![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা মনে করি পৃথিবী আমাদের কেন্দ্র করেই ঘুরছে। চারপাশে যত আয়োজন সব আমাকে ঘিরেই চলছে। আমিই প্রধান চরিত্র। আমি চাইলেই সব পরিবর্তন করতে পারবো। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। মূলত, আমরা জন্ম নিই অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে। আমাদের হাতে অতি সামান্য কিছু বিষয় থাকে যা হয়তো পরিবর্তনযোগ্য। অথচ, আমাদের কতবড় ভুল ধারণা, আমরা নাকি চাইলেই সব পরিবর্তন করতে সক্ষম!
আমাদের নাম, আমাদের বাবা-মা, আমাদের পরিবার, আমাদের আত্মীয়-স্বজন, আমাদের ধর্ম, আমাদের জন্মস্থান, আমাদের শারীরিক গঠন, আমাদের গায়ের রঙ, আমাদের চোখের রঙ, আমাদের চুলের রঙ, আমাদের জন্মস্থানের চারপাশের পরিবেশ মানে আর্থ-সামাজিক অবস্থা… এই সমস্ত কিছুই কিন্তু অপরিবর্তনযোগ্য। আপনি চাইলেই বাজারের সেরা ফর্সা ক্রিম ব্যবহার করেও কালো বর্ণের মানুষ থেকে ফর্সা বর্ণে রুপান্তরিত হতে কোনদিনই পারবেন না।
জন্মের পর পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তির অধিকার কারো কারো ভাগ্যে মিলে যায়। আবার কারো কারো ভাগ্যে ফুটো কড়িও মেলে না। কারো বাপ-দাদা দুই প্রজন্ম মিলে তাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সম্পদ-সম্পত্তি, অর্থ, ব্যাংক-ব্যালেন্স, সুন্দর বাড়ি ও গাড়ি, বড় ব্যবসা ইত্যাদি রেখে যান। সবার ক্ষেত্রে কিন্তু এমন ঘটে না। আবার যার সাথে ঘটে তাকে নিয়ে ঘৃণার জন্ম নেওয়া মোটেই উচিত হবে না। তবে মানুষ হিসেবে ঈর্ষান্বিত হবার যথেষ্ট কারণ পাওয়া যেতেই পারে।
ধরুন, জন্মের পর দেখলেন আপনার গত দুই প্রজন্ম মিলে আপনার জন্য মাত্র ৩ কাঠা জমি বরাদ্দ রেখেছে। আপনাকে পড়াশোনার ব্যয় বাবদ কিছু সাহায্যও করেছে। পড়াশোনা শেষে এসে দেখলেন, হাতে মাত্র ৩ কাঠা জমি এবং কতগুলো আপনার উপার্জিত সার্টিফিকেট। উপর্যুপরি ৫-৬ লাখ টাকা বা তারও বেশি ঋণ আপনার মাথার উপর ঝুলছে।
প্রশ্ন হলো, এই অবস্থায় আপনি কীভাবে কি শুরু করবেন?
মানে আমরা যদি তথাকথিত মোটিভেশনাল বক্তার কথা সাময়িক সময়ের জন্য বাদ দিই! আপনার বাড়িতে নিয়মিত পাওনাদার কড়া নাড়ছেন তো কখনো ভুলভাল কথা বলছেন। যদি ৩ কাঠা জমি গ্রামাঞ্চলে থাকে তাহলে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করে পাওয়া সম্ভব হতে পারে; যা মোট ঋণের সামান্য একটা অংশ মাত্র।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকুরীর বাজার সম্পর্কে আমরা সবাই কিছুটা ওয়কিবহাল। এখানে চাইলেই সব ধরণের কাজ করা সামাজিক শর্তে সম্ভবও নয়। আবার জীবন থেমে থাকে না। ঠিক তেমন করেই প্রয়োজনও থেমে থাকে না। খেয়ে-পরে বাঁচতেও তো হবে।
আমি ধরে নিচ্ছি, কোনো একটা কাজের বন্দোবস্ত হলো। হয়তো কোনোমতে একটা চাকুরীতে জয়েন করলেন। আপনার নিয়মিত খরচ সহ ঋন পরিশোধ করতেই লেগে যেতে পারে কয়েক বছর। ২০-২৫ হাজার টাকা মাইনের চাকুরী করে আপনি এই ৫ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করলেন ৪ বছরে। এতে করেও আপনাকে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। বাকি ১০-১৫ হাজার টাকা একটি পরিবারকে চালিয়ে নেবার জন্য খুবই কম; তবে সম্ভব।
বিষয়টির মীমাংসা হিসেবে আমি সর্বোচ্চ ভালো দিকগুলো বিবেচনায় নিছি। আমি চাকুরী মিলে যাওয়াকে সহজ ভাবে দেখিয়েছি। আমি আপনার মোট ঋণ কে সুদ ব্যতীত মূল্যায়ন করেছি। এছাড়াও গত ৪ বছরে আপনার চাকুরীর টিকে থাকাকে নিশ্চিত করে ভেবেছি। এবং আমি আপনাকে আরও সুযোগ হিসেবে পারিবারিক জটিলতা কে বাদ দিয়ে হিসেব কষেছি।
