নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রগতিশীলতায় বিশ্বাসী।কূপমণ্ডুকতা ঘৃণা করি।ভালোবাসি সাহিত্য।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল

বলার মত কিছুই নই আমি।একজন মহামূর্খ।

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একমাত্র বিবি

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪৩

দরদর করে ঘামছিলো নাসিমা। তার চোখদুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে রান্নাঘরের এই গরম পরিবেশটা কে সহ্য কর‍তে না পেরে। কপালের লবনাক্ত ঘাম মাঝে মধ্যে চোখের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তার চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছিলো। আর তাই কিছুক্ষণ পরপর তার ওড়নার আচল দিয়ে কপালটা মুছে নিচ্ছিলো সে। একবার মনে হয় চোখে পানি দিয়ে আসবে। বড্ড জ্বলছে চোখদুটো। কিন্তু তার হাতে সময় নেই। নইলে ডিউটি তে যেতে দেরি হয়ে যাবে। তাই চোখের জ্বালাপোড়া সহ্য করে সুষম গতিতে তরকারি নেড়ে যাচ্ছিলো।

এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। আগে যখন সে ডিউটি করতে যেত না, তখনও তাকে এভাবেই তরিঘড়ি করে রান্না সেরে রাখতে হতো। তার স্বামী আবুল হাশেম খেয়েই গ্যারেজে চলে যেত। দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে বাসায় আসতো খেতে। তার আসার আগেই রান্না সেরে রাখতে হতো তাকে। প্রবল খাটুনি শেষে রাক্ষুসে ক্ষুধা নিয়ে বাসায় এসে খাবার সামনে না পেলে মেজাজ গরম হয়ে যেত হাশেমের। তার এই গরম মেজাজকে বড্ড ভয় পেত নাসিমা। যদিও লোকটা লোকটা খারাপ ছিলো না। তবে হুটহাট রেগে যেত। লোকটা তাকে ভালোওবাসতো অনেক। কিন্তু তার এই রাগারাগি আর খারাপ ব্যবহারে সে এতটাই তটস্থ থাকতো যে আবুল হাশেমের ভালোবাসার ব্যাপারটা সে ভুলতেই বসেছিলো। তবুও তার মনে হতো আবুল হাশেম মানুষটা ভালো। সারাজীবন ধরে সে শুনে এসেছে রাগী মানুষ, ভালো মানুষ। যারা রাগে না তারা মিচকা শয়তান। কিন্তু আবুল হাশেম কে দেখে তার এই রাগী মানুষ ভালো মানুষ কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হতো। হুটহাট রেগে যায়, কথায় কথায় রাগ দেখিয়ে খারাপ ব্যবহার করে, এটা কিভাবে ভালো মানুষের লক্ষণ হয় সে ভেবে পেতো না। তার বাপও এমন ছিলো। রাগ দেখিয়ে প্রায়ই মারতো তাকে। তবে আবুল হাশেম মন্দের ভালো ছিলো। তার বাপের মতো গায়ে হাত তো তুলতো না। তবে মুখে এমন সব কথা বলতো, তা শুনে নাসিমার মরে যেতে ইচ্ছা করতো। বিয়ের প্রথম প্রথম আবুল হাশেমের ব্যবহার ভালোই ছিলো। খুব শান্তিতে ছিলো নাসিমা। কথায় কথায় খুঁত ধরে রেগে যেত না। শুধু খাবার দিতে দেরি হলে কিংবা বড়ো কোনো ভুল করলে রেগে যেত। তবে তার স্থায়ীত্বও ছিলো অল্প। পরবর্তী সময়ের মতো এতোটা ভয়ংকর রাগ তার ছিলো না। আবুল হাশেমের এই রাগের ব্যাপারটা সে বিয়ের আগে জানতো না। নাসিমার বাবার সাথেই রিকশা চালাতো আবুল হাশেম। গ্যারেজে নতুন ছিলো সে। সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়ায় সবার নজর কাড়তো খুব সহজেই। তার সুঠাম দেহ ও দাম্ভিক চালচলন নাসিমার বাপের চোখ এড়ায় না। কথায় কথায় প্রতিদিনের কুশল বিনিময়ে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে একদিন আবুল হাশেমকে নিমন্ত্রণ করে বাড়ি নিয়ে আসে নাসিমার বাপ। এই নিমন্ত্রণে শুধুমাত্র বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই নিয়ামক ছিলো না, নাসিমার বাপের অন্য উদ্দেশ্যও ছিলো এখানে।

