নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারানো সাহসী সিনেমা ও চাঁদাবাজির কালচার: মান্না কি ফিরে আসবেন?

২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৩১



‘চাঁদা’ অনেক সুন্দর একটি শব্দ। এই শব্দের অর্থ হলো: অনুদান, অবদান বা সাহায্য। ধরুন, ৫ জন বন্ধু মিলে কক্সবাজার ঘুরে আসবেন। সেক্ষেত্রে ৫ জন বন্ধুর জন্যই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। এতে করে ভ্রমণে সবারই মোট খরচ কম হয়, সুবিধা বেশি পাওয়া যায়। কম টাকার মধ্যেই ভালো খাবার ও ভালো হোটেলে থাকার ব্যবস্থাও হয়ে যায়।

কিন্তু এখন ‘চাঁদা’ শব্দ শুনলেই আমাদের মনের মধ্যে ভীতি কাজ করে। ঠিক যেমন, ‘সিন্ডিকেট’ শব্দ শুনলেই একসময় মনে হত, এই বুঝি পেঁয়াজের দাম আবার বেড়ে গেল। কিন্তু ‘সিন্ডিকেট’ শব্দের অর্থ হলো, কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে কতিপয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একত্রিত হয়ে একটি দল বা সমিতি গঠন করা। সিন্ডিকেট গঠন করা হয় সাধারণত একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।

বাংলাদেশে কবে থেকে চাঁদাবাজি শুরু হয় তার নির্দিষ্ট কোনো তারিখ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এদেশে জন্ম নেওয়া ইতিহাস, তথ্য ও প্রমাণ খুবই দূর্বল মানের; মানে ভরসা করার উপযোগী নয়। পুরনো পত্রিকা ঘেঁটে কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে। আবার সেখানেও সমস্যা আছে। কারণ স্বেচ্ছাচারিতা করেন নাই এমন নেতা/নেত্রীও এদেশে খুব কমই জন্মাইছে। আর তারপর বাক-স্বাধীনতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা।

অবশ্য বাংলা সিনেমায় যদি চাঁদাবাজির কোনো দৃশ্য থাকে তবে সেটা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। আর যদি ঐ সিনেমায় নায়ক মান্না ও খলনায়ক ডিপজল থাকেন তাহলে তো কথাই নাই। সৌভাগ্যক্রমে মায়ক মান্না বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে একাধিক সিনেমা উপহার দিয়েছেন; যা আজও এদেশের চাঁদা শিল্প সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে শেখায়।

আমি প্রয়াত চিত্রনায়ক মান্নার বেশকিছু সিনেমার তথ্য দিচ্ছি। এই সিনেমাগুলো এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক। মান্নার সিনেমা নির্মিত হত প্রান্তিক দর্শকদের জন্য মানে সব শ্রেণির, ধরণ ও রকমের দর্শকের জন্য। মানুষ আজও চিত্রনায়ক মান্না কে শ্রদ্ধা করেন সিনেমা জগতে তার সাহসী ভূমিকা রাখার জন্য, তার যুগ পূর্বে বলে যাওয়া কিছু সংলাপ এখনো তার ভক্তদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। এমনকি মান্নার অকাল মৃত্যু কে ঘিরেও রয়েছে রহস্য। অনেক দর্শক আজও মনে করেন মান্নার ঐ সাহসী ভূমিকাই তার জীবন কেড়ে নিয়েছে। অবশ্য তার মৃত্যুর রহস্য আজও একটি রহস্য মৃত্যুই থেকে গেছে।

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ঢাকা শহরের পথে পথে এক অদৃশ্য কর আরোপ হয়েছিল। দোকানদারের টেবিলে, বাসের হ্যান্ডেলে, এমনকি ছোট্ট ক্লাসরুমেও একটা কাগজের টুকরো বা মুঠোফোনের মিসড কল এসে বলত, “চাঁদা দাও, নইলে…”। সেই ভয়ের দিনে ১৪ মে ১৯৯৩ একটি ছবি মুক্তি পেল। নাম ‘চাঁদাবাজ’; পরিচালক কাজী হায়াত, প্রযোজক মনির হোসেন ও ফারুক হোসেন, প্রতিষ্ঠান রাজলক্ষ্মী ফিল্মস। চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান, সঙ্গীত আলাউদ্দিন আলী। শিরোনাম চরিত্রে ছিলেন মান্না, নায়িকা শাবনূর, খলনায়ক ডিপজল। ছবিটি ৩৭টি প্রিন্টে একসঙ্গে মুক্তি পেয়ে ঢাকার মধুমিতা, চট্টগ্রামের রাজ, খুলনার সনি—পাঁচটি সেন্টারে একশো পনেরো দিন টিকে ছিল। শেষ দৃশ্যে মান্নার “এই শহরে আর এক টাকাও চাঁদা উঠবে না” কথাটি হল ছেড়ে বেরোনো দর্শকের ঠোঁটে ঠোঁটে পৌঁছে গেল। দৈনিক ইত্তেফাক ১৫ মে ১৯৯৩ সংখ্যায় লিখেছিল, ছবি চলাকালে সংশ্লিষ্ট থানায় চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত জিডি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছিল।