সর্বোচ্চ ভালো দিকগুলো বিবেচনায় নিলেও আপনি আপনার প্রকৃত জীবন শুরু করছেন বাকিদের থেকে অন্তত ৪-৫ বছর পর। যদি আপনার চাকুরীর অবসর বয়স হয় ৬০ বছর তাহলে ২৫ বছর বয়সে এমন চাকুরী মিলে গেলে আপনি ৩০ বছর বয়সে প্রকৃত জীবন শুরু করছেন।
বাকিরা মানে যাদের পারিবারিক সমর্থন আছে তারা কিন্তু ফেলে আসা ৪-৫ বছরে একই ধরণ বা রকমের চাকুরীতে আপনাকে ছেয়ে যাবে কয়েকগুণ। তাদের হাতে চাকুরী করার সুযোগ ৩০ বছর থাকলে আপনার হাতে থাকবে ২৫ বছর। সুতরাং আপনার পদোন্নতিও কম মিলবে। এছাড়াও এরেঞ্জ ম্যারেজ যদি নিজেকেই এরেঞ্জ করতে হয় তাহলে তো হইছে ই!
আমার পয়েন্ট অবশ্য আর্থিক সংকট নিয়ে আলোচনা করা নয়। আজকের এই প্রবন্ধে আমি বলার চেষ্টা করছি, “আমরা চাইলেই সব পরিবর্তন করতে পারি না।” আমরা একটি সেট অব বক্স নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে থাকি। এই বক্সের মধ্যে পরিবর্তনযোগ্য নয় এমন অনেক কিছুই আছে। আর এই সবকিছুই শুধুমাত্র আমাদের কর্মফলের উপর নির্ভর করে না।
একটি খুবই জনপ্রিয় প্রবাদ আছে, “জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো”। এমন প্রবাদ শুনতেই শুধু ভালো লাগে।
আমার প্রশ্ন হলো, কারো কর্মফল কি ঠিক করে দিতে পারে যে সে কোন পরিবারে জন্ম নেবে? কারো জন্মসূত্রে দারিদ্রতা কি তার কর্মফলের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়? অথবা, আপনি কোন বংশ, কোন গোত্র বা কোন বর্ণে জন্ম নেবেন সেটা কি আপনার কর্মফলের মোট হিসেব-নিকেশ? নিশ্চয় নয়।
অথচ আপনি ঠিকই আপনার গায়ের রঙের জন্য বুলিং এর শিকার হোন, আপনার জন্ম সূত্রে দারিদ্রতা আপনাকে ভালো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে ঠিকই দূরে রাখে, আপনার বংশ নিয়ে পাত্রপক্ষ/কনেপক্ষ ঠিকই বাচবিচার করে, আপনার বর্ণ নিয়ে ঠিকই আপনাকে উপাসনালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।
বাংলাদেশে শুধুমাত্র একজন ফর্সা ছেলে/মেয়ের সামাজিক সুবিধা নিয়ে এক প্রবন্ধে তালিকা করে শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু এসবের সাথে আপনার কর্মের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক কি? সবই যদি কর্মফল হয় তাহলে ভাগ্যের ধারণা রহিত হয়ে যায়। ভাগ্য বা তকদির বলে কিছুরই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আমাদের জীবনের পথচলা নিয়ে দুটি ভিন্নধর্মী ধারণা প্রচলিত আছে। একটি ধারণা হলো ইচ্ছার স্বাধীনতা বা ফ্রি উইল, যা আমাদের বলে যে, আমরা আমাদের কর্ম ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই তৈরি করি। অন্যটি হলো নিয়তিবাদ বা ডেটারমিনিজম, যা অনুসারে আমাদের জীবনের সবকিছুই পূর্বনির্ধারিত এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বিভিন্ন শক্তি দ্বারা চালিত। এই দুই বিপরীতমুখী চিন্তার মধ্যে আমরা প্রায়শই নিজেদের হারিয়ে ফেলি, কারণ আমাদের জীবনে উভয়েরই সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়।
এই জটিল বিতর্কের মাঝে প্রাচীন স্টোয়িক দর্শন এক অত্যন্ত বাস্তবসম্মত পথ দেখায়। এটি কোনো একটি পক্ষকে বেছে নিতে বলে না। বরং জীবনের কঠোর বাস্তবতাগুলোকে মেনে নিয়ে কীভাবে একটি শান্ত ও স্থিতিশীল জীবন যাপন করা যায়, তার কার্যকর কৌশল শেখায়। এই দর্শনের মূল ভিত্তি হলো নিয়ন্ত্রণের বিভাজন, অর্থাৎ কোনটি আমাদের আয়ত্তে এবং কোনটি আমাদের আয়ত্তের বাইরে তা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারা।
