![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘সহনশীলতা (Tolerance)’ বলতে কি বুঝায়? সহনশীলতার বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি? আমরা একটি ভিন্নমতের উপর কতক্ষণ ‘সহনশীলতা (Tolerance)’ দ্যাখাবো? এই প্রশ্নগুলো বেশ সহজ এবং যেহেতু প্রশ্নগুলো সহজ সেহেতু উত্তরগুলোও সহজ হওয়ার কথা। আসুন, সহনশীলতা বলতে আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের কি শিখিয়েছে তা জেনে নিই!
পৃথিবীতে কোনো আদর্শ পরিবার নাই, অন্যদিকে পৃথিবীতে অনেক বিষাক্ত পরিবারও আছে। পারিবারিক শিক্ষা হলো, সহনশীলতা মানে ‘অবিচ্ছিন্নতা’। মানে যেটাই হোক নিজেদের মধ্যে মিলেমিশে থাকা। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে একরকম ভান করে নিজের ভাঙ্গা পরিবারকে কিছুটা গুছিয়ে দেখানোর চলন প্রচলিত। কিন্তু যখন একটি পরিবার প্রধান ভাবছেন তার সন্তান তার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করুক। তিনি যা নিজে করতে পারেননি, তিনি সেটা তার সন্তানের মধ্যে দেখতে চাইছেন। কিন্তু কোনো পরিবার প্রধান তার সন্তানকে জানাচ্ছেন না যে, আমার অপূর্ণ স্বপ্ন তো অনেক, চাপ নিও না!
সমাজ ভিন্ন ধর্ম ও ভিন্ন মতের প্রতি বরাবর শ্রদ্ধাশীল হতে পরামর্শ দিচ্ছে। অন্যের ধর্ম আলাদা মানেই তাকে তার ধর্ম পালনে বাধা প্রদান করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ ভিন্ন মত প্রকাশ করছেন বলেই তাকে মানসিক বা শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা উচিত নয়। ধর্ম পালন যদিওবা বুঝে আসে, এই উপমহাদেশে ধর্মচর্চা বিজ্ঞানচর্চা কে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। ধর্ম নিয়ে কিছুটা মীমাংসাও হয়েছে। কিন্তু ভিন্নমত নিয়ে সহনশীলতা ঠিক বুঝে আসে না।
একটি ভিন্নমত কোন পর্যায় পর্যন্ত গেলে আমি আর তা গ্রহণ করবো না? অথবা, আমি একজন সহনশীল মানুষ হওয়ায় ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা কি আমার অসীম পর্যায়ের থাকতে হবে? আমাদের সমাজ অবশ্য এখানে বারবার চুপটি সেধেছে।
আমাদের রাষ্ট্র একটি গনতন্ত্রের কথা বলে। কেমন এই গণতন্ত্র? তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক কম হচ্ছে না। আমাদের দেশ, বাংলাদেশ, যদি এতই তার নাগরিকদের প্রতি এবং তাদের মতামতের প্রতি এত শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বারবার বিপ্লবের প্রয়োজন পড়তো না। প্রশ্ন অবশ্য সেটা নয়, প্রশ্ন হলো এই দীর্ঘ অভিজাতদের শাসন দেখেও আমাদের মত কিছু প্রান্তিকদের কন্ঠস্বরের কতদূর পর্যন্ত সহনশীল হওয়া উচিত?
ঠিক আর কতবার বিপ্লব হলে, আন্দোলন হলে, হাজারো লোক কোন বোকা, মূর্খ ও গোঁয়ার শাসকের অধীনে মৃত্যুবরণ করলেও আমাদের সহনশীলতা দেখিয়ে চুপ করে থাকা উচিত? এখানে সহনশীলতার মাত্রা কি? নাকি এই মাত্রা মূলত অসীম সহনশীলতা কে বুঝায়?
