেখানে অনেক পুরনো এক মুদিদোকানদার আছেন। নাম তার আবদুল্লাহ। আমি তাকে আব্দুল্লাহ ভাই বলে ডাকি। তাকে গিয়ে বললাম,
-ভাই, কেমন আছেন?
-আরে, জীবন নাকি? ঢাকা থেকে কবে আসলে? আছি কোনরকম তোমাদের দোয়ায়।
-এইতো, গতকাল আসলাম।
-হারুনের(আমার বড় ভাই) কি অবস্থা? ওর মেয়ে কেমন আছে?
-আছে, ভাল আছে। গোনি কাকা কে কি দোকানপাড়ে পাওয়া যাবে নাকি?
-কোন গোনি, কাঠমিস্ত্রী গইন্যা নাকি?
-হ্যাঁ
-ও তোমার কাকা হয় কেমনে, ও তো তোমার বাপেরে কাকা বলে ডাকে।
বুঝুন, তখন আমার কি অবস্থা!
পরপদিন মিস্ত্রী এলো বাড়িতে। ভেঙ্গে পড়া রান্নাঘর দেখলো। তারপর পেরেক, টিন, এঙ্গেল, ইত্যাদি আনতে বলল। এর আগে আমি কখনো এই ধরণের জিনিস কিনতে যাইনি। তাই হার্ডয়্যারের দোকান খুঁজে পেতেও একটু ঝামেলা হল। যাহোক, কিনতেতো পারলাম। খুশী মনে এগুলো নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। কিন্তু খুশী বেশীক্ষন স্থায়ি হলনা। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য দেওয়ায় আব্বার কাছ থেকে বলদ এবং বোকা খেতাব পেয়ে আমার খুশী ফু্টো বেলুনের মত অতিদ্রূত চুপ্সে গেল।
মা বাড়িতে একাই থাকেন। একটা মেয়ে মাকে কজে সাহায্য করে। ৭ বছর বয়সের ছোট্ট একটা। একদিন দুপুরবেলা ভাত খেতে বসলাম। মেয়েটা ও আমার সাথে বসলো। লজ্জায় জড়সড় মেয়েটি আমার চেয়ে বেশ দুরত্ব বজায় রেখে বসল। মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞাসা করলাম। মেয়েটি যেন আরো গুটিসুটিমেরে গেলো। সে আস্তে করে বলল-শারমিন।
মাকে বললাম, শারমিনকে মাছ দিতে।মা বলল যে শারমিন মাছ খায় না।শারমিনকে বললাম, “কি ব্যাপার মাছ খাওনা কেন?” “আমার গলায় কাঁটা আটকে যায়, তাই খাই না।” ওর সহজ উত্তর।
আমি বললাম “তুমিতো আস্ত একটা ভীতু। কাটার ভয়ে মাছ খাও না। এই দেখো আমি কিভাবে মাছ খাচ্ছি।” এই কথা বলতে না বলতেই আমার গলায় কাটা বিঁধল। মেয়েটাও পিক করে হেসে দিল। কাটার চেয়ে মেয়েটার হাসিই আমাকে বেশি যন্ত্রণা দিল।
মায়ের কাছ থেকে পরে শারমিনদের পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। কয়েক মাস আগে তারা আমাদের গ্রামে এসেছে কাজের খোঁজে। খুবই দরিদ্র। শারমিনের বাবা বদলা খাটে, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। শারমিনের এক বড় বোন আছে।১৫ কি ১৬ বছর বয়স। সে ও অন্যে বাড়িতে কাজ করে। রোজার ঈদের পরেই মেয়েটাকে বিয়ে দিবে তার খালাতো বাইয়ের সাথে। শারমিন পড়ালেখায় ভাল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। সু্যোগ পেলে সে ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে।
এই বয়সে মেয়েকে বিয়ে দিবে। ভাবলাম মেয়ের বাবার সাথে কথা বলা দরকার। সন্ধ্যায় গেলাম শারমিনদের বাড়িতে। মেয়ের বাবাকে বেশ করে বুঝালাম। বুঝেছে বলে মনে হলে, কিন্তু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে বলে মনে হলনা।
এক সপ্তাহ পরে ঢাকায় ফিরে আসলাম। আসার আগে শারমিনের হাতে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে আসলাম। টাকা পাওয়ার পরে ওর মুখে যে হাসি দেখলাম, সেই হাসি শুধু পঞ্চাশ টাকা মূল্যের হাসি ছিল না, সেই হাসি অমূল্য।
ঢাকায় এসেই আবারো সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার থেকে প্রতি মাসে একবার করে বাড়ি যাবই। কথা রাখতে পারলাম না, ইট-কাঠের শহরে থেকে সত্যি মনটা ইট-কাঠের মতই হয়ে গেছে।
২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
নেক্সাস বলেছেন: বিড়ম্বনা লেগেই থাকে। লিখাটা পড়ে ভাল লাগলো
৩| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২০
মসিউর রহমান জীবন বলেছেন: সত্যিই, হাজারো বিড়ম্বনা চলার পথে। আমার লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩০
আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: হুমম.....
বিড়ম্বনার শেষ নাই...... ভালা পাইলাম