![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৮৫০ সালে নাথানিয়েল হ্যাথর্ন এর একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘স্ক্যারলেট লেটার’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাস একটি কাল্পনিক ব্যভিচারের গল্প আমাদের উপহার দেয়। এখানে আমরা দেখতে পাই, পিউরিটান খ্রিষ্টধর্মের অভ্যন্তরীণ কঠোর নৈতিকতা ও শাস্তিব্যবস্থা। একটা সমাজ; যারা নৈতিকভাবে নিজেদের দৃঢ় বলে মনে করেন।
প্রশ্ন হলো, আজ এতগুলো বছর পরেও কেন এই উপন্যাস আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে পড়ানো হয়?
ব্যভিচারে লিপ্ত হবার জন্য নিশ্চয় পড়ানো হয় না। বরং ব্যভিচার কে বা সমাজ অনুমোদিত নয় এমন যৌনতাকে কীভাবে আমরা দেখে থাকি সেটা বুঝানোর জন্য। নারীর স্বাধীনতাকে আমরা কীভাবে নির্দিষ্ট কাঠামোতে তুলে সীমা এঁকে দিই সেটা বুঝার জন্য। আমরা যেটাকে ‘ন্যায়’ মনে করি ঐ একই ‘ন্যায়’ কীভাবে একজন নারীকে শাসন ও শোষণ করছে তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্য। এই কাল্পনিক নারীচরিত্র (হেস্টার প্রিন) মূলত একজন ‘প্রতীকী নারী’ বা ‘শোষিত নারী’র একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
আর্থার ডিমসডেল (পিউরিটান খ্রিষ্টধর্মের একজন যাজক) এবং হেস্টার প্রিন (জন্মসূত্রে পিউরিটান) -এর মধ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক কে সমাজ ‘অন্যায়’ মনে করে। হেস্টার প্রিন সত্যটা স্বীকার করে এবং শাস্তি পায়। তারচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, হেস্টার সামাজিক বয়কটের মধ্যে পড়ে যায়। অন্যদিকে, আর্থার ডিমসডেল শুধুমাত্র সত্য স্বীকার না করায় বা ধরা না পড়ায় বিচারবহির্ভূত থেকে যায়। এখান থেকে সোজা লাইন টানা হয় ‘লিঙ্গবৈষম্য' -এর দিকে। বিষয়টি অবশ্য মোটেই খারিজ করা যায় না।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমরা লক্ষ্য করি, আর্থার নিজের পাপ স্বীকার না করলেও তার হৃদয়ে একধরণের রক্তক্ষরণ হয়। আর এই ভেতরের রক্তক্ষরণ বাইরের শাস্তির চেয়ে অনেক বড় হয়ে সামনে আসে। কিন্তু একটু সোজা চিন্তা করলে, আমাদের ভাষায়, এই দুইজন স্রেফ একটি প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলো। এবং সমাজ ও ধর্ম এসে বলছে, এখানে ‘প্রেম’ করা অন্যায়, পাপ নয়। আর যেহেতু এটা অন্যায় সেহেতু তাদের শাস্তি পেতে হবে।
তৃতীয়ত, লেখক বেশ দৃঢ়ভাবে প্রশ্ন করেছেন, যদি এই ধরণের সম্পর্ক মানে আমাদের ভাষায় ‘প্রেম’ অন্যায় হয় তাহলে সঠিক সম্পর্ক কেমন হতে হবে? বা সঠিক সম্পর্ক বলতে আমরা কি বুঝি? বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা এবং ঐ সম্পর্কের মধ্যে ঘটে চলা অন্যায় সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে প্রকৃত ‘অন্যায়’ নয় বিবেচনায় নেওয়া হয়।
চতুর্থত, ‘A’ - এর বহুঅর্থবাদিতা, স্ক্যাফোল্ড-এর মঞ্চায়ন, লাল রঙের প্রতীকী ব্যবহার। এগুলো ইংরেজি সাহিত্যের অনার্স-মাস্টার্স কোর্সে ন্যারেটিভ টেকনিক ও সিম্বলিজম শেখার ক্লাসিক উদাহরণ। কারণ এই একই ‘A’ প্রতীকের বিবর্তন এই উপন্যাসে আমরা লক্ষ্য করি। ‘Adultery’ থেকে ‘Angel’ বা সামাজিক অমর্যাদা/মর্যাদার প্রতীক হিসেবে।
সর্বশেষ বা পঞ্চমত, লেখকের মতে আমরা পাপ (Sin) ও অন্যায় (Wrong) কে গুলিয়ে ফেলি। পিউরিটান ঐ সমাজে তুমি ঈশ্বরের কাছে পাপ করেছো মানে তুমি অন্যায় করেছো। আর যেহেতু তুমি অন্যায় করেছো সেহেতু তুমি বিচারের সম্মুখীন হবে। বিচারেও আবার দ্বৈততা। বিচার হবার পূর্বেই সামাজিক ভাবে লাঞ্চিত করা হয় হেস্টার প্রিন কে।
রাষ্ট্রের কাজ সব ধর্মের প্রতি সমান দূরত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করা; ধর্মীয় আইন সেখানে ঢুকলে এই ভারসাম্য ভেঙে পড়ে। ধর্মীয় আইন যেমন: চুরি করা পাপ, হত্যা করা পাপ। রাষ্ট্রীয় আইন সেখানে অবশ্যই নাক গলাবে। কিন্তু মানুষের বিবেকের যে পাপ আমরা প্রতিনিয়ত ঘটিয়ে চলেছি তার বিচার কীভাবে সংঘটিত হবে? মানুষের বিবেক যদি পাপ কাজে সমর্থন দেয় তাহলে সেটাকে কীভাবে রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার করা সম্ভব? ফলে অন্যায় ও বিচারের মানদণ্ড মোটেই নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে না।