আমরা তাত্ত্বিকভাবে জানি সহনশীলতার বৈশিষ্ট্য হলো, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা, মুক্তমনা, ধৈর্য্য ও সংযম, সহানুভূতি, অহিংসা এবং ন্যায়পরায়ণতা। খুবই সুন্দর সুন্দর শব্দ। এসব শব্দ শুনতেও ভালো লাগে।
আমি এখন মোল্লা নাসিরুদ্দিনের একটি গল্প উপস্থাপন করছি। এই গল্পে, দুই ভাইয়ের মধ্যে জমিজমা নিয়ে প্রচন্ড বিরোধ। এক পর্যায়ে তাদের চাচা এসে বললেন, আমাদের এলাকায় একজন বিজ্ঞ মানুষ আছেন। তোমরা মোল্লার কাছে বিচার দাও। তিনি যে পক্ষে রায় দেবেন সেটাই তোমাদের মেনে নিতে হবে।
কথা অনুযায়ী কাজ। সেদিন রাতে মোল্লার দরবারে হাজির হলেন দুই ভাই এবং তাদের ঐ চাচা। মোল্লা খুব গম্ভীর মেজাজে দুই ভাইয়ের কথা শুনছিলেন। ছোট ভাইয়ের যুক্তি শুনে মোল্লা খুশি হয়ে বললেন, “তুমিই ঠিক”। এবার বড় ভাইয়ের কথা শুনে ফের বললেন, “তুমিও ঠিক”। চাচা বিরুক্ত হয়ে বললেন, “গুরুজী, এ কী করলেন? দু’জন বিপরীত কথা বললো, আর আপনি দুজনকেই ‘ঠিক’ বললেন? এ তো অসম্ভব!” মোল্লা চাচা কেও জানালেন, “তোমার কথাও কিন্তু ঠিক”।
মোল্লার বিচার থেকে আমরা আসলে কি বুঝি? ‘সত্য’ কি কোন আপেক্ষিক বস্তু? নাকি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা? মোল্লা সাময়িকভাবে সবার কথা ও যুক্তিকেই স্বীকার করে সহনশীলতার সীমা বুঝিয়ে দিলেন, “সবার সত্য সঠিক হতে পারে না”। যদি সবার সত্য একই হয়, তাহলে ‘ন্যায়বিচার’ হয়ে উঠবে একটি প্রহসন মাত্র। আর ঐ ন্যায়বিচারের কোন ভিত্তি থাকতে পারে না।
কিন্তু মূল প্রশ্নের মীমাংসা এখানেও শেষ হয় না। আমরা যারা সহনশীল বা অন্তত সহনশীলতার ভান ধরে থাকি, আমাদের সহনশীলতার সীমা ঠিক কতদূর পর্যন্ত হওয়া উচিত? এই সীমা কি অসীম? যদি অসীম না হয়ে সসীম হয়, তাহলে সেটাও বা কোন পর্যন্ত? অথবা, একজন সহনশীল ব্যক্তি কি অসহনশীল আচরণ দেখাতে পারেন? আর যদি সহনশীল ব্যক্তি অসহনশীল হয়ে উঠেন তবুও কি তিনি সহনশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিগনিত হবেন? কীভাবে হবেন?
টলারেন্স বা সহনশীলতার প্যারাডক্স (Paradox of Tolerance) একটি দার্শনিক ধারণা যা কার্ল পপার ১৯৪৫ সালে তার ‘The Open Society and Its Enemies’ বইতে উপস্থাপন করেন। এই প্যারাডক্স অনুসারে, একটি সহিষ্ণু সমাজ যদি অসহিষ্ণু গোষ্ঠীকে নির্বিচারে সহ্য করে, তাহলে শেষ পর্যন্ত অসহিষ্ণুতা জয়ী হয়ে সমাজের সহিষ্ণুতা ধ্বংস করতে পারে। অর্থাৎ, অসহিষ্ণুতাকে সহ্য করার মাধ্যমে সহিষ্ণুতা নিজেই বিপন্ন হয়।
এই প্যারাডক্সের একটি বিখ্যাত উদাহরণ হচ্ছে, ১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিটলারের নাৎসি পার্টিকে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চালানোর অনুমতি দেয়। এই অসহিষ্ণু দল শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রকেই উৎখাত করে। জন রলস মনে করেন, ন্যায়পরায়ণ সমাজে অসহিষ্ণুদের সহ্য করা উচিত, কিন্তু যদি তারা অন্যের স্বাধীনতা হুমকিতে ফেলে, তাহলে তাদের দমন জরুরী।
কিন্তু এখানেও সমস্যা আছে, ঠিক কখন আমাদের মনে হবে আমাদের মানে সহনশীলদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে? এর সীমা ঠিক কোন পর্যন্ত? কোন পর্যায়ে গেলে একজন সহনশীল মানুষ অসহনশীল হয়ে পড়াটা যুক্তিযুক্ত হবে?
এটা আজ পর্যন্ত একটি ধাঁধা হিসেবেই থেকে গেছে, এর কোন নিখুঁত উত্তর আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না।
ছবি: Pics4Peace
০৫ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:৩৩
মি. বিকেল বলেছেন: যেতে পারে, কিন্তু বাংলা একাডেমি রাগ করতে পারে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: তাহলে নিখুঁত শব্দটা অভিধান থেকে মুছে ফেলা দরকার।