![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সামাজিক অবক্ষয় একটি দূর্ঘটনা নয়। নৈতিক অবক্ষয় হুট করেই একটি জাতির মধ্যে দেখা দেয় না। মানুষের মধ্যে তার মূল্যবোধের ইতিবাচক বা নেতিবাচক পরিবর্তন রাতারাতি হয় না। এবং এই সমস্ত কিছুর সাথে সরাসরি ক্ষমতা ও আইনের সম্পর্ক নাই। তীব্র নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় মহামারীর মত দেখা দিলে সেটাকে শুধু আইনের শাসন দিয়ে পুরোপুরি দমন করা সম্ভব নয়। এতে করে ঐ সমাজে আরো অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে লালিত-পালিত হয়ে আসা একটি নোংরা সামাজিক কাঠামো আমাদের যে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে সেখান থেকে যদি আমাদের সবার উদ্ধার হবার স্ব-ইচ্ছাও থাকে তাহলেও ঠিক ঐ একই সময় লেগে যাতে পারে পূর্বের মীমাংসিত জায়গায় পৌঁছাতে; সমাধান পর্যন্তও নয়।
জ্ঞানত যে দূর্বাঘাসের চাষাবাদ আমরা আমাদের উর্বর জমিতে করেছি তার খেসারত হিসেবে অপচয়ের যে মূল্য সেটা কিন্তু আমাদের চুকাতে বাধ্য থাকতে হবে।
আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এমন একটি রাষ্ট্রে বসবাস করছি যেখানে একজন খুনী জানেন যে, তিনি যে কোন সময় যে কাউকে খুন করতে পারেন এবং এজন্য তাকে কোনকিছুর জন্য ভয় পাওয়ার কারণ নাই। তার ধর্মের অনুশাসন ভাঙার ভয় নাই, তার সামাজিক রীতিনীতি থেকে মূল্যবোধ গোল্লায় যাওয়ার ভয় নাই, তার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নাই।
প্রসঙ্গত, একজন ‘ধর্ষক’ মূলত একজন অপরাধী এবং বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ছাড়া কিছুই নন। কিন্তু যে সমাজ ধর্ষকদের উৎপাদন করে চলেছে দীর্ঘসময় তার নিজের ইতিবাচক সংষ্কারের স্ব-ইচ্ছাও খুবই জরুরী। যে সমাজ মুখে ন্যায়ের কথা বলে কিন্তু কাজেকর্মে সেসব প্রতিষ্ঠিত ‘মূল্যবোধ’ ও ‘রীতিনীতি’ হিসেবে রূপদান করতে চায় না —এরাই মূলত অপরাধীদের সাহস জুগিয়ে থাকে।
এই সাহস মূলত দুঃসাহস এবং “আমার যা ইচ্ছা খুশি আমি তাই করতে পারি” —এই চিন্তার প্রতিফলন।
সামাজিক অবক্ষয় মূলত তৈরি হয় সমাজে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, দুর্নীতি বেড়ে যাওয়া, নৈতিকতার অভাব দেখা দেওয়া, মানুষের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধার অভাব দেখা দেওয়া, মাদকাসক্তি বেড়ে যাওয়া, পারিবারিক বিচ্ছিন্নতা চরমে পৌঁছে যাওয়া এবং সার্বিকভাবে চারপাশে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা কমে যাওয়া এবং ব্যাপক সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়া।
এছাড়াও দারিদ্রতা এবং বেকারত্ব সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে মানুষদের ঠেলে দেয়। মানুষ চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, চাঁদাবাজি করতে শুরু করে।
একটি রাষ্ট্র যখন সামাজিক অবক্ষয়ের চরমে পৌঁছে যায় তখন ঐ রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে ‘ঠিক’ বা ‘ভুল’ বলে কোনো শব্দের উপস্থিতি খুঁজে না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই নাগরিক যা কিছুই করছে তা শুধুমাত্র তার ‘Temptation (প্রলোভন/কুকর্মে প্ররোচনা)’ দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। এই ‘মব (ভীড়)’ বাইনারীতে দুই রকম। এক, যে ভীড় নিজেই নিজেকে ‘কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে মানেন এবং নিজ থেকে অযাচিত ভাবে জনগণ ও রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় সাধনে কাজ করতে চান। দুই, যে ভীড় ‘নৈরাজ্যবাদী (Anarchist)’ এবং সার্বক্ষণিক ভাবে রাষ্ট্রের সমস্ত চিন্তকদের মাথাব্যথার কারণ এবং রাষ্ট্রে অশান্তির প্রধান কারণ।
দ্বিতীয় এই ভীড় আপনাকে সবসময় বাইনারি ট্যাগিং করে আপনার চিন্তাকে গুমোট করেন। আপনাকে ও আমাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তোলেন। গত আওয়ামী সরকারের শাসনকালীন সময়ে একটি শক্তিশালী বাইনারি ট্যাগিং উপস্থিত ছিলো। এক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চেতনা এবং দুই, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চেতনা।
