নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ধেবেলা আরামকেদারায় বসে খবরের কাগজে নজর বোলাচ্ছিলাম। এমন সময় সদর দরজা থেকে জোরালো আওয়াজ এলো, “কলমচি বাবু, বাড়ি আছো নাকি?” জবাবে বললাম, “হ্যাঁ, মামা, আসুন।”
অন্দরমহল থেকে চা-নাশতা এলো। আয়েশ করে চা-নাশতা খেতে খেতে জমে উঠল দুজনের আসর। কথায় কথায় বললাম, আচ্ছা, মামা, আপনি যে ওকালতি পেশার সঙ্গে যুক্ত, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক আরবি-ফারসি শব্দ। জানেন তো?
– তাই নাকি! যেমন?
– আদালত দিয়ে শুরু করি?
– মানে?
– মানে ‘আদালত’ আরবি। ‘শুরু’ও আরবি।
– আদালত আরবি, জানতাম। কিন্তু, শুরুটাও আরবি?
– আজ্ঞে হ্যাঁ। তারপর ধরুন, আপনি উকিল। ওকালতি আপনার পেশা। এখানে ‘উকিল’, ‘ওকালতি’ আরবি। আর ‘পেশা’টা ফারসি।
– জানতাম না তো!
– তারপর দেখুন, ‘মামলা’, ‘মোকদ্দমা’ দুটোই আরবি। এতে যারা আপনাদের সাহায্য নেয়, তাদের আপনারা বলেন মক্কেল। এই ‘মক্কেল’ও আরবি। ‘হাকিম’, ‘হুকুম’, ‘এজাহার’, ‘বয়ান’, ‘ফরমান’, ‘ফয়সালা’ এমনকি বিচারপতির ‘রায়’ পর্যন্ত আরবি। আচ্ছা, আসামি শব্দটা কোন ভাষা থেকে এসেছে বলুন তো?
– আসাম থেকে?
– নাহ্। ‘আসামি’ আরবি। এই আসামি বা সাক্ষীদের আপনারা তো জেরা বা সওয়াল করেন, ‘জেরা’ আর ‘সওয়াল’ও আরবি।
– আজব ব্যাপার তো!
– ‘আজব’টাও আরবি। আপনি যে ভিতরে আসার আগে সদর দরজায় দাঁড়িয়ে, ‘কলমচি বাবু, বাড়ি আছো নাকি’ বলে আওয়াজ দিয়েছিলেন। এখানে ‘আওয়াজ’ ফারসি। ‘সদর’ আরবি। ‘দরজা’ ফারসি। কলমচির ‘কলম’ আরবি, ‘চি’ তুর্কি। আর ‘বাবু’ হলো ফারসি।
– বেশ আজব ব্যাপার তো!
– এই ‘বেশ’টা ফারসি। ‘আজিব’ আরবি। আর আমি জবাব দিয়েছিলাম, হ্যাঁ মামা, আসুন। এখানে ‘জবাব’ আরবি, ‘মামা’ ফারসি। তারপর, আপনি এসে দেখলেন যে, আমি আরামকেদারায় বসে খবরকাগজে নজর বোলাচ্ছিলাম। এখানে ‘আরাম’ ও ‘কেদারা’ ফারসি এবং ‘খবর’, ‘কাগজ’ ও ‘নজর’ আরবি।
– তার মানে, আমরা রোজকার জীবনে যেসব কথা বলি, তার বেশিরভাগই আরবি, ফারসি?
– আলবত। এই ‘আলবত’টাও আরবি। এক্ষুনি আপনি যে বললেন, রোজকার জীবনে… বেশিরভাগই… এখানে ‘রোজকার’ ফারসি, বেশিভাগের ‘বেশি’টা ফারসি।
– কী মুশকিল! এতদিন জানতাম না তো!
– ‘মুশকিল’ আরবি হলেও শুধু শুধু মুশকিল হবে কেন! একটু অভিধান ঘাঁটলেই মুশকিল আসান হয়ে যাবে। তখন জানতে পারবেন ‘আসান’ও আরবি। আচ্ছা, মনে করে দেখুন তো, আপনি আসার পর অন্দরমহল থেকে চা-নাশতা পাঠানো হলো। এখানে ‘অন্দর’ ফারসি, ‘মহল’ আরবি। আর নাশতাটা?
– নিশ্চয়ই ফারসি।
– বিলকুল ঠিকই বলেছেন। ‘নাশতা’ ফারসি। দেখুন এই ‘বিলকুল’ হলো আরবি। আচ্ছা, এরপর আমরা আয়েশ করে নাশতা খেতে খেতে আসর জমিয়ে দিলাম। তাই না?
– তাই তো, এর মধ্যেও আরবি-ফারসি আছে নাকি?
