নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

দশ বছর আগের ‘আমি’, আজকের ‘আমি’ কি তাকে চিনি?

২০ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮



১০ বছর! এতগুলো সময় পাড়ি দেবার পর আমরা কি নিজেদের একই মানুষ হিসেবে দাবী করতে পারি? বিশেষ করে যখন অতীতে মানে ১০ বছর আগে আমরা পৃথিবীকে যেভাবে দেখতাম ১০ বছর পরেও আমরা একইভাবে পৃথিবীকে আর দেখি না।

আমাদের মধ্যে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হয়। চারপাশে চেনা প্রতিটি বিষয় ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করি। পরিচয় ঘটে কত অচেনার সাথে। অতীতের যা-কিছুই সুন্দর ও আকর্ষণীয় ছিলো তা বর্তমানেও একইরকম সুন্দর ও আকর্ষণীয় নাও মনে হতে পারে। প্রিয় শিল্পী, প্রিয় গান, প্রিয় সিনেমা, প্রিয় উপন্যাস, প্রিয় অভিনেতা কিংবা প্রিয় নেতার প্রতি অনাগ্রহও দেখা দিতে পারে।

আমাদের শরীরের মধ্যে পরিবর্তন আসে। আমাদের কথাবার্তা ও আচরণেও পরিবর্তন আসে। বৈজ্ঞানিকভাবেও ৮-১০ বছর আগের শরীর এবং বর্তমানের শরীর পুরোপুরি আলাদা। বন্ধু নির্বাচন ও প্রিয় মানুষ নির্বাচনেও তো পার্থক্য এসে যায়। সময়ের স্রোতে সব বন্ধুত্ব হারিয়ে যায় না, অনেকসময় কিছু বন্ধুত্বের গল্প আমাদের বিশ্লেষণে আমাদের কাছেই আর পছন্দ হয় না। ফলে ঐ বন্ধুত্বের যোগাযোগ কমে এবং একসময় তা হারিয়ে যায়।

অতীতের সবচেয়ে পছন্দের খেলাটা বর্তমানেও ভালো লাগে এমন কিন্তু সবসময় হয় না। যে রাজনৈতিক মতাদর্শ, সংস্কৃতি ও ধর্মের সাথে আমরা যুক্ত থাকি তা সময়ের সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে থাকে। ছোটবেলায় পরিচিত হওয়া খুব ভালো মানুষটাকে বড় হয়ে অত নিখুঁত আর মনে নাও হতে পারে। প্রিয় শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধা, পুরাতন প্রেমিকার (মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রেমিক) প্রতি প্রেম হয়তো এখন আর অত উপচে পড়ে না।

১০ বছর আগে যে মানুষটার সাথে দিনে একবার দেখা না হলে হৃদয়টা ছটফট করতো এখন হয়তো ওসব মনে পড়লে হাসি পায়, নিজেকে পাগল-পাগল মনে হয়। অতীতে অল্পতেই তুষ্টি থাকার গল্প অঢেল। কিন্তু বড় হয়ে দেখছেন এসবের বিশেষ কোন অর্থই খুঁজে পাচ্ছেন না। কত শক্রু বন্ধুতে আর কত বন্ধু শক্রুতে রুপান্তরিত হলো তার তালিকা দীর্ঘ হতেই থাকে।

পোশাক-আশাকেও পরিবর্তন আসে। আগের আপনি হয়তো টি-শার্ট পরতে পছন্দ করতেন। রেডিমেড গার্মেন্টস্‌ পছন্দের শীর্ষে ছিলো। বর্তমানের আমি টা অনেক বেশি গোছানো। এখন হয়তো অর্ডার দিয়ে সেলাই কাপড় পরতে পছন্দ করেন। কারণ কমফোর্টেবল লাগে। এখনও গ্লাস পরেন কিন্তু সানগ্লাস হয়তো নয়। আগে ভাইভা বোর্ডে বা নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানে যেতে হবে তাই কোট-টাই একটা গুছিয়ে রাখতেন। এখন হয়তো প্রায় প্রায় কাজের খাতিরে পরেন বা পরতে হবে জন্যই পরেন। পুরো ড্রেস-আপ সেন্স গত ১০ বছরে একটা বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায়; সাথে আপনিও।

