নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

উদ্দেশ্যহীন রাষ্ট্র, দ্বিধাগ্রস্ত প্রজন্ম: বাংলাদেশের ‘গন্তব্য’ কোথায়?

০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৫৯




আমাদের কি পরিকল্পিতভাবে একটি দিশাহারা ও দ্বিধাদ্বন্দে জড়িত প্রজন্মে পরিণত করা হয়েছে? দীর্ঘদিন ধরে এই প্রশ্ন আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো। হয়তো আমাদের অনেকেরই মনে এই প্রশ্ন সময়-সময় এসে নাড়া দেয়।

আমি পুরো বিষয়টিকে খুবই সংক্ষিপ্ত ও সহজভাবে তুলে ধরছি যাতে করে আমাদের সবার বুঝতে সুবিধা হয়।

ছোটবেলা থেকে আমাদের পরিবার, সমাজ ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আমাদের ভোগবাদ এর বিপক্ষে সোচ্চার করে গড়ে তুলেছে। মিতব্যয়ী হবার শতগুণ আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু এই আমরা যখন বড় হলাম তখন আমাদের বিলাসবহুল জীবনের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিলাসবহুল গাড়ি, বাড়ি এবং বড় অঙ্কের মাইনে সমাজের কাছে অপেক্ষাকৃত বেশি গ্রহণযোগ্য মিতব্যয়ী বা মিনিমালিস্ট জীবনের চেয়ে। কিন্তু কথা ছিলো, আমদের মিতব্যয়ী হবার, অথচ আমাদের হতে হচ্ছে ভোগবাদী।

বড় মানুষ হবার মাপকাঠি হিসেবে আমাদের শেখানো হলো, সৎ হতে হবে, পরোপকারী হতে হবে, ক্ষমাশীল হতে হবে, শুধু নিজের জন্য নয় নিজের সাথে সম্পর্কিত সবার কথা ভাবতে হবে। মিথ্যা বলা, ঘুষ নেওয়া, দূর্নীতি করা যাবে না। কিন্তু আমরা বড় হয়ে দেখছি ‘স্বার্থপর’ হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাত্ত্বিক পৃথিবীর বুঁদ বুঁদ থেকে বের হতেই বাস্তবতা আমাদের বলছে, তুমি কতটুকু সৎ, পরোপকারী, ক্ষমাশীল এবং ন্যায়ের পক্ষে আছো তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তোমার কাছে কত টাকা আছে?

ধর্মীয় অনুশাসনের ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব তা পালন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা যা করছি (আপনি হিন্দু হোন, মুসলিম হোন) তা অধর্মের অনুশীলনের সাথে বেশি জড়িত। আমাদের ব্যক্তি বিশ্বাস থেকে ধর্ম অন্যের উপর চাপিয়ে দেবার এক ধরণের প্রবণতা বিদ্যমান। আমরা সবাই, আমরা যা বিশ্বাস করি, যাকে বিশ্বাস করি এবং যেটুকু বিশ্বাস করি সেটি-ই একমাত্র সত্যি এবং বাকিসব মিথ্যা এবং বাকি সমস্ত কিছুকে একটি সত্যর উপর দাঁড় না হওয়া অবধি তার কোন অর্থ নাই।

আর এই বিষয়টি শুধু একজন উগ্র-হিন্দু/মুসলিম দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যিনি একজন নাস্তিক তিনিও চাইছেন, তিনি যেহেতু সঠিক এবং তিনিই একমাত্র সত্য সুতরাং সবাইকে নাস্তিক হতে হবে। আর যদি নাস্তিক হতে নাও পারেন তবে তার মত করে অন্তত চিন্তা করতে হবে। ফলে আমরা সবাই একধরণের উগ্রবাদী মনোভাব নিজের মধ্যে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় পালন করছি। আমাদের সামনে যা কিছুই হচ্ছে তা আমাদের মোতাবেক হতে হবে।

