নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্ক্যারলেট লেটার: নারী, সমাজ ও নৈতিকতার দ্বন্দ্ব

১৩ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২২



১৮৫০ সালে নাথানিয়েল হ্যাথর্ন এর একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘স্ক্যারলেট লেটার’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাস একটি কাল্পনিক ব্যভিচারের গল্প আমাদের উপহার দেয়। এখানে আমরা দেখতে পাই, পিউরিটান খ্রিষ্টধর্মের অভ্যন্তরীণ কঠোর নৈতিকতা ও শাস্তিব্যবস্থা। একটা সমাজ; যারা নৈতিকভাবে নিজেদের দৃঢ় বলে মনে করেন।

প্রশ্ন হলো, আজ এতগুলো বছর পরেও কেন এই উপন্যাস আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে পড়ানো হয়?

ব্যভিচারে লিপ্ত হবার জন্য নিশ্চয় পড়ানো হয় না। বরং ব্যভিচার কে বা সমাজ অনুমোদিত নয় এমন যৌনতাকে কীভাবে আমরা দেখে থাকি সেটা বুঝানোর জন্য। নারীর স্বাধীনতাকে আমরা কীভাবে নির্দিষ্ট কাঠামোতে তুলে সীমা এঁকে দিই সেটা বুঝার জন্য। আমরা যেটাকে ‘ন্যায়’ মনে করি ঐ একই ‘ন্যায়’ কীভাবে একজন নারীকে শাসন ও শোষণ করছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্য। এই কাল্পনিক নারীচরিত্র (হেস্টার প্রিন) মূলত একজন ‘প্রতীকী নারী’ বা ‘শোষিত নারী’র একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

আর্থার ডিমসডেল (পিউরিটান খ্রিষ্টধর্মের একজন যাজক) এবং হেস্টার প্রিন (জন্মসূত্রে পিউরিটান) -এর মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কে সমাজ ‘অন্যায়’ মনে করে। হেস্টার প্রিন সত্যটা স্বীকার করে এবং শাস্তি পায়। তারচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, হেস্টার সামাজিক বয়কটের মধ্যে পড়ে যায়। অন্যদিকে, আর্থার ডিমসডেল শুধুমাত্র সত্য স্বীকার না করায় বা ধরা না পড়ায় বিচারবহির্ভূত থেকে যায়। এখান থেকে সোজা লাইন টানা হয় ‘লিঙ্গবৈষম্য' -এর দিকে। বিষয়টি অবশ্য মোটেই খারিজ করা যায় না।

দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করি, আর্থার নিজের পাপ স্বীকার না করলেও তার হৃদয়ে একধরণের রক্তক্ষরণ হয়। আর এই ভেতরের রক্তক্ষরণ বাইরের শাস্তির চেয়ে অনেক বড় হয়ে সামনে আসে। কিন্তু একটু সোজা চিন্তা করলে, আমাদের ভাষায়, এই দুইজন স্রেফ একটি প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো। এবং সমাজ ও ধর্ম এসে বলছে, এখানে ‘প্রেম’ করা অন্যায়, পাপ নয়। আর যেহেতু এটা অন্যায় সেহেতু তাদের শাস্তি পেতে হবে।

তৃতীয়ত, লেখক বেশ দৃঢ়ভাবে প্রশ্ন করেছেন, যদি এই ধরণের সম্পর্ক মানে আমাদের ভাষায় ‘প্রেম’ অন্যায় হয় তাহলে সঠিক সম্পর্ক কেমন হতে হবে? বা সঠিক সম্পর্ক বলতে আমরা কি বুঝি? বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা এবং ঐ সম্পর্কের মধ্যে ঘটে চলা অন্যায় সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে প্রকৃত ‘অন্যায়’ নয় বিবেচনায় নেওয়া হয়।

চতুর্থত, ‘A’ - এর বহুঅর্থবাদিতা, স্ক্যাফোল্ড-এর মঞ্চায়ন, লাল রঙের প্রতীকী ব্যবহার। এগুলো ইংরেজি সাহিত্যের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে ন্যারেটিভ টেকনিক ও সিম্বলিজম শেখার ক্লাসিক উদাহরণ। কারণ এই একই ‘A’ প্রতীকের বিবর্তন এই উপন্যাসে আমরা লক্ষ্য করি। ‘Adultery’ থেকে ‘Angel’ বা সামাজিক অমর্যাদা/মর্যাদার প্রতীক হিসেবে।

