![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে যুদ্ধে জয়-পরাজয় নেই সেটাকে কি যুদ্ধ বলা যায়? খুব সম্ভবত নয়। যুদ্ধ বহু কারণে সংঘটিত হতে পারে। মানুষের মনের মধ্যেও যুদ্ধ লেগে থাকে অহর্নিশ। চোখের সামনে যে রক্তপাত হয় তা মূলত মানুষের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কাউকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য যতগুলো অস্ত্রশস্ত্র প্রয়োজন হয় তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন হয় মানুষের ভেতরে থাকা হিংস্রতা ও ঘৃণার।
সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কোন কমতি নাই। অবশ্য পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে প্রতিবেশীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। কারণ ঐ আগুনের দাবানলে পুড়ে যাবার ভয় থাকে। কিন্তু বর্তমানের প্রেক্ষাপট আলাদা, প্রতিবেশী বাংলাদেশ ঐ আগুন নেভানোর কথা যতটুকু বলেছে তারচেয়েও বেশি পক্ষ নিয়েছে। কেউ পাকিস্তানি হয়েছে, কেউ আবার হিন্দুস্তানি হয়েছে। খুব হাতেগোনা মানুষ বাংলাদেশী হতে পেরেছে। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া দেখেন তাহলে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমাদের উচিত ছিলো নিরপেক্ষ থাকার।
কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশ সবসময় ভারতের দখলকৃত কাশ্মীর কে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে দেখে এসেছে। অন্তত গত কিছু ঘটনা এবং ঐ সব ঘটনায় ভারত ও বাংলাদেশের আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক যথেষ্ট বন্ধুসুলভ ছিলো। সাবেক অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেবার পর থেকেই ভারতের প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষদের মনে ব্যাপক অনাস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র একজন স্বৈরাচার কে আশ্রয় দিতে পারে সে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নিজের অবস্থান 'গণতান্ত্রিক' থাকলো কিনা তা পুনরায় যাচাই করবার প্রয়োজন আছে।
ভারত-পাকিস্তানের এই দ্বন্দ নিয়ে চারপাশে যত গুজব ও মিথ্যা খবর প্রচারিত হয়েছে তা দেখে বিস্মিত হতে হয়। এই পুরো দ্বন্দ্বের আফটার ম্যাথ নিয়ে নিরপেক্ষ একটি অবস্থান ও পরিসংখ্যান জানানো খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু মিডিয়া সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষ বিবেচনায় খবর পরিবেশন করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম পর্যন্ত অন্তত দুইভাগে বিভক্ত। আর যুদ্ধ যারা করছে তারা স্বভাবতই চাইবে নিজেদের অবস্থান নিয়ে গর্ব প্রকাশ করতে। সুতরাং নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পুরো বিষয়টি দেখতে চাইলে আপনাকে নিজে চিন্তা করে বের করতে হবে। আর এতসব কারণে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে একটি পাতলা লাইন এখানে দৃশ্যমান।
একজন বাংলাদেশী হিসেবে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে এই পুরো দ্বন্দ্ব বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছি। প্রতিটি তথ্যের সাথে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র প্রদান করারও চেষ্টা করছি। তবুও কিছু ভুল থেকে যেতে পারে। আমার অনুরোধ হলো, আপনি আপনার মেধাশক্তি কাজে লাগিয়ে একটু চিন্তা করবেন, সহসাই সব সত্য বলে মেনে নেবেন না।
সমস্ত ঘটনার একটি কালানুক্রমিক বিশ্লেষণ প্রদান করা হলো:
ঘটনা - ১: পহেলগাঁও আক্রমণ
লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) এর একটি শাখা 'দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট (TRF)' গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও এর বৈসারন উপত্যকায় সাধারণ পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। নিহত হয় ২৬ জন ভারতীয় নাগরিক, ২ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ২ জন বিদেশি নাগরিক (আরব-আমিরাত ও নেপাল)। এই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা লস্কর-ই-তৈয়বার শাখা 'দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট' কে দায়ী করে। পরবর্তীতে ভারত সরকার কে এই গোয়েন্দা সংস্থার এই রিপোর্টের উপর নির্ভরশীল থাকতে দেখা যায় (সূত্র: NDTV, The Hindu, India Today)। এই সমস্ত সূত্রের মধ্যে 'The Hindu' মোটামুটি নির্ভরযোগ্য। কিন্তু 'দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট' এর দায় স্বীকারের বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা সম্ভব হয় নাই।