স্টোয়িক দার্শনিকদের মতে, জীবনের সকল বিষয়কে দুইটি ভাগে ভাগ করা সম্ভব। প্রথম ভাগে রয়েছে সেইসব বিষয় যা আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যেমন আমাদের চিন্তা, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, কোনো ঘটনায় আমাদের মানসিক প্রতিক্রিয়া এবং আমাদের নৈতিক সিদ্ধান্ত। এক কথায়, আমাদের ভেতরের জগৎটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
দ্বিতীয় ভাগে রয়েছে সেই বিষয়গুলো যা আমাদের নিয়ন্ত্রণের প্রায় সম্পূর্ণ বাইরে। যেমন আমাদের জন্ম, পরিবার, শারীরিক বৈশিষ্ট্য, অন্যের মতামত, সামাজিক পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক অবস্থা। স্টোয়িক দর্শন আমাদের শেখায়, যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তা করে শক্তি অপচয় করা অর্থহীন।
বিষয়টি একটি সাধারণ উদাহরণের মাধ্যমে বোঝা যেতে পারে। ধরুন, আপনি আপনার গায়ের রঙ বা পারিবারিক পরিচয়ের কারণে সামাজিক অবিচারের শিকার হলেন। এখানে অন্যের আচরণ বা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই ঘটনায় কষ্ট পাওয়া বা হতাশ হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
কিন্তু স্টোয়িক দর্শন বলবে, এই পরিস্থিতিতে আপনার আত্মসম্মানকে অন্যের মতামতের ওপর নির্ভরশীল হতে না দেওয়া আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। আপনি নিজের যোগ্যতা ও আত্মবিশ্বাসকে এমনভাবে গড়ে তুলতে পারেন, যেন বাহ্যিক কোনো অবহেলা আপনার ভেতরের শক্তিকে পরাজিত করতে না পারে। আপনি সমাজের অবিচার পরিবর্তন করতে না পারলেও, সেই অবিচারের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
আরেকটি উদাহরণ টানা যাক। মনে করুন, পারিবারিক সমর্থনের অভাবে আপনাকে কর্মজীবনের শুরুতেই বিপুল বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, যা আপনার সহকর্মীরা হয়নি। ফলে কর্মক্ষেত্রে অন্যরা আপনার চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিটি আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এক্ষেত্রে হতাশায় ডুবে না গিয়ে আপনি নিজের প্রচেষ্টা, সততা আর দক্ষতার ওপর মনোযোগ দিতে পারেন।
পদোন্নতি বা আর্থিক সাফল্য হয়তো দেরিতে আসবে, কিন্তু নিজের সেরাটা দেওয়ার মাধ্যমে যে মানসিক প্রশান্তি ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করা যায়, তা সম্পূর্ণ আপনার নিয়ন্ত্রণাধীন। স্টোয়িকরা বলেন, ফলাফলের চিন্তা না করে নিজের প্রচেষ্টার ওপর মনোযোগ দেওয়াই মূল কাজ।
“We are not given a good or a bad life. We are given a life. And it's up to us to make it good or bad.”
– Anonymous
ছবি: Gemini
২| ৩০ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০১
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পরিবেশ, অবস্হান ও আনুকল্য
এই তিনে ভাগ্য
.........................................................
যার কপালে সঠিক ভাবে জুটবে, তিনিই হবেন
সকলের ইর্ষনীয় ব্যক্তি
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: নিয়তি বলে কিছু নেই।
তীব্র ইচ্ছাশক্তি মানুষকে অনেক দূর নিয়ে যায়।