নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোবা মেঠোপথ

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩০




ঠিক কতকাল জুড়ে এখানে যে আমি পড়ে রয়েছি তা আমি জানিনা।চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক দিন চলে যাচ্ছে।ঠিক এরকম করে কয়েক শতাব্দি আমি এখানেই পড়ে আছি, হয়তোবা তারও বেশি, আসলে আমি তা ঠিক করে জানিনা।এই রাস্তা দিয়ে খুব বেশি একটা কেউ যাতায়াত করে না।চারপাশটা জঙ্গলে উপচে পড়েছে।সন্ত্রাসী তার রক্তমাখা লাল হাত নিয়ে গর্ব ভরে আমার বুকের উপর দিয়ে যায়, আসে চোর, বিভিন্ন কভার ধান্দায় ঠিক কভার কোঠরে ঢুকে থাকা লোকগুলো এখানে এসে দাঁড়িয়ে গল্প করে, কার কত ভাগ! কার কত আবদান! সেসব নিয়ে আর কি! আর গোপন অভিসারে কেউ কেউ ভুল করে হাঁটতে-হাঁটতে বুঝতে পারে ওরা আসলে গল্পের খেইয়ে রাস্তাটা ভুল করে বসেছে।আমার তখন কি যে হাসি পায়! এরকম হাজারো গল্প আমার জানা এখন।সবগুলোই ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু মূল থিমটা একই।তাই মজা খুঁজে পাই না।
এখানে কেউ আমার যত্ন নেয় না।আমি বেশ কুৎসিত আর বেঢপ হয়ে গেছি দেখতে।বর্ষাকালে জলে ভরপুর হয়ে যায় পুরো বুকটা।আমি আমার তীব্র তৃষ্ণা মেটাই সেই মিষ্টি জলটুকুন দিয়ে।অবশ্য তাতে আমার কোন আপত্তি নেই।আমার বুকের উপর দিয়ে কত কি না তার গন্তব্যে চলে গেলো।কি আসে যায় এসব ভেবে! কিন্তু ইমরান শব্দটা এখনো আমার মনে আছে।মনে আছে পুরো গল্পটা, কি সুন্দর একটা গল্প, দারুণ মজায় গেছিলো আমার সময়টা।একদিন ভরদুপুরে.....



০বাহ্! কি সুন্দর নাম তোমার।বৃষ্টি।
০আপনাকে ধন্যবাদ।কিন্তু লোকে বলে বৃষ্টি নামের মেয়েরা অনেক ছিঁচকাঁদুনে হয়।
০কই? আপনি? আমার তো কখনো মনে হয়নি!
০ঠিকঠাক করে বুঝতে গেলেন কবে? যে কিছু মনে হবে?
০হাসালেন বটে, তা এই রাস্তা দিয়ে কি আপনি নিয়মিত যাতায়াত করেন?
০আসলে এটা শর্টকাট হয়।বাকি রাস্তাগুলো বেশ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।তাই বলতে পারেন বাধ্য হয়ে যেতে হয়।
০বাপরে! এটাকে ডোবা বা পুকুর বলা চলে না, আস্ত একটা সমুদ্র।
০হা হা হা.....চলুন একসাথে সাতার কাঁটবেন? ভালো আইডিয়া দিলাম নাহ্?
০হুম...দারুণ আইডিয়া।আমি মরছি, তবে একা নয় সাথে একজন পুরুষকে নিয়ে।
০আহারে! চুপ করে দাঁড়িয়ে কেনো? ওহে! সিনবাদ! সমুদ্রে নামো? হা হা হা.....



এরপর ওদের হাসাহসিতে আমি যারপর নাই বিরুক্ত হয়েছি।হাজারহোক লোকে বলেছে আমি শহুরে মেঠোপথ।যদিওবা সিটি কর্পোরেশনের নজরে এখনো পড়লাম না।কে জানে! হয়তো তাদের ম্যাপেও আমি নেই।তাই আশাও ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু ইমরান, ওকে ভুলে যাইনি।যাইহোক এখন আবার গল্পে ফিরে যাই.....



০কি কাকু! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে তুমি তাহলে বাঁশের সাঁকো বানাতে শুরু করেছো?
০দেখতেই পাচ্ছিস বন্ধু, নতুন করে জিজ্ঞাসা করার কি আছে!
০তা কে পার হবে শুনি?
০মানুষজন।এই বৃষ্টিতে রাস্তার যে হাল হয়েছে!
০হঠাৎ করে জনসেবা! সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার দাঁড়াবি নাকি?
০ফাজলামি বাদ দে।আমাকে একটু সাহায্য কর।সাঁকোটা ছোট হলেও বেশ প্রশস্ত।
০তুই বন্ধু না কি শক্রু!
০বন্ধুত্ব পড়ে, আগে সাঁকো।



সারাটাদিন ওরা অনেক খাটাখাটি করলো।এরপর একটা সুন্দর সাঁকো বানিয়ে দিলো আমার উপর দিয়ে।এখন ভালোই মানুষজন যাতায়াত করে।আরো খোশগল্প শুনতে পাই।মজা লাগে শুনতে।কি অদ্ভুত সব মানুষ।কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট পান করে চলে যায়।কিন্তু আমি ঐ ছেলেটার জন্য এখন অপেক্ষা করছি।আমার পরম বন্ধু।কখন আসবে সে?