জুলাই বিপ্লবের সরকার বা আওয়ামী উত্তর সরকারের সময়েও আমরা এই ধরণের বাইনারি ট্যাগিং দেখতে পাচ্ছি। এক, তওহীদী জনতা এবং দুই, শাহবাগী বা উগ্র বামপন্থী। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে একটি বিশাল জনমত ও জনসংখ্যা আছে তা আলোচনায় কখনোই গুরুত্ব পেতে আজ পর্যন্ত দেখলাম না।
আমরা যারা দীর্ঘদিন যাবৎ লেখালেখি করছি, বিশ্বাস করুন আমাদের মধ্যে বাংলাদেশকে ঘিরে খুব ইতিবাচক চিন্তা কাজ করে না। আমরা যেদিন থেকে ‘প্রশ্ন’ করতে শুরু করেছি, আমরা যেদিন থেকে ‘অন্যায়’ এর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছি, আমরা যেদিন থেকে ‘বাংলাদেশ’ কে বুঝতে চেষ্টা করেছি সেদিন থেকেই আমাদের এমন এমন কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে যে, আমাদের অনেকের মধ্যে একরকম ভয়ানক অসহায়ত্ব কাজ করতে শুরু করেছে।
আজও যখন আমরা লিখতে শুরু করি তখনও ঐ অসহায়ত্ব ও একধরণের অপরাধবোধ নিয়েই লিখে যেতে হয়; বিশেষ করে আমরা যারা দলকানা নই, বিশেষ করে আমাদের যাদের চোখে বিশেষ কোন লেন্স লাগানো নাই।
খবরের পাতায় উঠে আসা একসময়ের আলোচিত একটি শিরোনাম মনে করিয়ে দিই, “মোসারাত জাহান মুনিয়া: এক তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে করা মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ সব আসামী” — ২৬ এপ্রিল, ২০২১ সালের এই ঘটনা আমরা খুব কাছে থেকে দেখেছি, বুঝেছি, শিখেছি। আমরা দেখেছি কীভাবে টাকা থাকলেই একটি অভিজাত পরিবার তার নোংরামিকে, তার কুকর্মকে খুব সহজেই ঢেকে দিতে পারেন। মিডিয়ার মাধ্যমে ভিক্টিম কে কীভাবে ব্লেমিং করা যেতে পারে। এই ধরণের দূর্ঘটনায় আমাদের বারবার অসহায় বলে মনে হয়েছে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে নির্বাচনের সময়। নোয়াখালীর এই মহিলাকে তার চার সন্তানের সামনে শুধুমাত্র বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ায় গণধর্ষণ করা হয়। শাস্তিস্বরূপ আওয়ামী রাজনৈতিক দল তাদের এক স্থানীয় নেতা রুহুল আমিন কে বহিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। কতবড় দুঃসাহস জন্মালে একটি বড় দলের বড় এক নেতার নেতৃত্বে এমন ঘটনা ঘটতে পারে? আমাদের তখনও অসহায় বোধ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২০২২ সালে। চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন ছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা হয়। এই ধর্ষণে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন সে সময়ের ছাত্রলীগ নেতা এবং সেসময়ের শিক্ষা উপমন্ত্রীর সহযোগী রেজাউল হক। পরবর্তীতে এই ছাত্রী যখন ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে থানায় যান সেখানেই তাকে আটকে দেওয়া হয়। মানে তিনি ধর্ষণের অভিযোগ পর্যন্ত করতে পারেন নাই। আর আমরা বুঝতে পারি, ক্ষমতার দাপট ও দম্ভ কোথায় পৌঁছালে এমন হেয় কাজ করা সম্ভব?
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০ সালে। এমসি কলেজের এক ছাত্রাবাসে এক নববধূকে তার স্বামীর সামনে গণধর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ৮ জন ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়; সবগুলোই ছিলো ছাত্রলীগ কর্মী। গত চার বছর ধরে কোন এক অজানা কারণে আজও এই বিচার স্থগিত রয়েছে। আজও এই বিষয় নিয়ে কোথাও বিশেষ কলম, ব্লগ বা সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়াজ তুলতে কাউকে আমি দেখি নাই।
এই সব দূর্ঘটনার ফিরিস্তি এত দীর্ঘ যে, এক কলমে সব তুলে আনা সম্ভব নয়। এই সমস্ত ঘটনাকে আমরা চিহ্নিত করতে পারি টাকার জোর, ক্ষমতার জোর ও ভয়ের রাজনীতি দিয়ে। যেখানে আইনের শাসন বলে আমি তো কিছু দেখতে পাই নি।
কিন্তু, আমি এই রাজনৈতিক ও টাকার বাইরের সামাজিক অবক্ষয়ের কথা বলছি। রাজনৈতিক নেতাদের একদিন না একদিন শনাক্ত করা সম্ভব, ইচ্ছা হলে বিচারও করা সম্ভব কিন্তু সমাজের মধ্যে যে নোংরা যৌনতা ও অশ্লীলতার চর্চা বিরাজমান সেটা কীভাবে আমরা রুখে দেবো?
