নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রথম প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর, ২০২০
আমি একজন ভুক্তভোগী বা অন্যায় ভাবে আমার সাথে কিছু করা হচ্ছে যখন এই ভূমিকায় নিজেকে কেউ প্রমাণ করার জন্য যে তাসের কার্ড (যে কার্ড তাসে নেই) বেছে নেয় তাকে আমি ‘ভিক্টিম কার্ড প্লেয়ার’ বলবো। মূলত, এই ধরণের মানুষগুলো ক্রমাগত নিজেকে দরিদ্র, অসহায়, দূর্বল এবং আপেক্ষিক ভাবে কম বুদ্ধি সম্পন্ন বা মেধাশূন্য হয়েও বলবেন, “মেধা থাকা সত্ত্বেও হেরে গেলাম।”
সত্যি বলতে আমাদের চারপাশে এই ধরণের মানুষের অভাব নেই। কেউ কেউ বেশ সুক্ষ্ম অভিনেতার পরিচয় দিয়ে থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এটি সনাক্ত করা আরো কঠিন। সুতরাং প্রকৃত অর্থে কে ভুক্তভোগী এবং কে ভিক্টিম কার্ড খেলছেন এদের মধ্যে পার্থক্য করা বেশ শক্ত। অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব প্রায় বিশেষ করে যাদের অভিনয় টম হ্যাঙ্কস কেও পিছিয়ে রাখে।
কেন একজন ‘ভিক্টিম কার্ড’ খেলে থাকেন?
প্রথমত, ব্যক্তি তার দিকে অন্যদের আগ্রহ বা দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এমনটি করতে পারেন। কারণ, খুব সম্ভবত আমরা কম বেশি সবাই এমন কিছু পরিবার থেকে বড় হয়েছি যারা আমাদেরকে সবসময় বা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যর্থতার জন্য অন্যদের দোষ দিয়ে গেছেন।
ফলে অচেতন মনে এই ভঙ্গিমার একটি ছাপ থেকে যায় এবং পরবর্তি সময়ে যখন আমরা নিজের ব্যর্থতাকে আর অন্য কোন রাস্তায় ঢাকতে পারি না তখন এই কার্ড ছুঁড়ে দেই পরিবার/সমাজ/রাষ্ট্রের প্রতি। এমনকি খুব গুরুত্বপূর্ন বা সেন্সিটিভ সম্পর্কগুলোতেও এমনটি ঘটে।
ধরুন, এক সন্ধ্যায় দুই বন্ধু এক রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছে। একজন তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট অন্যদিকে আরেকজন তার অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও মুখটা ভার করে আছে ফলে রেজাল্ট আসলে রেস্টুরেন্টের সব বিল প্রথম বন্ধু দিয়ে দেবে।
ধরুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের হাত কেটে আত্মহত্যার কেউ হুমকি দিতে পারে। সেটা কিন্তু প্রেমিক/প্রেমিকা উভয়ের ক্ষেত্রেই এমন ঘটতে পারে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, উপরোক্ত দুই ঘটনা সত্য-ও হতে পারে।
প্রসঙ্গত, এটি এমন এক ধরণের কূট-কৌশল যে এটা নিয়ে খুল্লাম খুল্লা আলোচনা কতটুকু উচিত জানিনা। কিন্তু প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।
দ্বিতীয়ত, কারো কারো ‘Victim Syndrome Or, A Victim Complex’ নামে মানসিক রোগ থেকে থাকে। ফলে এই ব্যক্তি রয়্যালটি (আক্ষরিক অর্থে) তো দূর প্রতিনিয়ত এমন এক স্বভাব দেখাবে যে আপনার মনে হতে পারে পৃথিবীতে যত দরিদ্র, অসহায়, দূর্বল ও আপেক্ষিক ভাবে কম যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি আছেন ইনি হচ্ছেন সেই ব্যক্তি।
এই ধরণের মানুষ সারাদিন বা প্রতিনিয়ত নিজেকে এভাবেই সবার সামনে পেশ করবে। উল্লেখ্য, এমন মানুষ বাস্তবে আছে, তাই নির্বাচনে ভুল হলে আমাদের জাজমেন্টাল গালি দেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু ভণিতা করা ঐ মানুষ যে কার্ড খেলছেন আপনার সাথে সেটাই ‘ভিক্টিম কার্ড’।