২০২০ সালের শুরুর দিকে গঠিত হওয়া 'দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট' নিয়ে ভারতের অভিযোগ হচ্ছে, এটা একটি সন্ত্রাসী সংগঠন এবং এর সাথে পাকিস্তান ও ISI এর পূর্ণ সমর্থন আছে। এই গণহত্যার ৩ দিন পরই অর্থ্যাৎ ২৫ এপ্রিল 'দ্য রেজিস্ট্যান্ট ফ্রন্ট' ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই দাবী অস্বীকার করে। এছাড়াও তারা জানান এমন গণহত্যার পেছনে তাদের কোন হাত/দায় নাই (সূত্র: বিবিসি বাংলা)। এবং পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ পূর্বক শুধুমাত্র 'ভারতীয় অভিযোগ' বা 'ভারত সরকারের বিবৃতি' লিখে শেষ করেছে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম (সূত্র: BBC, The New York Times, The Guardian, Reuters ও Al Jazeera)।
কিন্তু যে বা যারা এই আক্রমণ করেছে (৫/৬ জন), তাদেরকে আতঙ্কবাদী বলা ছাড়া উপায় নাই। খুব সম্ভবত সর্বশেষ কবে এমন উদ্দেশ্যবিহীন বেসামরিক আক্রমণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হয়েছে সেটা আমার জানা নাই। যদি প্রথমেই এই ঘটনাকে সত্য বলে বিবেচনায় নিতে হয় তাহলে সবাইকেই ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের মিডিয়ার উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। কারণ এই পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত বিবিসি বা কোন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম করতে পারে নাই। সবার কাছেই নানান রকম অনুমান বিদ্যমান। যা তৈরি হয়েছে ভারত সরকারেত বিবৃতি ও ভারতীয় অভিযোগের উপর ভিত্তি করে।
এছাড়া হত্যার পূর্বে 'কালেমা' পড়ার নির্দেশ শুধুমাত্র কিছু টুইটার বা এক্স হ্যান্ডলে পাওয়া যাচ্ছে। তবে অমুসলিম বা হিন্দু নাগরিকদের টার্গেট কিলিং করা হয় এবং মহিলাদের হত্যা না করে তাদেরকে মোদী সরকারের কাছে গিয়ে এই নিষ্ঠুরতার কথা জানানোর জন্য বলা হয় (সূত্র: একাধিক ভারতীয় মিডিয়া)। AK-47 এবং M4 কারবাইন রাইফেল ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, পাকিস্তান এসব রাইফেল সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ আছে।
মজার বিষয় হচ্ছে, আক্রমণের পরপরই 'দ্য রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (TRF)', যাদের লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা বলে মনে করা হয়, টেলিগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে আক্রমণের দায় স্বীকার করে। এই বিবৃতিতে তারা আক্রমণকে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল (৩৭০ ধারা) এবং অ-স্থানীয় বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করে। এটি আক্রমণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি প্রাথমিক ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট।
তবে বিবিসি নোট করেছে যে, এই বিবৃতিতে TRF-এর সাধারণ লোগো বা নাম অনুপস্থিত ছিলো, যা এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরবর্তীতে (২৬ এপ্রিল, ২০২৫), TRF এই দায় অস্বীকার করে, দাবি করে যে, বিবৃতিটি ভারতীয় সাইবার-গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি। আরো একটি ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, এই আক্রমণের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের এই সময়ে অবস্থান নিয়ে সেদেশের মিডিয়া বারবার প্রশ্ন করছে। প্রশ্ন আরো থেকে যায়, একটি পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বলে কি কিছুই ছিলো না? ভারতীয় সূত্র বলছে, নিরাপত্তার ঘাটতি ছিলো।