এক জীবনে আমাদের অর্জন হিসেবে আমাদের ব্যক্তিত্ব ও আখলাক (চরিত্র) কে সবসময় প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজন বাবা তার সন্তানের নিকট পার্থিব অর্জনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যিনি আমাদের শিখিয়েছেন সমাজের জন্য, দেশের জন্য কিছু করে দেখাতে হবে ঐ একই বাবা আমরা বড় হয়ে গেলে মনে মনে চাইছেন, সমাজ আমাদেরকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করুক এই অনুপাতের একটি চাকুরী বা সামাজিক অবস্থান। আমাদের দরিদ্র বাবার নিজের বড় গাড়ি-বাড়ি নাও থাকতে পারে কিন্তু আমাদের না-থাকাটাকে তিনি ব্যর্থতা মনে করছেন।

এই সমাজ ও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান আমাদের সামাজিক ব্যাধি ও কুসংস্কার এড়ানোর কথা বলে যাচ্ছেন বারবার। কিন্তু বড় হয়ে দেখবেন এই একই সমাজ আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের ভুল কাজ করতে বাধ্য করছে এবং কুসংস্কার এড়ানোর কথা থেকে যাচ্ছে তাত্ত্বিক আলোচনাতেই মানে ছোটবেলার আদর্শলিপিতে। উদাহরণস্বরূপ: যৌতুক ও নারীর অধিকার নিয়ে দিস্তার পর দিস্তা রচনা লিখে বড় হয়ে দেখছেন সমাজ প্রকৃত পক্ষে চাইছে না যৌতুক মুক্ত সমাজে পরিণত হতে বা নারীর আর্থিক স্বাধীনতার বিষয়ে সোচ্চার হতে।

এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় ভূত-প্রেতে বিশ্বাস এবং এসব থেকে মুক্তির জন্য নানান রকম জাদু টোনা ও তন্ত্রমন্ত্রের উপস্থিতি বিদ্যমান।

একদিকে রাষ্ট্র চাইছে তার আরো সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির নাগরিকদের দরকার অন্যদিকে এই রাষ্ট্র-ই তার নাগরিকদের জন্য আরো সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী হবার জন্য বাজেট বরাদ্দ করছেন না। রাষ্ট্রে নতুন কিছু উপহার দিতে গেলে আমাদেরকে অনেকাংশে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা আছে। রাষ্ট্রও সেটাই বলছে। কিন্তু আমরা যে উদ্যোক্তা হবো এজন্য একটি সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে চাইছেন না।

একচেটিয়া বাজার কে রাষ্ট্র যত পছন্দ করছেন বিচিত্র বাজারকে তারচেয়েও বেশি হুমকি হিসেবে মনে করছেন। ফলতঃ আমাদের অবস্থা এতটাই দিশেহারা যে, আমরা সাধারণ একটি চাকুরী ছাড়তে চাইলেও আমাদের বাবা কে জিগ্যেস করতে হচ্ছে, “বাবা, এই চাকুরী ছেড়ে দিই?” বাবারা তো ‘না’ বলবেই।

ফলে পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত সমস্ত কাঠামো একধরণের ব্যাপক দ্বিধাদ্বন্দে জর্জরিত। আমাদের এই পরিবারগুলো, আমাদের এই সমাজ, আমাদের এই রাষ্ট্র আসলে কেউ-ই জানেন না, আমরা যাচ্ছি কোথায়? আমাদের যাওয়া উচিত কোথায়? জীবন যদি ‘A’ থেকে ‘B’ প্রান্ত পর্যন্ত ক্যাসেটের ফিতা হয় তাহলে ঐ পর্যন্ত নির্দিষ্ট পথ কি?

