নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবীণদের নীতিহীনতা নাকি নবীনদের অধৈর্য? সমাজ মেরামতির টুলকিটে কেন অনুপস্থিত ‘সহমর্মিতার পেরেক’?

২৫ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৪৮



বয়স শুধুমাত্র একটি ‘সংখ্যা’। নবীন ও প্রবীণ কে আমি সরাসরি মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাই না। দীর্ঘদিন ধরে এই বিষয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে লিখলেও সরাসরি কিছু বলার দুঃসাহস কখনোই ছিলো না; আজও হয়তো নাই। বিশেষ করে যার এক জীবনের অভিজ্ঞতা আছে মানে প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা আছে যে কোন মাঠে তিনি ঐ মাঠ সম্পর্কে নিঃসন্দেহে ভালো জানেন। এখন বিষয়টি হলো, মাঠ সম্পর্কে জানা এবং ঐ একই মাঠে খেলার পারফর্মেন্স নিয়ে।

প্রথমে আমি চেষ্টা করছি, নবীন ও প্রবীণ বলতে আমি আসলে কি বুঝি? বা, নবীন ও প্রবীণ এর সংজ্ঞা কী হিসেবে দাঁড় করাতে চাই? যে সংজ্ঞায় অন্তত আমি একটি নায্য দাবী উপস্থাপন করতে পারি। যাতে করে নবীন সংজ্ঞায় হুট করে বয়সের ওজন দিয়ে সব গুলিয়ে ফেলা না-হয়। অথবা, প্রবীণ সংজ্ঞায় শুধুমাত্র বয়স্কদের তালিকাভুক্ত করে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে না-হয়।

আমি নবীনদের বহুক্ষেত্রে এমন কিছু দুর্দান্ত ভূমিকায় দেখেছি এবং অনেক মুদ্ধ হয়েছি। উদাহরণস্বরূপ: একজন কম বয়সী এবং মাত্র মাত্র কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মে যোগদান করেছেন। কিন্তু তিনি তার ব্যক্তিত্ব, তিনি তার নিয়মানুবর্তিতা, তিনি তার সততা, তিনি তার কাজে নিষ্ঠা, তিনি তার পরিকল্পনা ইত্যাদি এত সুচারুভাবে সাজিয়েছেন এবং নিজের ভূমিকা দুর্দান্ত ভাবে পালন করে যাচ্ছেন; তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। জুলাই বিপ্লব থেকে শুরু করে ব্যক্তি অভিজ্ঞতায় আমার চেয়ে কম বয়সী নবীনরাও এদেশের বহু মাঠে আউট-পারফর্ম করে যাচ্ছেন।

জুলাই বিপ্লবের সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের একটি বক্তব্য আমাদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিলো। যতদূর মনে পড়ে, ঐ শিক্ষক সরাসরি বলেছিলেন, “তিনি তাঁর ছাত্রদের থেকে অনেক কিছু শিখেছেন।” এবং, ঐ বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি নবীনদের (তাঁর ছাত্রদের) কুর্নিশ জানিয়েছেন তাদের সাহসী অবস্থান বিবেচনায়। ঐ দৃশ্য আজও আমার চোখে ভাসে এবং মনে হয় নেহাৎ একজন ভদ্রলোক ছাড়া এমন আচরণ দেখানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়; বিশেষ করে যার কাছে এত এত অভিজ্ঞতা আছে, এত এত ছাত্রদের নিয়মিত পাঠদান করছেন। অভিভাবক সমতুল্য ঐ ভদ্রলোকের প্রতি আমার শ্রদ্ধা সেদিন অনেক বেড়ে গেছিলো।

আবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার চেয়েও কিছু কমবয়সী নবীনদের নিষ্ঠা, সততা, সাহস এবং কর্মে দক্ষতা শুধুমাত্র আমাকে নয়; আমার সময় বা আমার টাইমলাইনের প্রজন্মের অধিকাংশকে হার মানিয়েছেন। আমি বা আমার মত কিছু মানুষ আজও জীবনের বহুদিক নিয়ে নিজেদের অবস্থান শর্ট-আউট করতে না পারলেও ওঁদের ভূমিকা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করে চলেছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিনিয়ত ওঁদের কাছে থেকে শিখছি, জানছি এবং ব্যক্তি পর্যায়েও সেটা আমল করার চেষ্টা করছি। এই নবীন সমাজ আমাদের জন্য গর্বের ও আশীর্বাদস্বরূপ।

