নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম, ফর্সাত্ব ও ভূয়া খবর: বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনের ‘থ্রিলার’ ট্রিলজি

১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:০৭



‘বিজ্ঞাপন (Advertisement)’ শুধুমাত্র একটি পণ্য বিক্রি বা একটি সেবা প্রদান করে না। বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনগুলো একটি চিন্তা বা ধারণা প্রকাশ করে থাকে। একটি গল্প বলবার চেষ্টা করে। প্রশ্ন হলো, একটি বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত পণ্যের বৈশিষ্ট্য বা সেবার মান প্রকাশ করা নিয়ে কিন্তু এর পরিবর্তে একটি বিজ্ঞাপন একটি গল্প বলার চেষ্টা করে কেন?

‘ক্লোজ আপ (Close-Up)’ একটি টুথপেষ্ট। কিন্তু যখন আমরা এই টুথপেষ্টের নাম শুনি তখন আমাদের মাথায় দুটো ধারণা আসতে পারে। এক, রিফ্রেশমেন্ট এবং দুই, প্রেমিক/প্রেমিকার কথা। ক্লোজ আপের শ্লোগান হলো, “কাছে এসো না (হিন্দি: Pass aao na)”। গত বছরগুলোতে ক্লোজ আপ বেশ কিছু ভালোমানের বাংলা নাটক স্পনসর করেছে। এই সমস্ত নাটকের নামের সাথে আবার ট্যাগলাইন যুক্ত, “কাছে আসার গল্প”। প্রশ্ন হলো, একটি টুথপেষ্ট কীভাবে আমাদের মাথায় প্রেমের গল্পের ধারণ দেয়? একটি টুথপেষ্ট দিয়ে দাঁত পরিষ্কারের বিষয়টি এখানে পরিষ্কার নয় কেন?

‘গ্রামীণফোন (Grameenphone)’ বা জিপি টেলিকম কোম্পানির নাম শুনলে আমাদের সবার মাথায় একটি ধারণা খেলে যায়। গ্রামীণফোন বা জিপি মানেই হলো, গ্রাম ও গ্রামের ঐতিহ্য। গ্রামীণফোনের একটি হাস্যকর শ্লোগান হচ্ছে, “আমরা আমরাইতো”। এই শ্লোগান শুনে মনে হয় গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়া মানে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত হওয়া। সত্যিই কি তাই? ঐ নির্দিষ্ট গোষ্ঠী কি আপনার ব্যালেন্স ফুরে গেলে সাহায্য করেন? অথবা, গ্রামীণফোন যে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্স দেয় সেটা কি ফ্রি-তে দেয়? এছাড়াও গ্রামীণফোনের জনপ্রিয় শ্লোগান, “চলো বহুদূর (Cholo Bohudur - Let's go far)” দিয়ে কোন মহাদেশে যাওয়ায় আহ্বান জানানো হয়?

গ্রামীণফোন এই পর্যন্ত তাদের বিজ্ঞাপনে যে পেশার মানুষদের বেশি সংযুক্ত করেছে তাদের তালিকা: কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, চালক, গৃহিণী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী, শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী এবং সাধারণ মানুষ। এই সমস্ত মানুষদের দিয়ে গ্রামীণফোন বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও সমস্যা নিয়ে একটি ব্যাপক দৃষ্টান্ত দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। প্রশ্ন হলো, গ্রামীণফোনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কলরেট ও ডেটা উপহার দেওয়ার সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ও সমস্যার মূল সম্পর্ক ঠিক কোথায়?

‘লাক্স (LUX)’ সাবানের একটি হাস্যকর হিন্দি শ্লোগান ছিলো। নব্বই দশকে এই শ্লোগান খুবই জনপ্রিয় ছিলো, “নাহান তো বাহানা হ্যায় (হিন্দি)”। মানে হলো, লাক্স সাবান ব্যবহার করাতে এত তৃপ্তি যে গোসল করা একটি বাহানা মাত্র। আপনার হাতে যদি লাক্স সাবান থাকে তাহলে আপনি বারবার গোসল করতে চাইবেন। সাম্প্রতিক সময়ে আবার বলিউড তারকা কারিনা কাপুরকে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলা উচ্চারণে এই সাবানের বিজ্ঞাপন করতে দেখা যায়। তিনি ঐ বিজ্ঞাপনে বলেন, “চাঁদের মতো উজ্জ্বল চেহারা”।

মানে হলো লাক্স সাবান ব্যবহারে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে চাঁদের মতন। কিছু মনে নেবেন না, আপনার গায়ের রঙটাই যদি হয় ভীষণ কালো তাহলে এই ধরণের বিজ্ঞাপন বর্ণবাদী নয় কেন? বিউটি স্ট্যান্ডার্ড সবসময় ফর্সা হওয়াতে নিহিত থাকে না। এতে করে পুরুষ/নারী একধরণের ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্সে ভুগতেও তো পারেন? এছাড়াও লাক্স সাবান এসব বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে আমাদের মাথায় জায়গা করে নিয়েছে।

‘ফেয়ার এন্ড লাভলী (Fair & Lovely)’ ক্রিমের শ্লোগান তো বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রায় সকল সাবানের শ্লোগানকে হার মানিয়েছে। তাদের জনপ্রিয় শ্লোগান হলো, “শুধু ফর্সা নয়, দাগহীন ফর্সা ত্বক”। মুশকিল হলো, আমাদের সবাইকে ‘ফর্সা’ হতে হবে কেন? বিশেষ করে আমাদের গায়ের রঙ নির্ধারণে যখন আমাদের কোন ভূমিকাই নাই? শুধু তাই নয়, দীর্ঘসময় ধরে জনপ্রিয় এই ক্রিমের নাম মনে পড়লেই আমাদের মাথায় আসতে পারে ‘ফর্সা’ হবার ধারণা।

