নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্র্যান্ডের মোহ: আমাদের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিচ্ছবি

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:৩৫



মের্সিডিজ-বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, টয়োটা প্রিমিও এবং অডি ব্র্যান্ডের গাড়ি থেকে কেউ নামছেন তার চোখে সানগ্লাস থাকাটা আমাদের কাছে বিরুক্তির মনে হয় না। পুরুষ/নারী নির্বিশেষে তিনি সাধারণত কেমন পোশাক পড়বেন তা আমাদের মনে হয়তো এই কথাগুলো পড়েই মাথায় চলে এসেছে। তিনি খুব সম্ভবত তার পছন্দের গাড়ি থেকে কীভাবে নামবেন? কীভাবে আমাদের সাথে কথা বলবেন? এই সমস্ত কিছুর একধরণের ব্লু-প্রিন্ট আমাদের মাথায় গাঁথা আছে। আমরা হয়তো নিজেরাও জানিনা একটি কার (গাড়ি) কীভাবে নির্ণয় করেছে বা করছে আমাদের ব্যক্তিত্ব! আমাদের পোশাক-আশাক ও আচরণ নিয়ে ধারণা! অদ্ভুত না?

স্মার্টফোন তো এখন ডিমের দামে পাওয়া যায় তবুও কেউ যদি আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স নিয়ে সামনে আসে তো নিজের স্মার্টফোনটা বের করতে ইচ্ছে করে না, লজ্জা করে। একবার ভাবুন তো, কোনো ইভেন্টে আমাদের ডিমের দামে পাওয়া স্মার্টফোন একদিকে আর অন্যদিকে আরেকজনের হাতে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স। কোনটায় ছবি তোলা যেতে পারে? কোন স্মার্টফোনটা প্রাধান্য পায়? আমি অপশন মোটেই রাখছি না। যার হাতে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স আছে তাকেই এগিয়ে গিয়ে আমরা ছবিটা তুলতে বলি, আমরা ভাবি, এরচেয়ে ভালো ছবি তো আমার ডিমের দামে পাওয়া স্মার্টফোনে উঠবে না। এই-যে আমরা পিছিয়ে আছি বা থাকি আমাদের হাতে ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও! কেন বলুন তো? আমাদের স্মার্টফোনে ছবি উঠে না? ছবি উঠলে কি তা দেখা যায় না?

কারো হাতে রোলেক্স, ওমেগা, এবং ট্যাগ হিউয়ার ব্র্যান্ডের ঘড়ি দেখলে মনে হয়, ভদ্রলোকটির মাইনে নিশ্চয় অনেক! কাছে গিয়ে কেউ কেউ আবার জিজ্ঞেস করতেও দেখেছি, “ইয়ে মানে কত পড়েছে?” কিন্তু আমার হাতে থাকা ফুটপাতে কেনা সস্তা চাইনীজ ঘড়িও তো সঠিক সময় দেয়, দেয় না? দেয় তো!

গুচি, লুই ভিটন এবং প্রাডা ব্র্যান্ডের পোশাক ও অ্যাক্সেসরিজ সাথে যদি পারফিউম হিসেবে ক্রিস্টিয়ান ডিওর, শ্যানেল, এবং টম ফোর্ড ব্র্যান্ডের পারফিউম থাকে তাহলে খুব সহজেই আমরা বুঝতে পারি মানুষটি সমাজের কোন ক্লাসের। আমাদেরও এসব অ্যাক্সেসরিজ আছে। আমাদেরও পারফিউম আছে। আমরা তো খালি গায়ে থাকি না! কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো মহলে প্রবেশ করলে কেন আমাদের এমন মনে হয়, “আমার পারফিউম ব্যবহারে আরো সাবধান হওয়া লাগতো!”, “এই ড্রেস-আপ সেন্স দিয়ে কি চলে!” কিন্তু আমাদের পারফিউম থেকেও তো সুগন্ধি পাওয়া যায়। ব্র্যান্ড যেটাই হোক আমাদের পোশাক-আশাকও যথেষ্ট কমফোর্ট দেয়। ওদের মত করে দেয় না? ওদের মত করে শরীর ঢাকে না? সবই তো হয়!