– অবশ্যই আছে। আরবি-ফারসি বাদ দিলে বাংলা ভাষা সাবলীল গতিতে চলতেই পারবে না যে! দেখুন আরাম শব্দটা ফারসি, আগেই আমরা জেনেছি। এর জুড়ি যে ‘আয়েশ’, এটা আরবি। আসর জমানোর মধ্যে ‘আসর’ ও ‘জমা’ দুটোই আরবি। আরবিতে ‘আশর’ মানে দশ। দশজন মিলে যে মজলিস হয়, সেটাই হয়েছে আসর। এক্ষুনি যে ‘মজলিস’ বললাম, এটাও আরবি। ‘জলসা’, ‘মহফিল’ এগুলোও আরবি। অবশ্য কলকাতার বাবুরা মহফিলকে ‘মাইফেল’ (গানবাজনার আসর) বানিয়ে নিয়েছে!
– তার মানে, আরবি-ফারসি বাদ দিলে বাংলা অচল!
– তা আর বলতে! এই যে আপনি বললেন, মানে, এই ‘মানে’ শব্দটাও আরবি। বাদ দিলে বললেন তো! ‘বাদ’ও আরবি। বাদ না বলে ‘বাতিল’ বললে সেটাও আরবি। ‘রদ’ করলেও আরবি। আচ্ছা মামা, আমরা ফের আদালতের রাস্তায় ফিরে যাই চলুন। আসামিকে মাঝে মাঝে তো পুলিশের হেফাজতে রাখতে হয়। তারপর জামিন, খালাস ইত্যাদি থাকে। এখানে ‘হেফাজত’, ‘জামিন’, ‘খালাস’—তিনটিই আরবি। আর হ্যাঁ, ‘ফের’ ও ‘ফেরা’ আরবি এবং ‘রাস্তা’ ফারসি।
– ‘রাস্তা’য় ‘ফির’তে গেলেও আরবি-ফারসি!
– এখন তো দেখছি, আরবি-ফারসি ছাড়া কদম ফেলাই যাবে না!
– কী করে যাবে! ‘কদম’ শব্দটাও তো আরবি। আরেকটা চমকপ্রদ তথ্য শুনুন, আমরা এই যে কথায় কথায় বাঙালি, বাংলা ইত্যাদি বলছি, এর ‘বাংলা’ শব্দটাই তো ফারসি!
– সে কী! জানতাম না তো! বাংলা শব্দটাও ফারসি। কী আশ্চর্য!
– আচ্ছা, বাংলা ভাষায় এত বেশি এবং এমন সব অপরিহার্য আরবি-ফারসি শব্দের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার থেকে কী বোঝা যায়? এটাই বোঝা যায় যে, বাংলা ভাষার পুষ্টিসাধন ও সৌন্দর্যায়নে বিদেশি ভাষার অনেক বেশি অবদান আছে।
– অনেক কিছু জানলাম, বাবা!
– ‘বাবা’ তুর্কি। ‘কাকা’ ফারসি। তাই তো বলছি: আমরা, মানে বাঙালিরা – জাতি-ধর্ম, সাক্ষর-নিরক্ষর নির্বিশেষে, হাজার হাজার আরবি-ফারসি শব্দ অহরহ ব্যবহার করছি (‘হাজার’ ফারসি)। এগুলো আমাদের মাতৃভাষাকে সমৃদ্ধ ও পুষ্ট করার পাশাপাশি মোলায়েমও করেছে (‘মোলায়েম’ ফারসি)। এসব শব্দকে আমরা বাংলা করেই নিয়েছি। আরবি-ফারসি বাদ দিলে বাংলা ভাষা হয়ে যাবে শ্রীহীন!
(এই লেখাটি সংগৃহিত)
- মেহেদি হাসান(Mehedi Hasan)
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৫
মি. বিকেল বলেছেন: সামনে বিসিএস পরীক্ষা, বিদেশী শব্দ চর্চা করছি। পাছে ফেল না করি।
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৪৯
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এই আরবী ফারসি ওয়ালারা আমাদের দেশ শাসন করেছে বহু বছর।এই বিজাতীয় শাসনের ফলে তাদের অনেক শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে ।বহুদিন ব্যবহারের ফলে আমাদের ভাষা ভুলে এগুলোই প্রচলিত হয়ে গেছে।মুসলমানরা ব্যবহার করে বেশি আর হিন্দুরা ব্যবহার করে কম।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:১৯
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত নই। পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের সাথে আমার কথা হয়, নিয়মিত।
তফাৎ খুব বেশি নেই।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২০
মি. বিকেল বলেছেন: "এই আরবী ফারসি ওয়ালারা আমাদের দেশ শাসন করেছে বহু বছর।এই বিজাতীয় শাসনের ফলে তাদের অনেক শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে ।বহুদিন ব্যবহারের ফলে আমাদের ভাষা ভুলে এগুলোই প্রচলিত হয়ে গেছে।" - আপনার মন্তব্যের এই অবধি আমি নির্দ্বিধায় মেনে নিতে রাজি আছি।
৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:২২
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:১৯
মি. বিকেল বলেছেন: মূল্যবান মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৪| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪৭
বিটপি বলেছেন: আপনি যদি আন্তরিকভাবে চান, তাহলে আরবী ফারসী টাইপ মুসলমানি ভাষা ঝেটিয়ে বিদায় করতে পারবেন। যেমনঃ
- আদালতের বদলে কোর্ট, আসরের বদলে পার্টি, হেফাজতের বদলে কাস্টডি ইত্যাদি। আমি তো মনে করি এসব শব্দ এমনিতেই অচল হয়ে গেছে।
- আপনি চাইলে ধর্ম সংক্রান্ত শব্দগূলোও পরিবর্তন করতে পারেন। যেমনঃ সালাত, সাওম, আল্লাহ, নবী-রাসূল, মালাইকা শব্দগূলোর বদলে নামাজ, রোজা, খোদা, পয়গম্বর, ফেরেশতা টাইপের ফারসী শব্দ ব্যবহার করবেন আগে, আর তারপর আস্তে আস্তে প্রেয়ার/প্রার্থনা/উপাসনা, উপবাস/ফাস্টিং, ঈশ্বর/গড, অবতার/প্রফেট, এঞ্জেল - এই শব্দগুলো চালু করবেন। তাহলে একসময় দেখবেন মানুষ কোরআন শরীফও ইংরেজীতে পড়তে শুরু করেছে।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২২
মি. বিকেল বলেছেন: হা হা হা...
