নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘সংখ্যাগুরুর’ গণতন্ত্রের আড়ালে কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর সাইলেন্ট

০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:০৩



এদেশে ৩০% থেকে সর্বোচ্চ ৪০% ভোট নির্ধারণ করে আমাদের ‘শাসক’ কে হবেন। নির্বাচনের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First-Past-The-Post, সংক্ষেপে FPTP)’। সারাদেশে মোট ৩০০টি আসন সংখ্যা রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি আসনে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর সবচেয়ে বেশি ভোট-ই নির্ধারণ করে তার জয় বা পরাজয়। এখানে কে কত ভোট পেলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। বিষয় হলো, আপনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সুতরাং আপনি জয়ী।

এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গত অন্তত ৩টি নির্বাচন কে সহী নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই ৩টি নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সফল ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিক থেকে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুফল-ই তূলনামূলক বেশি দেখা গেছে। একাধিক আন্তর্জাতিক মানদন্ডে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে। দ্বিতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর ২০০১ সালে। এবং তৃতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ৩টি নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭.১৩% ভোটার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ২০০১ সালে ছিলো ৭৪.৯৭% এবং ১৯৯১ সালে ছিলো মাত্র ৫৫.৪৫% ভোটার উপস্থিতি। আবার ২০০৪ সালে নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্ধারণ করা হয়। এতে করে সারাদেশে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫০টিতে।

এই সংরক্ষিত মহিলা আসন প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হিসেবে, তবে এখানেও মোট ভোটের শতাংশ দেখা হয় না। নির্দিষ্ট দলের মোট আসনের অনুপাত অনুযায়ী নারী প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হয়। যেমন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ২৩০টি আসনের বিপরীতে ৭৬.৬% অনুপাতে ৪৫টি সংরক্ষিত নারী আসন পেয়ে যায়। এত বড় সংখ্যক সিট প্রদানে আওয়ামী লীগের বেপরোয়া স্বভাব স্পষ্ট।

সংসদে গান, নাচ, কবিতা, বিচার, গল্প, আড্ডা, নাটক সবই হয়েছে। রীতিমত সংসদ হয়ে উঠেছিলো একটি থিয়েটার মঞ্চ। আর এটাকেই বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ‘পিআর’ বলছেন মানে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR - Proportional Representation)’। যা মোটেই শুদ্ধ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নয়, অন্তত আমার মতে।

এছাড়াও ঐ তিন নির্বাচনে FPTP আসন-বণ্টন ও ফলাফলের কারণে ১৭% থেকে ৪২% জনগণের ভোটেই পূর্ণ সরকার গঠন সম্ভব হয়েছে; বাকি ৫৮–৮৩% জনগণ সরাসরি কোনো সমর্থন দেয় নাই। সুতরাং ‘A’ দল ও ‘B’ দলের বাইনারির বাইরে অন্তত কোটি সংখ্যক মানুষ নির্বাচনের বাইরে থেকে যায় এই দেশে। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল আমলের বিবেচনা আমাদের ভাবায়। কারণ এই ভোট যুক্ত হলে গণতন্ত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।

সমস্যা আরো আছে, জনশুমারি ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে। সামান্য NID কার্ডের কিছু তথ্য পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে এখানে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রথমে এই ভুলটা হয় স্থানীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায়। তারপর ঐ ভুল হয়ে যায় ‘অমর’ এবং ‘সংশোধন অযোগ্য’। জন্ম সনদ থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আমি নিজেও এক ভুক্তভোগী।

প্রশ্ন হলো, একটি নির্দিষ্ট বড় সংখ্যক বা কোটি সমান জনসংখ্যার কোনো দল কি এই দেশে আছে?

হ্যাঁ, আছে। অন্তত খাতা-কলমে। সংসদে থাকলে শতভাগ না হলেও অন্তত ৯৫%+ ভোটার উপস্থিতি পাওয়া যেত। আবার যারাও বা ভোট দেন তারা নিজের পছন্দমতো প্রার্থী যাচাই করতে সক্ষম হোন না। আমাদেরকে সবসময় একটি বাইনারীর মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে হয়। সকল মহল, সকল মতাদর্শ, সকল দলের, সকল ধর্মের মতামত আমরা কখনোই সংসদে উপস্থিত থাকতে দেখতে পাই না।