নাসিমার বাপের নাসিমা ছাড়াও আরো তিন মেয়ে ছিলো। এদের মধ্যে নাসিমা মেজ। রিকশা চালিয়ে চার মেয়ে সহ নিজেদের খরচ মেটাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো নাসিমার বাপের। খাওয়ার কষ্ট, পরার কষ্ট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলো তাদের। নাসিমার বাপের কোনো ছেলে ছিলো না। তাই সে মেয়েদের নিয়ে সবসময় চিন্তায় থাকতো। তাদের একটা গতি করে যেতে না পারলে সে কখনোই দুশ্চিন্তা থেকে রক্ষা পাবে না। চার মেয়েকে সে প্রাইমারি পর্যন্ত পড়িয়েছে। এদের মধ্যে সেজটা শুধু ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়েছে। বাকিগুলো এতটাও পড়তে পারে নি। মাথা ভালো ছিলো না। আত তাই আবুল হাশেমকে দেখে নাসিমার বাপের মনে আশার আলো জ্বলে ওঠে। দেখতে ভালো, কামায়ও ভালো। তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জেনেছে তার তিনকূলে কেউ নেই। এর সাথে তার বড় মেয়ের বিয়ে হলে তারা সংসারে থাকবে মাত্র দুজন। আবুল হাশেম যা কামাই করে তাতে তারা দুজন সাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে। বড় মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেলে বাকিগুলোর বিয়ে হতে কোনো সমস্যা হবে না। এই ভেবে আবুল হাশেমকে তাদের বাসায় নিয়ে আসে নাসিমার বাপ। উদ্দেশ্য, বড় মেয়েকে বিয়ে দেয়া। আবুল হাশেম বাসায় আসার পরই তাকে শরবত খেতে দেয় নাসিমার বড় বোন। নিজের সাধ্যমতো তাকে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করেছিলো নাসিমার বাপ। আপ্যায়নের দায়িত্বে ছিলো নাসিমার বড় বোন। তার সহকারি হিসেবে ছিলো নাসিমা। বোনকে এটা-ওটা এগিয়ে দেয়াই ছিলো তার কাজ। সেদিন সামনে উপবিষ্ট বড় বোনকে পাশ কাটিয়ে আবুল হাশেমের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিলো নাসিমার দিকে। একটু পরপরই সে নাসিমাকে আড় চোখে দেখছিলো। এই ব্যাপারটি বড় বোনের চোখ এড়িয়ে যায় না। হাশেম চলে যাওয়ার পরই তাই নাসিমার ওপর খড়্গহস্ত হয় সে। তাকে মারধোর করে। বাপের কাছে নালিশ করে। "আমার জামাই ভাগাইতে চায় অয়।"

আবুল হাশেমের ওপর রাগ হয়েছিলো তার। তার জন্যই বড়বোনের হাতে মার খেলো। কী দরকার ছিলো তার দিকে ওভাবে তাকানোর। যদিও আবুল হাশেমকে যে তার ভালো লাগে নি তাও নয়। তবে বড় বোনের জন্য যেহেতু এনেছিলো তাই এসব ব্যাপার সে মাথায় আনে নি। কিন্তু এই অভিযোগটাও মাথায় নিয়ে মার খেতেই হলো শেষ পর্যন্ত।

নাসিমার বাপের চিন্তায় পরিবর্তন এসেছিলো এই ব্যাপারটার পর। সে ভেবেছিলো হাশেমকে বাসায় নিয়ে এসে বড় মেয়েকে দেখিয়ে তারপর বড় মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবে। কিন্তু নাসিমার দিকে হাশেমের নিবদ্ধ দৃষ্টি তার চোখ এড়ায় নি। তাই সে একটু দ্বিধায় পড়ে যায়। যদিও এটা তার জন্য ভালোই হয়েছে। বড়োটা না হোক, মেজটার তো বিয়ে দেয়া যাবে। অন্তত একটা মেয়ের গতি হচ্ছে তার। কিন্তু কোন মেয়ের গতি হবে এটা আবুল হাশেমের ওপরই ছেড়ে দিয়েছিলো সে। আর তাই আগ বাড়িয়ে বিয়ের প্রসঙ্গ তোলে নি। অপেক্ষা করে আবুল হাশেমের। কয়েকদিন পরই হাশেম আবার যায় নাসিমাদের বাসায়। এবার নাসিমা আর তার সামনে আসে না। নাসিমাদের একটাই মাত্র ঘর। মোটামুটি বড়। সেই ঘরটাকেই আড়া-আড়ি ভাবে বাশের বেড়া দিয়ে আলাদা করা হয়েছিলো। ভেতরের ঘরে নাসিমাসহ বাকি বোনেরা থাকতো। সেই ঘরে প্রবেশের জায়গায় একটা পর্দা দেয়া ছিলো। সেই পর্দার আড়াল থেকে নাসিমা দেখতে পায় হাশেম একটু পরপর পর্দার দিকে তাকাচ্ছে। কাকে যেন খুঁজছে। হাশেমের এই দৃষ্টির মানে সে বুঝতে পেরেছিলো। কিন্তু তারপরও সামনে আসে নি।

নাসিমাদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার পরদিনই নাসিমার বাপের কাছে নাসিমাকে বিয়ে করার ইচ্ছার কথা বলেছিলো হাশেম। বড় মেয়েকে বাদ দিয়ে মেজ মেয়েকে বিয়ে দিতে একটু দ্বিধায় পড়লেও নাসিমার বাপ রাজি হয়ে যায়। এতে তার মেজ মেয়েটার গতি হলেও বাকি মেয়েদের সাথে বড় বোনের জামাই ছিনতাইকারী হবার কারণে মেজ মেয়ের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।

বিয়ের পর নাসিমার দিন সুখেই কাটছিলো। একটু -আধটু রাগারাগি তো ছিলোই। নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিত সে।তার মনে হতো বহু ভাগ্য করে এমন স্বামী পেয়েছিলো সে। কিন্তু তার স্বামীর ভোল এভাবে পাল্টে যাবে এটা সে কখনো ভাবে নি। যদিও ভোল পাল্টানোর পেছনে একটা ঘটনা দায়ী, সেটা সে পরবর্তী সময়ে বেশ ভালোভাবে টের পেয়েছিলো।

একদিন সকাল বেলা আবুল হাশেম বের হয়ে যাওয়ার পর নাসিমা যখন দুপুরের রান্নার যোগাড়যন্ত্র করছিলো তখনই নাসিমার ঘরের সামনে তারই বয়সী এক মেয়ে এসে জিজ্ঞাসা করেছিলো,

"ঘরে কেউ আছেন নি?"

"ক্যাডা??" বলে ঘরে থেকে বের হয়ে আসে নাসিমা।

"আমির হোসেনের ঠিকানা এইডা?"

"অ্যানে আমির হোসেন নামে কেউ থাহে না।আপনে ক্যাডা?"

"আমি হ্যার বউ।" আগন্তুক উত্তর দেয়।

একথা শুনে শহরের বাটপারদের কথা মাথায় আসে নাসিমার। হয়তো ধান্দাবাজি করতে এসেছে। তাই একটু ঝাঁজের সাথে নাসিমা বলে,

"অ্যানে আমির হোসেন নাই।বাইত যান।"

কিন্তু আগন্তুক যায় না। ওড়নার পেছনে লুকানো একটা ব্যাগ থেকে একটা ছোট চাইনিজ মোবাইল ফোন বের করে নাসিমাকে আমির হোসেনের ছবি দেখায় সে। ছবিটা দেখে এই মেয়ের ধান্দাবাজির ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহই থাকে না নাসিমার। মেয়ের ফোনে আবুল হাশেমের ছবি দেখে নাসিমার ইচ্ছা করছিলো এই ধান্দাবাজ মহিলাকে ঝাঁটাপেটা করে বের করে দেয়। কিন্তু তার মনে আবার কী দুরভিসন্ধি আছে কে জানে! আর তাই নিজেকে সংবরণ করে সে।

"আপনের জামাই এনে নাই।" বলে ঘরে ঢুকে যায় সে। একটু ইতস্তত করে চোখ মুছতে মুছতে আগন্তুক চলে গিয়েছিলো সেদিন। আপদ গেছে বলে স্বস্তি পায় নাসিমা। হয়তো কোনো ফাঁদে ফেলতে এসেছিলো। দুপুরে আবুল হাশেম খেতে এলে তাকে আগন্তুকের কথা বলে নাসিমা। কথা শুনে হাশেমের চেহারায় কোনো ভাবান্তর ঘটে নি। কিন্তু হাশেম ভয় পেয়েছিলো। তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলো সবকিছু। হাশেমের আগ্রহ দেখে নাসিমা আসল ঘটনার সাথে একটু রংচং মাখিয়ে উপস্থাপন করলো নিজের ভূমিকা বাড়িয়ে দিয়ে।