Being a Victim vs Self Pity vs Victim Mentality নিয়ে আরো কিছু কথা
আমি কেন সর্বদা ভিক্টিম প্লেয়ার হিসেবে নিজেকে বেছে নেব? কারণ, ক্রমাগত ভিক্টিম কার্ড প্লেয়িং অভিনয়ে আসলে অনেক সুবিধা থাকতে পারে। যেমন ধরুন,
১। আপনার কোনও জিনিসের দায়-দায়িত্ব থাকবে না।
২। আপনার কাছে অভিযোগ করার এবং মনোযোগ পাওয়ার ‘অধিকার’ থাকবে।
৩। অন্যরা আপনার জন্য দুঃখিত অনুভব করবেন এবং আপনার প্রতি মনোযোগী হবেন।
৪। লোকের আপনাকে সমালোচনা বা বিরক্ত করার সম্ভাবনা কম থাকবে।
৫। অন্যরা আপনাকে সাহায্য করতে বাধ্য হয় এবং আপনি যা চান তা করতে বাধ্য হন।
৬। আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি এবং সেসব যেহেতু আকর্ষণীয় বলে মনে হচ্ছে বা হবে তাই আপনি আপনার এই গল্পগুলি বলার জন্য ভালো শ্রোতা পাবেন।
৭। অন্যদের অনুভূতি দেখে বিরক্ত হওয়ার কোনও সময় নেই আপনার হাতে কারণ আপনার জীবনে যেহেতু এত নাটক ঘটেছে।
৮। আপনি দুঃখিত এবং বিচলিত হওয়ার কারণে খুব ব্যস্ত থাকায় আপনি কখনও রাগ বোধ করতে পারবেন না।
ক্রমাগত ভিক্টিম অভিনয়ে আসলে অনেক সুবিধা থাকতে পারে। এগুলি আপনি যদি উপরের বিবৃতিগুলি দেখেন তবে ইতোমধ্যে আপনি ভিক্টিম হওয়ার আসল উপকারগুলি কী হতে পারে তার প্যাটার্নটি বুঝতে পেরেছেন। এসব হলো,
(ক) মনোযোগ আকর্ষণ
(খ) মূল্যবান বোধ করা
(গ) শক্তি
যেহেতু আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের ভূমিকায় অভিনয়ে পরিপক্ক তাই বাকিরা আপনার জন্য ‘সরি’ অনুভব করবে। আর এখানেই ট্রিক লুকিয়ে আছে উক্ত ব্যক্তি কে ম্যানিপুলেট করার। ছোট থেকে বড় সব কাজে তখন সেই ব্যক্তিগুলো সাহায্যে লেগে পড়বে। কারণ আপনি দরিদ্র, অসহায় ও দূর্বল। তাই তারা আপনার জন্য সিগারেট খরচ থেকে শুরু করে চাকুরী পর্যন্ত জোগান দিয়ে দিতে পারেন।
অবশ্য সাইকোলজির এই খেলাটি খেলতে পারেন বা এটাও ন্যায় যখন সেটা আপেক্ষিক ভাবে খারাপ কিছুর চেয়ে ভালো। আর অন্যায় হলো, মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলা করা। এজন্য সমাজে অরাজকতা বাড়বে এবং একদিন ঠিকই আপনার মুখোশ খুলে যাবে। আর নগ্ন সেই চেহারা দেখতে হবে বিভৎস।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩২
মি. বিকেল বলেছেন: না, আমি সাইকোলজিস্ট নই তবে এসব বিষয় নিয়ে প্রায় নিয়মিত কাজ করে থাকি। মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:২০
কামাল১৮ বলেছেন: সমাজে ভিকটিমকার্ড খেলার লোকের অভাব নাই। একজন নারী লাঞ্ছিত হলো।বেশির ভাগ পুরুষ ঘুরে ফিরে মেয়েটাকেই দায়ী করবে।সে কিন্তু ভিক্টিম আবার তাকেই দায়ী করা হয়।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৩
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত। কিন্তু এর উল্টা আয়নায় দেখলে, বেশিরভাগ নারি নির্যাতনের মামলা কিন্তু ভূয়া।
৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:২৯
কিরকুট বলেছেন: অন্যায্য সাহানুভুতি আদায়ের উদ্দেশ্যে ভিক্টিম কার্ড খেলা হয়।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৩
মি. বিকেল বলেছেন: অন পয়েন্ট!