গল্পটা ঐ ৩৮টা ভেড়া আর ১২টি ঘোড়ার মধ্যেই সীমিত থেকে যায়। সুতরাং সংখ্যাগুরু ‘ভেড়া’ মিলে আমাদের ‘গণতন্ত্র’ নির্ধারণ করেন, আমাদের ‘শাসক’ নির্ধারণ করেন। এছাড়াও কোনো রাষ্ট্রের সিলেক্টিভ হেয়ারিং তার জন্য ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল আছে অনেকগুলো। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি করেও আজ পর্যন্ত কোনো আসন পান নাই এমন দলও কম নয়। কিছু কিছু দল সময়ের পরিবর্তনে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটি ছোট দল এই দেশে ১ কোটি ভোট পেয়েও একটিও আসন পান নাই এমন উদাহরণও আছে। তারমানে কি দাঁড়ায়? ঐ ১ কোটি ভোটের কোনো দাম নাই? ঐ ১ কোটি মানুষ কি বলতে চাইছিলো আমরা কেউ কি জানি?

উদাহরণস্বরূপ: তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে যথাক্রমে ৭৫, ৫৪ ও ৩৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিটি নির্বাচনে এক কোটির বেশি ভোট পেয়েও শূন্য বা মাত্র ১-২টি আসন পাওয়া দলের সংখ্যা অন্তত ১০ থেকে ২০টি।

আমরা যে সবসময় সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার কথা বলি তা যেন শুধু মুখেই। একটি ছোট দল, যার সমর্থন ১ কোটি+ মানুষ কিন্তু সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নাও থাকতে পারে। আর এভাবেই মানুষ অরাজনৈতিক বা এই ধরণের তথাকথিত গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা মনে করতে পারে, যেহেতু দেশটা নির্দিষ্ট দুটি-তিনটি দলের কাছে বর্গা দেওয়া সেহেতু আমরা এদেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক ছাড়া আর কিছুই নই।

‘পিআর (PR)’ আসলে স্থানীয় সরকার থাকবে না, পরিচিত প্রার্থী থাকবে না, মানুষ দলকে ভোট দিলে দূর্নীতি বাড়বে, দেশে অরাজকতা বাড়বে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক সিস্টেম, সিন্ডিকেট বাড়বে… এই কথাগুলো শুনে মনে হয়, আমরা বর্তমানে বেহেস্তে আছি। এসবের কিছুই হয় নাই গত সময়ে। ‘PR’ আসার পর হঠাৎ করে সব শুরু হয়ে যাবে।

মানে হলো, যত গুলো ভুল ও মিথ্যা ধারণা কোনো সিস্টেম নিয়ে থাকতে পারে তার কিছুই বাদ পড়ছে না। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মানি, PR পারফেক্ট নির্বাচন পদ্ধতি নয়। কিন্তু আমার মতে আমাদের হাতে এই একটি পদ্ধতিই আছে যা ভবিষ্যতে এই দেশে কাউকেই আর স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে দেবে না।

এখন পুরো পদ্ধতিই ভালো লাগছে না সেক্ষেত্রে সংস্কার করবেন কীভাবে? সংস্কার তখন করা যায় যখন নতুন পদ্ধতির শুধু উপস্থাপন নয় বরং বারবার আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ ক্রুটিমুক্ত যাওয়া যায় বা করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ১ কোটি ভোটার সংখ্যা গণনায় আসুক, তারাও একটি ভয়েস হোক, আমরা সবার কথা শুনতে এত ভয় পাই কেন!

ছবি: VidIQ

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৪

অরণি বলেছেন: ‘সংখ্যাগুরুর’ গণতন্ত্রের আড়ালে কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরের কোন মূল্যই নেই।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:২৯

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কথাটা ধরলে আমরা দেখতে পাই গণতন্ত্র এখানে শুধু সংখ্যা গোনার খেলা, মানুষের কথা শোনার নয়। যে ব্যবস্থায় এক কোটি ভোট পেয়েও কেউ সংসদে পা রাখতে পারে না, সেখানে ভোটের চেয়ে বড় মূল্য হয়ে দাঁড়ায় ভোটগ্রহণের নিয়ম। এই নিয়মই এখন বদলাতে হবে, যাতে প্রতিটি কণ্ঠ গণনায় আসে, প্রতিটি মতামত সংসদে প্রতিফলিত হয়। তখনই কেবল গণতন্ত্র সংখ্যাগুরুর দাপট নয়, সবার অংশগ্রহণের নাম হবে।

২| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: গনতন্ত্র নাই। আমাদের দেশের স্টাইল হলো স্বৈরাচার। ক্ষমতায় যে-ই যায় স্বৈরাচার হয়ে যায়।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩০

