নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্তিত্বের খোঁজে: লেখালেখি, এআই এবং হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নের গল্প

০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:০২



বেঁচে থাকা কাকে বলে? আমি বেঁচে থাকার কথা বলছি, টিকে থাকার কথা নয়। টিকে থাকার কমবেশি আয়োজন আমি আমার জীবনে অর্জন করেছি। অন্তত আমার সেটা মনে হয়। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য যে সমস্ত উপাদান দরকার তা দিন দিন কম পড়ে যাচ্ছে। রাতে কোনোভাবেই ঘুম আসে না। আমার চোখের নিচে কালো দাগ পড়ছে। মানুষকে ভেতর থেকে পুরোপুরি শেষ হতে হলে তার ঐ ‘আইডেন্টিটি (Identity)’ আগে নিঃশেষ করে দিতে হয় যা তার অস্তিত্ব সংকট তৈরি করতে সক্ষম।

বর্তমান সমাজের বেঁচে থাকার যে ফ্রেমওয়ার্ক আছে তা রুটিন জীবন ছাড়া কিছুই নয়। টিকে থাকা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথাবিরোধী হওয়া বা ‘এন্টি-এস্টাবলিশমেন্ট (Anti-establishment)’ ধারণা পোষণ করা এবং তার উপর নির্ভর করে নিজের ব্যতিক্রমী জীবনের বেঁচে থাকার যে তীব্র ইচ্ছা তা ক্রমশ ক্ষীয়মান হতে শুরু করে যখন আমরা স্রেফ নকল করি, ভান ধরি, অভিনয় করি, অনুকরণ করি এবং এই সমস্ত কিছুর বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটাই।

আমি জানি আমি নতুন কিছুই করছি না। আমি জানি আমি এই সমাজে বিশেষ কোন অর্থ যুক্ত করছি না। আমি জানি আমার অস্তিত্ব ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে।

বেশ দীর্ঘ এই বিরহের কথা ও শোকের কথাগুলো পড়তে বিরুক্ত হতে পারেন। সুতরাং স্ব-ইচ্ছায় সামনে পড়তে থাকুন, এবং, সম্ভব হলে আমাকে কিছু নসিহতও দেন যাতে করে আমি নিজেকে কিছুটা সামলে নিতে পারি।

গত ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছি। লেখালেখি মিশে আছে আমার রক্তে। যা-কিছুই আমি মুখে বলতে অক্ষম থেকে যাই সেসব আমি লিখে প্রকাশ করি। এছাড়াও আমি বিশ্বাস করি আমার মস্তিষ্ক তূলনামূলক বেশি কল্পনাপ্রবণ। ফলে ছোটগল্প থেকে শুরু করে উপন্যাস লেখার সময় আমি ভয়ানক কল্পনায় আঁকা চরিত্র তৈরি করতে সক্ষম। যেসব চরিত্র বাস্তবে তো নাই-ই, কিন্তু তা বাস্তবের চেয়েও বেশি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

দীর্ঘ সময় ধরে লেখালেখির এই দক্ষতাকে আমি ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছি। এখন লেখালেখি না করে থাকতে পারি না। যে দিনটা যায় কোনকিছু না পড়ে ও না লিখে সে দিনটা আমার খারাপ যায়। আমার মনে হয় লেখালেখির মাধ্যমে আমি একের অধিক জীবন-যাপন করতে সক্ষম তাও বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

আমার এই মাঠে কোন ‘গুরু’ বা ‘শিক্ষক’ নাই। আর হুজুরেরা লেখালেখি পছন্দ করেন না (অধিকাংশ)। আর ইংরেজি বিভাগ যতগুলো সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, গল্পকার ও কবি তৈয়ার করে তারচেয়েও বেশি শিক্ষক তৈয়ার করে। সুতরাং প্রায় শতভাগ স্বতন্ত্র ভাবে আমি লেখালেখি করা শিখেছি বা, ব্যাকরণ বোধ ছাড়াই লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন হলো, আট বছরের লেখালেখির অভিজ্ঞতা দিয়ে আমার ঠিক কি করা উচিত? হ্যাঁ, বই লেখা উচিত; হোক সেটা প্রবন্ধ, গল্প বা উপন্যাসের বই।