কার্টিয়ার এবং টিফানি অ্যান্ড কো. ব্র্যান্ডের গয়না দেখলে অনেক মেয়েদের ঈর্ষা করে। এমন ঘটনাও বাংলাদেশে আছে উক্ত ব্র্যান্ডের জুয়েলারি পরে যারা নির্দিষ্ট কোনো ইভেন্টে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন আমন্ত্রিত কিন্তু আসেন নাই। আবার কেউ কেউ পাশের বাড়ির ভাবির কাছে থেকে উক্ত ইভেন্টের জন্য কিছু জুয়েলারি পর্যন্ত ধার নেন। অবশ্য এ সমাজে শাড়ি ধার করা তো অনেক কমন। কিন্তু আপনার গলায়ও তো স্বর্ণের চেইন দেখি, আপনার স্বর্ণে তো খাদ নাই। খাদ বিহীন স্বর্ণের জুয়েলারি হাতে নিয়ে অনেকেই ভাবেন, “নাহ্‌, ডিজাইন টা ঠিক অমুক-তমুকের মত হলো না!”

স্যামসাং এবং এলজি ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম টেলিভিশন ও হোম থিয়েটার সিস্টেম সাথে গ্রী ব্রান্ডের এয়ার কন্ডিশন এবং রুমে বসে দুটো রিমোট হাতে রাখলেই পুরো বাড়ি নিয়ন্ত্রণের যে অভিজাত চিন্তা তা কিন্তু অনেকের বাস্তবতা। আমাদের বাড়িতেও তো টেলিভিশন আছে, ওখানেও সব চ্যানেল খুঁজে পাওয়া যায়, অ্যান্ড্রয়েড টিভিও আছে, সবই চলে। এয়ার কন্ডিশনও আছে, হয়তো গ্রী ব্র্যান্ডের নয়। কিন্তু তার বাড়িতে যখন ঘুরে আসেন তখন একটু হলেও ঈর্ষা হয়, তাই না? তিনি যখন আবার আপনার বাড়িতে আসেন তখন জোর করে বা কষ্ট করে তাকে জানান দেন, “এই গরীবের বাড়িতে হঠাৎ...” আমাদের নূন্যতম লজ্জাও করে না। কেউ এয়ারকন্ডিশন রেখে হাতপাখা হাতে নিয়েছিলো এ নিয়ে আমাদের বাপ-দাদার গল্প অতি পুরনো।

মোটামুটি উপরোক্ত সবগুলো আইটেম যোগ করুন এবং পেশায় যদি আপনি বিসিএস এডমিন ক্যাডার হোন তাহলে সমাজ আপনাকে আর প্রশ্ন করবে না। উল্টো এই সমাজ আপনার থেকে নসিহত নিতে থাকবে। কি করবো? কি পরবো? কীভাবে চলবো?... সব... মানে ঐ পর্যন্ত যদি আপনি কোনোভাবে যেতে পারেন তাহলে রাস্তাঘাটে শুধু সালাম/আদাব/নমস্কার নয়, আপনি চলে যাবেন সমাজের তীক্ত প্রশ্নের বাইরে।

আপনি কি খাচ্ছেন তা নিয়ে এই সমাজ আপনাকে আর নসিহত দেবে না। আপনি কতটুকু ধার্মিক তা দিয়ে সমাজ আপনাকে আর মাপতে যাবে না। আপনার বউয়ের ব্লাউজটা ছেঁড়া না খোলা কেউ ভয়ে দেখতেও যাবে না। পাছে আবার উল্টো কেস খেয়ে বসে। ঐ পর্যন্ত যাওয়া বা ঐ পরিমাণ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশের সমাজে আপনি যেমন ইচ্ছে তেমনভাবে চলতে পারবেন, বলতে পারবেন, খাইতে পারবেন, পরতে পারবেন। তাই আমি একটা কথা সবসময় বলি, একটি পুরোদস্তুর বেঈমানী সিস্টেমে ঈমানদারিত্ব দেখানোর কোনো প্রয়োজন অন্তত আমি দেখি না!

কারণ ধর্ম থেকে যাবতীয় নীতি-নৈতিকতার প্রশ্নে এই সমাজ একচোখা। আপনি চুরি করেন, ডাকাতি করেন কিন্তু মধ্যবিত্ত বা গরীব হয়ে এই সমাজে অন্তত মইরেন না! সামাঝদার কে লিয়ে ইশারা হি কাফি হে!

Also Read It On: ব্র্যান্ডের মোহ: আমাদের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক অবস্থানের প্রতিচ্ছবি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.