নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম: শব্দ থেকে ধারণা, প্রাচীন থেকে আধুনিক

৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৬



‘প্রেম’ অনেক সুন্দর শব্দ। আমরা জীবনে সবাই কমবেশি কারো না কারো তো প্রেমে পড়েছি। আমার মতে, জীবনে অন্তত একবার প্রেমে পড়া জরুরী। কিন্তু ‘প্রেম’ শব্দটি এসেছে কোথা থেকে? এবং এই ‘প্রেম’ এর ধারণার উৎপত্তি হয় কীভাবে? যে ‘প্রেম’ শব্দ দিয়ে বাস্তব জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত ছড়াছড়ি থেকে বাড়াবাড়ি তার মূল উৎস কি? প্রেম ও যৌনতার মধ্যে অদৌ কি কোন সম্পর্ক আছে? প্রেমের সাথে ধর্মের ক্যামন সম্পর্ক? আজকের এই প্রবন্ধে আমি চেষ্টা করবো প্রেম সম্পর্কে নয়, প্রেম শব্দটি ও প্রেমের ধারণা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করবার।

অধিকাংশ ভাষাবিদ মনে করেন এই ‘প্রেম’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘প্রীति (prīti)’ থেকে, এর বাংলা উচ্চারণ ‘প্রীতি’। বাংলায় এর অর্থ দাঁড়ায় প্রেম, স্নেহ, ইচ্ছা ইত্যাদি। আবার কেউ কেউ মনে করেন ‘প্রেম’ শব্দটি এসেছে হিন্দি শব্দ ‘प्रेम’ (বাংলায় উচ্চারণ: প্রেমা) থেকে। কিন্তু সবচেয়ে প্রাচীন ধারণা পাওয়া যায় ঋগ্বেদ থেকে আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১,৫০০ সালে (BCE - Before Christian Era)।

এমনকি হিন্দু ধর্মের বেদেও এমন শব্দ পাওয়া যায়। কিন্তু আলোচনার শেষ হয় না। কারো কারো মতে, ‘প্রেম’ শব্দটি এসেছে একটি পালি শব্দ থেকে। আবার কেউ বা বলছেন, প্রেম মূলত অস্ট্রো-এশীয় শব্দ থেকে এসেছে। সুতরাং এই দ্বন্দ্ব থেকে একটু বাইরে আসা যাক কারণ শুধুমাত্র ‘প্রেম’ শব্দের উৎপত্তি জানলে কিন্তু হবে না; এর ধারণা সম্পর্কেও জানতে হবে।

প্রাচীন ভারতে ঋগ্বেদে ‘প্রীতি’ শব্দ পাওয়া গেলেও এই শব্দ দ্বারা সরাসরি নারী-পুরুষের সম্পর্ক কে বুঝানো হয় নাই। এমনকি গ্রীক পুরাণে উল্লেখিত শব্দ ‘এরোস (Eros)’ শব্দ দ্বারা রোমান্টিক প্রেমের দেবতা কে বুঝানো হলেও কিন্তু সরাসরি প্রেমের ধারণা এখানেও পাওয়া যায় না।

শুধুমাত্র রোমান সাহিত্যে ‘এমোর (Amor)’ শব্দ দ্বারা রোমান্টিক প্রেম বর্ণনায় ব্যবহৃত হত। খুবই মোটাদাগে এই হলো প্রাচীন যুগে ‘প্রেম’ শব্দের অবস্থান। এমন অনেক ভাষা ছিলো এবং এখন পর্যন্ত এমন কিছু ভাষা আছে যেসব ভাষার শব্দ ভান্ডারে ‘প্রেম’ বা ‘Love’ নামক কিছুর অস্তিত্ব-ই নাই। নারী-পুরুষের এই সম্পর্ক কে সরাসরি ‘সেক্স (Sex)’ শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা হত বা হয়।

মধ্যযুগে এসে এই শব্দের বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মধ্যযুগে এসে ইউরোপে একটি নতুন শব্দের উৎপত্তি হলো ‘কোর্টলি লাভ (Courtly Love)’। এটা এমন এক ধরণের প্রেম যেখানে একজন পুরুষ উচ্চ-পদস্থ একজন নারীর প্রেমে পড়েন। ঐতিহাসিকভাবে ফ্রান্সের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে এক ধরণের ভাষা ছিলো যেটার নাম ছিলো ‘প্রোভেনসাল’।

এই ভাষার কবি ও সঙ্গীতজ্ঞদের ‘ট্রুবেদার (Troubadours)’ বলা হত। এরা যে গান গাইতো বা কবিতা লিখতো সেসব ছিলো নারী-পুরুষের প্রেমের সম্পর্কের সাথে সম্পৃক্ত। আবার কোর্টলি লাভ (Courtly Love) ছিল মধ্যযুগীয় ইউরোপের একটি রোমান্টিক প্রেমের ধারণা যা ১২ শতকের দিকে এই প্রোভেনসাল সাহিত্যের মাধ্যমে উত্থান হয়।