ঘটনা - ২: পহেলগাঁও আক্রমণ ও দুই দেশের একাধিক চুক্তি বাতিল
চুক্তি/ব্যবস্থার নাম (সূত্র: BBC)
১. সিন্ধু জল চুক্তি (Indus Water Treaty, ১৯৬০) - ভারত
২. সার্ক দেশগুলির জন্য ভিসা-মুক্ত প্রকল্প (SAARC Visa Exemption Scheme) - ভারত
৩. আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্ট (Attari-Wagah Border) - ভারত
৪. কূটনৈতিক সম্পর্ক (পাকিস্তানি দূতাবাস বন্ধ ও কর্মী সংখ্যা হ্রাস) - ভারত
৫. সিমলা চুক্তি (Shimla Agreement, ১৯৭২) - পাকিস্তান
৬. দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি - পাকিস্তান
৭. ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্ট (Wagah Border) - পাকিস্তান
৮. কূটনৈতিক সম্পর্ক (ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী সংখ্যা হ্রাস) - পাকিস্তান
৯. আকাশসীমা ব্যবহার (Airspace Usage) - পাকিস্তান
দ্রুত ভারত ত্যাগ করতে গিয়ে পাকিস্তানের কিছু নাগরিকদের মানবিক সংকট পর্যন্ত তৈরি হয়।
ঘটনা - ০৩: অপারেশন সিঁন্দুর
৭ মে, ২০২৫ তারিখে ভারত অপারেশন সিঁন্দুর পরিচালনা করে। ভারতের দাবি অনুযায়ী, এই অপারেশনে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। এতে ১০০ জঙ্গি নিহত হয়, যাদের মধ্যে মৌলানা মাসুদ আজহারের দুই আত্মীয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ভারত আরও দাবি করে যে, এই হামলায় কোনো বেসামরিক ক্ষতি হয়নি।
পাকিস্তানের দাবি ভিন্ন। তাদের মতে, এই হামলায় ২৬-৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৫-৫৮ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের অভিযোগ, হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায় সংঘটিত হয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এই ঘটনার প্রতিবাদে তারা জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, হামলায় ১০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের দাবি, ২৬-৩৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৩৫-৫৮ জন আহত হয়েছে। উভয় পক্ষের দাবি থেকে নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে স্পষ্ট বৈপরীত্য দেখা যায়।
ভারত জানিয়েছে, অপারেশনে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, হামলায় মসজিদ, স্কুল, কলেজ, ক্লিনিক এবং আবাসিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উভয় পক্ষের বর্ণনা থেকে ক্ষয়ক্ষতির ধরণ ও পরিমাণ নিয়ে ভিন্নতা লক্ষণীয়।
সূত্র: এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে The Hindu, Al Jazeera এবং India Today থেকে
ঘটনা - ০৪: সীমান্তে সংঘর্ষ (৭-১০ মে, ২০২৫)
ভারতের দাবি অনুযায়ী, পাকিস্তান সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় সীমান্তে গোলাগুলি শুরু করে। এতে ১৫ জন ভারতীয় সাধারণ নাগরিক নিহত হন। পাল্টা হামলায় ভারত ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত করেছে বলে দাবি করে।
পাকিস্তানের বক্তব্য, ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা পাল্টা গোলাগুলি চালায়। এতে ৭ জন নিহত এবং ৩৫ জন আহত হন।
ভারতের দাবি অনুযায়ী, ১৫ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, ৭-২৬ জন বেসামরিক ও সামরিক কর্মী নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়েছে। নিহত ও আহতের সংখ্যা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
ভারত জানিয়েছে, সীমান্ত গ্রামে বাড়িঘর এবং স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, তাদের সামরিক ঘাঁটি, বাঙ্কার এবং বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিবরণে উভয় পক্ষের বর্ণনা ভিন্ন।
সূত্র: এই তথ্যগুলো The Hindu এবং India Today থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
ঘটনা - ৫: সামরিক ক্ষতি (৭-১০ মে, ২০২৫)
ভারত স্বীকার করেছে যে, তারা ৩টি যুদ্ধবিমান হারিয়েছে। তবে তারা দাবি করে, পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়নি। পাল্টা গোলাগুলিতে পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে বলেও তারা জানায়।