কিন্তু ২০২১ সাল আমাদের উপহার দেয় ‘AI (Artificial Intelligence)’। ২০১৮ সালে আমার লেখা এক ছোটগল্প ‘এআই (Ai)’ এর মত করে আচরণ করতে শুরু করলো ‘OpenAi (ChatGPT)’। কিন্তু ঐ গল্পে সুপার ইন্টেলিজেন্টের ধারণা ছিলো; যা খুব সম্ভবত আমরা বাস্তবে সবাই সাক্ষী হতে যাচ্ছি। আমার কাছে আমার কল্পনা প্রফেটিক মনে হলেও আমার লেখালেখির ক্যারিয়ার ধ্বংসের দিকে যেতে পারে তা খেয়াল করে দেখা হয় নাই।

মানে হলো আমি তো স্রেফ কল্পনা করে একটি গল্প লিখেছি ‘এআই’ নিয়ে কিন্তু বাস্তবে এক ইহুদী ও তার দল সেটা তৈরি করেছে। ২০২৫ সালে এসে চায়নীজরা প্রত্যক্ষভাবে মাঠে নেমেছে। আর এই সুপার-পাওয়ারদের ব্যাপক প্রতিযোগীতায় ‘ইথিক্যাল’, ‘অপক্ষপাত’ ও ‘নন-অটোনমাস (Non-autonomous)’ হওয়ার যে ন্যারেটিভ তা উহ্য হয়ে গেছে। এজন্য ইলন মাস্ক থেকে মার্ক জাকারবার্গ গোত্রের মানুষ বিশাল অঙ্কের টাকা ঢেলেছে ট্রাম্পের মত পুঁজিবাদী ও উগ্র-জাতীয়তাবাদী নেতা নির্বাচনে; যিনি শুধুমাত্র টাকায় বিশ্বাস রাখেন।

না মানে, আগামীকাল থেকে আমার লেখালেখির ক্যারিয়ার ধ্বংস হচ্ছে না। তবে আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে নিশ্চয় ধ্বংস হতে যাচ্ছে। আমি মানুষ আমি ভুল লিখি, আমি মানুষ তাই পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট নই, আমি মানুষ তাই আমার কাছে অত তথ্য নাই যা একটি ‘Autonomous’ এআই এর কাছে আছে বা থাকবে। আমি ব্যাপক কল্পনাপ্রবণ হলেও তা এআই এর কাছে অতি তুচ্ছ হতে যাচ্ছে। আমি যা এক বছর ধরে ভাববো এআই সেটা একদিনে ভেবে লিখে দিতে সক্ষম হবে।

পাঠক কেমন হতে যাচ্ছে? পাঠক কেন পড়বে মানুষের লেখা যখন তার হাতে একটি বিশাল লাইব্রেরি থাকবে? না, পড়বে না। এআই এর লেখাগুলো পড়তে পড়তে কখনো কখনো হয়তো বিরুক্ত হতে পারে। আর যখন বিরুক্ত হয়ে পড়বে তখন চিন্তা করবে মানুষের লেখা কোন লেখনী পড়তে।

মুশকিল হলো, আমি নতুন কিছুই লিখছি না। মোটাদাগে সবকিছুই ইতোমধ্যে লেখা আছে বা অতীতের লেখকদের বইয়ের মধ্যে আছে। অনেক সময় এরকমও হয়, আমি লেখার পর বুঝি যে, আমরা কার কার চিন্তা ধার করেছি। আর ঐ ধার করা চিন্তায় ও ফ্রেমওয়ার্কে আমি আমার বক্তব্য শুধুমাত্র উপস্থিত করেছি। অবশ্য এটাকেই আমরা সৃজনশীলতা বলে থাকি; ভিন্ন আলাপ।

গুগল বারবার বলছে, এআই আবিষ্কারের পর ব্লগে ভিজিটর বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কি? বহু মানুষ ব্লগিং ছাড়ছে। এখন কিছু কিছু মানুষ যুক্তি দেখান, ওরা লেখক পর্যায়ের কেউ নয় যে ব্লগ চালাবে। ওরা তো স্রেফ টাকা কামাইতে এসেছিলো; আংশিক সত্য। কারণ এআই আসার পর আমার সমস্ত ব্লগ ভালোরকম ভিজিটর (পাঠক) পাচ্ছে। সার্চ কন্সোলে র‍্যাংকিং বাড়িয়ে দিয়েছে। মানে এই পর্যন্ত আমার জন্য সর্বোচ্চ ভালো খবর।