আমি বিশ্বাস করতে চাই, এই নবীন সমাজ শুধুমাত্র আমাকে নয়; একটি গোটা অন্ধকার প্রজন্মের চোখে আঙুল দিয়ে বারবার আলোর দিকে তাকাতে বাধ্য করছেন। এই নবীন সমাজের সামনে নিজেকে অনেক বৃদ্ধ মনে হয়, অনেক ভীতু মনে হয়। যে আত্মবিশ্বাস এই নবীনদের আছে তা যে কোনো রাষ্ট্রের মেরামতের জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়। এই নবীনরা পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিতে একবারও ভাবেন নাই। আমার নিজের ছোট ভাই থেকে পরিচিত সকল ছোট ভাই (ধর্ম নির্বিশেষে) অক্লান্তভাবে একটি ধ্বসে পড়া পুরো সমাজকে পুনর্গঠন করতে চাইছেন। আর আমি বা আমরা তো বিদেশের ভিসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি!

আবার প্রবীণ বলতে আমি তাঁদের একটি বয়সের মানদণ্ডে বাইনারি সূচকে আবদ্ধ করতে কখনোই চাই নাই। শিক্ষদের কথাই যদি বলতে হয়, তাহলে আমারও কিছু শিক্ষক ছিলেন ও আছেন (নাম উল্লেখ করছি না) যারা নবীনদের কেও বহু অংশে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁদের বয়স তাঁদেরকে একটি সীমিত জীবনের মধ্যে এই সমাজ আবদ্ধ করতে পারেন নাই। তাদের সততা এই ভেঙ্গে পড়া সমাজের কাছে আজও মাথা নত করে নাই।

উদাহরণস্বরূপ: বয়সের ভার বলতে একটা জিনিস আছে, বয়সের ভারে অনেক কিছুই করার সক্ষমতা থাকে না। কিন্তু আমি তাঁদের যতবার দেখি ততবারই মুগ্ধ হই। যে বয়সে আমরা কিছু শুরু করতে বা মতামত প্রকাশ করতে এত দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে হয় ঠিক সে বয়সে এসে তাঁরা এই ভেঙ্গে পড়া সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভাবছেন, অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন; প্রায় নিঃস্বার্থ ভাবে। আর এই কাজের মূল্য হিসেবে দেনা-পাওনার হিসেব চাইছেন না।

এই প্রবীণদের থেকে আত্মসচেতনতা, ব্যক্তিত্ব গঠন, গঠনমূলক পরিকল্পনা, অন্যায়ের সাথে আপোষহীনতা, সততা-নিষ্ঠা ও জবাবদিহিতার বিশাল বন্দোবস্ত আমরা প্রতিনিয়ত শিখছি। হুট করেই তারা বলছেন না, বিদেশী ভিসা পাওয়ার চৌদ্দ টি উপকার সম্পর্কে। এই প্রবীণদের মধ্যে বিন্দুমাত্র অনাগ্রহ নাই, যখন তারা নবীনদের কাছে থেকে কিছু জানছেন ও শিখছেন। বরং আমি দেখছি অনেক উৎসাহ নিয়ে তা জানছেন এবং শিখছেন। কোন বিষয়ে নবীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে তাঁরা তাদের বখাটে এবং বেয়াদব শ্রেণির নবীনদের কেও একটি কাঠামোগত বাস্তবতায় মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন, চাই নিজের সন্তান যত খারাপ-ই হোক অভিভাবক হিসেবে তাঁদের দায়িত্ব কোনরুপ ক্রেডিট ছাড়াই পালন করছেন।

ব্যক্তি মেহেদি হাসান (আমি), অনেক বেয়াদব প্রকৃতির। আমার মধ্যে তীব্র অহংকার আছে। আমি আমার এই আচরণ কে তথাকথিত ‘Self-respect’ দিয়ে জাস্টিফাই করতে চাই না। আমি আমার সব বড় ভাইদের সবসময় তো নয়-ই, বেশিরভাগ সময় প্রকৃত সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হলেও আজও যখন কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয় বা বিপদে পড়ি তাহলে আমার বড় ভাইদের একটি বড় অংশ তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছেন এবং করবেন বলে আমার বিশ্বাস।

ওঁরাও তো প্রায় প্রবীণ হয়ে যাচ্ছেন! কিন্তু সেটা নিয়ে বিশাল গোঁ ধরে থাকার বদ অভ্যেস তো আমি দেখি নাই। ওঁনারাও চেষ্টা করছেন, বাংলাদেশের একাধিক ‘Nexus’ কে বুঝতে এবং সবার মধ্যে একটি সমন্বয় সাধনে।

আর এই প্রবীণদের মধ্যে যে প্রাণ আছে, যে আত্মবিশ্বাস আছে, যে চেষ্টা আছে, যে সততা আছে, যে নিষ্ঠা আছে —এই সমস্ত কিছুকে ঝেড়ে তো আর ফেলে দিতে পারবেন না! পারবেন কি?

নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে এই নির্বাচিত মানুষগুলোই হচ্ছে আমার ‘নবীন সমাজ’। জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম তিনি তার যৌবনের গান (বক্তৃতা) থেকে আমি বারবার একটি লাইন উদ্ধৃতি করে থাকি, “বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন…”

আর আমার পর্যবেক্ষণে এই নবীন ও প্রবীণদের মধ্যে এই পর্যন্ত মীমাংসিত বন্দোবস্ত হচ্ছে: স্বাস্থ্যকর রাজনীতি, আইনের শাসন, স্বচ্ছ গণতন্ত্র, দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র, সামাজিক যে কোন অবক্ষয় থেকে মুক্তি, কমিউনিজমের কিছুটা বাস্তবায়ন (যাতে করে এলিট শ্রেণির হাতে সব চলে না যায়), ভোক্তার অধিকার, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রাস্ফীতি কমানো, যে কোনো বৈষম্য, অনিয়মের পুরোপুরি কবর, নাগরিকদের সুরক্ষা ও সম্মান, সাংবিধানিক অসংগতি থেকে মুক্তি (যেখানে নির্বাচিত যে কোন শাসক স্বৈরশাসক-এ পরিণত হয়ে পড়ছেন), আইনশৃঙ্খলার অধপতন থেকে মুক্তি, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে মুক্তি ইত্যাদি।

এই মৌলিক বন্দোবস্ত বা অলিখিত চুক্তি বা এক ধরণের সম্মতি এই ‘নবীন সমাজ’ একসাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। যেখানে কোন কাল্ট চরিত্রের জায়গা নাই, কাল্ট ভক্তের জায়গা নাই, সার্বভৌমত্ব নিয়ে মশকরা নাই।

এখন আমি যদি এই শ্রেণির সাথে নিজেকে ভাবনায় ও চিন্তায় যুক্ত করি, তাহলে আমরা আমাদের মৌলিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন নিয়ে বারবার আশাহত হচ্ছি। সবাই মিলে আমরা যাকেই ক্ষমতায়ন করছি, যে ন্যারেটিভেই করছি তা প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে পড়ছে।

বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই নবীন সমাজের কাছে আমার প্রশ্ন, “আমরা কি খুব বেশি কিছু চেয়েছি? যদি না চেয়ে থাকি, তাহলে আজ আশাহত হয়েছেন বা কিছুটা ভেঙ্গে পড়েছেন এমন কারা কারা আছেন?”

ছবি: Grok 3

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:০৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: একবুক আশা নিয়ে এখনো চেয়ে আছি এই নবীনদের দিকে যারা কথা দিয়েছে এই দেশ এই সমাজকে আলোকিত করবে, মুছে দিবে যত অনাচার।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:১৮

মিরোরডডল বলেছেন:





যাতে করে নবীন সংজ্ঞায় হুট করে বয়সের ওজন দিয়ে সব গুলিয়ে ফেলা না-হয়। অথবা, প্রবীণ সংজ্ঞায় শুধুমাত্র বয়স্কদের তালিকাভুক্ত করে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে না-হয়।

বার্ধক্যকে সব সময় বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধক্যের কঙ্কাল মূর্তি। আবার বহু বৃদ্ধকে দেখিয়াছি- যাঁহাদের বার্ধক্যের জীর্ণাবরণের তলে মেঘলুপ্ত সূর্যের মতো প্রদীপ্ত যৌবন…”

লেখার সাথে সহমত।
নবীনদের স্বপ্ন, তাদের এনার্জি এবং সাহসিকতা প্রশংসনীয়।
কিন্তু প্রবীণদের আছে প্রজ্ঞা এবং অভিজ্ঞতা, যা জাতি গঠনের দূরদর্শিতার জন্য অপরিহার্য।
তাই নবীন প্রবীণে রেষারেষি না করে, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধা নিয়ে একসাথে কাজ করলে তবেই দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু হতে পারে।

লেখাটা ভালো লেগেছে।
থ্যাংকস বিকেল।

৩| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:২১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

৪| ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:২৫

শায়মা বলেছেন: নবীন ও প্রবীন শুধুই বয়সে .... নজরুল ইসলামের মত আমিও দেখেছি এবং অনেকেই দেখেছে বহু নবীনের শরীরে প্রবীনের বাস আর প্রবীনের শরীরে এখনও টগবগে তারুন্য......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.