পাকিস্তান দাবি করে, তারা ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং ১টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এছাড়া, ১০ জন ভারতীয় সেনা হত্যা বা আটক করা হয়েছে বলে তারা জানিয়েছে।
পাকিস্তানের দাবি অনুযায়ী, ১০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। ভারতের দাবি, ৩৫-৪০ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়েছে। আহতের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
সূত্র: এই তথ্যগুলো Business Standard এবং Live Mint থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে
ঘটনা - ০৬: অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস
১০ মে, ২০২৫ তারিখে পাকিস্তান ২৬টি ভারতীয় স্থানে আক্রমণ চালায়। এর মধ্যে পাঠানকোট, শ্রীনগর, উধমপুর এবং বেসামরিক অবকাঠামো অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের দাবি, পাকিস্তান ড্রোন, দূরপাল্লার অস্ত্র, লয়টারিং মিউনিশন এবং যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে বেসামরিক এলাকা ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করেছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশিরভাগ মিসাইল ও ড্রোন প্রতিহত করে, এবং উধমপুর, পাঠানকোট, আদামপুর ও ভুজে সীমিত ক্ষতি হয়। ভারত পাকিস্তানের দাবিকে ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে অভিহিত করে এবং বলে যে, পাকিস্তান বেসামরিক ও ধর্মীয় স্থান লক্ষ্য করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
পাকিস্তান জানায়, অপারেশন সিঁন্দুরের প্রতিক্রিয়ায় তারা ‘অপারেশন বুনিয়ান উল মারসুস’ চালায়। এতে ২০-২৬টি ভারতীয় সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করা হয়, যার মধ্যে পাঠানকোট, উধমপুর, বিয়াসে ব্রাহ্মোস মিসাইল সংরক্ষণাগার এবং আদামপুরে এস-৪০০ বিমানরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত। ফাতেহ-১ ও ফাতেহ-২ মিসাইল এবং ড্রোন ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তান দাবি করে, ভারতের ৭০% বিদ্যুৎ গ্রিড সাইবার আক্রমণে অকার্যকর হয়েছে এবং ৫টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও ৭৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে। তারা বলে, হামলা সঠিক ও সমানুপাতিক ছিল এবং বেসামরিক ক্ষতি এড়ানো হয়েছে।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানের মিসাইল হামলায় ৫ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে রাজৌরির অতিরিক্ত জেলা উন্নয়ন কমিশনার রাজ কুমার থাপ্পা রয়েছেন। লাইন অফ কন্ট্রোল বরাবর গোলাগুলিতে ১ জন নারী নিহত এবং ২ জন পুরুষ আহত হন। পাকিস্তান দাবি করে, ভারতীয় সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, তবে নিহত/আহতের সংখ্যা উল্লেখ করেনি। নিরপেক্ষ তথ্যে এই সংখ্যা যাচাই করা যায়নি।
ভারতের দাবি, উধমপুর, পাঠানকোট, আদামপুর ও ভুজে সীমিত ক্ষতি হয়েছে এবং জম্মুর রেহারিতে বেসামরিক বাড়িঘর ও যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকিস্তানের ফাতেহ-২ মিসাইল সিরসায় আটকানো হয়। পাকিস্তান দাবি করে, বিয়াস ও নাগরোটায় ব্রাহ্মোস মিসাইল সংরক্ষণাগার, আদামপুরে এস-৪০০ ব্যবস্থা এবং একাধিক বিমানঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে। তারা আরও বলে, ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিডের ৭০% অকার্যকর হয়েছে। নিরপেক্ষ তথ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করা যায়নি।
সূত্র: এই তথ্যগুলো Al Jazeera, Hindustan Times, India Today, Financial Express, Radio Pakistan, The Guardian, Wikipedia, Geo.tv, Daily Pakistan এবং Express Tribune থেকে সংগৃহীত
পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে যে, তারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৫টি যুদ্ধবিমান নিচে নামিয়ে এনেছে, যার মধ্যে ৩টি রাফেল, ১টি মিগ-২৯, ১টি সু-৩০ এবং ১টি হেরন ড্রোন অন্তর্ভুক্ত ছিল (সূত্র: The New York Times)। এই দাবি মে ৭, ২০২৫ তারিখে অপারেশন সিঁন্দুরের পরে উঠে আসে, যখন ভারত পাকিস্তানের ভেতরে জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ভারতের দিক থেকে, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB) এই দাবি অস্বীকার করেছে, বলেছে যে কোনো রাফেল যুদ্ধবিমান নিচে নামানো হয়নি (সূত্র: Le Monde)।
স্বাধীন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে, The Washington Post অনলাইন পোস্ট করা চিত্রগুলো পর্যালোচনা করে অন্তত দুটি ফরাসি-নির্মিত রাফেল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ যাচাই করেছে, যা ভারতীয় বিমানবাহিনীর অংশ ছিলো। সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যের মধ্যে বিরোধিতা রয়েছে, যেমন Flight Global উল্লেখ করেছে যে রাফেল ধ্বংসের ছবিতে অসংগতি রয়েছে, যা সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে (সূত্র: Asia Times)।
রাফেল যুদ্ধবিমানের ধ্বংসের দাবি ডাসল্ট অ্যাভিয়েশন, রাফেলের নির্মাতা কোম্পানির শেয়ার মূল্যে প্রভাব ফেলেছে। LiveMint এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে মে ৮, ২০২৫ তারিখে ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের শেয়ার মূল্য ১.৭৫% বৃদ্ধি পেয়ে €৩২৫.৮-এ বন্ধ হয়, যা সংঘর্ষের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিলো। TRT Global উল্লেখ করেছে যে, পাকিস্তানের রাফেল ধ্বংসের দাবির পর, ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের শেয়ার মূল্য $৩৭৩.৮ থেকে $৩৬২.০৫-এ নেমে যায়, যা প্রায় ৩.৩% হ্রাস নির্দেশ করে।
Hindustan Times উল্লেখ করেছে যে, ডাসল্ট অ্যাভিয়েশনের শেয়ার মূল্য ৭% হ্রাস পেয়েছে, যা সংঘর্ষের পরবর্তী দিনগুলোতে চীনের চেংডু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের শেয়ার বৃদ্ধির বিপরীতে ছিল। চীন যে এই দ্বন্দ্ব জুড়ে একটি ভিডিও মিম আকারে তৈরি করেছে তার পুরোটাই ভূয়া হতে পারে না।
আফটার-ম্যাথ
প্রতিটি দ্বন্দ্বের শুরু ও শেষ থাকে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের এই দ্বন্দ্বের ইতিহাস লিখতে গেলে বা জানতে গেলে তিনটি আলাদা বই লিখতে হবে বা পড়তে হবে। বাম-ডান-সেন্টার সমস্ত মিডিয়ার রিপোর্টে পুরোপুরি নিরপেক্ষ কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে 'সত্য' কি তা শুধুই ভারত ও পাকিস্তান বলতে পারবে। কাশ্মীর বরাবরই সাক্ষী থেকে গেল।
১০ মে, ২০২৫-এ মার্কিন মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান একটি শান্তিবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়, যা ১৭:০০ IST (১১:৩০ UTC) থেকে কার্যকর হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিকে "পূর্ণ ও তৎক্ষণাৎ শান্তিবিরতি" হিসেবে অভিহিত করেন। চুক্তির পরপরই উভয় পক্ষ একে অপরকে লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করে। ১০ মে শ্রীনগর ও জম্মুতে বিস্ফোরণ এবং ১২ মে জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা জেলায় পাকিস্তানি ড্রোন দেখা যায়, যা ভারতীয় সেনা নিষ্ক্রিয় করে।
ভারতের হামলায় ৩৬ জন নিহত (৩১ নাগরিক, ৫ সৈন্য) এবং ৪৬ জন আহত। মোট হতাহতের মধ্যে ৬ বিমানসেনা সদস্য, ৫ সৈন্য, ৪০ নাগরিক (৭ মহিলা, ১৫ শিশু) নিহত এবং ৭৮ সামরিক ও ১২১ নাগরিক আহত।
পাকিস্তানের গোলাগুলিতে ১৫ নাগরিক (৪ শিশু সহ) ও ১ সৈন্য নিহত, ৪৩ জন আহত। ভারত দাবি করে ১০০ জঙ্গি নিহত করেছে, যা পাকিস্তান অস্বীকার করে।
পাকিস্তানে ৪৮ ঘণ্টা বিমানসীমা বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল। পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, বোর্ড পরীক্ষা স্থগিত, লাহোর, ইসলামাবাদ ও আজাদ কাশ্মীরে CIE পরীক্ষা বাতিল।
ভারতে ২৫টি বিমানবন্দর ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ, শ্রীনগরে সিভিল অপারেশন স্থগিত। আইপিএল ম্যাচ ধার্মশালা থেকে আহমেদাবাদে সরানো হয় এবং টুর্নামেন্ট ১ সপ্তাহ স্থগিত হয়।
