নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক অবদান: একটি বিস্তৃত বিশ্লেষণ

০৮ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৩৮



“বাংলাদেশ কেমন আছে?”—এই প্রশ্নটি বর্তমান সময়ে প্রতিটি বাংলাদেশীর মনে উঁকি দেয়। একচোখে দৃষ্টিপাত করলে মনে হতে পারে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি একটি সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, এবং সামাজিক অশান্তির মধ্যে দেশ অনেক রক্তাক্ত ঘটনার সাক্ষী হয়েছে। চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, লুটপাট, ছিনতাই, ধর্ষণ এবং খুনের মতো অপরাধ নিয়মিত সংবাদের শিরোনামে উঠে আসছে।

কিছু উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দলের দৌরাত্ম্য এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। এই নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আমার লেখালেখি প্রতিনিয়ত হতাশার জন্ম দিয়েছে, আমার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং আমাকে সমালোচকদের কাছে ঘৃণিত ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত করেছে। তবুও, আমার বিশ্বাস, আমাদের মতো লেখকদের দায়িত্ব হলো সমস্যাগুলো তুলে ধরা, যাতে রাষ্ট্র ও সমাজ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়।

এই প্রবন্ধে আমি একটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করতে চাই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে আমি আশার আলো ছড়াতে চাই। এই সরকারের সমালোচনা অন্তর্জালে সহজলভ্য হলেও, এর ইতিবাচক অবদানগুলো প্রায়শই অলক্ষিত থেকে যায়।

আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নই, বরং আমার লক্ষ্য হলো নিরপেক্ষভাবে দেশের উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক আলোচনা তৈরি করা। এই প্রবন্ধে আমি ড. ইউনূসের সরকারের ছয়টি প্রধান ইতিবাচক দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী হওয়ার কারণ সৃষ্টি করে।

১. রোহিঙ্গা সমস্যার আংশিক সমাধান: একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘদিনের একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক সংকট। ২০১৭ সালে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংস নিপীড়নের ফলে প্রায় ৮-১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই বিশাল শরণার্থী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের সম্পদ, পরিবেশ এবং সামাজিক কাঠামোর ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। এই সংকট নিয়ে বুদ্ধিজীবী মহলে তাত্ত্বিক আলোচনা দীর্ঘদিন ধরে চললেও, বাস্তব সমাধানে অগ্রগতি ছিল নগণ্য।

অভিযোগ রয়েছে, কিছু এনজিও সংস্থা তাদের লাভের জন্য এবং রাজনৈতিক দলগুলো ভোটব্যাংক রক্ষার উদ্দেশ্যে এই সংকটকে দীর্ঘায়িত করেছে। পূর্ববর্তী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুটি প্রায়শই কূটনৈতিক আলোচনার পরিবর্তে প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এই সমস্যার সমাধানে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে কক্সবাজারে বসবাসরত ৮ লাখ তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজারকে প্রত্যাবাসনের জন্য যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া, আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, বিশেষ করে যখন আমরা দেখি যে শেখ হাসিনা সরকার ২০২৩ সালে মাত্র ১,১০০ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবর্তন করাতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল।

এই সাফল্যের পেছনে ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দক্ষতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি এই সংকটকে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা হিসেবে না দেখে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বিষয় হিসেবে বিবেচনা করেছেন। তিনি জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছেন এবং মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছেন।

এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের কাঁধ থেকে সংকটের বোঝা কিছুটা হলেও লাঘব করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার এই আংশিক সমাধান ড. ইউনূসের সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে আরও সময় এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আরও ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে।

২. গ্রামীণফোন থেকে স্টারলিংক: প্রযুক্তিগত বিপ্লবের ধারাবাহিকতা

আধুনিক বিশ্বে একটি দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি তার প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সত্যটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোন চালু করে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি বিপ্লব সূচনা করেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম এবং নরওয়ের টেলিনরের যৌথ উদ্যোগে গ্রামীণফোন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে সাশ্রয়ী টেলিযোগাযোগ সেবা পৌঁছে দিয়েছে।

এই উদ্যোগ শুধু গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নই করেনি, বরং দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন গতি সঞ্চার করেছে। বর্তমানে গ্রামীণফোনের প্রায় ৭ কোটি ৬৪ লাখ গ্রাহক রয়েছে, যা দেশের ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূস তার প্রযুক্তিগত দূরদর্শিতার আরেকটি নিদর্শন উপস্থাপন করেছেন—স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে প্রবর্তনের উদ্যোগ। ২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে’ স্টারলিংক পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। আশা করা হচ্ছে, জুলাই ২০২৫ নাগাদ এই সেবা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে।

স্টারলিংক বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের মান উন্নত করবে এবং শহর-গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এখনো ইন্টারনেট সেবা পৌঁছায়নি।

উদাহরণস্বরূপ, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল এবং সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রায় অস্তিত্বহীন। স্টারলিংক এই অঞ্চলগুলোতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যবসার জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে। এছাড়া, স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা সরকারের একক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকবে, যা পূর্ববর্তী শাসনামলে প্রায়শই ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে একটি বড় অগ্রগতি।