ধন্যবাদ
৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৯:১২
শেরজা তপন বলেছেন: হুম এমন প্লেয়ার সমাজে অভাব নেই। আমারতো মনে আমরা সবাই কম বেশী সময় সুযোগ বুঝে ভিক্টিম কার্ড খেলে থাকি।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৪
মি. বিকেল বলেছেন: সহমত পোষণ করছি। ধন্যবাদ
৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:৩৯
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: টপিক দেখেই মনে হয়েছিল, আপনি এর আগেও এ টপিকের উপর লিখেছিলেন। এরপর দেখি শুরুতেই পোস্টে সেটা উল্লেখ করেছেন। প্রথম প্রকাশে যে কমেন্ট করেছিলাম, এখানেও সেটাই কপি-পেস্ট করলাম।
---
ভালো একটা বিষয় জানলাম। এরকম বৈশিষ্ট্যের অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে। তারা সত্যিকারেই ভিক্টিম, নাকি ভিক্টিম কার্ড প্লে করেছে, তা অবশ্য বের করা সত্যিই কঠিন।
তবে, জেনে বা না জেনে, জীবনে হয়ত প্রতিটা মানুষই কোনো না কোনো সময়ে অল্পবিস্তর ভিক্টিম অভিনয় করেন বলে আমার ধারণা।
---
অফেন্স ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স, এ স্ট্র্যাটেজিতেও অনেকে ভিক্টিম কার্ড প্লে করে থাকেন। ধরুন, আমি একজনকে কষে পিটানো দিলাম। স্বভাবতই সবাই আমার উপর চটবে। কিন্তু আমি বলা শুরু করলাম, সে বহুদিন ধরে আমাকে অত্যাচার করে আসছিল, আমাকে চড় দিয়েছিল। আমাকে মারার জন্য ওরা ১০০ জন মিলে আমাকে দাবড়ানি দিয়েছে। আমি জানি যে, এসব আমার বানানো কথা। তবু বলছি এ কারণে, যাতে আমার উপর জনগণের সহানুভূতি সৃষ্টি হয়, যাতে সবাই মানতে বাধ্য হয়, আমি যেটা করেছি, সেটা উচিত কাজই করেছি। এতে হবে কী, আমার অপরাধ কমে আসবে, বা আমি নিরপরাধ হিসাবে গণ্য হতে থাকবো, অধিকন্তু সাপোর্টার হিসাবে আমার সাথে অনেক মানুষ যুক্ত হয়ে যাবে।
পলিটিক্যাল ফিল্ডেও অহরহ ভিক্টিম কার্ড প্লে করা হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পাওয়া যাবে ভিক্টিম কার্ডের উদাহরণ। পুতিন-বাইডেন যুদ্ধে পুতিন ও বাইডেন দুজনই অল্প পরিমাণে হলেও ভিক্টিম কার্ড প্লে করে যাচ্ছেন।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৬
মি. বিকেল বলেছেন: সুন্দর ও সহজ উদাহরণ। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করা উচিত।
৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: জোর যার মুল্লুক তার।
৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৩৭
মি. বিকেল বলেছেন: বর্তমান রাজনীতির ন্যারেটিভ তো সেটাই বলে।
ধন্যবাদ
৭| ০১ লা মে, ২০২৩ ভোর ৪:৪৩
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বিষয়টি সম্পর্কে আমেরিকায় না আসলে হয়তো কখনো জানা হতো না। তবে এধরনের মানুষের প্রতি করুণা ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
০৪ ঠা মে, ২০২৩ রাত ২:৩৯
মি. বিকেল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:২১
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
আপনি কি একজন সাইকোলজিস্ট?
ভালো লিখেছেন।