‘সময় টিভির (Somoy TV)’ জনপ্রিয় শ্লোগান হলো, “সময়ের প্রয়োজনে সময়”। এই শ্লোগানটি বুঝায় যে, সময়ের নিজস্ব চাহিদা আছে এবং সময় টিভির কাজ হলো সেই চাহিদা পূরণ করা। অর্থাৎ, বর্তমান সময়ে মানুষের যা জানা প্রয়োজন, সময় টিভি সেই তথ্য সরবরাহ করে। উল্লেখ্য, সময় টিভির বর্তমান ইউটিউব সাবস্ক্রাইব ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সংবাদ বা খবর হলো একটি টাইমলেস ধারণা কারণ তা সত্যের উপর নির্ভরশীল।

সময় টিভির কথা শুনলেই মনে হয় তাৎক্ষণিক খবর আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হবে; সবার আগে। আরো একটি বিষয় মাথায় আসে, সেসব তথ্য মিথ্যা ও ভূয়া হবে।

‘দ্য ডেইলি স্টার (The Daily Star)’ এবং ‘রিউমর স্ক্যানারের (Rumour Scanner)’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভূয়া ও মিথ্যা প্রকাশ ও প্রচারে শীর্ষে আছে এই সময় টিভি। প্রশ্ন হলো, শ্লোগানে সময় টিভি সময়ের সাথে নিজেদের দায়িত্বের কথা জানান দিচ্ছে কিন্তু খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে মিথ্যা ও ভূয়া খবর প্রকাশ করছে কেন?

দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার নাম শুনলে আমাদের মাথায় আসে একটি নির্ভরযোগ্য খবরের পত্রিকা। ২০০০ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকার শ্লোগান হচ্ছে, “সত্যের সন্ধানে নির্ভীক”। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেও একটি বিশ্বস্ত খবরের পত্রিকা হিসেবে ‘দৈনিক যুগান্তর’ কে মনে করতাম। এমনকি বর্তমান রিসার্চে এআই (Ai) পর্যন্ত এই পত্রিকার তথ্যকে নির্ভরযোগ্য তথ্যের সূত্র হিসেবে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সকল পত্রিকার মধ্যে মিথ্যা ও ভূয়া খবর প্রকাশে শীর্ষে রয়েছে দৈনিক যুগান্তর।

শ্লোগানে সত্যর সন্ধান, ধারণায় সত্য প্রকাশ কিন্তু বাস্তবতায় মিথ্যা ও ভূয়া খবরের আড্ডাখানা।

এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। উদাহরণস্বরূপ: নগদ মানে সহজ, বিকাশ মানে স্মার্ট লেনদেন বুঝলেও নগদের দুর্নীতি এবং বিকাশের ট্রানজেকশন ফি অনেক বেশি হওয়াকে এড়ানো যায় না। পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপনে একটি গল্প বলা, একটি চিন্তা বা ধারণা দাঁড় করানো তখনই যথার্থ হবে যখন সেসবের বাস্তব প্রয়োগ দেখা যাবে। দূর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই বিষিয়টি খুবই দ্বান্দ্বিক।

এখানে শুধু ভোক্তার অধিকার কে নষ্ট করার জন্য এই ধরণের গল্প, চিন্তা বা ধারণা দাঁড় করানো হয়।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:৩১

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অবশ্যই বর্নবাদি হবে যদি বলা হয় কালো রং ফর্সা করা হবে। কালো রঙে অসুবিধা কোথায় ? কেউ কি নিজে তার রং ইচ্ছা করে নিয়ে জন্মায় ? কালো মানুষকে তার রং নিয়ে অপমান করা হল না? এটা কি ধরনের সভ্যতা ?

২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৭:০০

এ পথের পথিক বলেছেন: ভাল লিখেছেন, এরকম ২/১ টা পণ্য নিয়ে লেখার ইচ্ছা ছিল যেমন ক্লোজ আপ, ফেয়ার এন্ড লাভলি, টিভি চ্যানেল আপনি আরো পন্য এড করেছেন দেখে ভাল লাগল ।
লিখতে থাকবেন এদের ভন্ডামি আর মুখোশ উন্মোচন করবেন ।
কোম্পানি শুধু যে দেশে ব্যবসা করে তা না, সাথে সাথে তাদের অন্যান্য এজেন্ডাও বাস্তবায়ন করে ।

৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০২

শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু বলেছেন: ক্লোজআপ, লাক্স, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের কার্যকারিতা বা বৈজ্ঞানিক দিক সরাসরি না বলে ইমোশন-বেইজড মার্কেটিং করে—কারণ মানুষের আবেগই সবচেয়ে শক্তিশালী ক্রয়-প্রেরণা। "সুন্দর ত্বক = জীবনের সাফল্য", "ফেয়ারনেস = আত্মবিশ্বাস" বা "প্রেমিকের মন জয় করতে এই সাবান!"—এসব মেসেজ পণ্যের গুণ নয়, বরং সমাজে তৈরি করা অনুভূতির ফাঁদ।

এটা শুধু বিক্রি বাড়ানোর কৌশল নয়, বরং সৌন্দর্যের অযৌক্তিক মানদণ্ড চাপিয়ে দেওয়া, যা মানুষের আত্মসম্মানকে পণ্যে পরিণত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এমন বিজ্ঞাপন হতাশা ও আত্মসন্দেহ বাড়ায়, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। আসল প্রশ্ন হলো—পণ্য কি সমস্যার সমাধান করছে, নাকি সমস্যা তৈরি করে তারই "সমাধান" বিক্রি করছে?

৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
লেখায় লজিক আছে।

৫| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৫৮

সোহানী বলেছেন: চমৎকার যুক্তি........

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.