নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আয়নার সামনে বারবার দাঁড়াচ্ছি।নিজের চেহারার অদ্যপ্রান্তে খুঁজে ফিরছি একটা দাগ।একটা গভীর ক্ষত।হঠাৎ করেই চেহারাটা কেমন যেন মলিন ছদ্মবেশ ধারণ করেছে।এর সারমর্ম এবং ব্যাখ্যাটা আমার খুব দরকার।কোথায় যেন একটা হতাশা আর বিষন্নতার ভাব।আমি ভাঙ্গছি, ভেতর থেকে আস্তে আস্তে ভাঙ্গছি।একটা সময় বিদায় দিবো এই পৃথিবীকে।সবকিছু বড্ড এলেমেলো হয়ে গেছে।চাইলেও আর কোনটায় ঠিক করবার শক্তি-সামর্থ্য নেই।ঠিক হয়ে যাবে . . . ঠিক হয়ে যাবে . . . এমন কথা লোকের মুখে অনেকবার শুনেছি কিন্তু কিছুই তো ঠিক হচ্ছেনা।কল্পনায় ভরা জমাট বাঁধা ধূলোবালি পড়া বিষন্নতার বস্তার স্তুপের মত কষ্টগুলো ভেতরে শুধু জমা হয়নি বরং আটকে গেছে চিরস্মৃতি হয়ে।পঁচিশ বছর বয়েস।অনেক বয়েস হয়েছে আমার।বাঁচার জন্য আর নতুন কোন দিন দরকার নেই।এখন একটা দিন যেন একেকটা বিষের বিষক্রিয়ার প্রতিফলন মাত্র।না সহ্য করতে পারবো, না কাউকে ব্যাখ্যা করতে পারবো।শুধু ভাবছি বাকি দিনগুলো এভাবেই শেষ হয়ে যাক।আমি হয়তো লোকেদের কথায় একদিন তাল মিলিয়ে বলতে পারবো ‘জানেন তো! সব ঠিক হয়ে গেছে’।–কথাগুলো আনমনে ভাবছিলো আহনাফ আবিদ সাগর।মুখের কোণায় আজ আর তার কোন কষ্ট নেই।কোন দুঃখ নেই। যেন এই মুখের মধ্যে কোন ধরণের কষ্টের ছাপ কেউ আর না ফেলতে পারে তাই আজ নিজেই নিজের শেষকৃত্য হিসেবে দাফন-কাফন এর সময় গুনছে।ক্লোনাজেপাম তার কাজ শুরু করে দিয়েছে।মানুষ কথা রাখুক বা না রাখুক কিন্তু বন্ধু হিসেবে ক্লোনাজেপাম খারাপ না।প্রায় পঞ্চাশটা ট্য্যাবলেট গলাধঃকরণ করতে না করতেই সব কষ্ট, হতাশা আর বিষন্নতাকে হটিয়ে দেয়া শুরু করে দিয়েছে আমার এই বন্ধু।এখন বাকি একটা খুন করা।আশা করছি ততক্ষণ এই বন্ধুটি সাগরের সাথেই থাকবে।হুইস্কিতে কয়েক চুমুক দিতেই মনে হচ্ছে ‘আমি পারবো’।বোতলটা একসময় ছুড়ে ফেললো পাশের লেকে।সময় এখন রাত বারোটা, স্ট্রীট লাইটের আলোটা বড্ড বাঁধা দিচ্ছে সামনের রাস্তা এগুতে।গরমের এই সময় কেউ রেইনকোর্ট পড়ুক সেটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক।লোকে সন্দেহ করতে পারে।অবশ্য সাগরের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।সামনেই একটা বিশাল বড় পাঁচতলা বিল্ডিং চোখে পড়লো।হাতড়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে একটা চিরকুট যেখানে এই বাড়িটার ঠিকানাটা লেখা আছে।দুটো মেলাতেই বুঝে ফেললো এটাই সেই বাড়ি।হন্ হন্ করে এগিয়ে গেল বাড়িটার গেটের দিকে।কলিংবেল টিপতেই গেটের দারোয়ান এসে হাজির।‘এত রাতে? আপনি কে?’-একটু ভয়ে ভয়ে বললো গেটের দারোয়ান।এরপর একটা ছুরি গিয়ে বিঁধলো তার দেহের বাম প্রান্তে।চিৎকার চেঁচামেচি করার আগেই ওপাশ থেকে গেট টপকে এপাশে লাফ দিয়ে একটানে কেটে ফেললো তার গলাটা।বন্ধ হয়ে গেল শ্বাসনালীর শ্বাস নেওয়া এবং আওয়াজ।ধড়াম্ করে পরে গেল মেঝেতে।