সবমিলিয়ে দুই পারমানবিক শক্তির দম্ভ স্পষ্ট। দুই দেশই তাদের নিজস্ব ভূখণ্ডে এক ধরণের 'Existential Crisis' এ ভুগছে। দ্বন্দ্বের পর পাকিস্তানের বালুচিস্তানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরো ব্যাপক সংঘর্ষ চালিয়েছে। অন্যদিকে ভারতের একাধিক প্রদেশের মানুষ ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন বা স্বাধীন হবার কথাও বলছে। কিন্তু প্রথম ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়ার পর ভারত অফেন্সে যেতে পারতো। কূটনৈতিক সম্পর্ক সাধারণত ডিফেন্সে যে থাকে তার দিকে তূলনামূলক বেশি প্রভাবিত হয়। শুধুমাত্র বিজেপির ভোটব্যাংক বাড়ানোর জন্য এতগুলো মানুষে বলি কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। তবে একটা বিষয়ে সন্দেহ নাই যে, আকাশ পথে পাকিস্তান ভারত থেকে এগিয়ে ছিলো।
বাংলাদেশ চীন থেকে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের কথা বারবার উল্লেখ করছে। খুব দ্রুত ক্রয় করতেও পারে। অবশ্য দীর্ঘদিন বাংলাদেশ একটি নতজানু পররাষ্ট্রনীতির উপর নির্ভরশীল ছিলো। সামনেও থাকবে কিনা তা বলা মুশকিল। উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের সময় বাংলাদেশ কে আক্রমণ করার কথাও সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসে। এতে পুরো দ্বন্দ্ব জুড়ে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আগ্রহ ও ভয় উভয়ই ছিলো। একই সাথে বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘদিনের অনুরোধ (যদি একটু সোশ্যাল মিডিয়া বা একটিভিস্ট দের কথা মানেন), প্রতিটি নাগরিক কে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এখন সময়ের দাবী।
ছবি: ChatGPT
১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫৬
মি. বিকেল বলেছেন: আপনি কোন দেশের গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করছেন? নাকি রিপাবলিক টিভির ভক্ত!
২| ১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১২:০৩
ঊণকৌটী বলেছেন: যুদ্ধে প্রমাণ লাগে ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট এবং চিনের স্যাটেলাইট পাকিস্তানের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার চিত্র দিয়েছে কিন্তু ভারতের একটা ক্ষতির প্রমাণ দেখাতে পারেন ফ্যাক্ট সহ @ পারবেনা কারণ সত্য সত্যই থাকে ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মত লাফালাফি করলে হবে না |
১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ১:৫৮
মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কি মনে হয়, আমি এই যুদ্ধ বা দ্বন্দ্ব নিয়ে মনগড়া তথ্য দিয়েছি?
৩| ১৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: ভারত আমাদের শত্রু নয়। বন্ধু।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই মে, ২০২৫ রাত ১১:৫৬
ঊণকৌটী বলেছেন: অনেক বড় লেখা, অনেক ধন্যবাদ এই লেখার জন্য, ভারতের প্রতিটি আক্রমণ এর প্রমাণ দিয়েছে, ভারত প্রথম দিন আক্রমণ এর পরে প্রেস মিটিং বলেছে জঙ্গি গোষ্ঠীর উপর আক্রমন করেছে, না সাধারণ মানুষ না আর্মি যা টার্গেট নিয়েছিলাম তা পূর্ন হয়েছে, কিন্তু ভারত জানতো পাকিস্তান হিট করবে তাই পাঁচ স্তরের এয়ার ডিফেন্স এবং জামার আরো দশটা স্যাটেলাইট সর্বক্ষণ পুরো পাকিস্তানের উপর নজরদারি চালানো হয়েছে, তারা কি করছে সবটাই নজরে ছিল তাই যখন তিন চারশু ড্রোন এবং মিসাইল আসলো ছয় স্তরের ডিফেন্স অতিক্রম করতে পারেনি | তারপরে প্রথমে চিনের রাডার ধংস করে দেবার পরে পাকিস্তানের আকাশ ভারতের বিমান বাহিনীর কাছে ছিলো মুক্ত আকাশ ,পাকিস্তানের নয় টা সামরিক বিমান ঘাঁটি গুরিয়ে দিয়েছে তার মধ্যে বিশেষ করে নূর খান এয়ার বেস যা পাকিস্তানের সেনা হেড কোয়ার্টার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্ব গুরিয়ে দিয়েছে সবচেয়ে বড় কথা পাশেই কিরান পর্বত মালা সেইখানেই ছিল নিউক্লিয়ার বোমার ভান্ডার সেইখানে borsmos আঘাত হেনেছে ,রেডিওশন হচ্ছে আশেপাশের সবাই কে সরিয়ে দিচ্ছে আক্রমণের সাথে সাথে ভূকম্প হচ্ছে! মানেটা কি ? মানেটা সহজ ইসরাইল ও ভারত পাকিস্তানের প্রতিটা জমি স্ক্যান করে যাচ্ছে, ভারত এর কাছে পাকিস্তানের আর কোন অঞ্চল আর নিরাপদ নয় |