যদিও স্টারলিংক সেবা ব্যয়বহুল এবং দেশীয় নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবুও এটি ড. ইউনূসের প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্বাক্ষর হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই উদ্যোগের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশের নিরাপত্তা নীতি এবং দেশীয় কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ক্ষতি।

গ্রামীণফোন থেকে স্টারলিংক—এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশকে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

৩. অর্থ পাচার রোধ ও ফেরত আনার প্রশংসনীয় উদ্যোগ

অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী এবং গুরুতর সমস্যা। বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১৫ বছরে প্রায় ১৭.৯ ট্রিলিয়ন টাকা (১৪৯.২ বিলিয়ন ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে, যার মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ২.০ ট্রিলিয়ন টাকা সিঙ্গাপুর, দুবাই, কানাডা এবং মালয়েশিয়ার মতো গন্তব্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।

রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG) সেক্টর থেকেও ৩৩টি কারখানা ৬ বছরে ৮.২১ বিলিয়ন টাকা পাচার করেছে। এই বিশাল অর্থ পাচার অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগের সুযোগ কমিয়ে দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই সমস্যা মোকাবিলায় দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুরের নেতৃত্বে একটি ৯-সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেন। এই টাস্কফোর্সের উদ্দেশ্য হলো পাচার হওয়া অর্থের উৎস শনাক্তকরণ, এর পরিমাণ নির্ধারণ এবং ফেরত আনার জন্য আইনি ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ। টাস্কফোর্স নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দিচ্ছে এবং জবাবদিহিতার সঙ্গে কাজ করছে, যা পূর্ববর্তী শাসনামলের অকার্যকর প্রচেষ্টার তুলনায় একটি বড় অগ্রগতি।

ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদার করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করেছেন। ২০২৫ সালের এপ্রিলে তিনি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিনিয়া অমরাসুরিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে শ্রীলঙ্কার অর্থ ফেরত আনার আইনকে মডেল হিসেবে গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়।

তিনি জাতিসংঘের ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম অফিস (UNODC) এবং ইউনাইটেড নেশন্স কনভেনশন অ্যাগেনস্ট করাপশন (UNCAC)-এর সহায়তা চেয়েছেন, বিশেষ করে UNODC-এর স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR) ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে। এছাড়া, তিনি মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স ট্রিটি (MLAT) ব্যবহার করে আইনি সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছেন।

দেশের ভেতরে তিনি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ১২ জন অলিগার্ককে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা ব্যাংকিং খাত থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুণ্ঠন করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, এস আলাম গ্রুপের সম্পদ আটক করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চলছে। তিনি বিদেশি বিশেষজ্ঞ এবং বেসরকারি আইনি ফার্ম নিয়োগ করেছেন পাচার প্রক্রিয়ার তদন্ত গভীর করতে।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU)-কে সক্রিয় করা হয়েছে অর্থ পাচারের নতুন পথ শনাক্ত করতে। ড. ইউনূস উল্লেখ করেছেন, কিছু ব্যক্তি পড়াশোনার ফি হিসেবে বছরে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে, যা পাচারের একটি কৌশল। এই ধরনের কার্যকলাপ বন্ধে তিনি কঠোর নজরদারি ও আইনি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছেন।

ড. ইউনূসের প্রশাসনিক দক্ষতা আরও উজ্জ্বল হয়েছে তাঁর নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে। তিনি মাসিক উচ্চপদস্থ বৈঠকের আয়োজন করেছেন, যেখানে অর্থ ফেরত আনার প্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। তিনি ঈদুল ফিতরের পর আরেকটি বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছেন, যা তাঁর স্বচ্ছ ও ফলপ্রসূ নেতৃত্বের প্রতিফলন।

তাঁর এই অঙ্গীকার দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আস্থা ও আশা সঞ্চার করেছে। তিনি বলেছেন, “অর্থ ফেরত আনা আমাদের শীর্ষ প্রাধান্য, এবং এটি যে কোনো মূল্যে করতে হবে,” যা তাঁর দৃঢ় সংকল্পের প্রমাণ।

অর্থ পাচার রোধে ড. ইউনূসের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও প্রশংসার দাবিদার। তিনি আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা বাড়াতে এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করতে সংস্কারের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করছেন যে অর্থ পাচারের নতুন কোনো পথ তৈরি না হয়। এই প্রচেষ্টাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করছে এবং বিশ্ব মঞ্চে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কেবল পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনছে না, বরং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে একটি শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুলছে।

৪. ফ্রিডম অব স্পিচ: গণতন্ত্রের ভিত্তি মজবুতকরণ

মুক্তভাষণ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই বিষয়ে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “আমরা সমালোচনাকে ভয় পাই না; আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। আমাদের লক্ষ্য সকল কণ্ঠস্বরের সুরক্ষা।” তাঁর এই প্রতিশ্রুতি তাঁর সরকারের নীতির প্রতিফলন।