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কথাটা হুট করে শুনলে কঠিন শোনা যেতে পারে, কিন্তু দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা যখন বারবার একই ছবি দেখায়, তখন সেটাই বাস্তবতা হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচন আছে, ভোট কেন্দ্র আছে, ব্যালট আছে, কিন্তু যে ফলাফল আসে তা যেন আগে থেকেই ঠিক করা।

সংসদে বিরোধী কণ্ঠ দুর্বল হলে, আইন প্রণেতারা নিজেদের জবাবদিহির বাইরে চলে যান। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এমনকি বিচারব্যবস্থাও যখন একচেটিয়া দলের অনুগত হয়, তখন সেটি গণতন্ত্রের খোলসে স্বৈরাচারেরই আধুনিক রূপ।

প্রকৃত পরিবর্তন চাইলে কেবল ভোট দেওয়া নয়, নিয়ম বদলাতে হবে, জবাবদিহি ফিরিয়ে আনতে হবে, আর সবচেয়ে বড় কথা, শাসকদেরও আইনের ঊর্ধ্বে নয় বলে প্রমাণ করতে হবে।

৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১০

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সঠিক কথা ।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩১

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার সংক্ষিপ্ত শব্দটিতেও যে সত্যের গভীর প্রতিধ্বনি আছে তা সবাই উপলব্ধি করছে। আমরা যখন একসাথে এই সত্যটি স্বীকার করি, তখনই পরিবর্তনের প্রথম ধাপ রচিত হয়।

৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫৫

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩২

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার উৎসাহের জন্য সহৃদয় ধন্যবাদ।

৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০০

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এবার ভোট পড়বে ৪০/৪৫ শতাংশের মতো।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩৩

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার পূর্বাভাস যদি সত্যি হয়—অর্থাৎ ভোট পড়ে মাত্র ৪০-৪৫ শতাংশ—তবে সেটা আরেকবার প্রমাণ করবে যে মানুষ ক্রমশ এই ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। সংখ্যাটা কেবল কম নয়, এটি একটি বড় সতর্কবার্তা: যখন অর্ধেকের বেশি ভোটার ঘরে বসে থাকে, তখন ‘জনমত’ নয়, ‘অজনমত’-ই শাসন করে। এই নীরব প্রতিবাদকে উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে ভোটের হার আরও কমবে, আর সিস্টেম আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:০৮

কামাল১৮ বলেছেন: এটাকে বলে বুর্জোয়া গনতন্ত্র।মাইনরিটির শাসন।আরেকটা গনতন্ত্র আছে যেটাকে বলে জনগনের গনতন্ত্র বা জনগনতন্ত্র।বর্তমানে গনতন্ত্রের কোন বিকল্প নাই।তবে গনতন্ত্রের বিভিন্ন রূপ বা ধরণ আছে।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩৫

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার ‘বুর্জোয়া গণতন্ত্র’ আর ‘জনগণতন্ত্র’— এই দুই রূপের দ্বন্দ্বই আজকের সংকটের মূল। যা আমরা দেখছি তা একচেটিয়া পুঁজির, একচেটিয়া দলের ও একচেটিয়া প্রশাসনের সংযুক রূপ, যেখানে ভোট আছে কিন্তু নীতি নির্ধারণে জনগণের হাত নেই। জনগণতন্ত্রের কথা বললে অনেকে ভয় পান, ভাবেন বিশৃঙ্খলা আসবে; অথচ স্বচ্ছ প্রতিনিধিত্ব, সরাসরি অংশগ্রহণ ও জবাবদিহি ছাড়া গণতন্ত্র শব্দটাই অর্থহীন হয়ে যায়। বিকল্প নেই বলে আমরা যে রূপটা পেয়েছি তাকে চিরস্থায়ী মেনে নিলে চলবে না; বরং সেই রূপকে আরও উন্মুক্ত, আরও সমতাভিত্তিক ও আরও নিচ থেকে গড়ে ওঠা কাঠামোয় রূপান্তর করতে হবে। তখনই ‘গণ’ শব্দটি আবার ‘তন্ত্র’-এর সঙ্গে সংগত হবে।

৭| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১২

লোকমানুষ বলেছেন: লেখাটা দারুণ ইনফরমেটিভ। ১ কোটি মানুষ যখন একজনকে তাদের কণ্ঠ দেয় তখন অবশ্যই আমাদের তা শোনা উচিত। কিন্তু উচিত অনেক জিনিসই আমাদের দেশে অনুচিত আর অসম্ভব হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কোন সিস্টেম আদৌ এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে, সে নিয়ে আমার চরমভাবে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৩৮