আমরা অনেকেই মনে করি ‘প্লেটোনিক লাভ (Platonic Love)’ শব্দটির আবিষ্কার নতুন; হতেও পারে। কিন্তু এই প্লেটোনিক ভালোবাসা ও গোপন প্রেমের সম্পর্কের ধারণা ‘কোর্টলি লাভ’ এ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, কোর্টলি লাভ দিয়ে সেবা ও শিষ্টাচারও বুঝানো হত। আবার এই কোর্টলি লাভ যে ভাষা থেকে উৎপন্ন হয়েছিলো মানে প্রোভেনসাল ভাষার আধুনিক রূপ, এটাকে ‘অক্সিতান(Occitan)’ বলা হয়।

এখনও ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন এবং মোনাকোর কিছু অংশে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। তাই মধ্যযুগেও খুব বেশি প্রেমের ধারণা ছিলো কিনা সে-সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই বুঝা যায় না। হ্যাঁ, ছিলো, কিন্তু সেটার বহিঃপ্রকাশ একটি সংক্ষিপ্ত বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ ছিলো। সেখানে গোপনীয়তা থেকে প্লেটোনিক প্রেমের ধারণা পর্যন্ত পাওয়া যায়।

আধুনিক যুগ ও রোমান্টিক আন্দোলন যা মূলত সরাসরি আমাদের বর্তমান ধারণা অনুযায়ী রোমান্টিক আন্দোলন নয় তবুও এই প্রেম শব্দের বিবর্তন ঘটাতে অনেক বড় অনুঘটক হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই মানেন, ১৮ শতকের রোমান্টিক আন্দোলন ছিলো শিল্প, সাহিত্য, সঙ্গীত এবং দর্শনের একটি ব্যাপক পরিবর্তন যা ব্যক্তিগত অনুভূতি, আবেগ, কল্পনা এবং প্রকৃতির প্রতি জোর দিয়েছিল।

কেউ কেউ বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রোমান্টিক আন্দোলনের পূর্বে প্রেম ছিলো একধরনের সামাজিক রীতিনীতি এবং ব্যবসায়িক লেনদেন (নারী-পুরুষের সম্পর্ক অর্থে)। কিন্তু আন্দোলনের পর ব্যক্তির আবেগ ও অনুভূতির প্রতি জোর দেওয়া হয়েছিলো তাই প্রেমের ধারণাও হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত। ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ সিনেমার নাম পড়ে গেল, সময় পেলে একবার দেখবেন। এটাও কিন্তু প্রেম নির্ভর একটি সিনেমা।

আধুনিক সাহিত্য (১৮৯০ – বর্তমান) প্রেমের ধারণাকে খুঁজেছে, খোঁচা দিয়েছে, কিছু স্বরুপ বা কাঠামো নির্মাণও করেছে। আবার কেউ কেউ প্রেমের ধারণাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করেছেন। কিন্তু এই ঘূর্ণিপাক বা বিবর্তনে প্রেমের ধারণা অনেক বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কিছু উদাহরণ সামনে আনা যাক,

১. ঐতিহ্যবাহী রোমান্স: জেন অস্টেনের ‘প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ এবং নিকোলাস স্পার্কসের ‘দ্য নোটবুক’ ঐতিহ্যবাহী রোমান্স উপন্যাসের দুটি জনপ্রিয় উদাহরণ।
২. বাস্তবতাবাদ: ইয়ান ম্যাকইউয়ানের ‘অ্যাটোনমেন্ট’ এবং কার্সন ম্যাককুলার্সের ‘দ্য হার্ট ইজ আ লোনলি হান্টার’ রোমান্টিক সম্পর্কের আরও বাস্তবসম্মত চিত্র প্রদর্শন করে।
৩. আধুনিকতাবাদ এবং পরীক্ষামূলক সাহিত্য: ভার্জিনিয়া উল্ফের ‘টু দ্য লাইটহাউস’ এবং জেমস জয়েসের ‘ইউলিসেস’ রোমান্টিক প্রেমের ধারণাকে ভাঙতে এবং চ্যালেঞ্জ করতে আধুনিকতাবাদ এবং পরীক্ষামূলক সাহিত্যের কৌশল ব্যবহার করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রেমের দীর্ঘ এবং সমৃদ্ধ উদাহরণ পাওয়া যায়। অনেক ইতিহাসবিদের মতে অনুমান করা হয় যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০-৩০০ সালে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্য ‘কামসূত্র’ তে পাওয়া যায়। এছাড়াও ঋগ্বেদে প্রেমের ধারণা পাওয়া যায়।

ভারতীয় উপমহাদেশে আমরা কেউ কেউ পান খাই, তাই না? এই পানের ইতিহাস প্রায় ৩ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিছু কিছু ইতিহাসবিদদের মতে, পানপাতা সাজানোর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রেমের সম্পর্কের জন্য অনুরোধ এমনকি প্রত্যাখ্যান পর্যন্ত করা হত পানপাতা সাজানোর ধরণের উপর ভিত্তি করে।