ধর্ষণ/বাল্যকামিতা/পিডোফিলিক মানসিকতার শেকড় খুব গভীরে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলেজ থেকে মাদ্রাসা, সব জায়গায় এক ধরণের নোংরা ও অশ্লীল যৌনতার অনুশীলন চলমান। এই নিয়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কে পর্যন্ত অব্যহতিও দেওয়া হয়েছে। টিউশন ও কোচিং সেন্টারেও এক ধরণের অশ্লীল যৌনতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার যে মাদ্রাসায় ধর্মীয় অনুশাসন শেখানোর কথা সেখানে চলছে বলাৎকার।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ধর্ষণের অভিযোগ সামনে আসছে সেসবের বেশিরভাগ পরিবার কেন্দ্রিক। মাগুরায় ৮ বছরের শিশু আছিয়া বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসে বোনের শশুরের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনাটি গত ৬ মার্চ বৃহস্পতিবার ঘটে। এমনকি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিশুটির দুলাভাই নিজেও। এই ঘটনা সেই আইয়ামে জাহেলিয়া যুগের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
কিন্তু হুট করেই কি এই সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে? নিশ্চয় নয়। এই সামাজিক অবক্ষয় অনেক আগে থেকেই চর্চিত হয়ে আসছিলো। এই যে আমাদের তথাকথিত মিডিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া শান্তিতে শীতনিদ্রায় ছিলেন দীর্ঘদিন। হয়তো ভয়ে, নয়তো সয়ে, অথবা স্ব-ইচ্ছায় অপ্রকাশিত থেকে গেছে এদেশের অনেক ‘আছিয়া’।
আজ যখন আমরা আন্দোলনে নামছি তখন ঠিক কার বিরুদ্ধে নামছি? কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি? এমন তো নয় যে, খোদ নিজেই নিজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি! ঠিকাছে, সরকার একটা পদক্ষেপ তাও নিয়েছেন। আমাদের আগের চেয়ে একটু কম অসহায় বলে মনে হচ্ছে এখন।
কিন্তু, যে আবর্জনা আমাদের পরিবার থেকে সমাজের অঙ্গে অঙ্গে পরিকল্পিতভাবে বা অনিচ্ছায় জড়িয়ে গেছে সেটা থেকে কে উদ্ধার দেবে? সব পরিবারে কি একজন পুলিশ মোতায়েন করা হবে? অবশ্য, পুলিশকেও বিশ্বাস করার দীর্ঘদিনের মর্মান্তিক ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।
ছবি: Euro-Med Human Rights Monitor
২| ১০ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৫
নতুন বলেছেন: ধর্ষকের বিচার না হলে সেখানে ধর্ষন করবেই।
যারা ধর্ষন করতে সাহস পায় তারা এলাকাতে রাজনিতিক নেতাদের ছায়ায় থাকে।
অপরাধের সাজা না হওয়ার জন্যই আমাদের দেশের এই অবস্থা।
প্রসঙ্গত, একজন ‘ধর্ষক’ মূলত একজন অপরাধী এবং বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ ছাড়া কিছুই নন। কিন্তু যে সমাজ ধর্ষকদের উৎপাদন করে চলেছে দীর্ঘসময় তার নিজের ইতিবাচক সংষ্কারের স্ব-ইচ্ছাও খুবই জরুরী। যে সমাজ মুখে ন্যায়ের কথা বলে কিন্তু কাজেকর্মে সেসব প্রতিষ্ঠিত ‘মূল্যবোধ’ ও ‘রীতিনীতি’ হিসেবে রূপদান করতে চায় না —এরাই মূলত অপরাধীদের সাহস জুগিয়ে থাকে।
আপনার এই কথাগুলিই সমাজের বিরাট অংশ মানতে চায় না। তারা মনে করে নারীর পোষাক দায়ী, নারী পুরুষের কথা মতন চলেনা সেই জন্যেই এগুলি হয়।
কিন্তু সমাজের সচেতন পুরুষেরা যদি আওয়াজ তোলে তবে রাস্তায় ইভ টিজিং হয় না। ধর্ষকের পরিবার, প্রতিবেশি, এলাকার নেতারা চাইলেই অপরাধীর বিচার করা সম্ভব।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছুর মুলে হলো- যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তারা অযোগ্য অদক্ষ হলেই সমাজে মন্দ কাজের সংখ্যা বেড়ে যায়।