![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই খুশি। "রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ" ঘরে বাইরে এখন শুধু এই গানই বাজতাছে। বৌ ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার পোলা মাইয়্যার কেনা কাটার জন্য তাগাদা দিছে মার্কেট যাওনের লাইগ্যা। আমি কইল্যাম খারাও যামুনে।
ঈদের শপিং নিয়া শুধু আমি যে ভাবনায় আছি তা কিন্তু নয়। বিখ্যাত ব্যক্তিরাও ঈদের শপিং নিয়ে ভাইব্যা গেছেন অনেক কিছু।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:-
চারিদিকে গিজগিজ মানুষের বরষা।
শপিং মলে ঘুরে বেড়াই, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
শপিং করা হল সারা,
গিন্নি কে দেই তাড়া
চলো এবার বাসা
কিনিতে কিনিতে পোশাক ফুরালো টাকা পয়সা।
মুনীর চৌধুরী:-
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়। বেঁচে থাকলে শপিং এ যায়। কারনে অকারনে শপিং এ যায়। সকালে বিকালে শপিং এ যায়।
তয় ঈদের মার্কেটিং এর আগে রাত্রিবেলা ঘুমানোর সময় বৌয়ের সাথে বেশ ইনিয়ে বিনিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করতাছি। অমি কইলাম বুঝলা জান, তুমার লগে আমার কত্ত মিল। কত্ত মিল মানে? এই যেমন – আমি তুমারে পছন্দ করছি, তুমি আমারে পছন্দ করছো। ও আচ্ছা। আর কি মিল আছে? একই দিনে তুমি আমারে বিবাহ করছো আর আমি তুমারে বিবাহ করছি। বৌ কইলো তুমি এই সব ফালতু মিলের কথা বলার জন্য আমারে জাগায়া রাখছো? কি কউ বউজান!এইগুলা ফালতু মিল! আমার কাছে এইগুলান অমূল্য মিল। আরেকখান জটিল মিল আছে আমাদের মধ্যে। বৌ কইলো এইবার যদি উল্টাপল্টা কোন মিল শুনি তাইলে তুমার খবর আছে। এরপর আর কিছু কওনের থাকে না তাই শুইয়া পরলাম। তয় চিন্তা করতাছি বৌজান কালকে কি কি কিনতে পারে, তার একটা বাজেটও মনে মনে কইর্যা ফ্যালাইছি।
যথারীতি মার্কেট যাওনের লাইগ্যা রওনা দিছি এমন সময় দেখি আমার এক ক্লোজ বন্ধু মোবাইলে মিস কল দিছে। কইলাম কিরে মিস কল দ্যাস ক্যা? সে কইলো আমি মিসকল দিতে চাই নাই। আমার এয়ারটেল নেটওয়ার্ক এ সমস্যা করতেছে। কইলাম শোন দাদাদের এয়ারটেল ইউজ করা বাদ দে। ইউনুস ভাই এর গ্রামীন ইউজ কর। তুই আমারে এয়ারটেল বাদ দিতে কইলি ক্যা? তুই আমারে পরামর্শ দেয়ার কেডা? আমি দাদাগো সব দিয়া দিমু, তোর কি? তুই এইভাবে কথা কইলি ক্যা? আমি তোর বড় না ছুড? সিনিয়র জুনিয়স বুঝস না। কইল্যাম ..... মারানির পোলা বাংলাদেশ কি তোর বাপের তুই সব দাদাগো দিয়া দিবি। এত্তকিছুর পরেও মেজাজটা ঠিক রাখোনের চেষ্টা করতাছি লগে বৌ আছে না।
এমনেতেই মেজাজটা তিরিক্কি হয়ে আছে তার উপর মার্কেটে ডুকার লগে লগে উচ্চস্বরে “ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় আমার বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া হাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়” গানটি শুনতে পাই। মনে হইলো বাজানে ওয়ালারে দুইটা ঠাটায়ে চটকোনা দেই। তয় গানের কথাগুলোতে বুঝা যায় গীতিকার ও সুরকারের অবশ্যই মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন হয়েছে। তাগো জরুরী ভিত্তিতে আইসিইউতে পাঠানো দরকার।