কিন্তু এই ভালো খবর ক’দিন টিকবে? রিয়েলিটি মেনে নিতে হবে না? অথবা, লেখালেখি নিয়ে আমার আগামী ১০ বছরের পরিকল্পনা কি? সত্যি বলতে, এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসা ধরতে হবে। এই দীর্ঘ ৮ বছরের দক্ষতা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে। মানে এই কথাটা যখন আমি লিখছি, যখন আমি ভাবছি তখন আমার নিজের জন্য মায়া হচ্ছে।

আজ-ই লেখালেখি ছাড়ছি না। কিন্তু যে সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে আমি পড়েছি সেটা থেকে তো মুক্ত হতেও পারছি না। আচ্ছা, আমি এভাবেও ভেবেছি, এআই আসার পরেও কিছু কিছু মানুষ মানুষের লেখা পড়বে। ঠিক যেমন ওয়েবসাইট বা ব্লগ আসার পর হার্ড-কপি বা পত্রিকা এখন মানুষ পড়ছে।

তাদের সংখ্যা মোট পাঠকদের অনুপাতে কত হবে? ১০%! ১৫%! ২০%? কত? ধরে নিলাম, তাদের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ২০%। মানে হলো প্রতি ১০০ জন পাঠকদের মধ্যে ৮০ জন পাঠককে আমি হারাবো। এমনিতেও পাঠক সংকট বিদ্যমান এখন যারাও-বা আছে তাদের অধিকাংশ কে আমি হারাবো।

বর্তমানে বই লেখা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। অনেক কঠিন পরিশ্রম করতে হয় একটি বই লিখতে। কিন্তু মানুষ অজানা-অচেনা লেখকের লেখা পড়তেই চায় না। কিন্তু যিনি সোশ্যাল মিডিয়ার খুব পরিচিত মুখ তার বই স্টক-আউট হয়ে যায় মাত্র কয়েকদিনে। ঐ লেখাগুলোও আমি পড়ি আর আমার বমি আসে।

আমার বিশ্বাস যারা ঐ বইগুলো ক্রয় করে তারা নিজেরাও ঐ বইগুলো পড়ে না। সামগ্রিকভাবে বই ক্রয় করা ও বাড়ির লাইব্রেরিতে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা একধরণের বিলাসিতা ও শৌখিনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। কিন্তু আমার ৮-১০ বছরের যে বিশাল লেখালেখির অভিজ্ঞতা সেটা অপু বিশ্বাসের ছেলে জয়ের মত হয়ে যাচ্ছে। এই দক্ষতা নিয়ে আমি এখন কই যাবো?

কেউ কেউ বলছেন, “ডীপ-ওয়ার্ক' করতে হবে”। আচ্ছা, প্রতিযোগী যখন এআই তখন এমনিতেই আমার পরিশ্রম করতে হয় আগের তুলনায় প্রায় দশগুণ। এই দশগুণ বেশি পরিশ্রম করেও ব্যর্থ হলে অসহায় লাগে। মানে আমি তো এরবেশি ভালো করতে পারি না। একরকম নিজের কাছেই নিজেকে ছোট মনে হয়। তবে কি নিয়মিত লেখালেখি করাও একধরণের বিলাসিতায় রুপান্তরিত হচ্ছে?

এই লেখক সত্ত্বা আমার অন্যতম একটি ‘আইডেন্টিটি (Identity)’; যা ধীরে ধীরে আমি হারিয়ে ফেলতে চলেছি। ধ্বংস হতে চলেছে। দীর্ঘ সময়ের পরিশ্রম ও দক্ষতায় জল ঢেলে দিচ্ছে এক দানব শক্তি। অনলাইন ব্লগিং ইন্ডাস্ট্রিও কাঁপছে। যে কোন সময় এ সমস্ত জায়গা ধ্বংস হয়ে যাবে। মানছি, লেখালেখি করা আমার একমাত্র আইডেন্টিটি নয়, কিন্তু একটি অন্যতম আইডেন্টিটি যা আমার অস্তিত্বের সাথে সরাসরি সংযুক্ত।

আলোচনা হোক বা সমালোচনা হোক; পাঠক দরকার। পাঠক-ই যখন থাকছে না তখন ঘন্টার পর ঘন্টা বসে বসে চায়ের দোকানের বাকির খাতা বাড়ানোর কোন মানে হয় না। আর যে সিদ্ধান্তহীনতা আমাকে উইপোকার মত খেয়ে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সে বিষয়েও আমাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী।

আমি চাই না, আরো ১০ বছর মানে মোট ১৮ বছর পর নিজেকে একজন ব্যর্থ লেখক হিসেবে দেখতে!

ছবি: ChatGPT (Ai)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.