টাকার ধারণা আরো বেশি স্পষ্ট হতে পারে। ভালোলাগলেই আকর্ষণীয় কোনো গ্যাজেট হাত দিয়ে নেড়েচেড়েও এখন হয়তো আর দ্যাখেন না। মনে হতে পারে, ঠিকাছে! আমি পরের বছর বা পরের মাসের বেতন টা পেলে এটা নিয়ে চিন্তা করবো। ভোজনরসিক মানুষটাও রেস্টুরেন্টে যাওয়া কমিয়ে দেয়। ঈদ বা পূজার অনুষ্ঠান একটি নিয়মিত ঘটনা বলে মনে হতে পারে। খুব সকালে উঠেই মনের মধ্যে আনন্দ বাহিত হলেও দায়িত্বের অনেক চাপ এসে দাঁড়ায়। মানে খুশি হবার জন্য বিশেষ দিনের গুরুত্ব আস্তেধীরে কোথায় যেন হারিয়ে যায়।

আমি এসব পরিস্থিতি অনুমান করে লিখেছি। মানুষ, বয়স ও অবস্থান ভেদে এই অভিজ্ঞতা ভিন্ন-ভিন্ন হতে পারে। এছাড়াও আমি ১০ বছর সময়টাকে ঘিরেই আলাপ করছি যাতে শারীরিক পরিবর্তনও আমাদের নজরে পরে।

প্রশ্ন হলো, আপনি কি এখনো আগের মতই আছেন?

না, কেউ আগের মত থাকে না। এ বিষয়ে আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী যথার্থ লিখেছিলেন, “মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়, কারণে-অকারণে বদলায়।” কিন্তু যেটা বদলায় না, সেটা হলো, ‘ন্যারেটিভ (Narrative)’। আমরা বর্তমান সময়ে অতীতের কোন ঘটনার একটা গল্প তৈরি করে থাকি। নিজেকে নিজেই নিজের ব্যর্থতা, অভিজ্ঞতা ও সফলতার গল্প শোনাই, বুঝাই।

আমাদের মুরুব্বীরা প্রায় প্রায় বলেন, “আমাদের সময়ে স্কুলে যেতে নদী সাতার কাটতে হত/কাঁচা রাস্তায় ৫-১০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হত/দুপুরে টিফিন মিলতো না… আর তোমরা সামান্য একটু রাস্তা পার করে স্কুল করবে, কলেজ করবে তাতেই রিক্সা নিতে হয়!”

ঠিক এভাবেই তৈরি হয় একটি ‘ন্যারেটিভ আইডেন্টিটি (Narrative Identity)’। এই গল্পে বক্তা নিজেই একইসাথে বক্তা, শ্রোতা, দর্শক ও পরিচালক। এছাড়াও নিজ গল্পের অভিজ্ঞতা নিজেই গ্রহণ করেন বা মূল্যায়ন করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ: “আমি একসময় খুবই দরিদ্র ছিলাম। খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত হত। টিউশনি করে পড়াশোনা করেছি। আজ আমি একজন বিসিএস ক্যাডার। এখন হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী আমার নিকট পড়তে আসে।” উল্লেখ্য, আমি এই ধরণের গল্প কে মোটেই হেয় করছি না বা ছোট করছি না।

কিন্তু এই ধরণের গল্প আপনি যখন শুনবেন তখন শেক্সপিয়ারের নাটকের মত একটি কাঠামোগত বিন্যাস খুঁজে পাবেন। মানে এই ধরণের গল্পের একটা ‘শুরু (Exposition)’ আছে, একটা ‘মধ্যভাগ (Rising Action)’ আছে এবং একটা ‘সমাপ্তি (Climax and Resolution)’ আছে। প্রসঙ্গত, মানুষের জীবন কিন্তু শেক্সপিয়ারের নাটক নয়। কখনো কখনো হয়তো মিল খুঁজলে একধরনের মিল খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঐ মিল খুঁজে পাওয়া ও সত্যের মধ্যে একটি সরাসরি সূত্র নাও থাকতে পারে।

আমরা যখন গল্প বলি তখন সাধারণত একটা চ্যালেঞ্জিং অতীত, গঠনগত একটা মধ্যভাগ এবং একটা সফলতা দিয়ে শেষ করে থাকি। কিন্তু আমাদের জীবন এরকম লিনিয়ার বা সরলরৈখিক নয়।

অতীতের কষ্ট কে বর্তমানের সফলতা হিসেবে চিহ্নিত করলে সেটাকে ‘রেট্রোঅ্যাকটিভ ন্যারেটিভ কনস্ট্রাকশন’ বলা হয়। কষ্ট পেলেই সফলতা মিলে যাবে তা কখনোই জরুরী নয়। এতে করে মূল ঘটনার তাৎপর্য পরিবর্তিত হয় এবং এক ধরণের মানসিক পারাডক্সের মধ্যে আমরা পড়ে যাই। মানে হলো, আপনি বর্তমানে বসে অতীতের সংগ্রাম বা কষ্ট কে একটা কৃত্রিম অর্থ দিতে চাইছেন। যে সময়ে আপনি সংগ্রাম বা কষ্ট করছিলেন সে সময়ে আপনার ধারণা ছিলো না যে, ভবিষ্যতে আপনি কি করবেন? কে হবেন? কোথায় যাবেন? বা সফল/ব্যর্থ হবেন কিনা?