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার সন্দেহটা যে কতটা বাস্তব সেটা আমি নিজেও প্রতিদিন অনুভব করি; একই সঙ্গে আমি হালও ছাড়তে পারছি না কারণ ঘাটতি যত গভীরই হোক, সিস্টেম যদি মানুষের হাতে থাকে তবে সেটা বদলানোর দরজা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় না। আমি দেখেছি, সবচেয়ে কঠিন সময়েও নতুন নিয়মের বীজ পুঁতে দেওয়া যায়। যেমন ১৯৯০-এর দশকে আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছিলাম, সেটি আইনে রূপ নিয়েছিল; পরে সেটা ভেঙে পড়লেও প্রমাণ হয়েছিল পরিবর্তন অসম্ভব নয়।

এখন আমরা যদি মিশ্র প্রোপোর্শনাল সিস্টেমের দাবি ধরে রাখি, প্রবাসী ভোটের আইনি কাঠামো গড়ি, NID সংশোধনের জন্য সংসদীয় কমিটি বাধ্য করি, তবে ধাপে ধাপে সিস্টেমের ঘাঁটি নড়বে। এই প্রক্রিয়া দ্রুত নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়; দরকার শুধু দাবিটি বারবার উচ্চারণ করা এবং জনগণের হাতে সেই দাবি ফেরত দেওয়া। তাই আমি বিশ্বাসটাকে পুরোপুরি দাবিয়ে রাখি না, বরং সেটাকে কাজ করার জ্বালানি বানাই।

৮| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫০

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হল যে যে ৩০/৪০% ভোট দিতে যায় নি, পিআর হলেই তারা সবাই ভোট দিতে যাবে। পিআর হলে এখন যা খারাপ অবস্থা আছে তা আরও ভয়ানক রূপ। এখন যে অযোগ্য নেতৃত্বের অভিযোগ আছে তখন এটা হবে আরও ভয়ানক। শাসক আর জনগনের মাঝের দুরত্ব বাড়বে আরও !

১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৪১

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার উদ্বেগটা ঠিকই—পিআর এলে সব সমস্যা রাতারাতি ম্যাজিকের মতো মিটে যাবে, এমন ভাবা ভুল। তবে এখানে দুটো জিনিস আলাদা করে দেখা দরকার:

প্রথমত, “ভোট দিতে যাবে কি যাবে না” নয়, বড় প্রশ্ন হল “ভোটটা গণনায় আসবে কি আসবে না”—FPTP-তে তো এখন যাঁরা যান না, তাঁদের অধিকাংশই জানেন, নিজের পছন্দের দলের ভোটও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যাবে; পিআর-এ সেই আতঙ্ক কমবে, কিন্তু তাই বলে সবাই বুথে ছুটবেন—নিশ্চয়ই না, কারণ ভোটবিমুখতার পেছনে আরও অনেক কারণ আছে: নিরাপত্তাহীনতা, প্রার্থী খুঁজে না পাওয়া, প্রশাসনিক দুর্ব্যবহার ইত্যাদি। সুতরাং পিআর-কে সুপারম্যান বানালে সেটা ভুল; পিআর-কে বরং একটা ‘অপরিহার্য সরঞ্জাম’ হিসেবে দেখা উচিত।

দ্বিতীয়ত, “অযোগ্য নেতৃত্ব” নিয়ে আপনার শঙ্কা সত্য, তবে সেটা যে পিআর-এর জন্য বাড়বে, এমন নিশ্চয়তা নেই। বরং ফলাফল দেখা যাচ্ছে: FPTP-তে একজন প্রার্থী ৩০% ভোট পেয়ে জিতে যান, কিন্তু ৭০% মানুষ তাঁকে চান না; পিআর-এ ৫% বা ৭% ভোট পাওয়া দলও সংসদে আসতে পারে, ফলে একঘেয়ে দুই দলের বাইনারি ভাঙে, নতুন মেরিটোক্রেটিক গ্রুপ সামনে আসার সুযোগ তৈরি হয়। অবশ্যই দলীয় তালিকায় কাউকে বসিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি আছে; সেটা ঠেকাতে দরকার খোলা প্রাইমারি, স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব, এবং দলের তালিকায় নারী-তরুণ-সংখ্যালঘুদের বাধ্যতামূলক কোটা—এসব পাশাপাশি চাই।