"আপনে জানেন, কতবড় ধান্দাবাজ মাতারী? ইট্টু পরপর ঘরের ভিত্রে চুপি দেয়। আমি তো দরজাটা চাপাইয়া দইরা তারপর খাড়াইলাম। আপনের ছবি দ্যাহাইয়া কয়, হ্যায় আমার জামাই। আমিও কইছি, ধান্দাবাজি করতে আইছেন? এইডা আপনের স্বামী না। এইডা আমার জামাই। হ্যার নাম আবুল হাশেম। আমি হ্যার একমাত্র বিবি। কইয়াই ঝাড়ু আনতে ঘরে গ্যালাম। আইয়া দেহি মাতারী নাই।"

এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলেছিলো নাসিমা। এমন সাহসী বউয়ের কাজকর্মে হাশেম গর্ববোধ করবে ভেবেছিলো নাসিমা। হাশেম হ্যাঁ-না কিছুই বলে নি সেদিন। কিন্তু তার পরের দিন থেকেই হাশেমের স্বভাবে পরিবর্তন দেখতে পায় নাসিমা। হঠাৎ করে রেগে যায়, উল্টাপাল্টা কথা বলে। হয়তো তার মিথ্যা ধরে ফেলেছে। তবে আস্তে আস্তে তার এসব খারাপ ব্যবহারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয় সে। একদিন আবুল হাশেম নাসিমাকে বলে বসে, সে আর এখানে থাকবে না। নাসিমাকে নিয়ে চলে যাবে অন্য কোথাও। নাসিমা অবাক হয়েছিলো। এই সুখের সংসার পেছনে ফেলে তার যেতে ইচ্ছে করছিলো না। কিন্তু ভয়ে হাশেমকে বলতে পারেনি সেকথা। এমনকি হাশেমকে জিজ্ঞাসাও করে নি কোথায় যাবে। হাশেম তাকে বলেছিলো,

" আমার তো তিন কূলে কেউ নাই। তরও তো বাপ-বইনের লগে যোগাযোগ নাই। কী করবি থাইক্যা? আয় যাইগা!!"

কথাগুলো হাশেম ভুল বলে নি। তাছাড়া তার বড় বোনকে বাদ দিয়ে হাশেম নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছে তাকে। তাই তার কথা ফেলার সাধ্য ছিলো না নাসিমার। একদিন সন্ধ্যায় নাসিমাকে নিয়ে সদরঘাট চলে গিয়েছিলো হাশেম। ঘাটে বাঁধা বড়-বড় লঞ্চ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো নাসিমা। সে যন্ত্রের মতো হাশেমের পেছন-পেছন হেঁটে গিয়েছিলো। হাশেম শুধু হেঁটেই যাচ্ছিলো পন্টুন বরাবর। হঠাৎ করেই একটি লঞ্চের সামনে গিয়ে থমকে যায় হাশেম। লঞ্চটি ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। একটু পরেই নিজের নাকে প্রচণ্ড ব্যাথা অনুভব করে নাসিমা। সে বুঝতে পারে নাক দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। ঘটনাটা সে বিশ্বাস করতে পারে নি। লঞ্চের কাছিটি যখন ঘাট থেকে তুলে নেয়া হলো তখনই নাসিমার নাক বরাবর একটি প্রবল ঘুষি মেরে লাফ দিয়ে সেই লঞ্চে উঠে যাত্রীদের ভিড়ে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলো হাশেম। পন্টুনের লোকেরা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চটি নদীর মাঝখানে চলে গিয়েছিলো। তাই আর কারো কিছুই করার ছিলো না। ওড়না দিয়ে রক্তাক্ত নাক চেপে ধরে বারবার হাশেমের ফোনে কল করে যাচ্ছিলো নাসিমা। কিন্তু হাশেমের ফোন বন্ধ ছিলো। সেই ফোন আর কখনো খোলা পাওয়া যায় নি। পন্টুনের লোকেরা তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করছিলো তার স্বামীর নাম ঠিকানা। কিন্তু সে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলো। সে কারো কথার কোনো উত্তর দিতে পারছিলো না। তাছাড়া তার কাছে এসবের উত্তর দেয়াও অর্থহীন বলে মনে হয়েছিলো। সে বুঝতে পেরেছিলো আমির হোসেনের মতো আবুল হাশেমও তার নাম নয়। হয়তো অন্য কিছু।