০জানো ইমরান! কেউ একজন এই রাস্তায় সুন্দর এই সাঁকোটা তৈরি করে দিয়েছে।
০তাই তো দেখছি! হবে হয়তো আপনার কোন শুভাকাঙ্খী।
০ধূর ছাই! সেরকম কেউ নেই।
০থাকতেও তো পারে।
০কথা শুনে মনে হচ্ছে, আপনি তাকে চেনেন!
০না, না।আমি তাকে চিনতে যাবো কোন দুঃখে?
০তাহলে চুপ থাকুন আর সাঁকোটা মনোযোগ সহকারে দেখুন।কি কষ্টই না হয়েছে এই পুরো সাঁকোটা বানাতে!
০হুম, বহুত বাঁশ.....
০এই, এই...আপনি কিন্তু এটা বলে তাকে ছোট করলেন।
০বাঁশ দিয়েই তো বানিয়েছে।আমি আবার কই তাকে ছোট করলাম?
০বাদ দিন।আপনার সাথে কথায় পারবো না।চলুন আজ আমাদের বাড়িতে যাবেন? মা রয়েছেন।পরিচয় করে দেই?
০না থাক, অন্য কোন একদিন।
০বৃষ্টিকে না বললেন? এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে আপনি জানেন?
০আপনি কি এখন সত্যিই কান্নাকাটি শুরু করবেন?...বাপরে! এরচেয়ে ভালো আন্টির সাথে আজই পরিচিত হই চলুন।

এরপর অনেকবার ওদের একসাথে যেতে দেখেছি আমি।শুনেছি ওদের মিষ্টি আলাপন।ঠিক যেন ওরা একে অপরের পরিপূরক।ভারি মিষ্টি।দুজনই।ভয়ংকর রকমের মিষ্টি।ওদের বাচ্চামী কর্মকান্ড সময় সময় আমাকে লজ্জায় ফেলে দেয়।একদিন ওদের ফিসফিসানি কথা শুনতে পেলাম.....



০আপনিও কি অন্যদের মতো?
০অন্যদের মতো বলতে?
০রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় পুরুষরা যেমন আমার বুকের দিকে “হা...”করে তাকিয়ে থাকে তেমন।
০আপনার মুখে দেখছি কিছুই আটকায় না, সব পুরুষ এক নয়, বুঝলেন? আর আপনার এই নীল শাড়িতে আমার চোখদুটো আটকে গেছে।
০তাহলে আমার এত সাজ-গোজ আর এই গোলাপি উষ্ণ ঠোটজোড়ায় কি হবে!
০লজ্জা দিচ্ছেন।সকালবেলার শিশিরভেজা ফুলগুলো সজীব হয়, উষ্ণ নয়।
০তাহলে ছুঁয়ে দেখুন! অন্তত কতটা সজীব এটা তো বুঝবেন.....



এরপর আমি আস্তে আস্তে করে চোখ বুজেছিলাম।আমার কাছে ওরা একজোড়া পাখির মতো।তাই নিঃশব্দে কিচির-মিচির আমার বেশ ভালোই লাগে।কিন্তু অনেকদিন হলো ওদের আর দেখা মিলে না।বেশ কয়েকটা বছর এভাবেই কাটিয়ে দিলাম।কেমন জানি আর কোন গল্পই ভালো লাগে না।শুধু ওদেরকে একবার দেখতে ইচ্ছে করে।কবে আবার সাঁকো পার হবে ওরা? সেই চিন্তায় খুব ব্যাকুল থাকতাম।দেখা একদিন হয়ে গেলো।বিষাদে ভরা চেহারা নিয়ে ইমরান হাঁটছে আর সাথে মনে হয় এক মহিলা।দুজনেই বেশ বৃদ্ধ হয়ে গেছে।মাথার চুলগুলো পেকে গেছে।ভারি ব্যস্ত জীবনটা নিয়ে।সেদিনের ওই কথাগুলো এখনো মনে পড়ে।



০ইমরান! সাঁকোটার কথা আপনার মনে আছে? সাঁকোটা আর নেই।
০হুম, বৃষ্টিও আর নেই।এখন বসন্তকাল তো!
০কি করছেন এখন?
০সত্য আর মিথ্যের দ্বন্দ্ব নিয়ে পড়ে আছি।
০আইনজীবি?
০আপনি এখন কি করছেন?
০আমি অন্য দিকটা সামলাচ্ছি।জীবন আর মৃত্যুকে খুব কাছে থেকে দেখছি।
০ওহ্! ডাঃ বৃষ্টি আহমেদ।তা শেষমেশ কোনো উত্তর পেলেন? হারলাম না কি জিতলাম?
০সেটা মনে হয় আমার চেয়ে বেশি আপনি ভালো জানেন।
০মন্তব্য যখন চেয়েছেন, তখন বলছি, আমাদের আফসোস হয়! যেটা হয়তো কোন একদিন খুব করে ছিলো তার জন্য আবার অন্যদিকে আমাদের আফসোস হওয়া উচিত নয় কারণ শূন্য থেকে আমরা এসছি।কিছুই হারাবার নেই।অদৌ কি কিছু ছিলো?
০দর্শন?
০নাহ্, জীবন।



এখনো ইমরান-বৃষ্টির মত অনেকের সাথে দেখা মিলে।আর ভাবতে থাকি শেষটা যদি এমন করে হয় তাহলে, এমন কোনও গল্প শোনার ইচ্ছেও আমার নেই।
তবে অনেকবাদে হলেও সিটি কর্পোরেশনের নজর পড়েছে আমার উপর।পিচঢালা রাস্তায় এখন অনেকেই হেঁটে যায়।প্রাইভেট কার আর রিক্সাও যায় আমারে উপর দিয়ে।ভুল করে ইমরান-বৃষ্টি মনে করে অনেকে সময় ভাবাবেগে পড়ে যাই।ওদের মধ্যেও সবই আছে।কিন্তু কিছু না কিছু বাদ থেকে যায়।
তাই আমার সেই সব গল্প আজ মনেও নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.