১২ অক্টোবর ২০০১ সালে আসে শফিকুর রহমান শফিকের ‘ওরা চাঁদাবাজ’। প্রযোজক আব্দুল মান্নান, প্রতিষ্ঠান আশা প্রোডাকশন্স। এবার মান্না পুলিশ সুপার রায়হান, ডিপজল চট্টগ্রাম বন্দরের ‘গোল্ডেন সিন্ডিকেট’-এর প্রধান বদর। চারিদিকে কনটেইনার, ক্রেন আর কালো পানির গন্ধ। ছবি চলাকালে বন্দর এলাকার হল মালিক সমিতির ৩০ অক্টোবর, ২০০১ তারিখের রেজুলেশনে লেখা আছে, চলচ্চিত্র প্রদর্শনকালে বহিরাগত চাঁদাবাজদের আনাগোনা বেশ কমেছে। ছবি ৪৫টি প্রিন্টে মুক্তি পেয়ে প্রথম সপ্তাহেই এক কোটি পঁচাত্তর লাখ টাকা আয় করে [বাংলার বাণী ২০ অক্টোবর, ২০০১]।

২২ নভেম্বর ২০০২ মনতাজুর রহমান আকবর নিয়ে আসেন ‘মাস্তানের ওপর মাস্তান’। প্রযোজক সেলিম খান। মান্না এসি সাদ্দাম, ডিপজল ভূমিদস্যু হাসান। ছবি ৪০টি প্রিন্টে মুক্তি পেয়ে একশো দিন টিকে থাকে। যুগান্তর ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০০৩ সংখ্যায় উল্লেখ করে, মুক্তির পরের সপ্তাহেই ছাত্র সংগঠনগুলো পোস্টারে লিখল, “চাঁদাবাজি চলবে না”।

এর বাইরে ‘বিগ বস (৭ জুলাই ১৯৯৫, পরিচালক মনোয়ার খোকন, প্রযোজক এম এ জলিল), ঢাকাইয়া মাস্তান (১৪ জানুয়ারি ১৯৯৯, পরিচালক শাহ আলম কিরণ, প্রযোজক মোহাম্মদ আলী), সুপার হিরো (১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৪, পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, প্রযোজক আলমগীর হোসেন) একই সুরে এবং একই স্বরে বারবার ল বলেছে, সাহস মানুষের ভেতরেই থাকে, শুধু জ্বালানি দরকার।

নিশ্চয় বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় চাঁদাবাজি নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়েছে, কিন্তু মান্নার ছবির ভাষা তা পৌঁছে দিয়েছে মানুষের হৃদয়ে। দৈনিক সংবাদে অপরাধের খবর পড়ে মানুষ মাথা নেড়েছে, কিন্তু মনে সাহস জুগিয়েছে মান্নার সংলাপ। ১৯৯৩ সালের একটি সরকারি সাক্ষাৎকারে ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন, ছবিটি আমাদের সাহস জুগিয়েছে।

এখন একটু ভাবি। এই ‘চাঁদা’ শব্দটি একসময় ছিল স্বেচ্ছা সাহায্যের নাম। গ্রামের পূজার মণ্ডপে, মসজিদ নির্মাণে, সাংস্কৃতিক উৎসব প্রতিযোগিতায় সবাই হাত খুলে দিত। কিন্তু দুর্বৃত্তরা যখন জোর করে অর্থ আদায়ের নামে এই শব্দটিকে ব্যবহার করল, তখনই সমাজে এর অর্থ খারাপ হয়ে গেল।

মান্নার এই ছবিগুলো একসময় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো সিনেমাটিক প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিলো। এই চাঁদাবাজির সংস্কৃতি আমাদের দেশে দীর্ঘদিনের। কিন্তু বর্তমান মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ব্যাপকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে এসব ঘটনা তুলে আনতে। প্রশাসন যেন নিরুপায় দর্শক হিসেবে এসব দেখছে। দিনেদুপুরে মানুষকে অমানবিক হত্যা এখানে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রিও আর আগের মত শক্তিশালী নেই, সেখানেও রাজনীতির ঢুকে গেছে। আরো একজন মান্না কি এদেশে জন্ম নেবে?

ছবি: সংগৃহিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ১২:৫৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: চাদাতেই ভরসা । :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.