সর্বশেষ বা পঞ্চমত, লেখকের মতে আমরা পাপ (Sin) ও অন্যায় (Wrong) কে গুলিয়ে ফেলি। পিউরিটান ঐ সমাজে তুমি ঈশ্বরের কাছে পাপ করেছো মানে তুমি অন্যায় করেছো। আর যেহেতু তুমি অন্যায় করেছো সেহেতু তুমি বিচারের সম্মুখীন হবে। বিচারেও আবার দ্বৈততা। বিচার হবার পূর্বেই সামাজিক ভাবে লাঞ্চিত করা হয় হেস্টার প্রিন কে।

রাষ্ট্রের কাজ সব ধর্মের প্রতি সমান দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করা; ধর্মীয় আইন সেখানে ঢুকলে এই ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। ধর্মীয় আইন যেমন: চুরি করা পাপ, হত্যা করা পাপ। রাষ্ট্রীয় আইন সেখানে অবশ্যই নাক গলাবে। কিন্তু মানুষের বিবেকের যে পাপ আমরা প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে চলেছি তার বিচার কীভাবে সংঘটিত হবে? মানুষের বিবেক যদি পাপ কাজে সমর্থন দেয় তাহলে সেটাকে কীভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করা সম্ভব? ফলে অন্যায় ও বিচারের মানদণ্ড মোটেই নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে না।

আর একারণেই রাষ্ট্রের ‘ধর্ম’ থাকা উচিত নয়। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে হচ্ছে অন্য ধর্মের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে তৈরি করা। পাপের জন্য অনুশোচনা হতে পারে কিন্তু সামাজিক শাস্তি যেমন হেস্টার প্রিন কে সবার সামনে এনে লজ্জা দেওয়া উচিত বলে মনে হয় না।

আর ব্যভিচার সমাজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় দেখা হয়। এখানে ওয়েস্টার্ন সমাজে ব্যভিচার কে যে রূপে দেখা হয় ইস্টার্ন সমাজে একই রূপে দেখা হয় না। আমাদের দেশে ব্যভিচার করা লজ্জাজনক বিষয় ও ভয়ংকর পাপ। কিন্তু রাষ্ট্র যদি এই পাপের শাস্তি নির্ধারণ করে তাহলে ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী হবেন কতজন তা হিসেব করে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়বে। ফলে এত মানুষকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন-ই বা কীভাবে? বিশেষ করে যেখানে বিচারক নিজেও যে অপরাধী নন সেটা তিনি যতক্ষণ নিজ মুখে প্রকাশ না করছেন বা প্রমাণ না মিলছে ততক্ষণ তিনি শাস্তির বাইরে থেকে যাবেন।

রাষ্ট্রের ধর্ম থাকাটা এখানেই খুব বাজেভাবে ভেঙ্গে পড়ে। রাষ্ট্র সব ধরণের ‘পাপ’ কে বিচার করতে সক্ষম নয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নাগরিক যদি নিজ ধর্মীয় বা নৈতিক মূল্যবোধ ঠিক না রাখেন। এই দায়িত্ব সবার। যে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির জন্য তার নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রাখা উচিত। ধর্ম না মানলে তখন তাকে অন্তত রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলতে হবে।

বর্তমানের একুশ শতকের বাংলাদেশ মূলত ঐ ১৭ শতকের বোস্টন। যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফতোয়া আবির্ভূত হচ্ছে। নতুন নতুন ধর্মীয় আইন রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হচ্ছে। হয়তো কিছু আইনের সংশোধন বা পরিমার্জন বা পরিবর্ধন প্রয়োজন কিন্তু রাষ্ট্র সরাসরি ধর্মীয় আইনের দ্বারা পরিচালিত হতে গেলে ব্যর্থতা স্পষ্ট ভাবে দেখা দেবে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থায় কাজ করার জন্য নারীদের পোশাক নির্ধারণ ঐ মান্ধাতা আমলের রক্ষণশীল পিউরিটান খৃষ্টধর্মের এক্সটেনশন ছাড়া আর কিছুই নয়। পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

তাছাড়া কি করে বুঝবেন কোন সম্পর্ক ভালোবাসার আর কোন সম্পর্ক জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য? শার্লক হোমস আবার ব্যর্থ হয়ে না যায়। কোনো নারী যদি বোরকা পরেন ও হিজাব পরেন তাহলে তাকে নিয়ে যেমন হাসাহাসি করা উচিত নয়, ঠিক তেমনি শালীন পোশাকে কর্মস্থলে কাউকে দেখলে কটুক্তি করাও উচিত নয়।

আর সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আর কতদিন নারীদের পোশাক নিয়ে এই টানাটানি টা করেই যাবো? লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেই ১৭ শতক থেকে শুরু করে এই একুশ শতকের নারীদের প্রতি এমন নিপীড়নের সাক্ষী হিসেবে আমাদের কাছে বারবার ফিরে আসে ‘স্ক্যারলেট লেটার’ উপন্যাস।