বৌরে নিয়া একতলা দোতলা, এ দোকান সে দোকান গুইর্যা গুইর্যা মোটামুটি ঈদের বাজার শেষ করলাম। এবার রমজান শুরু হওয়ার আগেই দ্রব্যমূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি আসলে অসাধু সিন্ডিকেট ও সরকারের বোঝাপড়ার ফলাফল ছাড়া কিছুই নয়। হেইড্যা আমজনতা খুব ভালোভাবেই বুইঝ্যা গেছে। কিন্তু কিছু করনের নাই, কে গুম খুন হইতে যাইবো? আর একটি বিষয় দেখলাম একই জিনিষের স্থান কাল ও মার্কেট ভেদে বিভিন্ন দাম। শুধু বুইঝ্যা শুইন্যা কিনলেই হয়।
তয় এবারের এক নতুন জ্বালা ড্রেসের নাম কিরণ মালা! উঠতি মেয়ে, নতুন বধু সবাই কিনছে কিরণ মালা। তাই কয়োন লাগতেছে "আজকে পাখির অবহেলা, থ্রিপিস মানেই কিরণ মালা" হাই রে হাইরে কিরণ মালা বাড়াইল্যা শুধু আমাগো জ্বালা। আর এ সবই হইতাছে স্টার জলসা,জি বাংলা,স্টার প্লাস এইসব ভারতীয় চ্যানেলের কারনে। নাটকগুলোতে দেখা যায় লুতুপুতু প্রেম কাহিনী আর এক এক জনের ১৪ টা বিয়ের কাহিনী। আর বাংলাদেশের নারীরা হলো এইসব চ্যানেলের লুতুপুতু নাটকের বিশেষ ভক্ত। এইসব নাটক দেইখ্যা আবার আবেগে আপ্রুত হোন তারা। শুধু নারীরা নয় এক শ্রেনীর পুরুষরাও এইসব নাটকের ভক্ত। এইসব নাটকের উল্লেখযোগ্য কিছু শিক্ষনীয় দিক--- ১)কুটনিগিরি ২)বহু বিবাহের প্রচলন ৩)স্বামীর সংসার নষ্টের পদ্ধতি ৪)লুতুপুতু প্রেম কাহিনী ৫)অহরহ ডিভোর্স প্রথা ৬) পরকীয়া ভালো না, ভালো তো। এত কিছু শিখলে আর কিছু লাগে নাকি!!! তয় এই চ্যালেনগুলোতে অহনো সমকামীদের নিয়ে কুন নাটক বানায় নাই। আর কয়েকদিন অপেক্ষা করণ লাগবো। কিছুদিন আগে দেশে পাখির ঝড় উঠছিল। ২-১ টা মৃত্যুর পরে এই ঝড় থামইয়্যা গেছে আর অহন শুরু হইছে কিরনমালা।
যাউগ্যা, এখন শুধুমাত্র দুটা আন্ডু কেনা বাকী আছে। অফিস থেকে আয়োনের সময় গুলিস্তান মোড়ে দেইখ্যা আইছি হকাররা জোরে জোরে চিল্যাইতেছে "দেইখ্যা লন দশ টাকা, বাইছ্যা লন দশ টাকা"। আজকে কিন্ন্যা ফেলবো ইনশাল্লাহ!
মার্কেটে গুরতে গুরতে গলা শুকাইয়্যা গ্যাছে। বৌরে কইলাম চলো উপরে ফুড কোর্টে যাই কিছু খাওয়ানের লাইগ্যা। খাবারের অর্ডার দিয়ে একটা টেবিলে বসে আছি। পাশের টেবিলে কিছু ইয়াং পোলাপান বসে আছে। এমন সময় একজন মেয়ে ঐ টেবিলের কাছে আসলো। এক ছেলে বন্ধু পরিচয় করে দিলো এর নাম বিলকিস। পাশে থাকা একজন বলে উঠলো কাল থেকে বিল বাদ, শুধু কিস হলেই চলবো। কি কইমু খুব হাসি পাইলো তয় মনে হইলো পোলাপান গুলা খুব অল্পো বয়সেই এডাল্ট হইছে।
যাউগ্যা বহুত প্যাচাল পারছি। ক্ষ্যামা কইর্যা দিয়েন। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার মাঝে, একটি মানুষও যেন বঞ্চিত না হয় আনন্দ থাইক্যা। শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাগো যেন নতুন আশার আলো দেখায়, পবিত্র রমজান মাসের সংযম শিক্ষা যেন ফলপ্রসূ হয় সারা বছর জুড়ে। এই প্রত্যাশায় সবাইকে ঈদ-উল-ফিতরের অগ্রীম আন্তরিক শুভেছা। খোদা হাফেজ।।।।
©somewhere in net ltd.