আর একারণেই রাষ্ট্রের ‘ধর্ম’ থাকা উচিত নয়। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ধর্ম থাকা মানে হচ্ছে অন্য ধর্মের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে তৈরি করা। পাপের জন্য অনুশোচনা হতে পারে কিন্তু সামাজিক শাস্তি যেমন হেস্টার প্রিন কে সবার সামনে এনে লজ্জা দেওয়া উচিত বলে মনে হয় না।
আর ব্যভিচার সমাজ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় দেখা হয়। এখানে ওয়েস্টার্ন সমাজে ব্যভিচার কে যে রূপে দেখা হয় ইস্টার্ন সমাজে একই রূপে দেখা হয় না। আমাদের দেশে ব্যভিচার করা লজ্জাজনক বিষয় ও ভয়ংকর পাপ। কিন্তু রাষ্ট্র যদি এই পাপের শাস্তি নির্ধারণ করে তাহলে ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী হবেন কতজন তা হিসেব করে ওঠা মুশকিল হয়ে পড়বে। ফলে এত মানুষকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন-ই বা কীভাবে? বিশেষ করে যেখানে বিচারক নিজেও যে অপরাধী নন সেটা তিনি যতক্ষণ নিজ মুখে প্রকাশ না করছেন বা প্রমাণ না মিলছে ততক্ষণ তিনি শাস্তির বাইরে থেকে যাবেন।
রাষ্ট্রের ধর্ম থাকাটা এখানেই খুব বাজেভাবে ভেঙ্গে পড়ে। রাষ্ট্র সব ধরণের ‘পাপ’ কে বিচার করতে সক্ষম নয়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নাগরিক যদি নিজ ধর্মীয় বা নৈতিক মূল্যবোধ ঠিক না রাখেন। এই দায়িত্ব সবার। যে কোনো ধার্মিক ব্যক্তির জন্য তার নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রাখা উচিত। ধর্ম না মানলে তখন তাকে অন্তত রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলতে হবে।
বর্তমানের একুশ শতকের বাংলাদেশ মূলত ঐ ১৭ শতকের বোস্টন। যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফতোয়া আবির্ভূত হচ্ছে। নতুন নতুন ধর্মীয় আইন রাষ্ট্রীয় আইনে পরিণত হচ্ছে। হয়তো কিছু আইনের সংশোধন বা পরিমার্জন বা পরিবর্ধন প্রয়োজন কিন্তু রাষ্ট্র সরাসরি ধর্মীয় আইনের দ্বারা পরিচালিত হতে গেলে ব্যর্থতা স্পষ্ট ভাবে দেখা দেবে। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থায় কাজ করার জন্য নারীদের পোশাক নির্ধারণ ঐ মান্ধাতা আমলের রক্ষণশীল পিউরিটান খৃষ্টধর্মের এক্সটেনশন ছাড়া আর কিছুই নয়। পিছিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
তাছাড়া কি করে বুঝবেন কোন সম্পর্ক ভালোবাসার আর কোন সম্পর্ক জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্য? শার্লক হোমস আবার ব্যর্থ হয়ে না যায়। কোনো নারী যদি বোরকা পরেন ও হিজাব পরেন তাহলে তাকে নিয়ে যেমন হাসাহাসি করা উচিত নয়, ঠিক তেমনি শালীন পোশাকে কর্মস্থলে কাউকে দেখলে কটুক্তি করাও উচিত নয়।
আর সবচেয়ে বড় কথা, আমরা আর কতদিন নারীদের পোশাক নিয়ে এই টানাটানি টা করেই যাবো? লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সেই ১৭ শতক থেকে শুরু করে এই একুশ শতকের নারীদের প্রতি এমন নিপীড়নের সাক্ষী হিসেবে আমাদের কাছে বারবার ফিরে আসে ‘স্ক্যারলেট লেটার’ উপন্যাস।
ছবি: VidIQ
২| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১২:২৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম ।
৩| ১৪ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ১০:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: নারী হচ্ছে ধরনী। তাদের মাঝেই আমাদের বসবাস।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:৫৫
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: বাহ ,চমৎকার একটা লেখা পড়লাম । "আমরা আর কতদিন নারীদের পোশাক নিয়ে এই টানাটানি টা করেই যাবো ?" চমৎকার একটি উক্তি ।