ছবি: VidIQ

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৫

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: বাহ ,চমৎকার একটা লেখা পড়লাম । "আমরা আর কতদিন নারীদের পোশাক নিয়ে এই টানাটানি টা করেই যাবো ?" চমৎকার একটি উক্তি ।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৭

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার আন্তরিক প্রশংসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। “আমরা আর কতদিন নারীদের পোশাক নিয়ে এই টানাটানি করেই যাবো” প্রশ্নটি যদি আরও বেশি মানুষের মনে জায়গা করে নিতে পারে, তাহলে কথাটি সার্থক হবে। আপনার মতো পাঠকের উৎসাহই লেখার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:২৮

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম ।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৭

মি. বিকেল বলেছেন: সংক্ষিপ্ত এক শব্দেও যে অনুপ্রেরণা লুকিয়ে থাকে, সেটি আপনার “পড়লাম” থেকে পেলাম। ধন্যবাদ, সৈয়দ কুতুব।

৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: নারী হচ্ছে ধরনী। তাদের মাঝেই আমাদের বসবাস।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

মি. বিকেল বলেছেন: নারীকে ধরনীর সঙ্গে তুলনা করলেন, আর সেই সঙ্গে আমাদের বসবাসের উৎসও সেখানেই। অপূর্ব কথা। ধন্যবাদ, রাজীব নুর।

৪| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ১২:২৪

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর একটি লেখা পড়লাম। ধন্যবাদ।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

মি. বিকেল বলেছেন: মোঃ মাইদুল সরকার, আপনার ভালো লাগার কথাটুকু আমার কাছে বড় পাওয়া। আন্তরিক ধন্যবাদ।

৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:০৭

লোকমানুষ বলেছেন: "স্ক্যারলেট লেটার" উপন্যাসটি আমাদের জন্যে আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ নারীর স্বাধীনতা ও সম্মান নিয়ে এখনও দ্বন্দ্ব চলছে।
নারীর পছন্দের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা যেন বিশৃঙ্খলার দিকে না যায়। জোর করে কাউকে পোশাক বদলাতে বাধ্য করা যেমন অন্যায়, তেমনি অশালীনভাবে চলাফেরা করাও সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আসল কথা হলো, নারীর অধিকার ও সম্মান রক্ষা করতে হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক শালীনতার মধ্যে ভারসাম্য রাখা জরুরি।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৩৯

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার কথায় দুটি বিষয় স্পষ্ট। প্রথমত, নারীর স্বাধীনতা আজও প্রশ্নবিদ্ধ, সে জন্য উপন্যাসের আয়না ধুলোমুক্ত নয়। দ্বিতীয়ত, আপনি ভারসাম্যের কথা বলছেন। ভারসাম্য ভালো, তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ‘শালীনতা’র নামে আবারও একই পুরনো কাঠামোর দিকে ঠেলে না দেওয়া হয়। কারণ সেই কাঠামোর ভেতরেই তো হেস্টারের লাল ‘A’ জ্বলজ্বল করেছিল। আপনার ভাবনার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৭

বিজন রয় বলেছেন: চমৎকার লেখা।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪০

মি. বিকেল বলেছেন: বিজন রয়, আপনার এক শব্দের প্রশংসা অনেকের দীর্ঘ বাক্যের চেয়েও উষ্ণ। হৃদয় থেকে ধন্যবাদ

৭| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪১

মি. বিকেল বলেছেন: রাজীব নুর, আপনি ফিরে এসেছেন দেখে ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত সবার কথাই ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু উষ্ণ। একজন বলেছেন লেখাটি চমৎকার, আরেকজন শুধু “পড়লাম” বলে শেষ করেছেন। আপনার আগের মন্তব্যটি ছিল সবচেয়ে কাব্যিক—নারীকে ধরনী ভেবে বলেছিলেন তাদের মাঝেই আমাদের বসবাস। এই সহজ কথাগুলোই যেন আসলে সবচেয়ে বড় সত্য।

