নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অপূর্ব।খুব ছোট ছোট স্বপ্ন আমার।নিজেকে নিয়ে আর নিজের এই ছোট্ট জীবনটা নিয়ে আমি খুব বেশি একটা ভাবিনা।কখনো ভাবিনি।আর যদি কোনদিন ভাববার ফুরসত মিলেও যায়, তো ভেবে দেখা যাবে না হয়।সেটা পরের গল্প।আপাতত সেসব রাখছি।
চা-স্টল মানে গল্প, চা-স্টল মানে আড্ডা, চা-স্টল মানে তর্ক-বিতর্কের এক তুমুল ঝড়।কিন্তু আমি খুব শান্ত।
“মামা! কড়া লিকার হবে কিন্তু।”-এটা বলেই চা-স্টলের কোণের কোন এক বেঞ্চে বসে যাই আমি।একা একা নিজের সাথে গল্প করি আবার একা একাই হাসি।কিন্তু এই গল্পটা পাল্টে যায় এক তুমির জন্য।
রেয়ানা।আমার পরিচিত।মানুষের জীবনে অনেক বন্ধু থাকে।রেয়ানার সাথে আমার বন্ধুত্ব শুধুমাত্র চা-স্টলের ছোট্ট গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ।কখনো কেউই এই সম্পর্ককে বর্ধিত বা হ্রাস করার চিন্তা করিনি।হয়তো আমরা সেটা কখনো ভেবেও দেখিনি।
একদিন রেয়ানার বাড়িতে চা খাবার নিমন্ত্রণ পেলাম।সে বলেছে, সে আমাকে নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াবে।ভাবতেই ভালো লাগছিলো।কেউ আমাকে চা বানিয়ে খাওয়াবে!
কলিংবেল টিপতেই ওপাশ থেকে সাড়া পেলাম।কারণ ঘড়ির কাঁটা বলছে, এখন সময় রাত ন’টা বেজে ঠিক ত্রিশ মিনিট।
“চুলগুলো বেশ সুন্দরকরে আঁচড়ানো, খোঁচা-খোঁচা দাড়ি, ইস্ত্রী করা নীল শার্ট আর চোখে আঁতেল টাইপের বড় একটা চশমা, বেশ মানিয়েছে বলতে হয়।”
“আপনার বিশেষণগুলো নেবার পর আমার কাছে আর নতুন কোন বিশেষণ দেবার মতো কিছু নেই।কিছুটা লজ্জিতও।ভেতরে আসতে পারি?”
“নতুন কারো বাড়িতে পা ফেলার সময় ডান পা রাখবেন।এতে গৃহকর্ত্রীর মঙ্গল হয়।”
“কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় না যে, আপনি এসব মানেন?”
“আমাকে নিয়ে আর কি কি গবেষণা করা হয়?”
“তেমন গভীর কিছু নয়।১৪ই ফেব্রুয়ারি, একা একটা মানুষ, কোন এক চা-স্টলে চা-বিস্কিট খাচ্ছিলো তাও আবার একা একা বসে।মনমড়া ছিলো তাই সঙ্গ দিয়েছিলাম।আগামীকাল আবার ১৪ই ফেব্রুয়ারি।তার মানে হলো আমরা একসাথে একবছর কেটে ফেললাম।”
“আর . . . ?“
“মেয়েটা একজন ব্যাংকার।আর ছেলেটা চাকুরীর সন্ধানে সন্ন্যাসী।সন্ধ্যা হলে ছেলেটা আর মেয়েটা একই জায়গায় চা খাওয়ার জন্য আসে আর এভাবেই তাদের আলাপ এবং তারা ভালো বন্ধু।“
“ব্যস! এইটুকুই! কিন্তু আমি জানি ছেলেটা একদিন চাকুরী পেয়ে যায়।একটা ছোট-খাটো ব্যবসা শুরু করে।এখন কোটিপতি কি না জানিনা কিন্তু খুব ব্যস্ত।হাতে সময় মিলে না আর সেই পুরনো বান্ধবীর সাথে চা পান করার জন্য।”
“এতো অভিমান রাখেন কোথায় ম্যাডাম? দয়া করে একটু ভেতরে যেতে দিবেন?”
দুই বেডরুম, এক বাথরুমের একটি ছোট্ট ফ্লাটে থাকে রেয়ানা।সাথে একটা বেলকুনি রয়েছে।পাঁচতলার এই বেলকুনি থেকে পুরো রাতের শহর উপভোগ্য।আসবাবপত্র আস্বাভাবিক সুন্দর করে গোছানো। উচ্চতায় সে পাঁচফিট ছয় ইঞ্চিরও বেশি।দেখে মনে হয়, এই বুঝি সিলিং স্পর্শ করলো।লম্বা চুল, কোমর ছুঁইছুঁই। রেয়ানার চলাফেরা অনেকটা বেড়ালের মতো।মাটিতে পা না রেখে একদম নিঃশব্দে হাঁটে।চুলের শ্যম্পুর গন্ধে আমার মাথাটা কি সব ভুলভাল সিগন্যাল দিচ্ছে।সে যাইহোক, একটুপর রেয়ানা হাতে দুইটি টি-কাপ নিয়ে ফিরলো।একটা কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বসলো আমার পাশে।খানিক সময়ের নীরবতা।অনেকদিন পর এই নীরবতাকে বেশ উপভোগ করছি আমি।
“কি ইচ্ছে?”
“মানে ঠিক বুঝলাম না”-বিষম খাবার মতো অবস্থা হলো আমার।
“একটা মেয়ে আপনাকে তার ফ্লাটে রাতেরবেলা নিমন্ত্রণ জানিয়েছে শুধু কি চা পান করার জন্য?”