এছাড়াও সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতা (৩৩০০-১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মোহেঞ্জোদাড়ো এবং হরপ্পা থেকে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি পান স্পিটুন এবং পান খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে এমন অন্যান্য জিনিসপত্রের ইঙ্গিত দেয়।

পান খাওয়া বা পানপাতার ব্যবহার সম্পর্কে আরো জানা যায়,
১. প্রাচীন গ্রীক ও রোমান লেখা: গ্রীক লেখক ডায়োডোরাস সিকিলাস (১ম শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ‘পান’ নামক একটি পানীয়ের উল্লেখ করেছিলেন যা ভারতীয়রা খেতেন।
২. ভারতীয় সাহিত্য: কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র (৪র্থ শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ) এবং কামসূত্র (২য় শতাব্দী খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সহ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে পানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
৩. সুপারি গাছ (Areca catechu) পানপাতার প্রধান উপাদান, এবং এটি ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অংশে পাওয়া যায়।

আরো অনেক রেফারেন্স আছে যা স্পষ্টত পানের ব্যবহার এবং কামসূত্রে তার উল্লেখ ও একাধিক সাহিত্য প্রেমের ধারণা দেয়। কিন্তু একক ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস প্রেমের ধারণাকে এভাবে দাবী করতে পারে না। কারণ প্রাচীন গ্রীক ও রোমানারাও বিভিন্ন প্রেমের দেব-দেবীর পূজো করতো এবং প্রেমের ধারণা দেয় এমন অনেক সাহিত্য তাদেরও আছে।

কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেমের ধারণার তুলনায় এই বিষয়টি জটিল হয়ে পড়বে। যেহেতু আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেমের ধারণা লালন করছি সেহেতু এই ধারণাকেই সবচেয়ে বেশি জায়গা দেবো। আমরা সরাসরি মোট ৩০টি ভাষায় ‘প্রেম’ শব্দের প্রতিশব্দ দেখবো,

১. Mandarin Chinese -爱, or Ài
২. Hindi- मोहब्बत, or mohabbat
৩. Spanish- amor
৪. English- love
৫. Arabic- حب
৬. Portuguese- amor
৭. Bengali- ভালবাসা, or Bhālabāsā
৮. Russian- люблю, or lyublyu
৯. Japanese-愛, or Ai
১০. German- liebe
১১. Punj ab i-ਪਸੰਦ ਹੈ, or Pasada hai
১২. Javanese- tresna
১৩. Korean-애정, or aejeong
১৪. Vietnamese- yêu
১৫. Telugu - ప్రేమ, or prēma
১৬. Marathi-प्रेम, or prēma
১৭. Tami l- அன்பு, or Anpu
১৮. French- amour
১৯. Urdu – محبت
২০. Italian- amore
২১. Turkish- Aşk
২২. Persian- عشق
২৩. Guajarati- પ્રેમ, or prēma
২৪. Polish- miłość
২৫. Ukrainian- любов, or lyubov
২৬. Malayalam- സ്നേഹം, or snēhaṁ
২৭. Kannada- ಪ್ರೀತಿ, or Prīti
২৮. Oriya- ପ୍ରେମ , or prēma
২৯. Burmese- ချစ်ခြင်းမေတ္တာ, or hkyithkyinnmayttar
৩০. T ha i- ความรัก, or Khwām rạk

অনেক ভাষার শব্দ খেয়াল করে দেখবেন সেখানে ‘প্রেম’ শব্দটির কাছাকাছি শব্দ আছে কিন্তু সরাসরি এমন শব্দ নাই। গুগল অনুবাদ করলে হবে না। এছাড়াও এ বিষয়ে আলাদা প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে।

সর্বশেষ হিন্দু ও ইসলাম ধর্মে প্রেমের ধারণা,
১. হিন্দুধর্ম: হিন্দু ধর্মগ্রন্থে প্রেমের বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। যেমন, রামায়ণে রাম ও সীতার প্রেম, মহাভারতে অর্জুন ও দ্রৌপদীর প্রেম, রাধা ও কৃষ্ণের প্রেম ইত্যাদি। এই প্রেম কাহিনীগুলি মানুষকে আধ্যাত্মিক ভালোবাসার ধারণা বুঝতে সাহায্য করে।
২. ইসলাম ধর্ম: ইসলাম ধর্ম নারী-পুরুষের মধ্যে প্রেমের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেয়, তবে কিছু শর্তাবলী পূরণের মাধ্যমে। নীতি-নৈতিকতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ইজ্জত-সম্মান রক্ষা এবং ইসলামের বিধান মেনে চলার মাধ্যমে নারী-পুরুষ সুন্দর ও পবিত্র প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে।

আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। খোদা হাফেজ!

ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.