৮| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৪২

মি. বিকেল বলেছেন: সবাইকে একসাথে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এইচ এন নার্গিস আপনার উক্তিটা হৃদয়ে লেগে থাকবে কারণ প্রশ্নটি এখনও বাতাসে ঘুরছে। সৈয়দ কুতুব এক কথায় শক্তি দিলেন পড়ার অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে। রাজীব নুর ধরনীর কথাটি মনে ধরেছে নারীর ভেতরেই যে আমাদের আশ্রয় তার নিদর্শন হিসেবে। মোঃ মাইদুল সরকার আপনার ধন্যবাদে উৎসাহ বাড়ল। লোকমানুষ ভারসাম্যের কথা বলেছেন সেটি ভাবনার দাবি রাখে তবে সতর্ক পা রাখতে হবে যেন শালীনতার ছদ্মাবরণে পুরনো শৃঙ্খল ফিরে না আসে। বিজন রয় সংক্ষিপ্ত শব্দে বড় উষ্ণতা দিয়েছেন। সবার সময় ও অনুভূতি নিয়ে এই মিলনমঞ্চে আমি কৃতজ্ঞ।

৯| ১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৮

কথামৃত বলেছেন: হেস্টার প্রিনকে তার অবৈধ সম্পর্কের ফলস্বরূপ "A" (Adulteress) অক্ষরবিশিষ্ট স্কারলেট লেটার পরতে বাধ্য করা হয়, যা সমাজ কর্তৃক নারীর শরীর ও যৌনতাকে চিহ্নিত করার প্রতীক।
- Puritan সমাজে নারীর স্বাধীনতা ছিল সীমিত; হেস্টারের শাস্তি শুধু একটি অপরাধের জন্য নয়, বরং সমাজের লিঙ্গভিত্তিক নিয়ম ভাঙার জন্য।
- বিপরীতে, ডিম্সডেল (যিনি গোপন পাপ করেন) সমাজে সম্মানিত থাকেন—এখানে নৈতিকতার দ্বিচারিতা ফুটে ওঠে।
স্কারলেট লেটার কেবল হেস্টারের পাপ নয়, বরং Puritan সমাজের কৃত্রিম নৈতিকতারও প্রতীক। হথর্ন প্রশ্ন তোলেন: কে বেশি পাপী? যে প্রকাশ্যে শাস্তি পায়, নাকি যে গোপনে পাপ করে?



হথর্ন Puritan সমাজের সমালোচনা করলেও, তিনি হেস্টারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ হিসেবেও উপস্থাপন করেননি। গল্পটি নৈতিক জটিলতাকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখায়।
- আজকের সমাজেও স্কারলেট লেটারের প্রতীকবাদ প্রাসঙ্গিক: নারীর যৌনতা নিয়ে ট্যাবু, সমাজের লেবেলিং (slut-shaming), এবং নৈতিকতার নামে ব্যক্তিস্বাধীনতা দমনের প্রচেষ্টা।



সত্যিকার নৈতিকতা সমাজের কৃত্রিম বিধানে নয়, ব্যক্তির স্বাধীনতা ও আত্মসচেতনতায় নিহিত।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১৬

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার বিশ্লেষণে সহমত পোষণ করছি, তবে দু’টি দিকে সামান্য ভিন্ন সুর যোগ করতে চাই।

১. “হেস্টারকে সম্পূর্ণ নির্দোষ হিসেবে উপস্থাপন করেননি” - এ কথাটি ঠিক, কিন্তু হেস্টারের ‘অপরাধ’ যে শুধু ব্যভিচার নয়, বরং পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতর নারীর স্বতন্ত্র ইচ্ছার প্রকাশ সেটিকে হথর্ন সূক্ষ্মভাবে সামনে এনেছেন। তাই তিনি হেস্টারকে ‘নির্দোষ’ না-ও বললেও, তাঁর শাস্তির বীভৎসতা ও সমাজের দ্বিচারিতা দেখিয়ে অন্যায়ের ভার কার ওপর পড়ছে। সেটিই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। ফলে দোষ-নির্দোষের যে বাইনারি থাকে, সেটিকে তিনি ভেঙে দেন।

২. “সত্যিকার নৈতিকতা… ব্যক্তির স্বাধীনতা ও আত্মসচেতনতায়” - এ মতের সঙ্গে একমত, তবে ব্যক্তির স্বাধীনতাও যে সমাজের ক্ষমতা-কাঠামো দ্বারা আবদ্ধ সেটি হেস্টারের কেসে স্পষ্ট। তাই আমি বলব, নৈতিকতা শুধু ‘ব্যক্তিগত বিবেক’ নয়; বরং ক্ষমতা-সম্পর্কের দ্বন্দ্বে যে নৈতিক ভাষা তৈরি হয় সেটিকেই হথর্ন উন্মোচন করেছেন।

আজকের প্রেক্ষাপটে আপনার উল্লেখিত slut-shaming, লেবেলিং, পোশাক-পুলিশিং সবই এই ক্ষমতা-কাঠামোরই বর্ধিত রূপ। স্ক্যারলেট লেটার তাই আমাদের কাছে ‘পুরনো গল্প’ নয়, বরং চলমান প্রতিবাদের পোস্টার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.