এই ঘটনার পর অবধারিতভাবেই তাকে বাসাটা ছেড়ে দিতে হয়েছিলো। তার কোনো উপার্জন ছিলো না। আর কোনো উপায় না পেয়ে নাসিমা তার বাপের কাছে চলে যায়। বাপের কাছে একটা উপদ্রব হিসেবেই পরিগণিত হয়েছিলো সে। আর ভাতার ভাগানী হিসেবে তার বোনেরাও তাকে ভালো চোখে দেখতো না। যার ফলে বাপের বাড়িতে তার জীবনটা নরকসম হয়ে উঠেছিলো। কোনো উপায় না থাকাতে সেগুলো সে সহ্য করে নিয়েছিলো। তবে কিছুদিন পরেই ভাগ্য তার সহায় হয়েছিলো। এক প্রতিবেশির সাহায্যে সে একটা পোশাক কারখানা শ্রমিকের চাকরি পেয়ে যায়। এতে তার জীবনে আবার শান্তি ফিরে আসে। সে আলাদা একটা ঘর ভাড়া করে থাকে। প্রতিদিন সকালে উঠে সে রান্না করে। রান্না করে সকালে খেয়ে দুপুরের খাবার সাথে করে নিয়ে যায়। আর তাই রান্নার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তার হাতে সময় বেশি থাকে না। আগেও যেমন তাকে তাড়াতাড়ি রান্না করতে হতো, এখনো তাই করতে হয়।

আজও সে প্রতিদিনের মতোই রান্না করছিলো। রান্না শেষ করে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে সে ডিউটির উদ্দেশ্যে বের হয়। একটু সামনে যেতেই তার পথরোধ করে দাঁড়ায় তারই বয়সী এক মেয়ে।

"ইট্টু খাড়ান আফা! মালেক মিয়া কই আছে জানেন কিছু? হ্যারে খুঁজতে গিয়া আপনের ঠিকানা পাইলাম।"

"মালেক নামে কাওরে চিনি না। ছবি আছে নি?" নাসিমা জিজ্ঞাসা করে তাকে।

আগন্তুক তার পার্স থেকে একটা ছবি বের করে দেখায় নাসিমাকে। আবুল হাশেমের ছবি দেখে মেজাজটা বিগড়ে যায় তার।

"এইডা হ্যার নাম না। এই ব্যাডারে আমি চিনি। হ্যার এহনকার বউয়ের কাছে যান। পাইয়া যাইবেন।"

"আপনে কী কন আফা!! আমি হ্যার একমাত্র বিবি!!"

"হেইডা তো আমিও আছিলাম।"

বলেই হনহন করে তার গন্তব্যের দিকে হাঁটতে থাকে নাসিমা।

সমাপ্ত

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২০

শেরজা তপন বলেছেন: ব্লগ থেকে আপনি একরকম নির্বাসনে গিয়েছেন
সবাই ভিন্ন ভিন্ন ক্যাচাল নিয়ে আছে- মন্তব্য কি ছোট না কি বড় হবে এই নিয়ে সামুর মাঠ গরম।

ফের স্বমহিমায় ফিরে আসুন- নিয়মিত হউন ব্লগে। কমেন্ট না পেয়ে হতাশ হবেন না।
দারুন লিখেছেন।
একটু সময় করে বাকি কমেন্ট করব

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৪

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
মন্তব্য নিয়ে চিন্তা করছি না। ব্লগের ক্যাচালগুলো দেখেছি। স্যার ক্যাচাল, তালেবান ক্যাচাল, কমেন্ট ক্যাচাল। :)
আপনার বিস্তারিত মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৪

ইসিয়াক বলেছেন: আমিও পরে আসছি। ব্যস্ততা সেরে পড়বো।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৩

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ইসিয়াক ভাই। সময় করে পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এটা আমার জন্য অনেক কিছু।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৩৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আপনার নতুন লেখা পোস্ট খুজতে এসে দুটি পোস্ট পেলাম।

আপনিও কম আসছেন ব্লগে। গল্পটা দারুন ++++++

কেমন আছেন আপনি ?