রুম নং ৪৪৭।এখানেই রয়েছে সাগরের শেষ শিকার।কয়েকবার কলিংবেল চেপে কোন লাভ হলো না।এরপর দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দিতে শুরু করলো।ঘুম ঘুম চোখে এক মেয়ে এসে খুলে দিলো দরজাটা।চোখ মেলতেই অবাক হয়ে গেল।‘তুমি? এতরাতে এখানে কি করছো?’-বিস্ময়ে শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলোনা মেয়েটা।সাগর কিচ্ছু বললোনা।মাথার দুই দিকে দু-হাত দিয়ে আলতো করে ধরলো মেয়েটাকে।ঠিক যেন মনে হচ্ছে সাগর এই মেয়েটাকে একটা চুমু খাবে।ভয়ে ভয়ে মেয়েটা নিজেকে তার দিকে এগিয়ে দিলো।কিন্তু যা ঘটলো তা অপ্রত্যাশিত।হালকা একটা মোচড় দিলো সাগর, একটা কট্ শব্দে ঘুরে গেল মেয়েটার মাথা।ঠিক এখন যেন মনে হচ্ছে, দেহের উল্টোপৃষ্ঠে রয়েছে এই মেয়েটার মাথা আর দেহটা নির্বিকার।কোন স্পন্দন নেই।এবার আস্তে করে প্রেমিকার মত আগলে ধরে নিয়ে শুয়ে দিলো মেঝেতে।এদিকে রুপম এখনো ঘুমাচ্ছে।ব্যাগ থেকে আরেকটা হুইস্কির বোতল বের করলো সাগর।এরপর সে রুপমের বেডের পাশে আস্তে করে বসলো।সুইচ অন করতেই জ্বলে উঠলো রুমের ইলেক্ট্রিক বাতিটা।‘ধূর! তুমি এত রাতে কেন লাইট অন করলে? সুস্মিতা প্লিজ অফ করে দাও’-বিরুক্তিভরে বলে উঠলো রুপম।‘অফ তো করতেই চাই, তুই একবার উঠ।তোর জন্য আজ হুইস্কি এনেছি।তোর গ্লাসে কোন জল দেয়া হয়নি।একদম নেট।‘- বলে উঠলো সাগর।রুপম সাগরের কন্ঠ শুনতেই আঁতকে উঠলো।ধড়মড় করে উঠে পড়লো বিছানা থেকে।‘সাগর তুই? এতরাতে? আর সুস্মিতা? ওহ মাই গড! সুস্মিতা কে তুই . . .’-ক্রোধে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো রুপম।‘তুই কি মনে করিস বল তো? নিজেকে ক্রাইম থ্রিলার সিনেমার হিরো ভাবিস? এটা সিনেমা নয় বুঝছিস।পাঁচ ফিট সাত ইঞ্চির এই ছোট্ট দেহ নিয়ে আমাকে মারতে এসেছিস? হা হা হা . . . এবার হাড়ে-হাড়ে টের পাবি কত ধানে কত চাল।‘-বলল রুপম।আরে ধ্যাত! আমাদের মাঝখানে ঐ মেয়েটায় তো সব নষ্টের মূল।আমি শুধু ওকে আমাদের মাঝখান থেকে সরিয়ে ফেলতে চেয়েছি।তাছাড়া তোর আর আমার এত দিনের বন্ধুত্ব, তুই বল আমি কি সেসব করতে পারি।চল চল . . . হুইস্কি তে চুমুক দে।তারপর লাশটা সরানোর ব্যবস্থা করবো’-মৃদ মৃদ হাসছে সাগর।রুপমের বিছানার পাশেই ছিলো একটা পিস্তল।পিস্তলটা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো সাগরের দিকে।ঠিক ব্ল্যাঙ্ক পয়েন্ট তাক করে আছে রুপমের পিস্তলটি।‘আচ্ছা! আচ্ছা! ঠিকাছে।আমাকে যখন তুই মারতেই চাস।তো ঠিক আছে মেরে ফেল।কিন্তু মরার আগে দুজন আরো একবার হুইস্কিতে চুমুক দেই কি বলিস? কতদিন হয় একসাথে বসে মদ খাওয়া হয়নি।লেট’স স্টার্ট . . .-সরল ভঙ্গিতে বললো সাগর।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সুস্মিতা নিজেকে আবিষ্কার করলো নতুন ফ্লাটের এক কামরায়।বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো একটি রুম।‘হ্যালো মিস সুস্মিতা! এই নিন আপনার কফি।‘–বলল সাগর।সুস্মিতা মুচকি মুচকি হাসছে।‘নিউজপেপারের হেডলাইন দেখাবেনা?’-বললো সুস্মিতা।‘হুম দেখাবো।তবে তার আগে আমিই তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি।তুমি কফি শেষ করতে থাকো আর আমি হেডলাইনটুকু পড়ে ফেলি আর যদি সম্ভব হয় একটু বিস্তারিতও পড়তে চাই।কি বলো?’-এই বলে খবরের পাতা পড়া শুরু করলো সাগর . . .