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো লিখেছেন, স্যাটায়ার ছিলো মনে হচ্ছে।
৫| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৮
অপু তানভীর বলেছেন: খাটি বাংলা শব্দ যা আছে তা খুবই সামান্য । বাখারি, মুন্ডা কুলা এই সব !
কেবল আরবি ফার্সিই নয়, নানান দেশের নানান লোক আমাদের এই এলাকাতে এসেছে, আমাদের দেশের মানুষ গিয়েছে সেখান থেকেই নানান দেশের শব্দ এসে যুক্ত হয়েছে আমাদের ভাষাতে যা আমাদের ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে । এখন আর এসব আলাদা ভাবে অন্য ভাষা নয় বরং এসব বাংলা ভাষারই অংশ ।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২২
মি. বিকেল বলেছেন: পুরোপুরি সহমত।
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।
৬| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:০১
জুল ভার্ন বলেছেন: সব ভাষার মধ্যেই কিছু কিছু বিদেশী ভাষা আছে এবং বিদেশী ভাষা দেশীয় ভাষাকে সমৃদ্ধ করে।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:২৩
মি. বিকেল বলেছেন: এই না হলো আসল কথা।
যারা আপত্তি তুলছেন তাদের বুঝতে হবে।
৭| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: সামনে বিসিএস পরীক্ষা, বিদেশী শব্দ চর্চা করছি। পাছে ফেল না করি।
হুম। মন দিয়ে পড়ুন।
২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৩:১৭
মি. বিকেল বলেছেন: পাশাপাশি আপনার কাছে প্রশ্ন, খাঁটি বাংলা শব্দ দিয়ে কাজ চালাতে পারবেন তো? ডিসকোর্স এর সংজ্ঞাও জানার রইলো।
৮| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:২৮
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এমন অনেক শব্দ আছে যেটা কোন হিন্দু ব্যবহার করে না কিন্তু সমস্ত মুসলমানরা বাহবার।এতেই বুঝা যায় কারা বেশি ব্যবহার করে কারা কম ব্যবহার করে।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২১
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত নই, ভারতীয়দের সাথে আমার সু-সম্পর্ক আছে। ধন্যবাদ
৯| ২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৮
ইমরান আশফাক বলেছেন: কিছু কিছু মন্তব্যগুলি পড়লে মনে হয় তারা বাংলা ভাষার উপর আরবী ও ফারসী ভাষার প্রভাব দেখে রীতিমত হৎচকিত হয়ে গেছে। তাদের জানা উচিৎ বাংলা ভাষার উত্থান শুরু হয়েছে মুসলমানদের দ্বারা। সে সময় বিশেষ করে বর্ন হিন্দুরা বাংলা ভাষাকে অশ্ছূৎ ভাষা বলে মনে করতো। আর সম্প্রতি গবেষনায় প্রমানিত হয়েছে যে বাংলা ভাষা মাগধ বা সংস্কৃতি ভাষা থেকে উদ্ভব হয়নি, বরং এটি একটি প্রাকৃতিক ভাষা। বিভিন্ন সময় বিশ্বের বিভিন্ন অন্চলের লোকজন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে বাংলায় আসতো। তাদের কাছ থেকে স্বাভাবিক নিয়মেই বিভিন্ন রকম শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে এবং এতে বরং আমাদের ভাষা আরও সমৃদ্বি লাভ করেছে। বর্তমানে বিশ্বে বাংলা ভাষা একটি অন্যতম সমৃদ্ব ভাষা।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২০
মি. বিকেল বলেছেন: ব্লগে মন্তব্য পাওয়া আমি আশীর্বাদ মনে করি। কিন্তু সময় সময় ওভার-ওয়েলমিং কিছু মন্তব্য কষ্ট দেয়। খুব কষ্ট করে লেখাগুলো ভেস্তে যায়। আপনাকে ধন্যবাদ।
১০| ২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:২১
মি. বিকেল বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১১
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার সাথে একমত হতে পারলাম না।
মায়ের ভাষা শ্রী-হীন হতে পারে না।