![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এদেশে ৩০% থেকে সর্বোচ্চ ৪০% ভোট নির্ধারণ করে আমাদের ‘শাসক’ কে হবেন। নির্বাচনের এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (First-Past-The-Post, সংক্ষেপে FPTP)’। সারাদেশে মোট ৩০০টি আসন সংখ্যা রয়েছে। সে হিসেবে প্রতি আসনে একজন নির্দিষ্ট প্রার্থীর সবচেয়ে বেশি ভোট-ই নির্ধারণ করে তার জয় বা পরাজয়। এখানে কে কত ভোট পেলো সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। বিষয় হলো, আপনি সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন সুতরাং আপনি জয়ী।
এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গত অন্তত ৩টি নির্বাচন কে সহী নির্বাচন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর এই ৩টি নির্বাচন সংঘটিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সফল ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিক থেকে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সুফল-ই তূলনামূলক বেশি দেখা গেছে। একাধিক আন্তর্জাতিক মানদন্ডে প্রথম সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সালে। দ্বিতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১ অক্টোবর ২০০১ সালে। এবং তৃতীয় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই ৩টি নির্বাচনের মধ্যে শুধুমাত্র ২০০৮ সালের নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭.১৩% ভোটার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। ২০০১ সালে ছিলো ৭৪.৯৭% এবং ১৯৯১ সালে ছিলো মাত্র ৫৫.৪৫% ভোটার উপস্থিতি। আবার ২০০৪ সালে নির্বাচন আইন অনুযায়ী, ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসন নির্ধারণ করা হয়। এতে করে সারাদেশে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫০টিতে।
এই সংরক্ষিত মহিলা আসন প্রদান করা হয় নির্দিষ্ট দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হিসেবে, তবে এখানেও মোট ভোটের শতাংশ দেখা হয় না। নির্দিষ্ট দলের মোট আসনের অনুপাত অনুযায়ী নারী প্রতিনিধি নির্ধারণ করা হয়। যেমন ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ২৩০টি আসনের বিপরীতে ৭৬.৬% অনুপাতে ৪৫টি সংরক্ষিত নারী আসন পেয়ে যায়। এত বড় সংখ্যক সিট প্রদানে আওয়ামী লীগের বেপরোয়া স্বভাব স্পষ্ট।
সংসদে গান, নাচ, কবিতা, বিচার, গল্প, আড্ডা, নাটক সবই হয়েছে। রীতিমত সংসদ হয়ে উঠেছিলো একটি থিয়েটার মঞ্চ। আর এটাকেই বাংলাদেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ‘পিআর’ বলছেন মানে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (PR - Proportional Representation)’। যা মোটেই শুদ্ধ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নয়, অন্তত আমার মতে।
এছাড়াও ঐ তিন নির্বাচনে FPTP আসন-বণ্টন ও ফলাফলের কারণে ১৭% থেকে ৪২% জনগণের ভোটেই পূর্ণ সরকার গঠন সম্ভব হয়েছে; বাকি ৫৮–৮৩% জনগণ সরাসরি কোনো সমর্থন দেয় নাই। সুতরাং ‘A’ দল ও ‘B’ দলের বাইনারির বাইরে অন্তত কোটি সংখ্যক মানুষ নির্বাচনের বাইরে থেকে যায় এই দেশে। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাল আমলের বিবেচনা আমাদের ভাবায়। কারণ এই ভোট যুক্ত হলে গণতন্ত্রে একটি নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।
সমস্যা আরো আছে, জনশুমারি ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ নিয়ে। সামান্য NID কার্ডের কিছু তথ্য পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে এখানে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। প্রথমে এই ভুলটা হয় স্থানীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতায়। তারপর ঐ ভুল হয়ে যায় ‘অমর’ এবং ‘সংশোধন অযোগ্য’। জন্ম সনদ থেকে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন করতে গিয়ে আমি নিজেও এক ভুক্তভোগী।
প্রশ্ন হলো, একটি নির্দিষ্ট বড় সংখ্যক বা কোটি সমান জনসংখ্যার কোনো দল কি এই দেশে আছে?
হ্যাঁ, আছে। অন্তত খাতা-কলমে। সংসদে থাকলে শতভাগ না হলেও অন্তত ৯৫%+ ভোটার উপস্থিতি পাওয়া যেত। আবার যারাও বা ভোট দেন তারা নিজের পছন্দমতো প্রার্থী যাচাই করতে সক্ষম হোন না। আমাদেরকে সবসময় একটি বাইনারীর মধ্যে থেকেই নির্বাচন করতে হয়। সকল মহল, সকল মতাদর্শ, সকল দলের, সকল ধর্মের মতামত আমরা কখনোই সংসদে উপস্থিত থাকতে দেখতে পাই না।
গল্পটা ঐ ৩৮টা ভেড়া আর ১২টি ঘোড়ার মধ্যেই সীমিত থেকে যায়। সুতরাং সংখ্যাগুরু ‘ভেড়া’ মিলে আমাদের ‘গণতন্ত্র’ নির্ধারণ করেন, আমাদের ‘শাসক’ নির্ধারণ করেন। এছাড়াও কোনো রাষ্ট্রের সিলেক্টিভ হেয়ারিং তার জন্য ধ্বংসাত্মক হতে বাধ্য।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল আছে অনেকগুলো। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনীতি করেও আজ পর্যন্ত কোনো আসন পান নাই এমন দলও কম নয়। কিছু কিছু দল সময়ের পরিবর্তনে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটি ছোট দল এই দেশে ১ কোটি ভোট পেয়েও একটিও আসন পান নাই এমন উদাহরণও আছে। তারমানে কি দাঁড়ায়? ঐ ১ কোটি ভোটের কোনো দাম নাই? ঐ ১ কোটি মানুষ কি বলতে চাইছিলো আমরা কেউ কি জানি?