“ ’ব্রাদার্স বেকারী & কোঃ’ এর মালিক রুপমের হাতে তার পার্সোনাল সেক্রেটারি খুন’
গতকাল রাতে মিস. প্রিয়তা(২৪) কে তার কোম্পানীর মালিক মি. রুপম(২৫) এর ফ্লাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।এক সূত্রে জানা গেছে, রুপমের সাথে প্রিয়তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো।প্রিয়তা কাজের অজুহাতে প্রায় প্রায় রুপমের ফ্লাটে যেত।কোম্পানীটির ম্যানেজার জানান, কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হতে দেখেছেন তিনি।মনে করা হচ্ছে, রুপমের সাথে প্রিয়তার সম্পর্কের মধ্যে ফাটল ধরায় একসময় খুন করে ফেলেন রুপম প্রিয়তাকে। “
‘হাসতে হাসতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।সব ঠিকই আছে।কিন্তু প্রিয়তাকে মারলে কেন?’-বললো সুস্মিতা।
‘প্রতিদিন এই ব্রাদার্স কোঃ এর কতগুলো প্রোডাক্ট বিক্রি হয় তুমি জানো? আর তারমধ্যে এসব প্রোডাক্ট সাধারণত ছোট বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা হয়।কিন্তু বন্ধু রুপম তার পার্সোনাল সেক্রেটারি এর সাজেশনে এসব খাদ্যে অতিরিক্ত ভেজাল ব্যবহার করতো।চিন্তা করতে পারো? প্রতিদিন রুপম ঠিক কত মানুষকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।কোল্ড ড্রিংক্সে অধিক অ্যালকোহল মিশিয়ে যুব প্রজন্মকে এক প্রকারের মদ খাওয়াচ্ছে।এছাড়া এক্সটরশন করছে তোমাদের মত কিছু মেয়েকে বিছানায় যেতে।রুপম আমার বন্ধু সত্যি।কিন্তু তুমি কি মনে কর সব দোষ ওর ঐ পার্সোনাল সেক্রেটারির?’- রাগে গড় গড় করছে সাগর।
‘আমি দুঃখিত।এভাবে বলা হয়তো আমার ঠিক হয়নি’-ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো সুস্মিতা।
সাগর তার ল্যাপটপ নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান দেখাচ্ছিলো সুস্মিতাকে।হঠাৎ সুস্মিতা বলে উঠলো-‘আচ্ছা।আপনাকে একটা কথা বলবো?’
সাগরঃ অনুমতি চাইবার কি আছে।বল?
সুস্মিতাঃ আপনি কি আমায় গ্রহণ করবেন?
সাগর মনে হয় কয়েকবার গলা খাকারি দিলো।কি বলবে বুঝতে পারছেনা।মেয়েটা ভারি মিষ্টি।না করে দেয়াটা দায়।তাই চুপ থাকলো।একটুপর মুখ খুলতে যাবে . . .
‘ভাববেন না ঐ শুকুরটি আমাকে ছুঁতে পারেনি’-হাসছে সুস্মিতা।
‘ঠিক হিসেব মিলাতে পারছিনা।অনেক সময় তোমরা একসাথে ছিলে।‘-সন্দেহের চোখ নিয়ে তাকালো সাগর সুস্মিতার দিকে।
‘হা হা হা হা . . . আমি ওকে বলেছি আমার এইডস আছে।বিশ্বাস করলে করুন আর না করলে না করুন।কতদিন হলো আপনার মতো যুবকের সান্নিধ্য পাইনি।আমি আজ পুরো মুডে আছি।‘-হাসতে হাসতে বললো সুস্মিতা।(এই সংলাপটি মাসুদ রানা সিরিজের ‘তিক্ত অবকাশ’ বইটি থেকে নেয়া হয়েছে এবং পরিমার্জিত)
কিন্তু এইটা বলুন রুপমের মত বিশাল দেহী একটা মানুষকে কাবু করলেন কি করে?
হাসছে সাগর।
কি আর বলবো সুস্মিতা- আমার বন্ধুর সেদিন হুইস্কির বদলে শ্যাম্পেইন দরকার পড়েছিলো . . .
©somewhere in net ltd.