“ড্রিংস্ক করাবেন?”
“আপাতত নেই।অন্যকিছু চলবে?”
“অন্যকিছু মানে . . . “
“এক কাজ করুন, আপনার হাতের চায়ের কাপটা রাখুন।এক কাপ চা দুজন ভাগাভাগি করি কেমন হয় বলুন তো?”
“আমার মনে হয় এখন আমার উঠা দরকার।তাছাড়া বেশ রাত হয়ে গেছে।”
“হা হা হা . . . আপনি অসাধারণ রকমের ভীতু টাইপের একটা কাপুরুষ।”
“রেয়ানা।আমি উঠলাম।এসব নোংরা প্রস্তাব আমি তোমার কাছে থেকে প্রত্যাশা করিনি।অনেক অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম তোমাকে নিয়ে আর তুমি সেটা এক নিমিষেই শেষ করে দিলে।“
এরপরের কথাগুলো বলতে খুব একটা ইচ্ছে করে না।কিন্তু রাতটার কথা এখনো খুব করে মনে পড়ে।রেয়ানা সেদিন আমাকে হাত ধরে আটকিয়েছিলো।বলেছিলো খানিক সময় বসতে।কিন্তু বসা হয়নি।খুব আত্মনুভূতি জেগেছিলো আমার মাঝে চায়ের কাপের বন্ধুত্ব চায়ের কাপ পর্যন্তই ভালো মানায় বেডরুম পর্যন্ত নয়।এরপর রেয়ানার কাছে থেকে একদিন একটা ই-মেইল পাই, যেটা পড়ার সময় কতবার নিঃশব্দে চোখ থেকে অশ্রুজল ঝড়েছে তার ঠিক নেই।
“প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভোর রাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে যেত এবং ঘুম যত গভীর হয় ব্যথাও ততো বাড়ে।পেটে ব্যথা ছাড়া বা বমনেচ্ছা ছাড়াই বমি হয় এবং খাবারের সাথে বমির কোন সম্পর্ক থাকে না।মাথা ব্যথা থাকাকালীন সময়েও বমি হতো।মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের চাপ অত্যন্ত বেড়ে যায় এবং শিরাস্থ রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়ে পরে।চোখ অতিরিক্ত কাঁপে এবং চোখের পাতা বন্ধ করতে অসুবিধা হতো।ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পেয়ে গেছিলো, অলীক কোন কিছুতে কল্পনা করা শুরু করে দিয়েছিলাম।এরপর অনুভব করলাম আমার শ্রবণশক্তিও হ্রাস পেয়েছে।তাই একদিন ডাক্তার দেখালাম।জানতে পারলাম আমি ব্রেইন ক্যান্সারে ভুগছি গত দুইবছর ধরে।আমার হাতে আর সময় মাত্র কয়েকটা মাস ছিলো।তোমাকে কেন জানিনা খুব করে মনে পড়ছিলো।এতদিন একসাথে দুজন কাটালাম।আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গি হলে তুমি।দিনগুলো ভালোই চলছিলো।তোমাকে দেবার মতো আমার কাছে তেমন কিছু ছিলো না।একজন মৃত্যুপথযাত্রী আর কি বা দিতে পারতো তোমাকে।তোমার জীবনটা গুছিয়ে দিতে পারলাম না অপূর্ব।আমায় ক্ষমা করে দিও।”
“রেয়ানা! তুমি কি ভীতরে আছো?”-কলিংবেল চাপতেই রেয়ানা এসে দরজা খুলে দিলো।অদ্ভূত সুন্দরী একটা মেয়েকে সেদিন প্রচন্ড খাপছাড়া আর বেঢপ লাগছিলো।লম্বা চুলগুলো খাটো করে এখন কেটেছে।চোখের নীচে কালো দাগ।
“রেয়ানা।আমার একটা অনুরোধ ছিলো রাখবে।”
“বল? কি অনুরোধ?”
“তোমার বাকি দিনগুলো কি আমি ধার পেতে পারি?”
“তুমি কি পাগল হয়ে গেছ অপূর্ব?”
“জানিনা।তুমি রাজী কি না বল?”
রেয়ানা হাসছিলো।বেশ শব্দ করেই হাসছিলো।আমার দু’হাত ধরে শুধু বলেছিলো, “আমরা তো শুধু চা-স্টলের বন্ধু সেটাকে বেডরুম পর্যন্ত কি না নিয়ে গেলেই নয়।আমার অনুপস্থিতিতে তুমি কি ঐ চা-স্টলে আর আসবে অপূর্ব? আমি খুব মিস করবো তোমাকে।”
শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেললাম।৭ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যায়, দু’জন পরিচিত মানুষ আবার সেই একই চা-স্টলে।জানিনা রেয়ানা আগামীকাল পর্যন্ত আমার কাছে থাকবে কি না।কিন্তু সবটুকু তো রেয়ানার গল্প নয়।এই গল্পে আমিও ছিলাম।
চায়ের কাপে গল্প জমে উঠলো একসময়।গল্প করতে করতে একসময় রেয়ানা তার মাথাটা আমার কোলের উপর রাখলো।আর আমিও বুঝতে পারছিলাম, আমিও আর এই পৃথিবীতে বেশিক্ষণ নেই।
বিদায় রেয়ানা।ওপারে আবার দেখা হবে।
০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ রাত ২:৩৭
মি. বিকেল বলেছেন: আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।অপূর্ব শেষে আত্মহত্যা করে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি বেশ ভাল লাগল। তবে শেষে এসে খটকা লাগলো অসুখতো রেয়ানার ছিল অপূর্ব শেষ পরনতি দেখালেন যে?