আসল সত্য হচ্ছে, অতীতে আমাদের কারোরই ধারণা ছিলো না যে, আমরা যে কর্ম করছি তার প্রতিফলন হিসেবে ভবিষ্যতে অদৌ কিছু মিলবে কি না!

এই মানসিক/ন্যারেটিভ পারাডক্সের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আছে। আর সেটা হলো, জীবন চলমান… আপনি যে মুহুর্তে গল্প বলছেন সে মুহুর্তেও আপনার জীবন চলছে, কিছু না কিছু নিশ্চয় ঘটছে। আপনি হঠাৎ জীবনের নির্দিষ্ট একটি বিন্দুতে এসে বলে দিতে পারেন না যে, এটাই আপনার জীবনের গল্প! কারণ, এই গল্পে তো একটা শেষ আছে আর শেষ মানে মৃত্যু।

ফলে আমরা যে গল্প তৈরি করি জীবনের কোন নির্দিষ্ট বিন্দুতে এসে সেটা মূলত করে থাকি অতীতের ঘটনাকে একটা অর্থ দেবার জন্য, একটা গঠনগত বিন্যাসে মনে রাখবার জন্য। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আমরা কখনোই নিজেরা নিজেদের গল্প বলতে সক্ষম নই। কারণ প্রত্যেক গল্পের শুরু ও শেষ আছে। আর শেষ মানে যদি হয় মৃত্যু তাহলে শুধুমাত্র মৃত্যুর পরই আমরা নিজেদের পরিপূর্ণ গল্প বলতে সক্ষম হবো।

‘ন্যারেটিভ আইডেন্টিটি (Narrative Identity)’ ধারণার প্রধান প্রবক্তা Dan P. McAdams বলেন,

“We are all tellers of tales. Our stories help us shape who we are and provide our lives with unity, purpose, and meaning.”

কিন্তু তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে, মানুষের জীবনের ঘটনা সবসময় সুশৃঙ্খল, যৌক্তিক বা ধারাবাহিক নয়। তবু মানুষ নিজের আত্মপরিচয় তৈরি করতে গিয়ে খণ্ডিত ঘটনাগুলোকেও একটি গল্পের কাঠামোতে ফেলে অর্থ খোঁজে। এটাই মূলত ‘Narrative Paradox’ -এর ফাঁদে পড়ার কারণ।

প্রশ্ন হলো, মানুষ কেন তাহলে এই ন্যারেটিভ আইডেন্টিটি তৈরি করে?

কারণ এক ডজনেরও বেশি। কিন্তু অন্যতম কারণ হলো, মানুষ এই ন্যারেটিভ আইডেন্টিটি তৈরি করে সত্যের সমর্থন করার জন্য নয় বরং নিজের আত্মপরিচয় কে সমর্থন করার জন্য। এ বিষয়ে Dan P. McAdams পরিষ্কার করে বলেছেন,

“The past is remembered not to preserve facts, but to serve the self.”

ছবি: Gemini

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:১২

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: বাহ চমৎকার এক দর্শন নিয়ে ভাবনা। যা আমি সবসময় ভাবি। মানুষ জন্মের পড় থেকে প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হয়। কি শারীরিক কি মানসিক দুই দিক দিয়েই । জন্মের পর বাচ্চার ব্রেন কোষ পাঁচ বছরের মধ্যে এতো পরিবর্তন হয় যা অন্য সময়ে হয় না । তবে পরিবর্তন সব সময় হতেই আছে। পরিপক্বতা আসে। এমনকি আমাদের শরীর থেকে সেল মরে গিয়ে ঝরে যায় এবং নুতুন করে সেলের জন্ম হয়।
আর মনের কথা কি বলবো । আমাদের ভাবনা একেক বয়েসে একেক রকম হয়। সদা পরিবর্তন সিল এই মন নিয়েই আমরা মানুষ। আর জেনারেশন থেকে জেনারেশন মানুষ পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা যা ভাবি যে চোখে পৃথিবী দেখি তা আমাদের সন্তান সে ভাবে দেখে না। আর আমাদের বাবামা আমাদের মতো পৃথিবীকে নিয়ে ভাবে না।
ঠিক যেমন এই পুরো ইউনিভার্স সদা পরিবর্তন সিল আর আমরা সেই ইউনিভার্সের একটা অংশ । তাই আমরাও পরিবর্তন সিল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.