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৪৬

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই।
আসলে অলসতা পেয়ে বসেছিলো।আর নতুন কোনো প্লটও সহজে আসছিলো না। সত্যি কথা বলতে মাথা খালি হয়ে গিয়েছিলো একেবারে। অন্যের পোস্ট পড়েও কী মন্তব্য করব সেটাও ভেবে পাচ্ছিলাম না।
আমি ভালো আছি। সুস্থ আছি।
আপনি কেমন আছেন ভাই?

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

ইসিয়াক বলেছেন: গল্পটা ভালো লাগলো।বাস্তবভিত্তিক গল্প । শহরের পাশাপাশি গ্রাম্য সমাজে নাম পরিচয় লুকিয়ে বিয়ে করার প্রবনতা আগে খুব বেশি দেখা যেত। যদিও এখন নানা কারণে এই ধরনের অনাচার অনেকটা কমে এসেছে তবে একেবারে নির্মূল হয়নি।এক্ষেত্রে সবার আগে দরকার সঠিক শিক্ষা আর সচেতনতা। সরকার আর এন জি ও গুলোকে আরও তৎপর হতে হবে।
শুভকামনা রইল প্রিয় তমাল ভাই।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:৫১

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: বিস্তারিত চমৎকার মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা জানাই প্রিয় ইসিয়াক ভাই। এখানে আসলে একটা প্রতারক শ্রেণি আর একটা দরিদ্র শ্রেণির কথা বলা হয়েছে। দরিদ্র লোকগুলো একটু বেঁচে থাকার আশায় আর ভালো খাওয়া-পরার আশায় এসব প্রতারকের কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় কোনো খোঁজ-খবর ছাড়াই। প্রতারকগুলোও এদের দরিদ্রতার সুযোগ নেয়। এখনকার দিনে এসব প্রতারণা আরো আপগ্রেডেড হয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট, বিসিএস ক্যাডার পরিচয়ে একাধিক বিয়ে করে এরপর ফুরুৎ করে উড়ে যায়।

৫| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২২

ভুয়া মফিজ বলেছেন: গল্পের থীম চমৎকার। গল্পও দারুন ভাবে ফুটিয়েছেন। কিছু জায়গায় খানিকটা প্রতিবেদনের মতো মনে হলেও শেষতক ভালোই সামলিয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লেগেছে শেষটা।

আশা করি, ভবিষ্যতে আরো দারুন দারুন গল্প পাওয়া যাবে আপনার কাছ থেকে। :)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৬

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার চমৎকার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করবো প্রতিবেদনের মতো একঘেয়ে অংশগুলোকে ঘষামাজা করে একটা নতুন কাঠামো দাঁড় করানোর। শুভেচ্ছা নেবেন।

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:



গল্প পড়ার সময় বারংবার গল্পটিকে সত্য ঘটনা বলে মনে হয়েছে। গল্প ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২৬

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ঠাকুর মাহমুদ ভাই। শুভেচ্ছা নেবেন।

৭| ০১ লা অক্টোবর, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩৫

মিরোরডডল বলেছেন:



এ গল্পতো আমাদের সমাজের মানুষের জীবন থেকেই নেয়া ।
এই বদ লোকগুলোকে কি করা উচিৎ !
কি করলে এদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া যায় তমাল ?
শুলে চড়ালেও এনাফ না । X((


০১ লা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১২

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। এখানে আসলে সবার আগে দায়টা বর্তায় মেয়ের বাবার ওপরে। মেয়ে বিয়ে দিয়ে বোঝা দূর করতে চায়। অথচ যদি বিয়ে দেয়ার আগে খোঁজ নিতো, তাহলে মেয়েগুলোকে এয়াব দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

আর আবুল হাশেমের মতো লোকগুলোকে যদি শুলে চড়িয়ে মেরে ফেলাই হয় তাহলে হাশেম শাস্তি পাবে ঠিকই। কিন্তু মেয়েগুলোর দুর্ভোগ শেষ হবে না। সবচেয়ে ভালো হয় সারাজীবনের মতো বউগুলোর ভরণপোষণ দিতে বাধ্য করা। সে বউগুলোকে ভরণপোষণ দেবে ঠিকই, কিন্তু কারো সাথে সংসার করতে পারবে না, কারো কাছ থেকে কোনো কিছু ভোগ করতে পারবে না। এটা নিশ্চিত করা গেলে সবচেয়ে ভালো হতো।

শুভেচ্ছা রইলো আপু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.