উদাহরণস্বরূপ: তথ্য যাচাই করে দেখা যায়, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোতে যথাক্রমে ৭৫, ৫৪ ও ৩৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও প্রতিটি নির্বাচনে এক কোটির বেশি ভোট পেয়েও শূন্য বা মাত্র ১-২টি আসন পাওয়া দলের সংখ্যা অন্তত ১০ থেকে ২০টি।
আমরা যে সবসময় সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চার কথা বলি তা যেন শুধু মুখেই। একটি ছোট দল, যার সমর্থন ১ কোটি+ মানুষ কিন্তু সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নাও থাকতে পারে। আর এভাবেই মানুষ অরাজনৈতিক বা এই ধরণের তথাকথিত গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা মনে করতে পারে, যেহেতু দেশটা নির্দিষ্ট দুটি-তিনটি দলের কাছে বর্গা দেওয়া সেহেতু আমরা এদেশে তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক ছাড়া আর কিছুই নই।
‘পিআর (PR)’ আসলে স্থানীয় সরকার থাকবে না, পরিচিত প্রার্থী থাকবে না, মানুষ দলকে ভোট দিলে দূর্নীতি বাড়বে, দেশে অরাজকতা বাড়বে, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়বে, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক সিস্টেম, সিন্ডিকেট বাড়বে… এই কথাগুলো শুনে মনে হয়, আমরা বর্তমানে বেহেস্তে আছি। এসবের কিছুই হয় নাই গত সময়ে। ‘PR’ আসার পর হঠাৎ করে সব শুরু হয়ে যাবে।
মানে হলো, যত গুলো ভুল ও মিথ্যা ধারণা কোনো সিস্টেম নিয়ে থাকতে পারে তার কিছুই বাদ পড়ছে না। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মানি, PR পারফেক্ট নির্বাচন পদ্ধতি নয়। কিন্তু আমার মতে আমাদের হাতে এই একটি পদ্ধতিই আছে যা ভবিষ্যতে এই দেশে কাউকেই আর স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে দেবে না।
এখন পুরো পদ্ধতিই ভালো লাগছে না সেক্ষেত্রে সংস্কার করবেন কীভাবে? সংস্কার তখন করা যায় যখন নতুন পদ্ধতির শুধু উপস্থাপন নয় বরং বারবার আলোচনা ও সমালোচনার মধ্যে দিয়ে সর্বোচ্চ ক্রুটিমুক্ত যাওয়া যায় বা করা যায়। কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের ১ কোটি ভোটার সংখ্যা গণনায় আসুক, তারাও একটি ভয়েস হোক, আমরা সবার কথা শুনতে এত ভয় পাই কেন!
ছবি: VidIQ
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: গনতন্ত্র নাই। আমাদের দেশের স্টাইল হলো স্বৈরাচার। ক্ষমতায় যে-ই যায় স্বৈরাচার হয়ে যায়।
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:১০
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সঠিক কথা ।
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১:৫৫
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এবার ভোট পড়বে ৪০/৪৫ শতাংশের মতো।
৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:০৮
কামাল১৮ বলেছেন: এটাকে বলে বুর্জোয়া গনতন্ত্র।মাইনরিটির শাসন।আরেকটা গনতন্ত্র আছে যেটাকে বলে জনগনের গনতন্ত্র বা জনগনতন্ত্র।বর্তমানে গনতন্ত্রের কোন বিকল্প নাই।তবে গনতন্ত্রের বিভিন্ন রূপ বা ধরণ আছে।
৭| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:১২
লোকমানুষ বলেছেন: লেখাটা দারুণ ইনফরমেটিভ। ১ কোটি মানুষ যখন একজনকে তাদের কণ্ঠ দেয় তখন অবশ্যই আমাদের তা শোনা উচিত। কিন্তু উচিত অনেক জিনিসই আমাদের দেশে অনুচিত আর অসম্ভব হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কোন সিস্টেম আদৌ এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে পারবে, সে নিয়ে আমার চরমভাবে বিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে।
৮| ০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে মনে হল যে যে ৩০/৪০% ভোট দিতে যায় নি, পিআর হলেই তারা সবাই ভোট দিতে যাবে। পিআর হলে এখন যা খারাপ অবস্থা আছে তা আরও ভয়ানক রূপ। এখন যে অযোগ্য নেতৃত্বের অভিযোগ আছে তখন এটা হবে আরও ভয়ানক। শাসক আর জনগনের মাঝের দুরত্ব বাড়বে আরও !
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৪
অরণি বলেছেন: ‘সংখ্যাগুরুর’ গণতন্ত্রের আড়ালে কোটি মানুষের কণ্ঠস্বরের কোন মূল্যই নেই।