তাই পিআর একা সমাধান নয়, তবে বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। আমরা যদি সেটাকে না আজমাই, তবে দূরত্ব আরও গভীর হবে—এ কথা স্বীকার করেও আমাদের বিকল্প রাস্তা খোঁজা চালিয়ে যেতে হবে।

৯| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১:৪৬

মি. বিকেল বলেছেন: মোটাদাগে, অরণি বলেছেন সংখ্যাগুরুর আড়ালে কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরের কোনো মূল্য নেই, আমি তার উত্তরে বলেছি মূল্য আছে কিন্তু গণনার যন্ত্রটি ভাঙা, তাই আমরা যে তিনটি সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা স্মরণ করেছি ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮, সেখানেও ১৭ থেকে ৪২ শতাংশ ভোটেই পূর্ণ সরকার গঠিত হয়েছে এবং এক কোটির বেশি ভোট পেয়েও কোনো আসন না পাওয়া দলের সংখ্যা ছিল দুই অঙ্কে, ফলে ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট পদ্ধতিকে আমি বিকল্প প্রতিনিধিত্বমূলক কাঠামোর দিকে সরাতে চাইছি যাতে প্রতিটি ভোট গণনায় আসে। রাজীব নুর বলেছেন গণতন্ত্র নেই, স্বৈরাচার চলছে, আমি তাকে সমর্থন করে বলেছি ভোট আছে কিন্তু নীতি নির্ধারণে জনগণের হাত নেই, তাই ভোটের খোলসে স্বৈরাচারের আধুনিক রূপ দেখা যাচ্ছে এবং এই খোলস ভাঙতে হলে নিয়মের সংস্কার আর জবাবদিহি ফিরিয়ে আনতে হবে। এইচ এন নার্গিস ও মহাজাগতিক চিন্তা সংক্ষিপ্তভাবে স্বীকৃতি জানিয়েছেন, তাদের উৎসাহে আমি পরবর্তী পোস্টে আরও তথ্যভিত্তিক রূপরেখা দেব। সৈয়দ কুতুব ভবিষ্যৎ ভোট ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে বলে যে পূর্বাভাস দিয়েছেন, সেটি আমি মেনে নিয়ে বলেছি এটি কেবল সংখ্যা নয়, নীরব প্রতিবাদের চিহ্ন, তাই ভোটের হার বাড়াতে হলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা ছাড়া উপায় নেই। কামাল১৮ বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও জনগণতন্ত্রের পার্থক্য তুলে ধরেছেন, আমি সম্মত হয়ে বলেছি বর্তমান ব্যবস্থায় পুঁজি ও দলের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ আছে, তবে একই সিস্টেমের ভেতর থেকেই যদি আমরা খোলা প্রাইমারি, স্থানীয় অংশগ্রহণ ও প্রবাসী ভোটের মতো সংস্কার চাপিয়ে দিতে পারি তবে জনগণতন্ত্রের দিকে ধাপে ধাপে এগোনো সম্ভব। লোকমানুষ বলেছেন তিনি বিশ্বাসের ঘাটতি অনুভব করছেন, আমি তার উত্তরে বলেছি বিশ্বাস না থাকলেও দাবি অব্যাহত রাখলে সিস্টেমের গায়ে চুলকানি ধরে, ১৯৯০-এর তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলন থেকে শুরু করে নারী সংরক্ষণ আইন সবই প্রমাণ করে পরিবর্তন অসম্ভব নয়, তাই আমরা যদি মিশ্র প্রোপোর্শনাল সিস্টেম, প্রবাসী ভোট ও NID সংশোধনের দাবি বারবার তুলে রাখি তবে একদিন সংসদের টেবিলে উঠবেই। অপু তানভীরের শঙ্কা ছিল পিআর এলে অযোগ্য নেতৃত্ব আরও বাড়বে এবং শাসক ও জনগণের দূরত্ব বাড়বে, আমি তাকে বলেছি পিআর-এর সফলতা নির্ভর করে দলের তালিকা তৈরির নিয়মের ওপর, সেই তালিকায় খোলা প্রাইমারি, স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব ও বাধ্যতামূলক নারী-তরুণ-সংখ্যালঘু কোটা যুক্ত করলে নেতৃত্বের মান বরং বাড়ে, তাই ভয়টা পিআর-এ নয়, আইনের খসড়ায়, আর সেই খসড়া আমাদেরই গণতান্ত্রিকভাবে লিখতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.