পূর্ববর্তী শাসনামলে সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সাংবাদিক ও বিরোধী মতপ্রকাশকারীদের দমন করা হতো। ড. ইউনূস এই আইন সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন, যাতে নাগরিকরা ভয়মুক্তভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তাঁর সরকার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মামলা ও হয়রানি বন্ধে কাজ করছে।

২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনি জানান, পূর্ববর্তী শাসনে ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ‘হত্যা’র মতো মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছিল। তিনি এই অভিযোগগুলো পরীক্ষার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা এই ধরনের অন্যায় আর ঘটতে দেব না।” এছাড়া, সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার কার্ড বাতিলের ঘটনায় তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে তাদের কাজে কোনো বাধা দেওয়া হবে না।

মুক্তভাষণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ড. ইউনূস আইনি কাঠামো সংস্কারে গুরুত্ব দিয়েছেন। ২০২৪ সালে তিনি একটি সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন গঠন করেন, যার লক্ষ্য সংবিধানে মুক্তভাষণ ও মানবাধিকারের সুরক্ষা জোরদার করা। এই কমিশন নতুন গণপরিষদ গঠনের পরিকল্পনা করছে, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন করবে।

মুক্তভাষণ শুধু আইনি সুরক্ষার বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক সংস্কৃতির অংশ। ড. ইউনূস এই বিষয়ে সামাজিক সমতার ওপর জোর দিয়েছেন। ২০২৪ সালের আগস্টে তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন এবং বলেন, “আমরা সকলেই সমান। ধর্ম বা সংস্কৃতির ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য থাকবে না।”

যদিও ড. ইউনূসের পদক্ষেপগুলো সাধুবাদ পেয়েছে, কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। কিছু সমালোচক মনে করেন, তাঁর শাসনামলে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হয়রানির ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, পূর্ববর্তী শাসনের সঙ্গে যুক্ত কিছু সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন যে তারা নতুন শাসনের অধীনে চাপের মুখে রয়েছেন।

ড. ইউনূস এই অভিযোগগুলোকে ‘অতিরঞ্জিত’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং ন্যায্য বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে, এই সমালোচনাগুলো ইঙ্গিত করে যে মুক্তভাষণের পথে এখনো বাধা রয়েছে, যা সমাধানে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন।

তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশকে এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের কণ্ঠস্বর মূল্য পাবে।

৫. অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সমন্বয়

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে সংস্কারমূলক কার্যক্রম, বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ড. ইউনূসের প্রথম উদ্যোগ ছিল অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনগুলো প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে।

বৈশ্বিক বিনিয়োগ আকর্ষণে তিনি ২০২৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ উদ্বোধন করেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে তিনি বিশ্ব ব্যাংক থেকে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। তাঁর সাম্প্রতিক চীন সফর (২৬-২৯ মার্চ, ২০২৫) অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনেছে।

চীন মংলা বন্দর আধুনিকীকরণে ৪০০ মিলিয়ন ডলার, চট্টগ্রামে শিল্প অঞ্চল সম্প্রসারণে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রযুক্তিগত সহায়তায় ১৫০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই উদ্যোগগুলো অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছে।

৬. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: জরুরি পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বন্যায় ত্রাণ বিতরণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ৪৪টি এনজিওর সঙ্গে সমন্বয়ে এক হাজার কোটি টাকার ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়। ছাত্র সংগঠন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদী অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির অভাব রয়েছে। চীনের সঙ্গে ৫০ বছরের নদী ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা ভবিষ্যতে বন্যা প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, প্রযুক্তির উন্নয়ন, অর্থ পাচার রোধ, মুক্তভাষণ, অর্থনৈতিক সংকট নিরসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়। যদিও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও এই ইতিবাচক দিকগুলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী করতে সক্ষম।

তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা দেশকে একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে নিচ্ছে।

ছবি: সংগৃহিত

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০২৫ ভোর ৫:২৭

যামিনী সুধা বলেছেন:





আপনি যা জানেন, ব্লগারেরা তার চেয়ে বেশী জানেন; ফলে, আপনার পোষ্টের পাঠক নেই।

২| ০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:২৪

কামাল১৮ বলেছেন: ইউনুসকে যদি একটি প্রানী ভাবেন তবে রচনাটি সুন্দর হয়েছে।

৩| ০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৭:৪৬

মুনতাসির বলেছেন: ২০০৫ সালে বাংলাদেশের টেলিকম খাত ছিল এক বিপ্লবের পথে। মোবাইল ফোনের ব্যবহার হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করে, এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাযোগের নতুন দ্বার খুলে যায়। এ সময়ে টেলিকম খাতের অর্থনৈতিক অবদানও চোখে পড়ার মতো ছিল।

তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫ সালে টেলিকম খাত দেশের জিডিপিতে ১ শতাংশের বেশি অবদান রাখে, যা মাথাপিছু আয়ের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে, যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ কেবল সামাজিক নয়, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে শুরু করেছিল।

৪| ০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ইউনুসের পক্ষ হয়ে সাফাই গাইছেন কেন?
নিরপেক্ষ ভাবে লিখতে শিখুন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.