জীবন গড়ার ক্ষেত্রে নানান মত থাকবে, নানান পথ থাকবে কিন্তু আমি যদি সামগ্রীকভাবে ‘বাংলাদেশ’ কে একটি ব্যক্তি বুঝাই তাহলে তার গন্তব্য ঠিক কোনদিকে? তাই সময়-সময় মনে হয়, খুব সম্ভবত আমাদের পরিকল্পিতভাবেই দিশেহারা প্রজন্মে পরিণত করা হয়েছে। আমাদের মধ্যে রোজকার যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব বিদ্যমান সেটা আসলে কৃত্রিমভাবে আমাদের মধ্যে ইমপ্ল্যান্ট করা হয়েছে। ফলে এই রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে যে বৈচিত্রের কারণে আমরা আনন্দিত হই তা মনে বেশিক্ষণ টেকসই হয় না।

কর্মসংস্থান বিষয়টি নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ। তারচেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমরা আগামীর পৃথিবীতে কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছি?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১:২৯

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সত্যি তাই, আমাদের বাংলাদেশ একটি উদ্দেশ্যহীন রাষ্ট্র এখন ।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২০

মি. বিকেল বলেছেন: এইচ এন নার্গিস, আপনার পর্যবেক্ষণের সাথে একমত হয়ে বলতে হয়—বাংলাদেশের এই উদ্দেশ্যহীনতার মূলে আছে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভেতরে গেঁথে থাকা দ্বন্দ্বের জাল: একদিকে আমাদের শেখানো হয় মিতব্যয়িতা, সততা, সমাজসেবার আদর্শ, অন্যদিকে বাস্তবতায় পুরস্কৃত হয় ভোগবাদ, স্বার্থপরতা ও ক্ষমতার লড়াই। ধর্মীয় উগ্রতা, যৌতুকপ্রথা, কুসংস্কার আর নীতিহীন রাজনীতির ঘূর্ণিপাকে আমরা হারিয়ে ফেলছি সামষ্টিক লক্ষ্যের দিশা।

রাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জোয়ার গুনতে গিয়ে নৈতিক পতন, সৃজনশীলতার অভাব আর প্রজন্মের স্বপ্নহীনতাকে উপেক্ষা করে, তখনই জন্ম নেয় এই 'গন্তব্যহীনতা'। তবে এই বোধোদয়ই সম্ভবত প্রথম পদক্ষেপ—স্বীকার করলে তবেই তো সমাধানের পথ খোঁজা যাবে। প্রজন্মের দ্বিধাগ্রস্ততা কাটাতে চাই আদর্শ ও বাস্তবতার সেতুবন্ধন, রাষ্ট্রের স্পষ্ট দর্শন এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা।

২| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: এই দেশে জন্ম নেওয়াই আমাদের অপরাধ।

২৭ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ২:২২

মি. বিকেল বলেছেন: রাজীব নুর, আপনার বেদনাদায়ক মন্তব্যের গভীরে লুকিয়ে আছে প্রজন্মের হতাশা ও ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা—যে দেশে জন্ম নিয়েই যেন আমরা পাপের বোঝা কাঁধে নিয়ে হাঁটি, যেখানে দুর্নীতি-অসাম্য-অবিচারের চাকা প্রতিদিন আমাদের স্বপ্নকে পিষে দেয়, সেখানে এমন অনুভূতি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এই হতাশাই যখন চূড়ান্ত সত্য হয়ে দাঁড়ায়, তখনই তো ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার শক্তি হারিয়ে ফেলি। জন্মভূমির অভিশাপ নয়, বরং এর ভাঙা কাঠামোকে নতুন করে গড়ার দায় আমাদেরই—শিক্ষা, ন্যায়বিচার, সুশাসনের ভিত্তিতে এমন সমাজ যেখানে জন্ম নেওয়াটা অপরাধ নয়, সম্ভাবনার সূচনা। রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ, তখন ব্যক্তির সংগ্রামই ইতিহাস বদলের হাতিয়ার; আমাদের হতাশা যেন আত্মসমর্পণের ভাষা না হয়, বরং বিদ্রোহের স্লোগান হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.